শিবরাম রাজগুরু

ভারতীয় বিপ্লবী

শিবরাম হরি রাজগুরু (২৪ আগস্ট ১৯০৮ - ২৩ মার্চ ১৯৩১)[১][২] ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের চরমপন্থী বিপ্লবী হিসাবে পরিচিত নাম। ব্রিটিশ বিরোধী ডাক দিয়ে একজন ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারকে হত্যায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে ভগৎ সিং সুখদেব থাপারের সাথে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে মার্চ একই ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হতে হয়।

শিবরাম হরি রাজগুরু
ভারতীয় ডাক টিকিটে শিবরাম রাজগুরু
জন্ম২৪ আগস্ট ১৯০৮
খেদ, বোম্বাই প্রেসিডেন্সি , বৃটিশ ভারত বর্তমানে মহারাষ্ট্র,ভারত
মৃত্যু২৩ মার্চ ১৯৩১(1931-03-23) (বয়স ২২)
প্রতিষ্ঠানHSRA
আন্দোলনভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ব্রিটিশ ভারতের বোম্বাই প্রেসিডেন্সির অধুনা মহারাষ্ট্রের ভীমা নদীর তীরবর্তী খেদ নামক স্থানে এক মারাঠি ব্রাহ্মণ পরিবারে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে আগস্ট রাজগুরু জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হরিনারায়ণ রাজগুরু এবং মা ছিলেন পার্বতী দেবী।[৩] মাত্র ছয় বছর বয়সে পিতার মৃত্যু হলে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তার অগ্রজ দীনকরের কাঁধে এসে পড়ে। খেদেই তার প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ হলে তিনি পুনের নিউ ইংলিশ হাই স্কুলে পরবর্তী শিক্ষা লাভ করেন।

বৈপ্লবিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনা

রাজগুরু সংস্কৃতের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি দেখেছিলেন ভারতের জনগণের ওপর ব্রিটিশদের অন্যায়, বঞ্চনা আর অত্যাচার। তার এই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিতে প্রস্তুত হন। চন্দ্রশেখর আজাদের জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনে যে কোনো মূল্যে দেশকে ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্ত করতে গঠিত হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট  রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয় যান।[২]

এখানেই ভগৎ সিং এবং সুখদেবের সাথে পরিচয় হয়। রাজগুরু, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং জয়গোপাল মিলে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই ডিসেম্বর লাহোরে ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জে পি সন্ডার্স হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটান। যদিও তাঁদের লক্ষ্য ছিলেন পুলিশ অফিসার জে.এ.স্কট, কিন্তু এই ঘটনায় সন্ডার্সের মৃত্যু হয়। লালা লাজপতের ওপর নৃশংস লাঠি প্রয়োগের আদেশ দিয়েছিলেন স্কট। আসলে এটি বিপ্লবী লালা লাজপত রায়ের সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় পুলিশি লাঠিচার্জে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া ছিল।[২][৪][৫]

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই জুলাই লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় ভগৎ সিং, রাজগুরু, সুখদেব সহ একুশ জন ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হল।[৬] তিনজনই দোষী সাব্যস্ত হন।

ফাঁসি কার্যকর সম্পাদনা

 
মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ঘোষণা দি ট্রিবিউনের প্রথম পৃষ্ঠা

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ওই বছরই ২৩ শে মার্চ নির্দিষ্ট দিনের একদিন আগে তিনজন বিপ্লবীর ফাঁসি হয়। মৃত্যুর সময় রাজগুরুর বয়স ছিল বাইশ বছর মাত্র। পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার শতদ্রু নদীর তীরে হুসেইনিওয়ালা গ্রামে তাঁদের মৃতদেহ চরম গোপনীয়তায় দাহ করা হয়।[১][৭]  

ফাঁসির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়টি করাচিতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনের প্রাক্কালে সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়।[৮] নিউ ইয়র্ক টাইমসের উদ্ধৃতি ছিল -

(ইংরেজি)

«A reign of terror in the city of Cawnpore in the United Provinces and an attack on Mahatma Gandhi by a youth outside Karachi were among the answers of the Indian extremists today to the hanging of Bhagat Singh and two fellow-assassins.[৯]»

(বাংলা)

«আজ ভগৎ সিং এবং দুই সহ-হত্যাকারীকে ফাঁসি দেওয়ায় ভারতীয় চরমপন্থীদের জবাবের মধ্যে ছিল যুক্তপ্রদেশের কাউনপোর শহরে সন্ত্রাসের রাজত্ব এবং করাচির বাইরে এক যুবক কর্তৃক মহাত্মা গান্ধীর উপর আক্রমণ»

(দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস)

উত্তরাধিকার এবং স্মারক সম্পাদনা

 
সুখদেব, ভগত সিং এবং রাজগুরুর জন্য জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ

জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ সম্পাদনা

জাতীয় স্মৃতিসৌধটি ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার শতদ্রু নদীর তীরে হুসেইনিওয়ালা গ্রামে অবস্থিত। লাহোর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরে শিবরাম রাজগুরু, ভগত সিং এবং সুখদেব থাপারের মরদেহ চরম গোপনীয়তায় দাহ করা হয়।। প্রতি বছর ২৩ শে মার্চ তাঁদের মৃত্যুর দিনটিকে স্মরণে রেখে "শহীদ দিবস" উদযাপিত হয়।শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হয়। [৭][১০]

রাজগুরুনগর সম্পাদনা

তার জন্ম স্থানের নাম বদলে রাখা হয রাজগুরুনগর। [২] বর্তমানে রাজগুরুনগর হ'ল মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুণে জেলার খেদ তহসিলের একটি আদমশুমারি শহর। [১১]

রাজগুরু ওয়াদা সম্পাদনা

 
রাজগুরু ওয়াদা

যেখানে রাজগুরু জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই পৈতৃক বাড়িটি রাজগুরু ওয়াদা নামে পরিচিত। ভীমা নদীর তীরে পুণা-নাসিক রোডে ২,৭৮৮ বর্গমিটারের জমির উপর এটি অবস্থিত এবং শিবরাম রাজগুরুর স্মৃতি হিসাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। স্থানীয় সংগঠন হুতাত্মা রাজগুরু স্মারক সমিতি (এইচআরএসএস) ২০০৪ সাল থেকে প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে[১২]

কলেজ সম্পাদনা

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অধীনে দিল্লির বসুন্ধরা এনক্লেভে মহিলাদের জন্য শহীদ রাজগুরু কলেজ অফ অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। [১৩]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Verma, Anil (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। RAJGURU – THE INVINCIBLE REVOLUTIONARY। প্রকাশনা বিভাগ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। আইএসবিএন 978-81-230-2522-3 
  2. "Remembering Shivaram Hari Rajguru on his birthday"ইন্ডিয়া টুডে। ২৪ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৮ 
  3. "Bhagat Singh a 'Jat', Rajguru 'Brahmin'"জি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০৪-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১১ 
  4. সাওনি, সিমোনা (২০১২)। "Bhagat Singh: A Politics of Death and Hope"। মালহোত্রা, অংশু; মির, ফারিনা। Punjab Reconsidered: History, Culture, and Practice। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৮০। আইএসবিএন 978-0-19807-801-2ডিওআই:10.1093/acprof:oso/9780198078012.003.0054 
  5. নাইর, নীতি (মে ২০০৯)। "Bhagat Singh as 'Satyagrahi': The Limits to Non-violence in Late Colonial India"। মর্ডান এশিয়ান স্টাডিজ। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ৪৩ (৩): ৬৪৯–৬৮১। জেস্টোর 20488099ডিওআই:10.1017/s0026749x08003491 
  6. Dam, Shubhankar (২০১৩)। Presidential Legislation in India: The Law and Practice of Ordinances। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 44। আইএসবিএন 978-1-10772-953-7 
  7. "National Martyrs Memorial Hussainiwala"ferozepur.nic.in। ১ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৮ 
  8. "Bhagat "Indian executions stun the Congress"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। ২৫ মার্চ ১৯৩১। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১১ 
  9. "Bhagat "50 die in India riot; Gandhi assaulted as party gathers"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। ২৬ মার্চ ১৯৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১ 
  10. "Five decades on, heritage status eludes Hussainiwala memorial"দ্য ট্রিবিউন (চণ্ডীগড়)। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৮ 
  11. "Rajgurunagar Population Census 2011"www.census2011.co.in। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৮ 
  12. "Freedom fighter Rajguru's wada"ডিএনএ ইন্ডিয়া। ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৮ 
  13. "Shaheed Rajguru College of Applied Sciences for Women"www.rajgurucollege.com। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৮ 

অতিরিক্ত পাঠ্য সম্পাদনা

  • নূরানি, আব্দুল গফুর আব্দুল মজিদ (২০০১)। The Trial of Bhagat Singh: Politics of Justice [ভগৎ সিংয়ের বিচার: ন্যায়বিচারের রাজনীতি] (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 0195796675