রেফ ফাইঞ্জ

ব্রিটিশ অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক

রেফ নাথানিয়েল টোইস্লেটন-ওয়িকহ্যাম-ফাইঞ্জ, ওবিই (ইংরেজি: Ralph Nathaniel Twisleton-Wykeham-Fiennes, /rf fnz/; জন্ম: ২২শে ডিসেম্বর ১৯৬২) হলেন একজন ইংরেজ অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক।

রেফ ফাইঞ্জ

Ralph Fiennes
২০১৩ সালে লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসব-এ ফাইঞ্জ
জন্ম
রেইফ নাথানিয়েল টোইস্লেটন-ওয়িকহ্যাম-ফাইঞ্জ

(1962-12-22) ২২ ডিসেম্বর ১৯৬২ (বয়স ৬১)
ইপ্সউইচ, সাফোক, ইংল্যান্ড
জাতীয়তাব্রিটিশ
নাগরিকত্বযুক্তরাজ্য, সার্বিয়া
মাতৃশিক্ষায়তনরয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট
পেশাঅভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক
কর্মজীবন১৯৮৫-বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীআলেক্স কিংস্টন (বি. ১৯৯৩–১৯৯৭)
সঙ্গীফ্রান্সেস্কা অ্যানিস (১৯৯৫-২০০৬)
পিতা-মাতা
আত্মীয়
  • মার্থা ফাইঞ্জ (বোন)
  • ম্যাগনাস ফাইঞ্জ (ভাই)
  • সোফি ফাইঞ্জ (বোন)
  • জোসেফ ফাইঞ্জ (ভাই)
  • হিরো ফাইঞ্জ-টিফিন (ভাগ্নে)

ফাইঞ্জ শিন্ডলার্স লিস্ট চলচ্চিত্রে নাৎসি যুদ্ধপরাধী আমন গ্যোট চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কারগোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারে মনোনীত হন এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে বাফটা পুরস্কার জিতেন। দি ইংলিশ পেশন্ট (১৯৯৬) চলচ্চিত্রে কাউন্ট আলমাসি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে অস্কার, গোল্ডেন গ্লোববাফটার মনোনয়ন লাভ করেন।

পরবর্তীকালে ফাইঞ্জ একাধিক খ্যাতনামা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে কুইজ শো (১৯৯৪), স্ট্রেঞ্জার ডেজ (১৯৯৫), দি এন্ড অব দি অ্যাফেয়ার (১৯৯৯), রেড ড্রাগন (২০০২), দ্য কনস্ট্যান্ট গার্ডেনার (২০০৫), ইন ব্রাগস (২০০৮), দ্য রিডার (২০০৮), ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটান্স (২০১০), গ্রেট এক্সপেক্টেশন্স এবং দ্য গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল। তিনি দ্য প্রিন্স অব ইজিপ্ট (১৯৯৮)-এ রামিসেস এবং দ্য লেগো ব্যাটম্যান মুভি (২০১৭)-এ আলফ্রেড পেনিওয়ার্থ চরিত্রের জন্য কণ্ঠ দেন। ফাইঞ্জ হ্যারি পটার চলচ্চিত্র ধারাবাহিক (২০০৫-২০১১)-এ খলচরিত্রে লর্ড ভল্ডেমর্ট এবং জেমস বন্ড চলচ্চিত্র ধারাবাহিকের স্কাইফল চলচ্চিত্রে গেরেথ ম্যালরি / এম চরিত্রে অভিনয় করেন।

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ফাইঞ্জ ১৯৬২ সালের ২২শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের সাফোকের ইপ্সউইচে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মার্ক ফাইঞ্জ (১৯৩৩-২০০৪) ছিলেন একজন কৃষক ও আলোকচিত্রী এবং মাতা জেনিফার ল্যাশ (১৯৩৮-১৯৯৩) ছিলেন একজন লেখিকা।[১] তিনি ইংরেজ, আইরিশ ও স্কটিশ বংশোদ্ভূত।[২] তার বংশনাম ফাইঞ্জ এসেছে ফরাসি গ্রাম পাস-দ্য-কালাই থেকে।[৩] তার নামের প্রথমাংশের উচ্চারণ রেফ (/rf/) হওয়ায় প্রায়ই নামটির ইংরেজি ভুল বানান Rafe বা Raiph দেখা যায়।[১][৪] তার পিতামহ স্যার মরিস ফাইঞ্জ (১৯০৭-১৯৯৪) ছিলেন একজন শিল্পপতি এবং তার মাতামহ হেনরি আলিয়ন ল্যাশ ছিলেন ব্রিটিশ ব্রিগেডিয়ার।

ছয় ভাইবোনের মধ্যে ফাইঞ্জ সর্বজ্যেষ্ঠ। তার ভাইবোনেরা হলেন পরিচালক মার্থা ফাইঞ্জ, সুরকার ম্যাগনাস ফাইঞ্জ, চলচ্চিত্র পরিচালক সোফি ফাইঞ্জ এবং জমজ দুই ভাই অভিনেতা জোসেফ ফাইঞ্জ ও পরিবেশ সংরক্ষণবাদী জ্যাকব ফাইঞ্জ। তার ভাগ্নে হিরো ফাইঞ্জ-টিফিন একজন অভিনেতা।[২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

ফাইঞ্জ ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালে রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ওপের এয়ার থিয়েটারে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরে ন্যাশনাল থিয়েটারেও অভিনয় করেন। তিনি রয়্যাল শেকসপিয়ার কোম্পানিতে অভিনয় করে প্রসিদ্ধি অর্জন করেন।[৩] ফাইঞ্জ প্রথম পর্দায় কাজ করেন ১৯৯০ সালে এবং তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৯২ সালে এমিলি ব্রন্টির উদারিং হাইটস উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্র। এতে তার বিপরীতে ছিলেন জুলিয়েত বিনোশ

১৯৯৩ ছিল তার সাফল্যের বছর। তিনি পিটার গ্রিনওয়ের দ্য বেবি অব ম্যাকন চলচ্চিত্রে জুলিয়া অরমন্ডের বিপরীতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি বিতর্কিত হয় এবং নেতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে। একই বছর পরে তিনি স্টিভেন স্পিলবার্গের শিন্ডলার্স লিস্ট চলচ্চিত্রে নৈতিকতা বিবর্জিত নাৎসি নির্মূল ক্যাম্পের কমান্ড্যান্ট আমোর গ্যোট চরিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৩] অস্কার না জয় করতে পারলেও তিনি এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে বাফটা পুরস্কার অর্জন করেন। গ্যোট চরিত্রে তার অভিনয় তাকে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের শীর্ষ ৫০ চলচ্চিত্রের খল অভিনয়শিল্পী তালিকায় স্থান করে দেয়।[৪]

 
লন্ডনের লিস্টার স্কয়ারে ফাইঞ্জের হাতের ছাপ, ১৯৯৬।

১৯৯৪ সালে তিনি কুইজ শো চলচ্চিত্রে মার্কিন শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিত্ব চার্লস ভ্যান ডোরেন চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ক্রিস্টিন স্কট-টমাসের বিপরীতে মহাকাব্যিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র দি ইংলিশ পেশন্ট চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৩] এই দশকের শেষভাগে তিনি ক্যাম্প নস্টালজিয়া নির্ভর দি অ্যাভেঞ্জার্স (১৯৯৮), বাইবেলীয় মহাকাব্যিক দ্য প্রিন্স অব ইজিপ্ট (১৯৯৮) ও ঐতিহাসিক নাট্যধর্মী সানশাইন (১৯৯৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ওয়ানজিন চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং এর সহ-প্রযোজকও ছিলেন। তার বোন মার্থা ফাইঞ্জ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন এবং তার ভাই ম্যাগনাস এতে সুরারোপ করেন।

২০০০-এর দশকের শুরুতে তিনি থ্রিলারধর্মী স্পাইডার (২০০২) এবং প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক মেইড ইন ম্যানহাটন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বসহ্যানিবল-এর পূর্ববর্তী পর্ব রেড ড্রাগন-এ ফ্রান্সিস ডলারহাইড চরিত্রে অভিনয় করেন। এমিলি ওয়াটসন অভিনীত অন্ধ তরুণীর সাথে প্রণয়ের সম্পর্কে লিপ্ত সহানুভূতিশীল ধারাবাহিক খুনী চরিত্রে ফাইঞ্জের অভিনয় প্রশংসিত হয়। চলচ্চিত্র সমালোচক ডেভিড স্টেরিট লিখেন, "রেফ ফাইঞ্জ সমসাময়িক পাগল হ্যানিবল লেক্টারের মত ভয়ানক রকমের ভালো।"[৫]

২০০৫ সালে তিনি দ্য কনস্ট্যান্ট গার্ডেনার চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন। কেনিয়ার পটভূমিতে নির্মিত চলচ্চিত্রটির কিছু অংশ কাইবেরা ও লোয়াঙ্গালানির প্রকৃত বস্তিতে চিত্রায়িত হয়। তাদের অবস্থা চলচ্চিত্রটির অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রভাবিত করে এবং এতে তারা এই গ্রামগুলির শিশুদের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে কনস্ট্যান্ট গার্ডেনার ট্রাস্ট গঠন করেন। ফাইঞ্জ এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।[৬] এছাড়া তিনি যুক্তরাজ্য জুড়ে বিদ্যালয়ের শিশুদের পেশাদার মঞ্চে শেকসপিয়ারীয় নাটকে অভিনয় করতে সাহায্য প্রদানকারী দাতব্য প্রতিষ্ঠান শেকসপিয়ার স্কুলস ফেস্টিভ্যালের একজন পৃষ্ঠপোষক।[৭] একই বছর তিনি স্টপ-মোশন অ্যানিমেটেড হাস্যরসাত্মক ওয়ালেস অ্যান্ড গ্রোমিট: দ্য কার্স অব দ্য অয়্যার-র‍্যাবিট-এ লর্ড ভিক্টর কোয়ার্টারমাইন চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে তাকে ল্যাডি টটিংটনের (হেলেনা বোনাম কার্টার) পাণিপ্রার্থী নিষ্ঠুর উচ্চশ্রেণীয় বর্বর ব্যক্তি চরিত্রে দেখা যায়, যে ওয়ালেস ও গ্রোমিটকে অপছন্দ করে।[৮][৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "It's Raiph actually"দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। ১৪ নভেম্বর ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৮ 
  2. "Ralph Fiennes Biography (1962-)"ফিল্ম রেফারেন্স। অ্যাডভামেজ, ইঙ্ক.। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৮ 
  3. ইনসাইড দি অ্যাক্টরস স্টুডিও-তে James Lipton interview with Ralph Fiennes
  4. ক্যাজল, জেস (৪ মার্চ ১৯৯৪)। "It's Pronounced 'Rafe Fines'" (ইংরেজি ভাষায়)। এন্টারটেইনমেন্ট উয়িকলি। ২৩ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৮ 
  5. স্টেরিট, ডেভিড (৪ অক্টোবর ২০০২)। "The doctor is in: Hannibal returns in 'Lambs' prequel"ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  6. "Constant Gardener Trust – Patrons" (ইংরেজি ভাষায়)। ইউনিসেফ। ১৬ মার্চ ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  7. "Shakespeare Schools Foundation Patrons"Shakespeare Schools FoundationShakespeare Schools Foundation। ডিসেম্বর ১১, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১২, ২০২১ 
  8. ডিমট, রিক (৫ ডিসেম্বর ২০০৫)। "Wallace & Gromit Leads Annie Nominations" (ইংরেজি ভাষায়)। Animation World Network। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  9. ব্রাউন, মারেসা (৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮)। "'Wallace & Gromit' grabs 10 Annie Awards"ভ্যারাইটি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা