বটুকেশ্বর দত্ত
বটুকেশ্বর দত্ত উচ্চারণ (সাহায্য·তথ্য) (১৮ নভেম্বর ১৯১০ - ২০ জুলাই ১৯৬৫) ছিলেন উনিশ শতকের শূন্য দশকের একজন বাঙালি ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী এবং ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা।[২] ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল ভগৎ সিংয়ের সাথে নয়া দিল্লীর কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে বোমা ফাটানোর জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। তারা পরিকল্পনা মোতাবেক দুটি বোমা ফেলেন, যাতে কারো কোনো ক্ষতি না হয়। ফরাসী নৈরাজ্যবাদী বিপ্লবী বৈলেয়ন্টের মতোই ভগৎ সিংহের বক্তব্য ছিল 'বধিরকে শোনাতে উচ্চকণ্ঠ প্রয়োজন'। বটুকেশ্বর দত্ত ও তিনি ইস্তাহার ছড়িয়ে দেন নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে, স্লোগান দেন এবং শান্তভাবে গ্রেপ্তারবরণ করেন।
বটুকেশ্বর দত্ত | |
---|---|
![]() বটুকেশ্বর দত্ত, ১৯২৯ সালে | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ২০ জুলাই ১৯৬৫ নয়াদিল্লী, ভারত | (বয়স ৫৪)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
প্রতিষ্ঠান | হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন, নওজোয়ান ভারত সভা |
পরিচিতির কারণ | ভারতীয় মুক্তি যোদ্ধা |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা
বটুকেশ্বর দত্তের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলা|পূর্ব বর্ধমান জেলার]] খণ্ডঘোষ থানার ওঁয়াড়ি গ্রামে। পিতা গোষ্টবিহারী দত্ত। [৩] ছোটবেলায় গ্রামে তিনি 'মোহন' নামে পরিচিত ছিলেন। জন্মের পর কিছুদিন ওঁয়াড়ি গ্রামে থাকার পর পিতা কর্মসূত্রে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে গেলে বটুকেশ্বর তার সঙ্গে যান। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে সেখানে থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করেন। সেখানেই তিনি বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদ ও ভগৎ সিং এর সংস্পর্শে আসেন এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হন। বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে দল সংগঠনে প্রথমে আগ্রায়, পাঞ্জাব ও অন্যান্য স্থানে যান। তাদের সংগঠনের নাম ছিল হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন। কানপুরে কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদ ও ভগৎ সিং এর সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবী রাজনীতিতে যোগ দেন। বিপ্লবী সদস্যদের নিকট বি.কে নামে পরিচিত ছিলেন বটুকেশ্বর দত্ত।[৪]
জেল জীবনসম্পাদনা
গ্রেপ্তারের পর বিস্ফোরক আইন ভঙ্গ ও হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রহসন করে ব্রিটিশ সরকার। জেলে তিনি এবং ভগৎ সিং ভারতীয় রাজনৈতিক জেলবন্দিদের সাথে নোংরা আচরণের বিরুদ্ধে ও রাজবন্দীর অধিকারের দাবীতে এক ঐতিহাসিক অনশনের উদ্যোগ নেন শুরু করেন এবং তাদের জন্য কিছু অধিকার আদায়ে সক্ষম হন।[৫] এই অনশনে শহীদ হন বিপ্লবী যতীন দাস। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বটুকেশ্বর মুক্তি পেলেও বাংলা, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ তার প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। ১৯৪২ সালে আবার গ্রেপ্তার করে তাকে অন্তরীন রাখা হয় ৩ বছর। তিনি হিন্দুস্তান সমাজপ্রজাতান্ত্রিক সংস্থার একজন সদস্য ছিলেন।
মৃত্যুসম্পাদনা
এই সর্বস্বত্যাগী বিপ্লবীর শেষ জীবন বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। টিবি রোগাক্রান্ত হওয়ায় জেল থেকে মুক্তি পেলেও স্বাধীন ভারতে তার মূল্যায়ন হয়নি, দারিদ্রের সাথে লড়াই করে জীবন কেটেছে। স্বাধীনতার পর বিবাহ করে বিহারের পাটনায় বসবাস করতেন। সরকারি সাহায্য বা সম্মান বিশেষ কিছু পাননি। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে পরিবহন ব্যবসা করতেন। ২০ জুলাই ১৯৬৫ দিল্লীর একটি হাসপাতালে প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে তার মৃত্যু হয়।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Dutt DOB"।
- ↑ Śrīkr̥shṇa Sarala (১৯৯৯)। Indian Revolutionaries: A Comprehensive Study, 1757-1961। Ocean Books। পৃষ্ঠা 110–। আইএসবিএন 978-81-87100-18-8। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১২।
- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৪৪৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ রায়, প্রকাশ (২০২১)। বিস্মৃত বিপ্লবী প্রথম খণ্ড। চেন্নাই: নোশনপ্রেস চেন্নাই, তামিলনাড়ু। পৃষ্ঠা ১–৫।
- ↑ Bhagat Singh Documents Hunger-strikers' Demands