স্পর্শ (চলচ্চিত্র)
স্পর্শ হল সাঁই পরঞ্জপে পরিচালিত ১৯৮০ সালের হিন্দি ভাষার ভারতীয় কাহিনী চিত্র। এতে অভিনয় করেছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ্ এবং শাবানা আজমি। তাঁরা ছিলেন অন্ধদের জন্য একটি বিদ্যালয়ের দুই চরিত্র। একজন অভিনয় করেছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অধ্যক্ষের চরিত্রে এবং অন্যজন সেই বিদ্যালয়েরই দৃষ্টি সম্পন্না শিক্ষিকা। চরিত্র দুটি প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়েছিল কিন্তু তাদের সম্পর্কে জটিলতা এসে পড়ে। কিন্তু তারা সব অতীত ভুলে ভালবাসার "স্পর্শ" দিয়ে নতুন করে সংযুক্ত হবার লড়াই চালায়। এই ছবিটি প্রধান দুই অভিনেতার সূক্ষ্ম অভিনয়ের জন্য সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে আছে। এছাড়াও এই চলচ্চিত্রে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন বিষয়টিকেও খুব সাবধানে দেখানো হয়েছিল, "অন্ধ" এবং "দৃষ্টিশক্তিমান" জগতের মধ্যে সংবেদনশীলতা এবং উপলব্ধির ভিন্নতা, এই দুই চরিত্র দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল।[১][২] ছবিটি শ্রেষ্ঠ হিন্দি ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল।[৩] তবে ছবিটির মুক্তি প্রায় ৪ বছর দেরিতে হয়েছিল।
স্পর্শ | |
---|---|
পরিচালক | সাঁই পরঞ্জপে |
প্রযোজক | বাসু ভট্টাচার্য্য |
রচয়িতা | সাঁই পরঞ্জপে |
শ্রেষ্ঠাংশে | নাসিরুদ্দিন শাহ্ শাবানা আজমি সুধা চোপড়া ওম পুরি |
সুরকার | কানু রায় |
চিত্রগ্রাহক | বীরেন্দ্র সৈনি |
সম্পাদক | ওম প্রকাশ মাক্কার |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১৪৫ মিনিট |
ভাষা | হিন্দি/উর্দু |
ছবিটি অনেকগুলি পুরস্কার জিতেছিল, যার মধ্যে ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার - সেরা অভিনেতা বিভাগে নাসিরুদ্দিন শাহ্ এবং সেরা চিত্রনাট্য বিভাগে সাঁই পরঞ্জপের পুরস্কার লাভ। ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে, শীর্ষ দুটি পুরস্কার এই ছবিটি জিতেছিল। সেদুটি হল শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে। তাছাড়াও সাঁই পরঞ্জপে শ্রেষ্ঠ সংলাপ বিভাগে পুরস্কার পেয়েছিলেন। শাবানা আজমি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে মনোনীত হয়েছিলেন, তবে এই ছবির জন্য না পেয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত ভাবনা ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার জিতেছিলেন।
সংক্ষিপ্তসার
সম্পাদনাএই চলচ্চিত্রটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে, বিশেষত অন্ধ শিশু এবং তাদের বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের জীবন এবং অনুভূতি সম্পর্কে। সংবেদনশীলতা এবং স্পর্শের অনুভূতি, যার ওপর দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষ নির্ভর করে, তাকেই এই ছবিতে স্পর্শ বলে বোঝানো হয়েছে।
এই গল্পে অনিরুদ্ধ পারমার (নাসিরুদ্দিন শাহ্) নবজীবন অন্ধ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ। সেখানে প্রায় ২০০ অন্ধ শিশু শিক্ষা লাভ করে। অনিরুদ্ধের জীবন অন্ধকারময় এবং সে ভীষণ একাকী। একদিন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময়, খুব সুন্দর গান শুনে সে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার বদলে মন্ত্রমুগ্ধের মত গায়িকার দরজায় গিয়ে হাজির হয়।
গায়িকা কণ্ঠটি ছিল কবিতা প্রসাদের (শাবানা আজমি), যে তিন বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়ে সম্প্রতি স্বামীকে হারিয়েছে। কবিতাও নির্জনে একাকী থাকা পছন্দ করে। শৈশবের বন্ধু মঞ্জুর (সুধা চোপড়া) সঙ্গেই একমাত্র তার বন্ধুত্ব আছে।
মঞ্জুর করা একটি ছোট্ট আনন্দানুষ্ঠানে কবিতা এবং অনিরুদ্ধের আবার দেখা হয়। অনিরুদ্ধ কবিতার কণ্ঠস্বর থেকে তাকে চিনতে পারে। কথোপকথনের সময়, অনিরুদ্ধ জানায় যে বিদ্যালয়টি কিছু স্বেচ্ছাসেবীর সন্ধান করছে, যারা শিশুদের পড়ে এবং গান গেয়ে শোনাবে, হস্তশিল্প শেখাবে এবং তাদের সাথে সময় কাটাবে। প্রথমে কবিতা রাজী ছিলনা, তবে মঞ্জু এবং তার স্বামী সুরেশ তাকে এটি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করে। কবিতা স্বেচ্ছাশ্রম দেবার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিদ্যালয়ে বেশি সময় কাটাতে কাটাতে, কবিতার অনিরুদ্ধের সাথে বন্ধুত্ব শুরু হয়। সময়ের সাথে বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয় এবং তারা বিবাহের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। কিন্তু তাদের ব্যক্তিত্ব এবং অনুভূতি আলাদাই ছিল। অনিরুদ্ধ দৃঢ় চরিত্রের মানুষ। সে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে অন্ধদের সাহায্যের প্রয়োজন কিন্তু করুণা বা দান নয়। (একবার, অফিসে থাকার সময়, কবিতা তাকে কফি তৈরি করতে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল। তার অতিথি তার প্রতিবন্ধকতার কথা ভেবে তাকে স্বাবলম্বী না হতে দিয়ে সাহায্য করতে আসছে এতে সে প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল।) সম্প্রতি , শোকপ্রাপ্ত কবিতা, এই বিদ্যালয়ের (এবং অনিরুদ্ধর) প্রতি তার পরিষেবাকে আদর্শ, ত্যাগমূলক সেবা বলেই মনে করে। অনিরুদ্ধ এই চিন্তাধারা বুঝতে পারে এবং ধরে নেয় কবিতা এই পরিষেবা দানের মাধ্যমে তার জীবনের শূন্যতাকে পূরণ করতে চাইছে। সে ধরে নেয় যে কবিতা বিয়ের প্রস্তাব স্বীকার করেছে প্রণয় থেকে নয়, বরঞ্চ তার অন্ধকার জীবন থেকে বেরিয়ে আসার পথে আত্মত্যাগ হিসাবে। এই সময়, অনিরুদ্ধের সহকর্মী অন্ধ বন্ধু দুবে (ওম পুরি) বলে যে তার সম্প্রতি মৃত স্ত্রী তাদের বিবাহে সুখী ছিলনা।
অনিরুদ্ধ এই সমস্ত কিছু দেখে বিভ্রান্ত ও বিচলিত বোধ করে। সে বিবাহের প্রস্তাব ভেঙে দেয় (তবে কবিতার কাছে এর কোন কারণ সে জানায় নি)। কবিতা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।
এরপর বিদ্যালয়ের বেতনভোগী কর্মচারী হিসাবে কবিতা শিশুদের সাথে সময় কাটাতে থাকে। তার এবং অনিরুদ্ধের মধ্যে প্রাথমিক শীতলতা তাদের মধ্যে মতান্তরের জন্ম দেয় এবং অবশেষে, বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ঘটনা পরম্পরার পর, তারা কখনো নিজেদের মধ্যেকার যে অনুভূতিগুলি নিয়ে আলোচনা করতে পারে নি, সেগুলি তাদের সামনে চলে আসে। পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হয়ে ওঠে এবং এমন অবস্থা দাঁড়ায় যখন দুজনের মধ্যে একজনকে অবশ্যই বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যেতে হবে।
অনিরুদ্ধ এবং কবিতার একে অপরের প্রতি তাদের অনুভূতির গভীরতাকে 'স্পর্শ' করা এবং অবশেষে উপায় খুঁজে বার করার মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্রটি সমাপ্ত হয়।
চরিত্র চিত্রণ
সম্পাদনা- শাবানা আজমি - কবিতা
- নাসিরুদ্দিন শাহ্ - অনিরুদ্ধ পারমার
- সুধা চোপড়া - মঞ্জু
- মোহন গোখলে - জগদীশ
- প্রাণ তলওয়ার
- অরুণ জোগলেকার
- ওম পুরি - দুবে
প্রযোজনা
সম্পাদনাচিত্রগ্রহণ
সম্পাদনাচলচ্চিত্রটির বেশিরভাগ অংশের চিত্রগ্রহণ হয়েছিল নতুন দিল্লির ব্লাইন্ড রিলিফ অ্যাসোসিয়েশনে এবং অনিরুদ্ধের চরিত্রটি মিঃ মিত্তালের ধাঁচে করা হয়েছিল, যিনি ব্লাইন্ড রিলিফ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।[৪]
পুরস্কার
সম্পাদনাসঙ্গীত
সম্পাদনাস্পর্শ এর সংগীত পরিচালনা করেছিলেন প্রবীণ সংগীত পরিচালক কানু রায় এবং গানের কথা ইন্দু জৈনের।[৬]
গান | গায়ক |
---|---|
"সঙ্গীতানুষ্ঠান" (সরোদ) | আমজাদ আলি খান |
"গীতোঁ কি দুনিয়া মেঁ সরগম" | সুলক্ষ্মণা পণ্ডিত |
"খালি পিয়ালা ধুন্ধলা দর্পণ" | সুলক্ষ্মণা পণ্ডিত |
"পিয়ালা ছলকা উজলা দর্পন" | সুলক্ষ্মণা পণ্ডিত |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ http://www.filmigeek.net/2007/02/sparsh_1980.html
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ "National Film Awards (1979)"। ২২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ Kahlon, Sukhpreet। "Sai Paranjpye's Sparsh (1980): Rethinking education for the differently abled"। Cinestaan.com। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টে ২০১৮।
- ↑ "Best Dialogue Writer (Technical Awards)" lists winners of this award from 1958 through 1999, Indiatimes
- ↑ "Sparsh songs"। ৫ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২০।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে Sparsh (ইংরেজি)