শহরশ্রী

শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউ‌নিয়‌নের গ্রাম

শহরশ্রী বাংলাদেশের বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউ‌নিয়‌নের অন্তর্গত একটি গ্রাম। বৃটিশ সরকারের সময় এটি পাচাউন পরগনা নামে পরিচিত ছিল।[১]

অত্র গ্রামে শাহ হযরত শাহ সদর উদ্দিন কুরেশী এবং হযরত শাহ বদরুদ্দীন কুরেশী নামক দুইজন সাধকের মাজার রয়েছে, যারা হযরত শাহ জালালের সিলেট আগমনের পরে আনুমানিক ১৩০৩ সালে শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে ইসলামের বাণী প্রচারের জন্য এসেছিলেন। যদিও অনেকেই ধারণা ও বিশ্বাস করে থাকেন যে তারা শাহজালালের সফরসঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়ার সহযোগীর মধ্যে অন্তর্গত। তারা মক্কার বিখ্যাত ও অত্যন্ত সম্মানীত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের দরগাহও এই গ্রামে অবস্থিত, যা কাশিউনা দরগাহ শরীফ নামে পরিচিত। বর্তমানে উক্ত দরগাহের মোতওয়ালি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন গ্রামের বিশিষ্ট দানবীর ও সমাজসেবক দেওয়ান মছরুর আহমদ চৌধুরী। প্রতি বছর ২৫ শে মাঘ কাশিউনা দরগাহে বার্ষিক ওরছ/দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

অত্র গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা দেওয়ান আবুল বসর চৌধুরী, ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের দেওবন্দ মাদরাসার হেড মাওলানা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। উনাকে শহরশ্রী বাজারের পূর্বে পারিবারিক কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। পরবর্তীতে উনার সমাধিস্থলকে ১৯৮৩/১৯৮৪ সালে সংস্কার করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন, উনার বংশধর ও কাশিউনা দরগাহের বর্তমান মোতওয়ালী দেওয়ান মছরুর আহমেদ চৌধুরী। পরবর্তীতে দেওয়ান মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী-তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে সকিনাহ-ই-আরব জাহাজের প্রধান কার্যাধিক্ষ (চীফ স্টিয়ার্ড) ছিলেন, এবং দেওয়ান আব্দুল ইকবাল চৌধুরী- সরকারি কৃষি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে এই বংশের মধ্যে দেওয়ান ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী-বন বিভাগে কর্মরত ছিলেন, এবং দেওয়ান রফি উদ্দিন চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে চাকুরিরত অবস্থায় অবসর গ্রহণ করেন। দেওয়ান মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর পুত্র দেওয়ান জালাল আহমেদ চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ১৯৭৩ সালে মির্জাপুর ইউনিয়নের প্রথম হাইস্কুল মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয় সরকারি নিবন্ধন লাভ করে।

এই গ্রামে দুটি মসজিদ রয়েছে; পশ্চিম শহরশ্রী জামে মসজিদ এবং পূর্ব শহরশ্রী জামে মসজিদ।[২] গ্রামে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে।[৩]

অত্র অঞ্চলের দেওয়ান নাজিরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ রাজত্বের সময়ের একজন অত্যন্ত অভিজাত ও প্রসিদ্ধ জমিদার, যিনি এই দুইজন সাধকের একজনের বংশধর ছিলেন। তিনি তার জমিদারীর অন্তর্গত বিস্তৃত সম্পত্তি জনগণের কল্যাণের জন্য দান করেছিলেন এবং মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান ইত্যাদি ধর্মীয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অত্র অঞ্চলের প্রথম মসজিদ, শহরশ্রী জামে মসজিদ এবং সংলগ্ন ঈদগাহ জনাব দেওয়ান নাজিরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী সাহেব তার নিজের জমি দান করে তৈরী করেছিলেন। গ্রামে কোন মুসলিম কবরস্থান না থাকায় তিনি তার জমির উপর শহরশ্রী কবরস্থানও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষদের একজন ছিলেন ত্রিপুরার মহারাজার ব্যক্তিগত শিক্ষক। তার বড় ছেলে দেওয়ান ইউনুসউদ্দিন আহমদ চৌধুরী ১৯৫৮ সালে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

শহরশ্রী বাজারের বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড সমিতি বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সমবায় পুরস্কার ২০১৮ লাভ করে, এ গ্রামেরই একজন কৃতি সন্তান ক্যাপ্টেন দেওয়ান গউসউদ্দিন আহমদ চৌধুরী যেটির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "মির্জাপুর ইউনিয়ন"। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০২০ 
  2. "মসজিদ"মির্জাপুর ইউনিয়ন। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভে ২০১৯ 
  3. "বাংলাদেশ গেজেট" (পিডিএফ) 
  4. "দেশসেরা 'বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি'"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০২০