শেজান ইন্টারন্যাশনাল

শেজান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (উর্দু: شیزان انٹرنیشل لمیٹڈ‎‎) হলো লাহোরে অবস্থিত পাকিস্তানি পানীয় প্রস্তুতকারক। এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারকদের মধ্যে একটি। তাদের দুটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড হলো অল পিওর এবং টুইস্ট[১] এই কোম্পানিটি শাহনেওয়াজ গ্রুপের একটি অংশ এবং পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত।[২]

শেজান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড
ধরনপাবলিক
শিল্পপানীয় ও খাদ্য পণ্য
প্রতিষ্ঠাকাল৩০ মে ১৯৬৪; ৫৯ বছর আগে (1964-05-30)
সদরদপ্তর,
বাণিজ্য অঞ্চল
পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, এশিয়াঅস্ট্রেলিয়া
পণ্যসমূহপানীয় জুস ও খাদ্য পণ্য
কর্মীসংখ্যা
২৮৯
মাতৃ-প্রতিষ্ঠানশাহনেওয়াজ গ্রুপ
ওয়েবসাইটshezan.pk

শেজান ১৯৬৪ সালে লাহোরে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা কোমল পানীয়, জুস, কেচাপ এবং জ্যামসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে। কোম্পানিটি পাকিস্তানের একক বৃহত্তম আম উৎপাদনকারী এবং প্রায় ১০০০ জন শ্রমিক এখানে কাজ করে।[৩][২] কোম্পানিটি তাদের ট্রেডমার্ক পণ্য 'শেজান ম্যাঙ্গো'র জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। শেজান ম্যাঙ্গো হলো পাকিস্তানের জনপ্রিয় একটি আমের জুস।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৬৪ সালের ১৩ মে পাকিস্তানের শাহনেওয়াজ গ্রুপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে শেজান ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠিত হয়।[৪]

শেজান পাকিস্তানের বৃহত্তম খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। তারা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি চাহিদা মেটাতেও সক্ষম। এছাড়া, তারা উৎপাদনে ক্রমাগত উন্নতি করছে।[৪]

১৯৭১ সালে শাহনেওয়াজ গ্রুপ পাকিস্তান সরকারের অনুমতি নিয়ে অ্যালায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের সমস্ত শেয়ার ক্রয় করে। তারা ১৯৮০-৮১ সালে করাচিতে একটি পৃথক শাখা স্থাপন করে, যা বর্তমানে করাচি ও সিন্ধুর চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি চাহিদাও পূরণ করে। ১৯৮৩ সালে পাঞ্জাবের লাহোরে আরেকটি কারখানা স্থাপন করা হয়। ১৯৮৭ সালে একটি স্বাধীন টেট্রা ব্রিক কারখানা চালু করা হয়। ১৯৯০ সালে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার হাত্তারে একটি জুস কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শেজান ইন্টারন্যাশনালের প্রধান কার্যালয় পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত। ইংল্যান্ডে, নুভো ফুডস লিমিটেড সকল শেজান পণ্যের অনুমোদিত পরিবেশক। তারা জুস, জ্যাম, আচার, চাটনি, সস, সিরাপ এবং স্কোয়াশের আমদানি ও বিতরণ পরিচালনা করে।

কানাডায়, টার্গেট ফুডস হলো তাদের অনুমোদিত পরিবেশক। বাংলাদেশে, সজীব ফুডস সকল শেজান পণ্যের অনুমোদিত পরিবেশক। [৪]

বিতর্ক সম্পাদনা

শেজানের মালিকের সাথে আহ্‌মদীয়ার সংশ্লিষ্টতার কারণে তারা বারবার বিতর্কের লক্ষ্যবস্তু হয়।[৫] অতীতে ধর্মীয় রক্ষণশীলদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি প্রচারাভিযান শেজানকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। এমনকি তারা শেজানকে বয়কটের আহ্বান জানায় ও পরবর্তীতে নিষিদ্ধ করে।[৬]

শেজানের পণ্য নিষিদ্ধ সম্পাদনা

২০১২ সালে, ইসলামি গোষ্ঠীগুলোর প্রচারাভিযানে আরও উদার কণ্ঠস্বর পাওয়া যায়, এর মধ্যে লাহোর বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীরা ছিলেন অন্যতম।[৭] লাহোর বার অ্যাসোসিয়েশন তাদের বার ও অধস্তন আদালত কমপ্লেক্স থেকে শেজানের পণ্যগুলো নিষিদ্ধ করে এবং কেউ পানীয়টি কিনতে গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়। মূলত ১০০ জন আইনজীবীর সর্বসম্মতিক্রমে শেজান পানীয় ও পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দেওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।[৮]

আক্রমণ সম্পাদনা

নিয়মতান্ত্রিক আহমদীয়া বিরোধী প্রচারণায় শেজানের পণ্য বয়কটের অসংখ্য উদ্যোগের ফলস্বরূপ, শেজান কারখানার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি আক্রমণ রেকর্ড করা হয়। ২০১০ সালের জুনে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীরা শেজানের একটি কারখানায় হামলা চালায় এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ফলে শেজানের চারজন কর্মী আহত হয়।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Best Juice Brands In Pakistan"Runway Pakistan (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০১-০৬। ২০২৩-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১১ 
  2. "Shezan International Limited (SHEZ) Stock Price | Stock Quote The Pakistan Stock Exchange - MarketScreener"www.marketscreener.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-১০-০১। ২০২৩-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-০৫ 
  3. Anusha Zahid (২০১৯-১১-০৩)। "A focus on quality and innovation"Dawn (newspaper)। ২০২৩-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৩ 
  4. Anusha Zahid (২০১৮-০৭-০১)। "From 'farm to fork'"Dawn (newspaper)। ২০২০-১১-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৩ 
  5. "Shezan – What's in a name?"Profit by Pakistan Today। ২০২২-০৭-৩১। ২০২৩-০৩-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-০৫ 
  6. "Why many in Pakistan are vowing 'I'll drink Shezan'"NDTV website। ২০১২-০২-১৫। ২০১৯-০৯-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৩ 
  7. "Lahore Bar denies 'Shezan juice ban'"Dawn (newspaper)। ২০১২-০২-১৬। ২০২২-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৩ 
  8. "Barred: Lawyers ban drink on court complex"The Express Tribune। ২০১২-০২-১১। ২০২১-০৫-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৩ 
  9. Rana Tanveer (২০১০-০৬-১৪)। "Shezan factory attacked in Lahore"The Express Tribune। ২০২১-১০-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা