লায়লা খালিদ

ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ

লায়লা খালিদ (আরবি: ليلى خالد জন্ম: ৯ এপ্রিল,১৯৪৪) ফিলিস্তিনের একজন নারী বিপ্লবী এবং ফিলিস্তিনী বিপ্লবী সংস্থা পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনে(পিএফএলপি) একজন সদস্য। ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট রোম থেকে এথেন্সগামী একটি বিমান ছিনতাই করেন তিনি। এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি সর্বপ্রথম বিমান ছিনতাইকারী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হন। এই বিমান ছিনতাইয়ের সময় একে-৪৭ হাতে তার একটি ছবি তোলা হয়। পরবর্তীতে এ ছবিটি বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করে। তাই আরব রাষ্ট্রসমূহে তিনি একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তাকে নিয়ে ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক লিনা মকবুল হাইজ্যাকার- দ্য লাইফ অব লায়লা খালিদ নামে একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেন।[১] বর্তমানে তিনি প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল কাউন্সিলের একজন সক্রিয় সদস্য। এছাড়াও তিনি জেনারেল ইউনিয়ন অব প্যালেস্টানিয়ান ওমেন-এর একজন শীর্ষ নেতা।[২]

লায়লা খালিদ
বৈরুতের এক সম্মেলনে লায়লা খালিদ
বৈরুতের এক সম্মেলনে লায়লা খালিদ
জন্ম (1944-04-09) ৯ এপ্রিল ১৯৪৪ (বয়স ৭৯)
জাতীয়তাফিলিস্তিনি
পেশাবিপ্লবী

সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পাদনা

লায়লা খালিদ ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ এপ্রিল ফিলিস্তিনের হাইফা নামের ছোট একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শহরটি তখন ব্রিটিশ শাসনের অধীন ছিল। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে আরব-ইসরাইল সংকটের সময় লায়লার পরিবার লেবাননে নির্বাসিত হয়। ১৫ বছর বয়সে লায়লা তার বাবা ও বড় ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট নামক বিপ্লবী সংস্থায় যোগ দেন। এই বিপ্লবী আন্দোলন মূলত শুরু হয় ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে। পরবর্তীতে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিনী এই সংস্থা পপুলার ফ্রন্ট দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) নামে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে লায়লা খালিদ পিএফএলপির স্পেশাল স্কোয়াডের একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা বিবেচিত হন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে লায়লা রুস্তভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু তিনি পড়াশোনা শেষ করেননি। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে লায়লা খালিদের আত্মজীবনী মাই পিপল শ্যাল লিভ প্রকাশিত হয়।[২]

বিমান ছিনতাই সম্পাদনা

 
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে দামেস্কে লায়লা খালেদ (বাম থেকে দ্বিতীয়) ব্রিটেন সরকার থেকে মুক্তিলাভের পর

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট লায়লা পিএফএলপির বিপ্লবী সেলিম ঈসায়ীর নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্যের সাথে বিমান ছিনতাইয়ে অংশ নেন। রোম থেকে এথেন্সগামী টিডব্লিউএ-৮৪০ বিমানটি ছিনতাই করে নিয়ন্ত্রণ নেন লায়লা খালিদ। তারপর তিনি বিমান চালককে দামেস্কের উদ্দেশে বিমান চালাতে নির্দেশ করেন। শৈশবে ছেড়ে আসা মাতৃভূমি একবার দেখার জন্য বিমানচালককে তিনি হাইফা হয়ে দামেস্ক যেতে বাধ্য করেন। দু’জন ইসরাইলী ছাড়া বিমানের সকল যাত্রীকে দামেস্কে নামিয়ে দেয়া হয়। এই দুজন ইসরায়েলি জিম্মিকে দিয়ে পরবর্তীতে ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দিবিনিময় করা হয়। ছিনতাইকৃত বিমানটির সামনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। তবে কোন যাত্রী কিংবা পিএফএলপির সদস্য আহত হয়নি। এ ঘটনায় পিএলএফপির কোন সদস্য ধরা পড়েনি। বিমান ছিনতাইয়ের সময় এডি এডামস নামক এক ব্যক্তি লায়লার একটি ছবি তোলেন। ছবিতে লায়লা একে-৪৭ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে এ ছবিটা বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে খ্যাতি লাভ করে এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের প্রেরণার উৎসে পরিণত হয়। এ ছবির কারণে লায়লা খালিদ পরিচিতি লাভ করেন এবং আলোচিত হন। চেহারা গণমাধ্যমে পরিচিত হয়ে যাওয়ায় লায়লা তার নাক ও চিবুকে ছয়বার প্লাস্টিক সার্জারি করান।[৩] ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর লায়লা ও আরেকজন বিপ্লবীকর্মী আমস্টারডাম থেকে নিউইয়র্কগামী ইওয়ান এওয়ান ২১৯ ফ্লাইট ছিনতাই করেন। বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সময় লায়লার সহযোগী কর্মী প্যাট্রিকের গুলিতে একজন ফ্লাইট এ্যাটেনডেন্ট আহত হন। যদিও লায়লার কঠোর নির্দেশ ছিল কোন যাত্রী যেন আহত না হন। বিমানের নিয়ন্ত্রণ এয়ার মার্শাল নিয়ে নেন। অপর একজন এয়ার মার্শালের গুলিতে লায়লার সহযোগী প্যাট্রিক নিহত হয়। লায়লা নিজেও আহত হন। বিমানটি হিথ্রো বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে এবং লায়লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় একই সময়ে পিএফএলপির অন্য সদস্যরা আরো পাঁচটি বিমান ছিনতাই করেছিলো। ধারণা করা হয়, লায়লার ধরা পড়ার বিষয়টি ছিলো পরিকল্পিত, যাতে অন্যান্য ছিনতাইকারীদের দিকে কর্তৃপক্ষ নজর না দিতে পারে। পরবর্তীতে পিএফএলপি একটি বিমান ছিনতাই করে ও ৩০০ জনকে জিম্মি করে দাবি করে লায়লাকে মুক্তি দেয়ার। ফলে ব্রিটিশ সরকার একই বছরের ১ অক্টোবর তাকে বন্দি বিনিময় হিসেবে মুক্তি দেয়।মুক্তিলাভের পর লায়লা সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল কাউন্সিলের একজন সদস্য হন।[২][৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা