সত্যকিঙ্কর দত্ত (ফেব্রুয়ারি ১৯০৮ - ১৩ ডিসেম্বর ১৯২৯ ) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী ও মুক্তিযোদ্ধা। [১] ঝালদার বিখ্যাত লাঠিয়াল সত্যকিঙ্কর স্বাধীনতা আন্দোলনে মানভূম জেলার (অধুনা পুরুলিয়া জেলার) প্রথম শহীদ হন।


সত্যকিঙ্কর দত্ত
জন্ম(১৯০৮-০২-০০) ফেব্রুয়ারি ১৯০৮
মৃত্যু১৩ ডিসেম্বর ১৯২৯(1929-12-13) (বয়স ২১)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

জীবনী সম্পাদনা

সত্যকিঙ্কর দত্তের জন্ম ১৩১৪ বঙ্গাব্দের ১ ফাল্গুন (১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মানভূম জেলার ঝালদা শহরে। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তর আহ্বানে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হন। ঝালদা শহরের কয়েকজন বাসিন্দা সেবাদাস ডোম, শিবশরণ লাল জয়সওয়াল, প্রেমচাঁদ মোদক প্রমুখ কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিবর্গের আয়োজনে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ও ২৮ এপ্রিল মানভূমের ঝালদায় দ্বিতীয় রাজনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ -সহ অনেক বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। যুবকর্মী সত্যকিঙ্কর সম্মেলনের একজন স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন। সম্মেলনের পরে ঝালদায় স্বদেশি আন্দোলন বাড়তে থাকে। সত্যকিঙ্কর স্থানীয় যুবকের সংঘবদ্ধ করতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ঝালদা শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে গোকুলনগর, চাতামঘুটু ও নতুনডি গ্রামের মধ্যস্থলে পলাশ জঙ্গলে বেদি স্থাপন করে আয়োজন করেন কালীপূজার[২] আর সহযোগী বন্ধুদের লাঠি খেলা প্রশিক্ষণের। ঝালদা-বাঘমুন্ডি এলাকায় কৃষক-শ্রমিক সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার দায়িত্বে ছিলেন। ঝালদায় কৃষক আন্দোলন বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটিশ শাসকের পক্ষে থাকা স্থানীয় রাজা হরিহর সিং ক্ষিপ্ত হন। ইংরেজ শাসকও আন্দোলন দমন করতে সচেষ্ট হয়। এক ষড়যন্ত্রে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর এক আততায়ী বিষমাখানো কুঠার দিয়ে সত্যকিঙ্করকে পেছন থেকে আঘাত করে। তিন দিন পর ১৩ ডিসেম্বর (১৩১৪ বঙ্গাব্দের ২৭ অগ্রহায়ণ) পুরুলিয়ার হাসপাতালে মারা যান সত্যকিঙ্কর।[৩] সত্যকিঙ্করের এই মৃত্যুতে আর শাসকের নিস্পৃহতায় মানভূমের জনগণ ক্ষিপ্ত হয়। ঝালদার যুববৃন্দ এক মাস পরেই ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি সত্যঘাট মেলার (বা সত্য মেলা) আয়োজন করে এবং সত্যকিঙ্করের চিতাশয্যার উপর উপেন্দ্রমোহন দাশগুপ্তর উপস্থিতিতে জীমূতবাহন সেন মানভূম জেলায় স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম শহিদ সত্যকিঙ্করের স্মৃতিতে মন্দির স্থাপন করেন। গঠিত হয় স্মৃতিরক্ষা সমিতি এবং প্রতি সোমবার সত্যঘাট (স্থানীয় নাম সত্যটাঁড়) এলাকায় হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাটটি স্থানীয় রাজার নির্ধারিত মঙ্গলবারের ঝালদা হাটের বিকল্প হওয়ায় রাজা এটি মেনে নিতে পারেন নি। তিনি অপমানিত হয়ে শিবশরণ লাল জয়সওয়াল, ক্ষিতীশচন্দ্র বসু, বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত, মোহনদাস বাবাজি প্রমুখ আট জনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। তারই সূত্রে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পার্শ্ববর্তী কাঁসরা গ্রামে পুলিশ প্রথমে চার জনকে গ্রেফতার করে। পরের বৎসর সত্যমেলা বন্ধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তারপরও মেলা চালু থাকায় পুলিশ গুলি চালায় এবং তাতে সহদেব মাহাতো, মোহন মাহাতো, গোকুল মাহাতো, গণেশ মাহাতো, শীতল মাহাতো প্রাণ হারান ।[৪] [৫]স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে মানভূমের এই ঘটনাটি 'ফার্স্ট ফায়ারিং ইন মানভূম' নামে পরিচিত।

স্মারক সম্পাদনা

মানভূমের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহিদ সত্যকিঙ্করকের স্মৃতিরক্ষার্থে মায়া সরোবর রোডে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে 'সত্যকিঙ্কর স্মারক সংগ্রহশালা' যেটির উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "গুপ্তঘাতকের অস্ত্রে খুন হন সত্যকিঙ্কর"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৬ 
  2. "এই কালীপুজো করার 'অপরাধে' ইংরেজদের গুলিতে শহিদ হয়েছিলেন পাঁচজন!"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৬ 
  3. "মানভূম জেলার স্বাধীনতা সংগ্রাম" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৬ 
  4. "পাহাড়-নদীর ঝালদা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮ 
  5. "আজ শুরু সত্যঘাট মেলা, স্মৃতি নিয়ে 'অনাদরে' সংগ্রহশালা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৮