শাহরিয়ার মির্জা
শাহরিয়ার মির্জা (১৬ জানুয়ারী ১৬০৫- ২৩ জানুয়ারী ১৬২৮) ছিলেন মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের পঞ্চম এবং কনিষ্ঠ পুত্র। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পরে শাহরিয়ার সম্রাট হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং তার ক্ষমতাশালী সৎ মা নূর জাহানের সাহায্যে সফল হন যিনি তাঁর শাশুড়িও ছিলেন। যাইহোক, তিনি কেবল নাম্মাত্র ছিলেন এবং পরাজয়ের মুখোমুখি হন এবং তাঁর বিজয়ী ভাই শাহ জাহানের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়। তিনি ছিলেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের চাচা ছিলেন।
শাহরিয়ার | |||||
---|---|---|---|---|---|
মুঘল সম্রাট | |||||
রাজত্ব | ৭ নভেম্বর ১৬২৭- ২৩ জানুয়ারী ১৬২৮ | ||||
পূর্বসূরি | জাহাঙ্গীর | ||||
উত্তরসূরি | শাহ জাহান | ||||
জন্ম | ১৬ জানুয়ারী ১৬০৫ Agra | ||||
মৃত্যু | ২৩ জানুয়ারি ১৬২৮ লাহোর, মোগল সাম্রাজ্য (বর্তমানে লাহোর, পাকিস্তান) | (বয়স ২৩)||||
দাম্পত্য সঙ্গী | মেহের উন নেসা বেগম | ||||
বংশধর | আরজানী বেগম | ||||
| |||||
রাজবংশ | তৈমুরি | ||||
পিতা | জাহাঙ্গীর | ||||
মাতা | বিবি ফতেদবাদী | ||||
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
প্রাথমিক
সম্পাদনা১৬০৫ সালে তার দাদা সম্রাট আকবরের মৃত্যুর কয়েক মাস আগে শাহরিয়ার জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মা একজন উপপত্নী ছিলেন।
জাহাঙ্গীরের রাজত্বের ষোড়শ বছরে শাহরিয়ার তার সৎ মা নূর জাহান ও শের আফগানের সাথে প্রথম বিবাহের কন্যা মেহের-উন-নিসা বেগমকে বিয়ে করেছিলেন। শাহরিয়ার ও মিহর-উন-নিসার একটি মেয়ে আরজানী বেগম ছিল।[১][২]
নূর জাহানের অনুরোধে জাহাঙ্গীর তাঁকে ধোলপুরের পরগনা এবং দুর্গ দেওয়া দিয়েছিল যা যুবরাজ খুররম নিজের জন্য চেয়েছিলেন। তিনি আফগান দরিয়া খানকে তার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছিলেন। এর ফলে নূর জাহানের নিযুক্ত ইনচার্জ শরীফু-উল-মুলকের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়, যিনি শাহরিয়ার ও দরিয়া খাঁ উভয়ের দাস ছিলেন। শরীফু-উল-মুলক শীঘ্রই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে জোর করে দুর্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। [৩]
অক্টোবর ১৩, ১৬২৫ তারিখে, জাহাঙ্গীর শাহরিয়ারকে থাট্টার গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করেন। শরীফ-উল মুলক রাজপুত্রের ডেপুটি হিসাবে প্রশাসন পরিচালনা করেন।[৪]
আরোহণ
সম্পাদনাতার পিতার জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর, ২৮ অক্টোবর ১৬২৭, শাহরিয়ার নূর জাহানের আকাঙ্ক্ষিত মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করে, কিন্তু শুধুমাত্র তিন মাসের জন্য তা স্থায়ী হয়। যেহেতু তিনি লাহোরে ছিলেন, তাই তিনি তৎক্ষণাৎ রাজকীয় কোষাগার থেকে তাঁর সিংহাসন সুরক্ষিত করার জন্য পুরানো ও নতুন নৃপতিদের মধ্যে ৭০ লক্ষাধিক টাকা বিতরণ করেন। এদিকে, সম্রাটের মৃত্যুর পরে প্রয়াত প্রিন্স দানিয়ালের পুত্র মির্জা বাইসিংহর লাহোরে পালিয়ে শাহরিয়ারে যোগ দিয়েছিলেন।
শীঘ্রই, লাহোরের নিকটে, শাহরিয়ার বাহিনী আসফ খানের ( মমতাজ মহলের পিতা) বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন, যিনি তাঁর জামাতা শাহ জাহানকে সিংহাসনে আরোহণ করতে চান, এবং ইতিমধ্যে দাওরকে আগ্রার সম্রাট হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। যা ছিল শাহজাহানের সিংহাসন বাঁচানোর ব্যবস্থা। শাহরিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দুর্গে পালিয়ে যান, পরের দিন সকালে তাকে দাওর বক্ষের সামনে হাজির করা হয়, যিনি তাকে বন্দী করে রেখেছিলেন এবং দু-তিন দিন পরে তাকে আসফ খানের দ্বারা অন্ধ করে দেওয়া হয়, ১৬২৮ খৃষ্টাব্দে তিনি শাহজাহানের নিকট খমতা হস্তান্তর করেন এভাবে তাঁর সংক্ষিপ্ত রাজত্বটি একটি করুণ পরিণতিতে পৌঁছে। । কথিত আছে যে শাহরিয়ারেরও কুষ্ঠরোগের এক রূপ ছিল যার কারণে তিনি ভ্রু এবং চোখের পাতার লোমসহ সমস্ত চুল হারিয়েছিলেন।[৫]
সমস্ত মুঘল রাজকুমারএর মতো শাহরিয়ারও কবিতার প্রশিক্ষণ নেন এবং জীবনের শেষদিকে অন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি দ্বি-গু কুর শুদ দোদা-ই-আফতাব শীর্ষক এক কবিতা রচনা করেছিলেন।[৬]
মৃত্যু
সম্পাদনাজুমাদাউল আউয়ালে ২ তারিখ, ১০৩৭ হিজরি, (১৬২৮), শাহজাহান লাহোরের সিংহাসনে আরোহণ করেন, এবং ২৬ জুমাদাউল আউয়াল, ২৩ জানুয়ারি ১৬২৮ তারিখে, তার আদেশে দাহোর, তাঁর ভাই গারসপ, শাহরিয়ার, যুবরাজ দানিয়ালের পুত্র তাহমুরাস ও হোশংকে আসফ খান হত্যা করে।[৭][৮]
পরবর্তী অবস্থা
সম্পাদনাশাহরিয়ারের মৃত্যুর পরে শাহ জাহান ত্রিশ বছর সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন, যতক্ষণ না তিনি আওরঙ্গজেবের হাতে বন্দী হন এবং আট বছর পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
আসাফ খানকে মুঘল সাম্রাজ্য প্রধানমন্ত্রী করা হয় এবং নূর জাহান দ্বিবার্ষিক লাখ টাকা পেনশনে বাকী দিনগুলো লাহোরে তার প্রাসাদে বন্দী অবস্থায় যাপন করেন। সঙ্গে ছিল তার মেয়ে, শাহরিয়ারের বিধবা স্ত্রী মেহের-উন-নিসা বেগম।[৯] নূর জাহান ১৬৪৫ সালে ৬৮ বছর বয়সে মারা যান।[১০]
আরও পড়া
সম্পাদনা- Nur Jahan: Empress of Mughal India, by Ellison Banks Findly, Oxford University Press US. 2000. আইএসবিএন ০-১৯-৫০৭৪৮৮-২.
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ The Grandees of the Empire - Jahángír's children, Sultan Shahryar ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে Ain-i-Akbari, by Abul Fazl, Volume I, Chpt. 30.
- ↑ Ali Q ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে Ain-i-Akbari, by Abul Fazl, Volume I, chpt. 310, "'Alí Q.'s daughter, who, like her mother, had the name of Mihrunnisa, was later married to Prince Shahryar, Jahangir's fifth son.".
- ↑ Dholpur ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে The Riyazu-s-Salatin (Gardens of the Sultans), a History of Bengal, by Ghulam Husain Salim ‘Zayadpuri’. 1787-8.
- ↑ Shahryar Governor The Calligraphers of Thatta By Muhammad Abdul Ghafur, 1968, Pakistan-Iran Cultural Association. Page 18.
- ↑ Proceedings of the Asiatic Society of Bengal, By Asiatic Society of Bengal, Asiatic Society (Calcutta, India). Published 1868. p. 218.
- ↑ Dictionary of Indo-Persian Literature, by Nabi Hadi, page 554.
- ↑ Death of the Emperor (Jahangir) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে The History of India, as Told by Its Own Historians. The Muhammadan Period, Sir H. M. Elliot, London, 1867–1877, Vol 6.
- ↑ Findly, Ellison Banks (১৯৯৩-০৩-২৫)। Nur Jahan: Empress of Mughal India (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-536060-8।
- ↑ Noor Jahan ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে University of Alberta.
- ↑ Shah Jahan britannica.com.