লালচাঁদ বড়াল

বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী

লালচাঁদ বড়াল ( নভেম্বর ১৮৭০ – ১৪ মার্চ, ১৯০৭) ছিলেন একজন খ্যাতনামা সঙ্গীতজ্ঞ। [১]

লালচাঁদ বড়াল
জন্মনভেম্বর ১৮৭০
বহুবাজার কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৪ মার্চ ১৯০৭
ধরনহিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত
পেশাকণ্ঠশিল্পী, সংগীতজ্ঞ
বাদ্যযন্ত্রপাখোয়াজ , পিয়ানো
কার্যকাল১৮৯৫ –১৯০৭

জন্ম ও সঙ্গীত জীবন সম্পাদনা

লালচাঁদ বড়ালের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার বহুবাজারে। পিতা নবীনচাঁদ বড়াল ছিলেন একজন কৃতী অ্যাটর্ণি ও হিতবাদী জাতীয়তাবাদী সাপ্তাহিক সাহিত্য পত্রিকার অন্যতম পরিচালক ও অংশীদার। পিতামহ প্রেমচাঁদ ছিলেন সেকালের এক গণ্যমান্য ব্যক্তি। মাতা ছিলেন কলকাতার বিত্তশালী দানবীর সাগর দত্তের কনিষ্ঠা কন্যা। বড়াল পরিবারের কেউই সঙ্গীতের জগতে তেমন যুক্ত ছিলেন না। পিতা সাংস্কৃতিক জগতে যুক্ত থাকলেও সঙ্গীতের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না। পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে ছাত্রজীবনে লালচাঁদ সঙ্গীত চর্চা করুক, এটা নবীনচাঁদ একেবারেই চাইতেন না। অন্যদিকে লালচাঁদের ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি ছিল প্রবল আকর্ষণ। তখন থেকেই তিনি মায়ের সাহায্য ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। স্কুলে ছাত্রবস্থাতেই মৃদঙ্গ বা পাখোয়াজ বাজানো শিখেছিলেন মুরারিমোহন গুপ্তের কাছে। তার মা'ই কিনে দিয়েছিলেন সেই পাখোয়াজ। পিতার আপত্তির জন্য সেটি রাখা থাকত স্কুলে যাতায়াতের এক মুদির দোকানে। স্কুল থেকে ফেরার পথে সেখানে পাখোয়াজ বাজাতেন লালচাঁদ। [২] হিন্দু স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশের পর ভরতি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তিনি সুযোগ পান পাশ্চাত্য সঙ্গীত শেখার। কলেজের 'সান্ধ্য সম্মিলনী'তে পিয়ানো বাজানো শিক্ষা শুরু করেন এবং সেইসঙ্গে ইংরাজি গান। পিতার আপত্তির কারণে গোপনে চলত তার সঙ্গীতচর্চা। তার বন্ধু ধ্রুপদী গায়ক হরিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই পাখোয়াজ বাদক হিসাবে সঙ্গত করতেন।

১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা কাস্টমসের কোষাধ্যক্ষ পদে কর্মজীবন শুরু করেন। সঙ্গীতের প্রতি অদম্য আকর্ষণে তিনি কর্মক্ষেত্রে তেমন মনোনিবেশ করতে পারেন নি। বেশিরভাগ সময় কেটেছে সঙ্গীতের সাধনায়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ধ্রুপদ শেখেন কাশীনাথ মিশ্র, বিশ্বনাথ রাও, জগকরণ রাও প্রমুখের কাছে। খেয়াল শেখেন নান্দে খাঁ ও গুরুপ্রসাদ মিশ্রের কাছে। তিনি নিজে 'জলতরঙ্গ' বাজাতে শেখেন। [১]

সেকালের গাওয়া তার বহু গান জনপ্রিয় হয়ছিল। তার প্রথমদিকের গানের রেকর্ড ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বারকানাথ ঘোষের 'ডোয়ার্কিন অ্যান্ড সন' প্রকাশ করে এবং পরে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে হেমেন্দ্রমোহন বসুর 'এইচ-বোসেস' রেকর্ড' এ রেকর্ড করেন। লালচাঁদ মূলত অপেশাদার শিল্পী ছিলেন তাই গানের রেকর্ডে অ্যামেচার কথাটি লেখা থাকত। তবে তার রেকর্ডের জনপ্রিয়তার নিরিখে রেকর্ড কোম্পানির প্রভূত ব্যবসায়িক সাফল্য এসেছিল। যেকারণে এক রেকর্ড কোম্পানি উপহার হিসাবে একটি মোটর গাড়ি পাঠিয়েছিল। কিন্তু তার পিতা নবীনচাঁদ সে গাড়িটি কোম্পানিকেই ফেরত পাঠিয়ে দেন, কেননা মাত্র কয়েক দিন আগেই অতি অল্প বয়সে লালচাঁদ প্রয়াত হয়েছিলেন। [২]

লালচাঁদ বড়ালের গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলি হল-

  • কাদের কূলের বউ
  • হৃদয় রাসমন্দিরে
  • নবমী নিশি গো
  • তোমার ভাল তোমাতে থাক

খেয়াল অঙ্গের কয়েকটি গান হল-

  • কি রূপ হেরি (বাগেশ্রী)
  • মনেরি বাসনা শ্যামা (ভূপালি-বাগেশ্রী)
  • অনুগত জনে কেন (সিন্ধু-কাফি)

জীবনাবসান সম্পাদনা

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মার্চ মাত্র ৩৭ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন। তার সঙ্গীতজ্ঞ তিন পুত্রেরা হলেন- বিষণচাঁদ, কিষণচাঁদ এবং রাইচাঁদ। কনিষ্ঠ পুত্র রাইচাঁদ ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ দাদাসাহেব ফালকে সম্মানে ভূষিত প্রবাদপ্রতিম সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। রাইচাঁদই পিতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে শুরু করেছিলেন এক সঙ্গীত সম্মেলন - লালচাঁদ উৎসব

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৬৮৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "অভিমানেই পাখোয়াজ বাদক থেকে গায়ক হয়েছিলেন লালচাঁদ বড়াল"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৩