সিমলাপাল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার একটি শুমাড়ি শহর

সিমলাপাল (ইংরেজি: Simlapal) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার খাতড়া মহকুমায় অবস্থিত সিমলাপাল সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের পুলিশ থানাসহ একটি শুমারি শহর

সিমলাপাল
পশ্চিম বঙ্গের শুমারি শহর
সিমলাপাল পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
সিমলাপাল
সিমলাপাল
সিমলাপাল ভারত-এ অবস্থিত
সিমলাপাল
সিমলাপাল
Location in West Bengal, India
স্থানাঙ্ক: ২২°৫৫′২১.৭″ উত্তর ৮৭°০৪′২৪.২″ পূর্ব / ২২.৯২২৬৯৪° উত্তর ৮৭.০৭৩৩৮৯° পূর্ব / 22.922694; 87.073389
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিম বঙ্গ
জেলাবাঁকুড়া জেলা
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৭,২০৬
ভাষা সমূহ
 • অফিসিয়ালবাংলা, ইংরেজি
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০)
পিআইএন৭২২১৫১ (সিমলাপাল)
টেলিফোন কোড০৩২৪৩
লোকসভাবাঁকুড়া
বিধানসভাতালডাংরা বিধানসভা কেন্দ্র

ইতিহাস সম্পাদনা

আদি সিমলাপালের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন সিমলাপালের রাজ পরিবারের সদস্যরা। আগেকার দিনে গড় সিমলাপাল হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৮৭৫ বঙ্গাব্দে বা ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে। তখন দিল্লির সুলতান ছিলেন বহলাল খান লোদি, উড়িষ্যার গজপতি ছিলেন পুরুষোত্তম দেব এবং বাংলার শাসক ছিলেন রুকনুদ্দিন বারবক শাহ। আগেকার দিনে এই সিমলাপাল এলাকা উড়িষ্যার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৪৫০ সাল নাগাদ নকুড় তুঙ্গ রাইপুর এলাকায় দলবল সমেত আসেন। তিনি তাঁর সেনাপতি ও প্রধান পুরোহিত শ্রীপতি মহাপাত্র কে সিমলাপাল পরগনা দান করেন। শ্রীপতি মহাপাত্রই সিমলাপাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর রাজত্বকাল ছিল ৮৭৫ বঙ্গাব্দ থেকে ৯০১ বঙ্গাব্দ। সিমলাপালের শেষ রাজা ছিলেন শ্যামসুন্দর সিংহচৌধুরী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে সিমলাপাল এলাকার সভ্যতার বিকাশ,শিক্ষা এবং সংস্কৃতির উন্নয়ন অনেকাংশেই রাজ পরিবারের হাত ধরেই হয়েছিল। সিমলাপালে মোট রাজা বা জমিদার ছিলেন ১৮ জন। সিমলাপালের সপ্তদশ রাজা মদনমোহনের নামেই সিমলাপাল মদনমোহন হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সিমলাপাল রাজবংশ: সিমলাপাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয় ৮৭৫ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে। প্রথম রাজা শ্রীপতি মহাপাত্র। জমিদারি প্রথা রদ হয় ১৩৬২ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ। প্রায় ৪৯০ বছরের রাজত্বকালের মধ্যে সিমলাপালে জমিদার বা রাজা ছিলেন মোট ১৮ জন। সিমলাপালের রাজ পরিবারের সদস্য বলগোবিন্দ সিংহবাবুর একটি কবিতায় সিমলাপাল রাজবংশের পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়।[১]

জনসংখ্যা সম্পাদনা

২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে সিমলাপাল শহরের মোট জনসংখ্যা ছিল ৭,২০৬ জন; যার মধ্যে ৩,৬৯৩ (৫১%) পুরুষ এবং ৩,৫১৩ (৪৯%) মহিলা ছিলেন। জনসংখ্যার ৬ বছরের নিচে ছিল ৯২৭। সিমলাপালে মোট সাক্ষর ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৪,৩৭৪ (৬ বৎসর বয়সী জনসংখ্যার ৬৯.৬৬%)।[২]

থানা ও সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক সম্পাদনা

সিমলাপাল থানাটি সিমলাপাল সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অধীনস্থ। এই থানার আয়তন ৩০৯.২৭ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১,২৭,৪২৯ জন।[৩][৪] সিমলাপাল সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সদর দফতর সিমলাপালে অবস্থিত।[৫]

পরিবহন সম্পাদনা

রাজ্য হাইওয়ে ২ (পশ্চিমবঙ্গ) বাঁকুড়া থেকে মালঞ্চা (উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায়) এবং রাজ্য হাইওয়ে ৯ (পশ্চিমবঙ্গ) দুর্গাপুর (পাশ্চিম বর্ধমান জেলার মধ্যে) দিয়ে নয়গ্রাম (ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্যে) হয়ে সিমলাপাল দিয়ে যায়।[৬]

শিক্ষা সম্পাদনা

সিমলাপাল কলেজ অফ এডুকেশন একটি বেসরকারী অ-সহায়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই কলেজ স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করে। এটি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ২০১২ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে[৭][৮] সিমলাপাল মদন মোহন উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৩৮ সালে সিমলাপালের রাজা মদন মোহন সিংহ চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৯] এছাড়া এখানে একটি বালিকা বিদ্যালয়- সিমলাপাল মঙ্গলময়ী বালিকা বিদ্যামন্দির (এইচএস) এবং কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা সম্পাদনা

সিমলাপাল ব্লক জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সিমলাপালের সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সেবাগার। এর অধীনে তিনটি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রঃ লক্ষ্মীসাগর, হাতিবারি এবং অড়রা এবং ২১ টি উপকেন্দ্র রয়েছে।[১০]

সিমলাপালের স্বাধীনতা সংগ্রামী সম্পাদনা

সিমলাপাল এলাকার বেশ কিছু মানুষ স্বাধীনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন । বিচারে তাঁদের কারাবাসও হয়। ভারত সরকার এঁদের অনেককে তাম্রপত্র দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। সিমলাপাল এলাকার যেসব স্বাধীনতা সংগ্রামী বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তাঁদের নাম এবং গ্রামের নাম উল্লেখ করা হলো।[১১]

  1. চন্দ্রভূষণ সিংহবাবু (সিমলাপাল রাজবাটি)
  2. সতীশচন্দ্র পণ্ডা(দোলদেড়িয়া)
  3. রাজবল্লভ পাঠক (পারুলিয়া)
  4. চন্দ্রমোহন সৎপথী (পারুলিয়া)
  5. বিশ্বেশ্বর সিংহবাবু (মুকুন্দপুর)
  6. ভুবনমোহন সিংহমহাপাত্র (লায়েক পাড়া)
  7. ঈশ্বরচন্দ্র সিংহবাবু (শিয়াজোড়া)
  8. শচীনন্দন সিংহমহাপাত্র(জড়িষ্যা)
  9. বলরাম কর্মকার(লক্ষ্মীসাগর)
  10. পচাই কর্মকার(লক্ষ্মীসাগর)
  11. মোহন রায়(কৃষ্ণপুর)
  12. রজনী রায়(কৃষ্ণপুর)
  13. কৃষ্ণ মল্লিক(কুকড়াকন্দর)
  14. নরহরি পাত্র(বিক্রমপুর)
  15. হারাধন দাশ(বিক্রমপুর)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সিমলাপাল বইমেলা, প্রথম বর্ষ, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ,স্মারক গ্ৰন্থ।
  2. "2011 Census – Primary Census Abstract Data Tables"West Bengal – District-wise। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৬ 
  3. "District Statistical Handbook 2014 Bankura"Tables 2.1, 2.2। Department of Statistics and Programme Implementation, Government of West Bengal। ২৯ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৬ 
  4. "Taldangra PS"। Bankura District Police। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৬ 
  5. "District Census Handbook: Bankura" (পিডিএফ)Map of Bankura with CD Block HQs and Police Stations (on the fifth page)। Directorate of Census Operations, West Bengal, 2011। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৬ 
  6. "List of State Highways in West Bengal"। West Bengal Traffic Police। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৬ 
  7. "Simlapal College of Education"। University of Burdwan। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  8. "Simlapal College of Education"। Hindsikhsha। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  9. "Simlapal Madan Mohan High School"। smm highschool। ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  10. "Status of Health and FW Services in Bankura District"। Chief Medical Officer of Health, Bankura। ১২ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  11. কৃষ্টি কিরণ, চতুর্দশ সংখ্যা ২০২২ পৃ: ২১