লাইট অব হোপ (এল.ও.এইচ) এমন একটি প্রকল্প যা বাংলাদেশের গ্রামীণ স্কুলগুলিতে ই-লার্নিং সুবিধা সরবরাহ করার লক্ষ্যে কাজ করে। এলওএইচ প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলিতে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, অডিও ভিজ্যুয়াল ই-লার্নিং উপকরণ এবং সোলার এনার্জি সিস্টেম সরবরাহ করে। যেখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই বা সীমাবদ্ধ রয়েছে কিংবা বিদ্যুৎ পরিষেবা নেই এলওএইচ সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বই ও শিক্ষার উপকরণ সরবরাহ করে। [১]

লাইট অফ হোপ
ধরনশিক্ষা সংক্রান্ত
প্রতিষ্ঠাকাল২০১৩; ১১ বছর আগে (2013)
প্রতিষ্ঠাতাওয়ালিউল্লাহ ভুঁইয়া
বাণিজ্য অঞ্চল
বাংলাদেশ
ওয়েবসাইটlightofhopebd.org

এল.ও.এইচের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ব্রাকের ম্যানেজার ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক নাসিমুল ইসলাম মারুফ এবং আসাদুজ্জামান শোয়েব। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১০০জন সক্রিয় কর্মী এবং অন্যান্য উপ-প্রকল্প রয়েছে। ২০১৪ সালে এল.ও.এইচ বাংলাদেশে প্রথম সৌরবিদ্যুৎ চালিত বিদ্যালয় চালু করে। [২]

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রেরণা সম্পাদনা

২০০৯ সালে ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া পটুয়াখালীর ছোট্ট একটি গ্রামে ব্র্যাক প্রকল্পে কাজ করছিলেন। ওয়ালিউল্লাহ ভুঁইয়া একদল মহিলার সাথে কীভাবে তারা জীবিকার জন্য অর্থোপার্জন করে সে সম্পর্কে কথা বলছিলেন। লাইট অব হোপ সেই এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় স্থানীয় বাজারের বিদ্যুতের জন্য সৌরশক্তি ব্যবহার করে সোলার প্যানেল স্থাপন করে। গ্রামের বাসিন্দারা তাদের মোবাইল ফোন চার্জের জন্য স্থানীয় বাজারে যেতে শুরু করে। এতে বাজারের বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরাও এতে কিছু লাভ করে। কিছু মহিলার ধারণাটি অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আম্বিয়া খাতুন এই ধারণার প্রবর্তক এবং তিনিই এটি সর্বপ্রথম প্রয়োগ করেছিলেন। তিনি তাঁর রিকশাচালক স্বামীকে, মাসিক কিস্তিতে সোলার-এনার্জি সিস্টেম কিনে এই ব্যবসা শুরু করতে রাজি করান। ব্যবসাটি সফল হয়েছিল, যা অন্যান্য লোকদের এ ব্যবসায় জড়িত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিল। এই ব্যবসার জন্য ধীরে ধীরে এই অঞ্চলটি বিকাশ লাভ করেছিল। এই উন্নতি ভূঁইয়াকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

ভূঁইয়া তাঁর প্রকল্পের পরিকল্পনা করেন এবং প্রকল্পটি তার বন্ধু নাসিমুল ইসলাম মারুফ এবং আসাদুজ্জামান শোয়েবের সাহায্য নিয়ে শুরু করেন। তারা প্রকল্পটি ডিজাইন করেছিলেন বটে কিন্তু তাদের কাছে প্রকল্প শুরু করার মতো পর্যাপ্ত টাকা বা কোনও স্পনসর ছিল না।

২০১৩ ডেল শিক্ষা চ্যালেঞ্জ সম্পাদনা

ডেল ২০১৩ সালে তার দ্বিতীয় ডেল শিক্ষা চ্যালেঞ্জ জারি করে।[৩] প্রতিযোগিতাটি মূলত সামাজিক উদ্যোক্তাকে কেন্দ্র করে। এটি নতুন শিক্ষার ধাঁচ সম্পর্কে ডেল কমিশন জরিপে চিহ্নিত ব্যক্তিদেরসহ শিক্ষার সমস্যাগুলি সমাধানে সহায়তা করার জন্য বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবনী ধারণা উদ্দীপনার চেষ্টা করেছিল। জরিপে দেখা গেছে যে উত্তরদাতারা কার্যকর হতে শেখার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতকৃত দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছিলেন। প্রতিযোগিতায় ৪০০ এরও বেশি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছিল এবং বিজয়ী দলগুলি তাদের ধারণাগুলি সফল করতে পারে।

ভূঁইয়া, মারুফ এবং শোয়েব তাদের বন্ধুরা এবং পরিবারের সাথে তাদের পরিকল্পনা ভাগ করে নিল। তিনজনই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় তারা এই ধারণাটি ব্যবহারিকভাবে কীভাবে ব্যবহার করতে পারবেন সে সম্পর্কে তারা চিন্তাভাবনা শুরু করে। ২০১৩ সালে, তারা বিভিন্ন দেশে অধ্যয়নরত ছিল। তারা স্কাইপ বৈঠকে প্রতিযোগিতায় যোগদানের বিষয়ে আলোচনা করেছিল এবং পরে তাদের প্রকল্প জমা দেয়। তারা তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল এবং টেক্সাসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ভুঁইয়া চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য টেক্সাসে গিয়েছিলেন। অন্যান্য অংশগ্রহণকারী দলগুলি ইতিমধ্যে তাদের প্রকল্পটি পাইলট পর্যায়ে নিয়েছিল, তবে অর্থের অভাবের কারণে ভুঁইয়ার ধারণাটি কাজে আসেনি। তারা তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে এবং ২৫০০ ডলার পেয়েছে। তারা অনলাইনে গণতহবিল গঠন করে ৪৫০০ ডলার সংগ্রহ করেছিল। মোট ৭০০০ ডলার দিয়ে তারা তাদের পাইলট প্রকল্পটি শুরু করে। তাদের প্রকল্পের প্রথম লক্ষ্যটি নির্ধারিত হয় যথাক্রমে চট্টগ্রামকিশোরগঞ্জের দুটি বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। আজ পর্যন্ত সেই দুটি বিদ্যালয় এখনও তাদের মাল্টিমিডিয়া শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের প্রকল্পটি চলার সাথে সাথে তারা সমগ্র বাংলাদেশে ৪০০০টি বিদ্যালয়কে মাল্টিমিডিয়া বিদ্যালয় হিসাবে তৈরির পরিকল্পনা করেছে।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]

পৌর পাঠক সম্পাদনা

এল.ও.এইচ বই সংগ্রহের জন্য "পৌর -দ্য রিডার" নামে একটি প্রকল্প চালু করে। [৪] এই প্রকল্পটি মূললক্ষ্য হল দরিদ্র বাচ্চা যারা বই কিনতে পারে না তাদের বিনামূল্যে বই প্রদান করা। প্রকল্পের সদস্যরা বিভিন্ন স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বই (মূলত প্রাথমিক স্তরের গল্পের বই) সংগ্রহ করে। তারা অনুদানের জন্য রুম টু রিডের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাহায়তা পায়। প্রকল্পের প্রথম ক্যাম্পেইনে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিনে প্রায় ২০০টি বই সংগ্রহ করা হয়। বিপুল জনপ্রিয়তা ও সাফল্যের জন্য, এল.ও.এইচ পুরো বাংলাদেশ জুড়ে এই প্রচারণা চালাতে চেয়েছিল। তারা বই সংগ্রহের জন্য একটি ফেসবুক ইভেন্ট চালু করে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বই সংগ্রহের জন্য প্রতিনিধি প্রেরণ করে। ব্র্যাক, রুম টু রিড, এবং সেভ দ্যা চিলড্রেন সহ অনেক প্রতিষ্ঠান সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। রকমারি প্রকল্পে ২০০টি বই দান করে। এল.ও.এইচ দেশব্যাপী ৫০০ বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি তৈরির লক্ষ্যে একটি তিন বছর মেয়াদী প্রকল্প চালু করেছে। [স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Islam, D. M. Ohidul (১১ জুলাই ২০১৪)। "Light of Hope, Increasing Ingenuity in eEducation"Daily Observer। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ 
  2. "MSc SELECT student's project "Light of Hope" opens first solar powered school in Bangladesh" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১৩ 
  3. "Dell Education Challenge to Support and Fund Innovative Learning Approaches" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। ১০ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. "Poura – The Reader"INDIEGOGO 

আরও পড়ুন সম্পাদনা