ফাজিল পরীক্ষা
ফাজিল পরীক্ষা বাংলাদেশ ও ভারতের আলিয়া মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত একটি সরকারি পরীক্ষা। ফাজিল পরীক্ষা বাংলাদেশে ডিগ্রি সমমানের, কখনো স্নাতক সমমানের একটি পরীক্ষা, যা একটি ফাজিল মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে ভারতে ফাজিল পরীক্ষাকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর (১১ বা ১২ ক্লাস) মান বলে বিবেচিত করা হয়।[১][২] ফাজিল পরীক্ষা বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের সরকারি স্বীকৃত আলিয়া মাদরাসায় প্রচলিত রয়েছে। বাংলাদেশের ফাজিল পরীক্ষা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ও ভারতের ফাজিল পরীক্ষা পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৪৭ সালে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা ঢাকায় স্থানান্তরের পূর্বে বাংলাদেশ ও ভারতের ফাজিল পরীক্ষা কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার অধীনে অনুষ্ঠিত হতো। ফাযিল পরীক্ষা বর্তমানে ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। যা পূর্বে মাদ্রাসা বোর্ড ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধীনে অনুষ্ঠিত হত। মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে ১৯৪৮ সালে মাদ্রাসা বোর্ডের ফাজিলগুলো পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত হতো। ১৯৭৫ সালের কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশে মাদ্রাসা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসাসমূহে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও বহুমুখী পাঠ্যসূচি প্রবর্তিত করা হয়। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত ফাজিল পরীক্ষায় এই পাঠ্যসুচী কার্যকর হয়। এই শিক্ষা কমিশন অনুসারে ফাজিল শ্রেণীতে ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ পাঠ্যসূচী অন্তর্ভুক্ত করে ফাজিল পরীক্ষাকে সাধারণ উচ্চ মাধ্যমিক এইচ এস সির সমমান ঘোষণা করা হয়।[৩]
১৯৭৮ সালে অধ্যাপক মুস্তফা বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিনিয়র মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির নির্দেশনায় ১৯৮৪ সালে সাধারণ শিক্ষার স্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা স্তরের সামঞ্জস্য করা হয়। ফাজিল স্তরকে ২ বছর মেয়াদী কোর্সে উন্নিত করে, মোট ১৬ বছর ব্যাপী আলিয়া মাদ্রাসার পূর্ণাঙ্গ আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এই কমিশনের মাধ্যমেই সরকার ফাজিল পরীক্ষাকে সাধারণ ডিগ্রি মান ঘোষণা করে।[৪]
বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত
সম্পাদনা২০০৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের আলিয়া সকল মাদ্রাসার সমস্ত পরীক্ষা বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড আলিয়া মাদ্রাসা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করত। ২০০৬ সালের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী আইন, ২০০৬ মোতাবেক আলিয়া মাদ্রাসার ফাজিলকে (স্নাতক ডিগ্রি) ২ বছর থেকে ৩ বছর মেয়াদী কোর্স পরিকল্পনা করা হয়। বাংলাদেশের ১,০৮৬টি ফাজিল মাদ্রাসা (স্নাতক ডিগ্রি) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার অধিভুক্ত হয়।[৫] এবং কিছু ক্ষেত্রে ফাজিল ও কামিল উভয় পরীক্ষা একত্রে সাধারণ শিক্ষার পূর্ণ স্নাতক ডিগ্রির সমমান বলে বিবেচিত হতে থাকে, কতক ক্ষেত্রে শুধু ফাজিল পরীক্ষাই স্নাতক সমমান বলে বিবেচিত হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ২০১০ সালে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ৩১টি মাদ্রাসায় স্নাতক সমমান কোর্স চালু করে হয়,[৬] এরফলে এই ৩১টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা শুধু স্নাতক ফাজিল পূর্ণ করেই পূর্ণ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার সুযোগ লাভ করে। তখনো এসব মাদ্রাসায়ও ফাজিল ডিগ্রি কোর্স চালু ছিলো।
এরপরে ২০১৬ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও আধুনিকরন করার জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়[৭], এবং হলে আলিয়া মাদ্রাসাসমূহ সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়।[৮] ২০১৬ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আরো ২১টি মাদ্রাসায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু করে।[৯] বর্তমানে মোট ৮৬টি মাদ্রাসায় ফাজিল স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু আছে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ মৈত্র, বিদ্যুৎ। "মাদ্রাসায় সেরার শিরোপা ফের পেল মুর্শিদাবাদই"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৮।
- ↑ "About Us – WEST BENGAL BOARD OF MADRASAH EDUCATION" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৯।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "মাদ্রাসাশিক্ষার ধারা ও উপধারা"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৯।
- ↑ "মাদ্রাসা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৯।
- ↑ "আলিয়া মাদরাসার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ"। lekhapora24.net। ২০২১-০৮-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৭।
- ↑ "আলিয়া মাদ্রাসা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৯।
- ↑ লেখা। "২০২১–এর ফাজিল পরীক্ষা ২০২২–এ হবে তো?"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-২৪।
- ↑ "মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রত্যাশা"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১০।
- ↑ "অনার্স কোর্স চালু হচ্ছে আরও ২১ মাদ্রাসায়"। Bangla Tribune। ২০২১-০৮-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৬।