সৎপুর কামিল মাদরাসা
সৎপুর কামিল মাদরাসা সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী কামিল ও অনার্স মাদরাসা।[৩] মাদরাসাটি আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাক্রমের অধীনে কামিল স্তর পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করে থাকে । ২০১৭ সালে ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়’ -এর অধীনে ফাযিল পর্যায়ে অনার্স কোর্স চালু করা করা হয়।[৪][৫] প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সংখ্যা বর্তমানে দেড় হাজারের অধিক।[৪] সম্প্রতি ২০১৬ সালে শুরু হওয়া মাদ্রাসাটির ঐতিহ্যবাহী দ্বিতল ভবনটির পুনঃসংস্কার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে।[৬]
সৎপুর কামিল মাদরাসা | |
---|---|
![]() | |
ঠিকানা | |
সৎপুর ডাক-সৎপুর মাদরাসা - ৩০৮৩ | |
তথ্য | |
প্রতিষ্ঠিত | ১৯৪৮ |
প্রতিষ্ঠাতা | আল্লামা গোলাম হুসাইন |
বিদ্যালয় কোড | EIIN নং-১৩০২০৫[১] |
অধ্যক্ষ | আবু জাফর মো.নুমান[২] |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | ১৫০০ |
ভাষা | বাংলা , আরবি |
আয়তন | ৪.৩৮ একর |
অন্তর্ভুক্তি | ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় |
ইতিহাসসম্পাদনা
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা "গোলাম হোসাইন" ছিলেন একজন প্রখ্যাত ওলী এবং নিজ অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষার এক পুরোধা।[৪][৭] কাইমগঞ্জ নিবাসী পীর হামিদ উল্লাহর নিকট তিনি তরিকতের জগতে প্রবেশ করেন । হামিদ উল্লাহর মৃত্যুর পর তিনি আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলীর নিকট বায়াত গ্রহণ করেন ।
গোলাম হোসাইন ১৯৪৫ ইং সালে কামিল পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করে যখন নিজ এলাকায় ফিরেন, এলাকাটি ছিলো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ও কুসংকারাচ্ছন্ন । এতে তার অন্তর ব্যথিত হয়ে উঠলে তিনি শিক্ষা ও দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে একটি মাদরাসা স্থাপনে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে উঠেন । ১৯৪৮ সালে তিনি নিজ বাড়িতে দুজন শীক্ষার্থীকে নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেন। অতঃপর স্বীয় মুর্শিদ কাইমগঞ্জ নিবাসী পীর হামিদ উল্লাহর পরামর্শক্রমে ১৯৫২ সালে তিনি হজ্জে গমন করলেন এবং সেখানে খাবে বা খেয়ালে নবী মুহাম্মাদের দিদারে ধন্য হয়ে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার অনুমতি লাভ করেন । হজ্জ থেকে ফিরে এসে তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলিম হরমুজ উল্লাহ সয়দাকে অতিথি করে মাদরাসার প্রথম জলছা করেন এবং আয়োজনটি সফল হয় । এরপর থেকেই মাদরাসার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। অতঃপর প্রতিষ্ঠাতার বাড়ি থেকে বাড়ির নিকটবর্তী ঈদগাহে মাদরাসাটি স্থানান্তরিত হয় । উন্নতির ধারাবাহিকতায় মাদরাসাটি ১৯৫৮ সালে দাখিল , ১৯৬০ সালে আলিম , ১৯৬২ সালে ফাযিল এবং ১৯৬৫ সালে কামিল হাদিস বিভাগে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে । তখন পর্যন্ত বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে কামিল স্তরের মাদরাসা ছিলো মাত্র দুটি । মাদরাসার এ স্তর-ভিত্তিক উন্নয়নের জন্য অখন্ড জমির প্রয়োজন হলে তা প্রতিষ্ঠাতা নিজে দান করেন । এছাড়াও স্থানীয় শুভাকাঙ্ক্ষীগণ এগিয়ে আসায় বিক্ষিপ্ত আরও কিছু জমি মাদরাসার আওতাভূক্ত হয় । প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক স্তর থেকে সর্বোচ্চ কামিল স্তর পর্যন্ত অল্প সময়ে উন্নিত হওয়া ছিল প্রতিষ্ঠাতার এক কারামাত।
মাদরাসাটি স্থাপন করতে গিয়ে গোলাম হোসাইন স্বীয় মুর্শিদ পীর "হামিদ উল্লাহ" ও আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা লাভ করেছিলেন।[৮][৯] মূলত এ তিন ওলীর দুয়া ফায়েজ ও বরকতে মাদরাসাটি মাকবুলিয়াতের উচ্চাসনে আরোহণ করে । এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মো:হবিবুর রহমান ষাটের দশকে একটি উর্দূ কবিতা লিখেছিলেন, যার প্রথম দু চরণ-
"ইয়ে গুলামী বাগ হো – ওর হামিদী গুলযার হো / ইয়ে লতিফী ফায়েয কা এক – খুশমনা দরবার হো"।
এছাড়াও মাদরাসার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন হরমুজ উল্লাহ শয়দা, প্রতিষ্ঠাতার সহোদর পীর গোলাম হাফিজ, মৌলভী মো.আব্দুল মালিক সুফী ও ইসহাক আহমদ।[১০]
গোলাম হোসাইন সৎপুরী ১৯৭৫ সালের ১৯ মার্চ মোতাবেক ৫ চৈত্র মৃত্যুবরণ করেন । উক্ত সনের মাঘ মাসের ১ম বুধবার মাদরসার বার্ষিক জলছায় তিনি বলেছিলেন “ এ মাদরাসার মঞ্জুরী মদিনা শরীফ থেকে আনা হয়েছে । এর ক্ষতি যে করবে আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন । তিনি দোয়া করেছেন “ ইমাম মাহদী (আ.) এসে এ মাদরাসা দেখে যেন খুশী হন ।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে মাদরাসাটিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে "আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ" বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। [৫][৯]
অবস্থানসম্পাদনা
মাদরাসাটি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত লামাকাজী ইউনিয়নে সৎপুর গ্রামে অবস্থিত । বিশ্বনাথ-লামাকাজী সড়কটি এবং সিলেট-ছাতক রেলওয়ের সৎপুর স্টেশনটি মাদরাসাটির নিকটেই অবস্থিত।[৩]
প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য তথ্যাবলিসম্পাদনা
মাদরাসার মোট জমির পরিমাণ হলো ৪.৩৮ একর । তিনটি একাডেমিক ভবন , একটি প্রশাসনিক ভবন ও একটি ছাত্রাবাস মিলিয়ে মোট ৫টি ভবন ও একটি মাঠ নিয়ে মোট ১.৬৫ একর জমির উপর মাদরাসা ক্যাম্পাসটি দন্ডায়মান।[১১]
তাফসীর , হাদিস , ফিকহ , ইতিহাস , মুক্তিযুদ্ধ , ভাষা , দূর্লভ অভিধান , রেফারেন্স বুক সহ প্রায় ছ’হাজার কিতাবাদি নিয়ে মাদরাসাটির একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছে । প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ বুধবার বার্ষিক জলছা ও কামিল পাশ শীক্ষার্থীদের পাগড়ী দেয়া হয় । মাদ্রাসাটির “হুসাইনিয়া ছাত্র সংসদ” নামে একটি ছাত্রসংসদ রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনন বিকাশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ।
এছাড়াও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মান-সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে "আল-হুসাইন একাডেমি" নামে মাদরাসার একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।
মাদরাসার প্রাক্তন ছাত্রদের মাঝে অন্যতম হলেন ইরশাদ হোসাইন গোয়াহরী, মুবাশ্বির আলী প্রতাপপুরী, আরশদ আলী প্রতাপপুরী, আব্দুস সালাম তেলিকুনী , আব্দুল হাই ছাতকী, রইছুদ্দীন হামজাপুরী এবং শফিকুর রহমান পাখিছিরী।[১০]
আরো দেখুনসম্পাদনা
বহি:সংযোগসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "মাদরাসা-সমূহের কোড নম্বরের তালিকা" (pdf)। banbeis.portal.gov.bd/। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো। পৃষ্ঠা ৫০০। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২০।
- ↑ "জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৮"। বিশ্বনাথ: dailybiswanath.com/। ৬ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০।
- ↑ ক খ "অবস্থান"। goo.gl/maps। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৭, ২০২০।
- ↑ ক খ গ "সৎপুর কামিল মাদ্রাসা,বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন"। bangladesh.gov.bd/index.php। জুলাই ১০, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৭, ২০২০।
- ↑ ক খ "List of affiliated institutions." (List)। iau.edu.bd (Bangla ভাষায়)। House no-124/90/03, Block-B, Road no- 2, West Dhanmondi, Mohammadpur, Dhaka-1231: Islamic Arabic University। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০।
- ↑ "বহুতল ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন" (অনলাইন নিউজ)। www.sylhetbanglanews.com। লামাকাজী। ২৬ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৭, ২০২০।
- ↑ "হাদিসের খিদমতে সৎপুর মাদরাসার ব্যাপক অবদান"। m.dailyinqilab.com। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৬, ২০২০।
- ↑ "ফুলতলী ছাহেবের কর্মজীবন"। www.fultali.com। ২০০৭। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১০।
- ↑ ক খ "অনার্স কোর্স চালু" (অনলাইন নিউজ)। driknews। লামাকাজী। ১৫ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৭, ২০২০।
- ↑ ক খ আল-হুসাইন সাহিত্য বার্ষিকী - ২০১৭। বিশ্বনাথ, সিলেট। ২০২০-০৭-২৬। পৃষ্ঠা ৯–১০।
- ↑ "Satpur Kamil Madrasah Info"। www.sohopathi.com। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৭, ২০২০।