সংহতি বা সেট(Set) হলো বাস্তব বা চিন্তাজগতের সু-সংজ্ঞায়িত বস্তুর সমাবেশ। অন্যভাবে, বাস্তব বা চিন্তা জগতের বস্তুর যেকোনো সুনির্ধারিত সংগ্রহকে সংহতি বা সেট বলে।[][][]

ইউলারের ডায়াগ্রাম অনুযায়ী বহুভুজের একটি সেট

কোনো সেট গঠন করতে হলে যে শর্ত পূরণ করতে হয়, তা হলো যে কোনো বস্তু সেটটির সদস্য কি না তা কোনো দ্ব্যর্থতা ছাড়া নিরূপণ করা যাবে।

জার্মান গণিতবিদ জর্জ ক্যান্টর (১৮৪৫–১৯১৮) সেট সর্ম্পকে প্রথম ধারণা ব্যাখ্যা করেন। তিনি অসীম সেটের ধারণা প্রদান করেন।[]

এখানে হলো সেট। হলো সেটের উপাদান।

সেটের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেট হবার জন্য দুটো শর্ত পালন করতে হয়। শর্ত দুটি হচ্ছে–

  • সুনির্দিষ্টতা হওয়া: প্রথমে সেট হবার জন্য উপাদানগুলো সুনির্দিষ্ট হতে হবে। অর্থাৎ উপাদানগুলোর মাঝে কোনো না কোনো মিল থাকতে হবে। উক্ত উদাহরণে, ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর।
  • সু-সংজ্ঞায়িত হওয়া: সেটের সংজ্ঞায় এমন কোনো বর্ণনা ব্যবহার করা যাবে না যা নিয়ে কোনো প্রকার মতভেদ থাকতে পারে।

সেটের উপাদান

সম্পাদনা

যেসকল বস্তু নিয়ে সেট গঠিত, তাদেরকে ঐ সেটের উপাদান বা সদস্য বলা হয়। সেটের প্রত্যেক বস্তু বা সদস্যকে সেটের উপাদান (elements of set) বলা হয়। সেটের উপাদানগুলোকে সাধারণত কমা (,) দ্বারা আলাদা করা হয়। সেট প্রকাশের জন্য ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর (যেমন- A,B,C.....X, Y, Z) ব্যবহার করা হয়। সেট প্রকাশের জন্য সবসময় দ্বিতীয় বন্ধনী ( ) ব্যবহার করা। কোনো সেটের উপাদানকে ‘ ’ (Belongs to) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আর সেটের উপাদান নয় বুঝাতে ‘ ’ (Not belongs to) ব্যবহার করা হয়।

সেটের প্রকাশের পদ্ধতি

সম্পাদনা

সেটকে সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়:

  • তালিকা পদ্ধতি (Roster Method বা Tabular Method)
  • সেট গঠন পদ্ধতি (Set Builder Method বা Rule Method)

তালিকা পদ্ধতি

সম্পাদনা

সেটকে তালিকার সহায্যে বর্ণনা করাকে তালিকা পদ্ধতি বলা হয় । পদ্ধতিতে প্রকাশের জন্য দ্বিতীয় বন্ধনী ব্যবহার করা হয়। বন্ধনীর অভ্যন্তরে উপাদানগুলোকে আলাদা ভাবে লিখা হয়। উদাহরণ:  

সেট গঠন পদ্ধতি

সম্পাদনা

সেট গঠন পদ্ধতিতে উপাদানগুলোর মধ্যে মিলসমূহ বন্ধনীর অভ্যন্তরে প্রকাশ করা হয়। এখানেই সু-সংজ্ঞায়িত হওয়ার বৈশিষ্ট্য লুকায়িত। পূর্বে প্রকাশিত সেটকে সেট গঠন পদ্ধতিতে প্রকাশের জন্য উপাদানগুলোর মধ্যে মিল দ্বারা লেখা হয়। অর্থাৎ, সকল উপাদান সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকে না। উপাদান নির্ণয়ে জন্য সাধারণ ধর্মের উল্লেখ থাকে। এক্ষেত্রে লিখার নিয়ম হলো: A= {x:x সকল ইংরেজি স্বরবর্ণ}, উচ্চারণ করা হয়: x যেন x সকল ইংরেজি স্বরবর্ণ।

বিশেষ সংখ্যা সেট

সম্পাদনা
  •   বা   : স্বাভাবিক সংখ্যার সেট । যেমন:  
  •   বা   : সকল পূর্ণসংখ্যার সেট । যেমন:  
  •   বা   : সকল পরিমেয় সংখ্যার সেট ।  +a/b :    পূর্ণসংখ্যা এবং   ≠ 0  
  •   বা   : বাস্তব সংখ্যার সেট ।

ফাঁকা সেট

সম্পাদনা

কোন উপাদান নেই তাকে ফাঁকা সেট বলে । ফাঁকা সেটকে ∅ অথবা   দ্বারা প্রকাশ করা হয় । যেমন:   মৌলিক সংখ্যা এবং   ইত্যাদি ।[]

সসীম সেট বা সান্ত সেট

সম্পাদনা

সেটের উপাদান সংখ্যা যদি নির্দিষ্ট হয় তবে তাকে সসীম সেট বলে। কোনো সেট   সসীম না হলে, একে অসীম সেট বলা হয় । যেমন:  । এটা সসীম সেট, কারণ এর উপাদান 4 টি যা নির্দিষ্ট। এই গণনার কাজ   সেটের সঙ্গে   সেটের একটি এক-এক মিল স্থাপন করে সম্পন্ন করা হয় । যেমন:

 

১. ফাঁকা সেট সান্ত সেট, এর সদস্য সংখ্যা 0 ।

২. যদি কোনো সেট   এবং   সমতুল হয়, যেখানে   ,তবে   একটি সান্ত সেট এবং   এর সদস্য সংখ্যা  []

৩.  কোনো সান্ত সেট হলে,   এর সদস্য সংখ্যাকে   দ্বারা সূচিত করা হয় ।

অসীম সেট বা অনন্ত সেট

সম্পাদনা

যে সেটের উপাদান সংখ্যা গণনা করে শেষ করা যায় না, তাকে অসীম সেট বলে। যেমন:   সকল বিজোড় সংখ্যার সেট , সকল স্বাভাবিক সংখ্যার সেট  । মূলদ সংখ্যার সেট  +a/b :    পূর্ণসংখ্যা এবং   ≠ 0  , বাস্তব সংখ্যার সেট  , পূর্ণ সংখ্যার সেট  ইত্যাদি অসীম সেট ।


শক্তি সেট

সম্পাদনা

  সেটের সকল উপসেটের সেটকে   এর পাওয়ার সেট বা শক্তি সেট বলা হয় এবং   দ্বারা নির্দেশ করা হয় । শক্তি সেটের উপাদান সংখ্যা   দ্বারা সংজ্ঞায়িত যেখানে   সেটের উপাদান সংখ্যা এবং অবশ্যই স্বাভাবিক সংখ্যা

সেটের সংযোগ

সম্পাদনা

   সেট হলে এদের সংযোগ সেট হচ্ছে   অথবা  

সার্বিক সেট

সম্পাদনা

আলোচনা সংশ্লিষ্ট সকল সেট একটি নির্দিষ্ট সেটের উপসেট । যেমন:   সেটটি   এর একটি উপসেট । এখানে   সেটকে   সেটের সাপেক্ষে সার্বিক সেট বলে । সুতরাং আলোচনা সংশ্লিষ্ট সকল সেট যদি একটি নির্দিষ্ট সেটের উপসেট হয় তবে ঐ নির্দিষ্ট সেট কে তার উপসেটের সাপেক্ষে সার্বিক সেট বলে । সার্বিক সেটকে সাধারণত   দ্বারা প্রকাশ করা হয় । যেমন: সকল জর স্বাভাবিক সংখ্যার সেট   এবং সকল স্বাভাবিক সংখ্যার সেট   হলে   সেটের সাপেক্ষে সার্বিক সেট হবে  

সেটের সমতা

সম্পাদনা

   সেট যদি এমন হয় যে এদের উপাদানগুলো একই তবে    একই সেট এবং তা   লিখে প্রকাশ করা হয় । যেমন:   ,  

ছেদ সেট

সম্পাদনা

  এবং   এর ছেদ সেট হলো এমন একটি সেট যা শুধুমাত্র   এবং   এর সাধারণ সদস্যদের নিয়ে গঠিত। অর্থাৎ কোনো বস্তু   এর সেটটির সদস্য যদি এবং কেবল যদি তা   এবং   উভয়ের সদস্য হয়। অর্থাৎ   এবং  

 
 
   
 
 
   
 
 

নিশ্ছেদ সেট

সম্পাদনা

যদি    এমন হয় যে   ∅, তবে    কে নিশ্ছেদ সেট বলা হয়।

সেট তত্ত্ব

সম্পাদনা

সেট তত্ত্ব গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞানের একটি শাখা যাতে বস্তুসমূহের সমাবেশ বা সংগ্রহ এবং এদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বাস্তব বা চিন্তাজগতের সু-সংজ্ঞায়িত বস্তুসমূহের সমাবেশ বা সংগ্রহকে ইংরেজিতে "সেট" (Set) বলে। যেমন: বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে তিনটি পাঠ্য বইয়ের সেট, প্রথম দশটি বিজোড় সংখ্যার সেট, পূর্ণ সংখ্যার সেট, বাস্তব সংখ্যার সেট ইত্যাদি। প্রায় সব গাণিতিক ধারণার সংজ্ঞাতে সেট তত্ত্বের ভাষা ব্যবহার করা যেতে পারে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. P. K. Jain; Khalil Ahmad; Om P. Ahuja (১৯৯৫)। Functional Analysis। New Age International। পৃষ্ঠা 1। আইএসবিএন 978-81-224-0801-0 
  2. Samuel Goldberg (১ জানুয়ারি ১৯৮৬)। Probability: An Introduction। Courier Corporation। পৃষ্ঠা 2। আইএসবিএন 978-0-486-65252-8 
  3. Thomas H. Cormen; Charles E Leiserson; Ronald L Rivest; Clifford Stein (২০০১)। Introduction To Algorithms। MIT Press। পৃষ্ঠা 1070। আইএসবিএন 978-0-262-03293-3 
  4. নবম-দশম শ্রেণির গণিত পাঠ্যপুস্তক (অধ্যায় ২, সেট ও ফাংশন, পৃষ্ঠা নং ২১)। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB), বাংলাদেশ। ২০১৮। পৃষ্ঠা ৩৫৬। 
  5. নবম-দশম শ্রেণি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বাংলাদেশ। ২০২১। পৃষ্ঠা ২৪। 
  6. উচ্চতর গণিত নবম-দশম শ্রেণী। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। ২০২১। পৃষ্ঠা ১৩। 

আরও দেখুন

সম্পাদনা