বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং রাজনীতিবিদ

বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত ( ১৫ জানুয়ারি ১৯০৪ - ১৫ এপ্রিল ১৯৭৫) ছিলেন একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং রাজনীতিবিদ। বিহার রাজ্যের বাঙালি প্রধান পুরুলিয়ার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির আন্দোলনে তিনি পুরোধা ছিলেন। [১]

বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত
জন্ম(১৯০৪-০১-১৫)১৫ জানুয়ারি ১৯০৪
সোনারং গ্রাম, ঢাকা বৃটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৫ এপ্রিল ১৯৭৫(1975-04-15) (বয়স ৭১)
পুরুলিয়া ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ) ভারত
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
প্রতিষ্ঠানলোকসেবক সংঘ
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন
পিতা-মাতানিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত (পিতা)
লাবণ্যময়ী দাশগুপ্ত (মাতা)
আত্মীয়চিত্তভূষণ দাশগুপ্ত (ভ্রাতা)
অন্নপূর্ণা দাশগুপ্ত (ভগিনী)
বাসন্তী রায় (ভগিনী)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

বিভূতিভূষণ দাশগুপ্তর জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫  জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার সোনারং গ্রামে। [২] তার পিতা  ছিলেন 'মানভূমের গান্ধী' নামে সুপরিচিত শিক্ষাব্রতী, লোকসেবক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা  ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত ও মাতা লাবণ্যময়ী দেবী। বিভূতিভূষণের পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকা বিক্রমপুরের গাউপাড়ায়। পিতার কর্মস্থল পুরুলিয়া হলে  বিভূতিভূষণ পুরুলিয়ায় আসেন এবং পুরুলিয়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতার কলেজে পড়তে আসেন। এই সময় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি গান্ধীজি আহ্বানে কলেজ ত্যাগ করে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন। [১]

রাজনীতি সম্পাদনা

১৯২১ খ্রিস্টাব্দেই তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গ্রাম-স্তরের সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। [২] ১৯২২ খ্রি থেকে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মানভূম জেলা কংগ্রেস কমিটি এবং বিহার প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন। [২] বিভূতিভূষণ ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত  সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটিরও সদস্য ছিলেন।

১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তারকেশ্বরে মহান্তের  দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় তাতে মানভূম জেলার সত্যাগ্রহীদের নেতৃত্ব দিয়ে সদলে কারাবরণ করেন। তিনি পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অল্পবয়স হতেই ভারতের  স্বাধীনতা সংগ্রামে সব রকমের আন্দোলনে যুক্ত হন। রাজনৈতিক আদর্শের দিক থেকে গান্ধীবাদী হলেও বিগত দিনের সহিংস বিপ্লবীদের সঙ্গে তার যথেষ্ট আত্মিক যোগ ছিল। তার রচিত সেই মহাবরষার রাঙা জল গ্রন্থটির মাঝে তার সে পরিচয় পাওয়া যায়। রাজনৈতিক বন্দি হিসাবে তিনি বহুবার আটক নতুবা অন্তরীণ থেকেছেন।

মানভূমের বাংলাভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লোকসেবক সংঘ গঠিত হলে বিভূতিভূষণ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে বিভূতিভূষণ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুন প্রধান সচিব হন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ভাষা আন্দোলনে বিহার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বাঙালি প্রধান ষোলটি থানা নিয়ে গঠিত পুরুলিয়া জেলা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিভূতিভূষণ এই আন্দোলনের  অন্যতম পুরোধা ছিলেন। তার নেতৃত্বে লোকসেবক সংঘ গান্ধীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে  সমাজে আদিবাসীদলিত সম্প্রদায়ের মানুষের উচ্চবর্ণের সমান অধিকার দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করে। [৩]

এই আন্দোলনের ফলেই পরবর্তীতে লোকসেবক সংঘের প্রার্থী হিসাবে বিভূতিভূষণ ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের লোকসভায় সদস্য নির্বাচিত হন।[৪]

১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুরুলিয়া নির্বাচনকেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য  হন। এরপর তিনি ১৯৬৭ এবং ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে যথাক্রমে পঞ্চায়েত তথা সমাজ দপ্তর ও পঞ্চায়েত দপ্তরের মন্ত্রীও হয়ছিলেন। [১]


পুরুলিয়া থেকে প্রকাশিত পিতৃ-প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক মুক্তি পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গের বিশেষকরে পুরুলিয়ার বহু গঠনমূলক কাজের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল।  অকৃতদার বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও হানাহানি অবসানের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে গেছেন। [১] তিনি পুরুলিয়ার শিল্পাশ্রমে থাকতেন।[২] তার ভগিনী বাসন্তী দাশগুপ্তও (রায়) ছিলেন গান্ধীবাদী, স্বাধীনতা সংগ্রামী। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট  ২০১৬, পৃষ্ঠা ৪৮২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. India Who's who। INFA Publications.। ১৯৭৩। পৃষ্ঠা 284। 
  3. West Bengal (India); Jatindra Chandra Sengupta (১৯৮৫)। West Bengal district gazetteers12। State editor, West Bengal District Gazetteers। পৃষ্ঠা 104–105। 
  4. Election Commission of India. STATISTICAL REPORT ON GENERAL ELECTIONS, 1957 TO THE  SECOND  LOK SABHA - VOLUME I (NATIONAL AND STATE ABSTRACTS & DETAILED RESULTS)