সাতারা রাজ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতে একটি স্বল্প সময়ের জন্য স্থায়ী দেশীয় রাজ্য। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ এবং মারাঠাদের মধ্যে হওয়া তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের পরে ব্রিটিশরা এই রাজ্যটি স্থাপন করেন এবং ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে এই রাজ্যটিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজীর বংশধররা এই রাজ্য শাসন করতেন৷ ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানি পেশোয়ার দ্বিতীয় বাজিরাওকে পরাস্ত করলে তারা প্রতাপসিংকে বন্দিমুক্ত করেন, যিনি ছিলেন সাতারা রাজ্যের প্রথম রাজা৷ তার কনিষ্ঠভ্রাতা শাহজী ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে পরাস্ত করে সিংহাসনে আরোহণ করলেও ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি অপুত্রক অবস্থায় মারা যান৷ সেই সময়ে তার দত্তকপুত্রকে কোম্পানি উপযুক্ত শাসক বলে মেনে না নিয়ে ত্রুটিপূর্ণভাবে ঐ রাজ্য দখল করে নেয়৷ [][]

সাতারা রাজ্য

১৮১৮; ২০৬ বছর আগে (1818)–১৮৪৯; ১৭৪ বছর আগে (1849)
জাতীয় পতাকা
১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে সাতারা রাজ্যের মানচিত্র
১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে সাতারা রাজ্যের মানচিত্র
রাজধানীসাতারা
প্রচলিত ভাষামারাঠি (দাপ্তরিক) এবং কন্নড়
ধর্ম
হিন্দুধর্ম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্ম
সরকাররাজতন্ত্র
ছত্রপতি (সম্রাট) 
• ১৮১৮-১৮৩৯
ছত্রপতি প্রতাপসিং ভোঁসলে (প্রথম)
• ১৮৩৯-১৮৪৯
ছত্রপতি শাহজী ভোঁসলে (শেষ)
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠা
১৮১৮; ২০৬ বছর আগে (1818)
• বিলুপ্ত
১৮৪৯; ১৭৪ বছর আগে (1849)
মুদ্রারুপি, পয়সা, শিবরাই
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
মারাঠা সাম্রাজ্য
ভারতে কোম্পানি শাসন
বর্তমানে যার অংশসাতারা জেলা এবং
পুণে জেলা
সাংলী জেলা
সোলাপুর জেলা
বিজয়পুর জেলার অংশবিশেষ

ইতিহাস

সম্পাদনা

মধ্য ভারতে অবস্থিত সাতারা দেশীয় রাজ্যটি ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ছত্রপতি শিবাজী দ্বারা প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত হয়েছিলো৷ ১৮৪৮ অবধি ব্রিটিশ আগ্রাসনের আগে পর্যন্ত এটি মারাঠা ভোঁসলে রাজবংশ দ্বারা শাসিত হতো৷ রাজ্য প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এই রাজ্যের শাসকগণের একাধিকবার দত্তকপুত্র গ্রহণের ঘটনা সামনে আসে৷ রাজাদের এই দত্তকপ্রাপ্ত সন্তানদের ঐসময়ে সাতারার দত্তকী রাজাও বলা হতো৷

শ্রীমন্ত শাহু শিবাজীরাজে ভোঁসলে ছত্রপতি মহারাজ (১৬৮২-১৭৪৯) আদতে দত্তকপুত্র না হলেও ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে দোহরার নিকট মোঘলরা তাঁকে বন্দী করে অবং ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মোঘলদের করদ ও সামন্তরাজ্য হয়ে থাকার শর্তে তিনি মুক্তি পান৷ তিনি তার বৈমাত্রেয় ভ্রাতা শ্রীমন্ত রাজা দ্বিতীয় শাহুশিবাজী ভোঁসলে এবং ঐ সম্পত্তির অধিকারিণী তাঁর স্ত্রীকে পরাস্ত করে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সাতারার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়। ফলস্বরূপ রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হয় এবং দ্বিতীয় শিবাজী নতুন স্বাধীন কোলহাপুর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে ১৭১৪ খ্রিস্টাব্দ অবধি শাসন করেন। দ্বিতীয় শিবাজীর চার স্ত্রী দুই পুত্র এবং চার কন্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি আরো দুটি দত্তকপুত্র গ্রহণ করেন।

মেহেরবান শ্রীমন্ত প্রথম ফতেসিং রাজে সাহেব ভোঁসলে (?-১৭৫৭) ছিলেন জন্মগতভাবে পারুদের প্যাটেল (গ্রামের প্রধান) মেহেরবান সায়াজী লোখাণ্ডের পুত্র ও দ্বিতীয় শিবাজীর দত্তকপুত্র৷ তিনি পরবর্তীকালে সাতারা থেকে পৃথক করা আক্কলকোট রাজ্যে রাজা ঘোষিত হন৷ তার পুত্র শ্রীমন্ত দ্বিতীয় রাজারামরাজে ভোঁসলে ছাত্রপতি মহারাজ সাহেব (১৭২৬-১৭৭৭) নিজেকে সাতারার রাজা হিসেবে নিজেকে অনুসৃত করতে সক্ষম হন। দ্বিতীয় রাজারাম ছিলেন তাঁর পিতা রাজা দ্বিতীয় শাহুশিবাজী ভোঁসলের মরণোত্তর পুত্র৷ তিনি তাঁর বৈমাাত্রেয় ভ্রাতা শাহুশিবাজী ভোঁসলে দ্বারা নিহত হন৷ ১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় শিবাজী তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাজা দ্বিতীয় শাহুশিবাজী ভোঁসলে দ্বারা নিপাতিত হন এবং ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ অবধি আমৃত্যু রাজ সিংহাসনে অধীয়ান থাকেন৷ এইসময়ে তাঁর রাজনৈতিক বাধা দ্বিতীয় শিবাজীর বৈধ সন্তান প্রাথমিকভাবে একটি রাজপুত পরিবারে ও পরে তাঁর পিতার অপর স্ত্রী কৃষ্ণাবাঈয়ের কন্যাদের দ্বারা পালিত হতে থাকে৷ ১৭৪৫ খ্রিস্টাব্দে কাকা শাহুশিবাজী রাজে তাঁকে দত্তক নেন৷ দুই স্ত্রী থাকলেও তিনি ছিলেন নিঃসন্তান৷ তিনি একটি পুত্রসন্তান দত্তক নেন ও নাম দেন যিনি শ্রীমন্ত মহারাজা দ্বিতীয় শাহুরাজে ছত্রপতি মহারাজ সাহেব (?-১৮১০) নামে পরিচিতি পান৷ প্রথম আব্বা সাহেব বা দ্বিতীয় শাহু নামে পরিচিত বিঠোজী ভোঁসলে ছিলেন ওয়াবির শ্রীমন্ত ত্রিম্বুকজী রাজে ভোঁসলের পুত্র, দ্বিতীয় রাজারাম তার মৃত্যুর কিছু পূর্বে ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে দত্তক নেন৷ দ্বিতীয় শাহু তার নিজপুত্র মহারাজা প্রতাপসিং ছত্রপতি মহারাজ সাহেব দ্বারা অনুসৃত হন৷ পরে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা তাঁকে নির্বাসনে পাঠান৷ কিন্তু পরবর্তী রাজা দ্বিতীয় আব্বা সাহেব, জংলিসাহেব ভোঁসলে মহারাজ তথা শ্রীমন্ত মহারাজা তৃতীয় শাহজী ছত্রপতি মহারাজ সাহেবও ছিলেন দত্তকপুত্র৷ তার মৃত্যুর পরে সাতারা রাজ্যের ওপর স্বত্ববিলোপ নীতি আরোপ করা হয় এবং তার দত্তকপুত্র শ্রীমন্ত মহারাজা বেনকুই রাজে ভোঁসলে ছত্রপতি মহারাজকে গদিচ্যুত করা হয়৷ যদিও তাঁকে আজীবন শাসক উপাধিতে ভূষিত করার অধিকার দেওয়া হয়েছিলো৷ []

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Kulkarni, Sumitra (১৯৯৫)। The Satara raj, 1818-1848 : a study in history, administration, and culture (1st সংস্করণ)। New Delhi: Mittal Publications। পৃষ্ঠা 2–3। আইএসবিএন 9788170995814 
  2. Ramusack, Barbara N. (২০০৭)। The Indian princes and their states (Digitally print. version. সংস্করণ)। Cambridge: Cambridge Univ. Press। পৃষ্ঠা 81–82। আইএসবিএন 978-0521039895। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৬ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০