স্বামী বোধানন্দ ( ১৮৭১ - ১৮ মে ১৯৫০) ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের একজন সন্ন্যাসী। তিনি ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ হতে আমৃত্যু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেদান্ত প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন।[] তার পূর্বাশ্রমের তথা পিতৃদত্ত নাম ছিল হরিপদ চট্টোপাধ্যায়।

স্বামী বোধানন্দ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৮৭১
বাগান্ডা হুগলি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ভারত)
মৃত্যু১৮ মে ১৯৫০
ধর্মহিন্দুধর্ম
ক্রমরামকৃষ্ণ মিশন
দর্শনঅদ্বৈত বেদান্ত
ধর্মীয় জীবন
গুরুস্বামী বিবেকানন্দ

হরিপদ চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বাগান্ডা গ্রামে ১২৭৮ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসের অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে। পণ্ডিত ন্যায়বাগীশ পিতা শিবনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও মাতা মোক্ষদার পাঁচ পুত্রসন্তানের দ্বিতীয় ছিলেন তিনি।[] প্রথমদিকে কিছুদিন হরিপদ যখন কলকাতার মেট্রোপলিটন স্কুলের ছাত্র ছিলেন, তখন নরেন্দ্রনাথ (পরবর্তীতে স্বামী বিবেকানন্দ) ওই স্কুলে কয়েক সপ্তাহ প্রধান শিক্ষক ছিলেন (১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে)। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি জগৎবল্লভপুর হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন।[] অত্যন্ত মেধাবী হরিপদর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি সমস্ত চেম্বার ডিকশনারি মুখস্থ করেছিলেন। এন্ট্রান্স পাশের পর তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে এফ.এ ও বি.এ পাশ করেন। রিপন কলেজে পড়াশোনার সয়য় থেকেই কিছু বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে কাঁকুড়গাছির যোগদ্যান এবং বরানগর মঠে যাতায়াত শুরু করেন। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পাশের পর তিনি জয়রামবাটিতে সারদা মা'র কাছে মন্ত্রদীক্ষা নেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ হতে তিন বছর তিনি জগৎবল্লভপুর হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে স্বামী বিবেকানন্দের সাথে তার সাক্ষাত হয়। তিনি রামকৃষ্ণ ভাবধারা তথা আদেশে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত হন। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বামী বিবেকানন্দর কাছে সন্ন্যাস নিয়ে স্বামী বোধানন্দ নামে পরিচিত হন। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে আধ্যাত্মিক অনুশীলন ও তীর্থ ভ্রমণের যাত্রা করেন। বারাণসীতে স্বামী বিবেকানন্দের সাথে সাক্ষাতের পর বেলুড় মঠে ফেরেন। রামকৃষ্ণ মিশনের প্রথম অধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দ অসুস্থ হলে তার সেবা ও পাশে থাকেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দেই তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ট্রাস্টিদের একজন সদস্য হন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কিছুদিনের জন্য ব্যাঙ্গালোর শাখার অধ্যক্ষ পদে থাকেন। পরে স্বামী ব্রহ্মানন্দের আদেশে বেদান্ত প্রচারার্থে ও স্বামী অভেদানন্দ কে সহায়তা করার জন্য ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল মুম্বই হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা করেন। মে মাসে নিউ ইয়র্ক পৌঁছান। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে পিটসবার্গে বেদান্ত প্রচারে বিশেষভাবে সফল হন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে নিউ ইয়র্কে বেদান্ত সোসাইটির দায়িত্ব নিয়ে সন্ন্যাসীর ঐতিহ্যবাহী কঠোর জীবনযাপনে আমেরিকায় বেদান্ত আন্দোলনের ইতিহাস রচনা করেন। নিউ ইয়র্কে বেদান্ত সোসাইটির বর্তমান ভবন তার নিরলস প্রচেষ্টার কারণে অধিগ্রহণ সম্ভব হয়। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি তার ভারত আগমনে মুম্বইয়ে তিনি নাগরিক সম্বর্ধনা পান। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে এক কলকাতাবাসীদের দ্বারা সংবর্ধিত হন। ২৮ জানুয়ারি বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দ মন্দির উদ্ঘাটনে এক স্মরণীয় বক্তৃতা প্রদান করেন। এরপর কিছুদিন স্বামী শিবানন্দের সঙ্গে দক্ষিণ ভারত সফর করেন। ব্যাঙ্গালোরের জনগণ এমনকী সেখানকার কারাবন্ধীরাও তাকে অভিনন্দিত করেন। শেষে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুলাই নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পরবর্তী ছাব্বিশ বৎসর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বেদান্ত প্রচার ও বেদান্ত শিক্ষাদানে নিযুক্ত ছিলেন।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মে নিউ ইয়র্কের রুজভেল্ট হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

নিউ ইয়র্ক বেদান্ত সোসাইটির সদস্য ও অনুগামীরা তার বক্তৃতার এক সংগ্রহ - লেকচার অন বেদান্ত ফিলোসফি প্রকাশ করেন। তার আত্মজীবনীমূলক নিবন্ধ আমার শ্রীরামকৃষ্ণ সংঙ্ঘে যোগদান উদ্বোধনে প্রকাশিত হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৫০৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "Swami Bodhananda - VivekaVani"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-০৯