হ্যারি পটার

কল্প-উপন্যাস ধারাবাহিক

হ্যারি পটার (ইংরেজি: Harry Potter) হচ্ছে ব্রিটিশ লেখিকা জে. কে. রাউলিং রচিত সাত খন্ডের কাল্পনিক উপন্যাসের একটি সিরিজ। এই সিরিজের উপন্যাসগুলির মূল বিষয় জাদুকরদের দুনিয়া নিয়ে এবং এর কাহিনী আবর্তিত হয়েছে হ্যারি পটার নামের এক কিশোর জাদুকরকে ঘিরে, যে তার দুই প্রিয় বন্ধু রন উইজলিহারমায়নি গ্রেঞ্জারকে সাথে নিয়ে নানা অ্যাডভেঞ্চারে অংশ নেয়। গল্পের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে হগওয়ার্টস স্কুল অব উইচক্র্যাফট এন্ড উইজার্ডরিতে। মূল চরিত্র হ্যারি পটারের বড় হওয়ার পথে যেসব ঘটনা ঘটে, তার শিক্ষাজীবন, সম্পর্ক ও অ্যাডভেঞ্চার নিয়েই কাহিনী রচিত হয়েছে। আবার বইটিতে মানুষের বন্ধুত্ব, উচ্চাশা, ইচ্ছা, গর্ব, সাহস, ভালোবাসা, মৃত্যু প্রভৃতিকে জাদুর দুনিয়ার জটিল ইতিহাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ অধিবাসী, অনন্য সংস্কৃতি ও সমাজ প্রভৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। এর কাহিনী মূলত কালো-যাদুকর লর্ড ভলডেমর্ট, যে জাদু সাম্রাজ্যে প্রতিপত্তি লাভের উদ্দেশ্যে হ্যারির বাবা-মাকে হত্যা করেছিল ও তার চিরশত্রু হ্যারি পটারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে।

হ্যারি পটার
হ্যারি পটার সিরিজের সাতটি বই
লেখকজে কে রাউলিং
দেশযুক্তরাজ্য
ভাষাইংরেজি
বর্গকল্পকাহিনী, ইয়াং-অ্যাডাল্ট কথাসাহিত্য, থ্রিলার, রহস্য
প্রকাশকব্লুমসবারি পাবলিশিং
প্রকাশকাল১৯৯৭ - ২০০৭
মিডিয়া ধরনমুদ্রণ (হার্ডব্যাক ও পেপারব্যাক), অডিওবুক

১৯৯৭ সালে হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারি পটার অ্যান্ড সরসরার্স স্টোন নামে প্রকাশিত) নামে এই সিরিজের প্রথম বই প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এই সিরিজের বইগুলি রচনার শৈল্পিক উৎকর্ষের জন্য সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং সারাবিশ্বের পাঠকমহলে তুমুল জনপ্রিয়তা ও ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেছে।[] বইয়ের রাজ্যের পাশাপাশি সিনেমা ও ভিডিও গেমসের দুনিয়াতেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এটি। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সাতটি বইয়ের প্রথম ছয়টি বই সারা পৃথিবীতে ৩২৫ মিলিয়ন কপিরও বেশি বিক্রী হয়েছে[] এবং ৬৪টিরও অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[] শুধুমাত্র কুরআন ,বাইবেল এবং বুক অব মরমন (মরমনদের ধর্মগ্রন্থ) ছাড়া আর কোনো বইয়ের এই রেকর্ড নেই।[] এই সিরিজের সপ্তম ও সর্বশেষ বই, হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস, প্রকাশিত হয়েছে ২০০৭ সালের ২১ জুলাই।[] প্রকাশকেরা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বইটির রেকর্ড-ভঙ্গকারী ১২ মিলিয়ন কপি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন।[]

এই বইয়ের সাফল্য রাউলিংকে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উপার্জন করা লেখকের তালিকায় শীর্ষস্থান দিয়েছে।[] বইগুলোর ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশ করে ব্লুমসবারি যুক্তরাজ্যে, স্কলাস্টিক প্রেস যুক্তরাষ্ট্রে, অ্যালেন ও আনউইন অস্ট্রেলিয়ায়রেইনকোস্ট বুকস কানাডায়

সাতটি বইয়ের কাহিনী নিয়ে আটটি সফল চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। সর্বশেষ বই হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস এর কাহিনী অবলম্বনে দুই পর্ব বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর প্রথম পর্ব হ্যারি পটার এন্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস পার্ট-১ মুক্তি পায় ১৯ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে এবং দ্বিতীয় পর্ব হ্যারি পটার এন্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস পার্ট-২ মুক্তি পায় ১৫ জুলাই, ২০১১ তারিখে।[][]

উৎপত্তি ও প্রকাশনার ইতিহাস

সম্পাদনা
 
জে কে রাউলিং

১৯৯০ সালে জে. কে. রাউলিং ম্যানচেস্টার থেকে যাত্রী বোঝাই ট্রেনে করে লন্ডন আসার পথে হ্যারি পটার বইয়ের ধারণা তার মাথায় আসে। তিনি এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার ওয়েবসাইটে বলেনঃ[১০]

প্রায় ৬ বছর বয়স থেকে আমি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে লিখছি কিন্তু কোনো আইডিয়া সম্পর্কে আমি পূর্বে এত উত্তেজিত ছিলাম না। আমি প্রচন্ড হতাশ ছিলাম তখন কারণ, আমার কাছে তখন কোন ভাল কলম ছিল না, এবং অন্যের কাছ থেকে কলম চাইতে আমার লজ্জা লাগছিলো। আমি এখন মনে করি, তা একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে, কারণ আমি তখন কেবল বসে বসে চিন্তা করেছি, চার ঘণ্টার (ট্রেন বিলম্বিত) জন্য, এবং সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা আমার মগজে জমা হচ্ছিল, এবং এই চর্মসার, কালো চুলের, চশমাপরা ছেলে যে জানত না যে সে একজন জাদুকর, আমার কাছে ক্রমেই আরও বাস্তব মনে হতে থাকে। আমি মনে করি যে আমাকে যদি একটু ধীরে কল্পনা করতে হতো যাতে আমি তার কিছু অংশ কাগজে লিখতে পারি তাহলে আমি হয়তো সেই কল্পনার কিছু অংশ বাদ দিয়ে দিতাম (যদিও কখনও আমি অবাক হই, আমি যা ভ্রমণের সময় কল্পনা করেছিলাম তার কতটুকু আমি লেখার সময় ভুলে গেছি)।

সেই সন্ধ্যায়, লেখিকা তার প্রথম উপন্যাস লেখা-পূর্ব পরিকল্পনায় হাত দেন, হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন, একটি আধা-পরিপূর্ণ পরিকল্পনা যাতে ছিল সাত বইয়ের কাহিনীর ঘটনা, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও আত্মজীবনীমূলক তথ্যাবলী,ও জাদুর দুনিয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য।[১১] শেষ পর্যন্ত রাউলিং পর্তুগালে চলে যান, যেখনে তিনি তার প্রথম স্বামীকে ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন, এবং ১৯৯৩ সালে তার প্রথম সন্তান জেসিকা জন্মগ্রহণ করে। এসময় তিনি ফিলোসফার্স স্টোন লেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর রাউলিং তার মেয়েকে নিয়ে ব্রিটেনে ফিরে আসেন ও এডিনবার্গে তার বোনের কাছাকাছি বসবাস শুরু করেন। এসময় তিনি লেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন একটি কফি হাউজে। সপ্তাহে তার আয় ছিল মাত্র £৯০ (যার মধ্যে £৭০ ছিল সমাজ কল্যাণ থেকে) এবং তিনি তার মেয়ের জন্য কোন নার্সারীর ব্যবস্থা করতে পারেননি, তার ঘুমন্ত শিশু মেয়েটি তার লেখার সর্বক্ষনের সঙ্গী ছিল। রাউলিং পরিশ্রম করে তার লেখা শেষ করেন যা তিনি কখনও শেষ করতে পারবেন না বলে ভয় করেছিলেন।

১৯৯৬ সালে হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন শেষ হয় এবং পান্ডুলিপি এজেন্টের কাছে দেয়া হয়।

এজেন্ট পান্ডুলিপিটি আমাকে হতাশ করে ফোল্ডার ছাড়া ফেরত দেয়, যা কিনতে আমার £৪.০০ লাগে, এবং বলে যে ৮০,০০০ শব্দের লেখা বইটি ছোটদের বই হিসেবে বেশি দীর্ঘ।

দ্বিতীয় যে এজেন্ট, ক্রিস্টোফার লিটল, এর মাধ্যমে তিনি চেষ্টা করেন, তিনি রাউলিং কে সাথে সাথে লিখে জানান পান্ডুলিপি তার পছন্দ হয়েছে এবং তিনি তাকে সাহায্য করবেন। এজেন্ট পান্ডুলিপিটি ব্লুমসবারিতে পাঠান।[১২]

ফিলোসফার'স স্টোন এর পাণ্ডুলিপিটি ব্লুমসবারিতে (যা সে সময় ছোট একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছিল) চেয়ারম্যান নিগেল নিউটন এর হাতে পড়ে। তিনি বইটি নিয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন না। মি. নিউটন পান্ডুলিপিটি বাসায় নিয়ে যান কিন্তু নিজে এটি পড়েননি বরং তার আট বছর বয়সী মেয়ে এলিস কে এটি পড়তে দেন।[১৩] পান্ডুলিপিটি পড়ে এলিস নিউটন আনন্দে আত্মহারা হয়ে পিতাকে বই প্রকাশ করতে তাগাদা দেয়। অন্য আট প্রকাশক বইটি প্রকাশে অসম্মতি জানানোর পর ব্লুমসবারি রাউলিংকে অগ্রিম £২,৫০০ এর প্রস্তাব দেয়।

যদিও রাউলিং এর মতে হ্যারি পটার লেখার সময় কোন নির্দিষ্ট বয়সের পাঠকের কথা তার মাথায় ছিল না, প্রকাশকেরা প্রথমে বইটিকে ১১ বছর বয়সী পাঠকের উপযোগী হিসেবে ধরে নেন। বইটি প্রকাশের কালে অন্যান্য লেখিকাদের মত জোয়ানে রাউলিং কে প্রকাশকরা আরও লিঙ্গ-নিরপেক্ষ কোন ছদ্মনাম ব্যবহার করতে বলেন যাতে এই বয়সী ছেলেরা আকৃষ্ট হয় কারণ ছেলেরা সাধারণত নারী লেখকদের বই কিনতে আগ্রহী হয় না। তিনি তার জে. কে. রাউলিং নামটি নির্বাচন করেন (জোয়ান ক্যাথলীন রাউলিং)। ক্যাথলিন তার দাদী/নানীর নাম।

প্রথম হ্যারি পটার বইটি যুক্তরাজ্যে প্রকাশ করে ব্লুমসবারি ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ করে স্কলাস্টিক প্রেস ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে। আমেরিকার বইটির জন্য রাউলিং ছয় অঙ্কের ডলার লাভ করেন – যা একটি শিশুতোষ বইয়ের জন্য অনেক বেশি। কোন কোন পাঠক ফিলোসফার বুঝতে সমস্যায় পড়বে বা এর সাথে জাদুকে মিলাতে ব্যর্থ হবে মনে করে স্কলাস্টিক আমেরিকার সংস্করণে বইয়ের নাম পরিবর্তন করে হ্যারি পটার এন্ড দ্য সরসারার্স স্টোন রাখে।

এই সিরিজটি অনেক প্রকাশনা পুরস্কার ও প্রশংসা পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে, প্রথম তিনটি বই, হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন, হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অফ সিক্রেটস এবং হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অফ আজকাবান, ১৯৯৭, ১৯৯৮, ১৯৯৯ সালে নেসলে স্মার্টিস বুক প্রাইজ পেয়েছে ৯-১১ বছর বয়সীদের শ্রেণীতে ।[১৪]

২০০০ সালের মধ্যেই এই সিরিজটি আংশিকভাবে প্রকাশকদের ব্যবসার নীতির কারণে ও বহুলাংশে পাঠকদের বিশেষ করে তরুণ ছেলে পাঠকদের কারণে হাই-প্রোফাইল হিসেবে পরিগণিত হয়। ২০০০ সালের মধ্যে ভিডিও গেমস ও ইন্টারনেটের কারণে বইয়ের আকর্ষণ অন্য দিকে চলে যায়। রাউলিং এর প্রকাশকগন দ্রুত এই সিরিজের তিনটি বই প্রকাশ করে পাঠদের মন জয় করেন এবং তাদের কে হ্যারি পটারের একান্ত ভক্ত করে তুলেন। ফলে সিরিজটির উত্তেজনা বিন্দুমাত্র না কমে ছড়িয়ে পড়ে।[১৫] মাতামাতির চরম মুহুর্তে বিপুল মিডিয়া কভারেজের মাধ্যমে ২০০০ সালে হ্যারি পটারের চতুর্থ বইহ্যারি পটার আ্যন্ড দ্য গবলেট অফ ফায়ার প্রকাশিত হয়।

২০০১ সালে দুটি ছোট বই প্রকাশিত হয় - নিউট স্ক্যাম্যান্ডার এর ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস এন্ড হোয়ার টু ফাইন্ড দেম ও কেনিলওয়র্থি হুইস্প এর কুইদিচ থ্রু দি এজেস। এই বইদুটির আয় ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা কমিক রিলিফ এ জমা হয়। সিরিজের পরবর্তী দুইটি বই, হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্স এবং হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ-ব্লাড প্রিন্স, প্রকাশের ফলে মাতামাতি আরও বেড়ে যায়। পাঠকেরা হ্যারি পটার সিরিজের বই পেতে এতই ব্যাকুল হয়ে পড়ে যে প্রকাশের আগেই অনেকে বই চুরি করতে চেষ্টা করে।

প্রায় একযুগের মত সময়ে সিরিজটি সব বয়সী অসংখ্য ভক্ত পেয়েছে, যার ফলে প্রতি বইয়ের দুটি সংস্করণ বের করা হচ্ছে - যার গল্প একই কিন্তু প্রচ্ছদ আলাদা, একটি শিশুদের উদ্দেশ্যে আরেকটি বয়স্ক পাঠকদের উদ্দেশ্যে। এর অনেক অনুবাদের কারণে সারা বিশ্বে এটি জনপ্রিয়। অর্ডার অফ দ্য ফিনিক্স বইটি প্রথম ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত কোন বই যা ফ্রান্সের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে[১৬] ২০০৫ সালে হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ-ব্লাড প্রিন্স প্রকাশের পর ২৪ ঘণ্টায় বইটির ৯ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে এবং এর জনপ্রিয়তা কমার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি[১৭]

কাহিনী

সম্পাদনা

কাহিনীর সংক্ষিপ্তসার

সম্পাদনা

কাহিনী শুরু হয়েছে জনসাধারণের কাছ থেকে গোপনে থাকা জাদু বিশ্বকে নিয়ে। কাহিনী অনুসারে বিগত অনেক বছর ধরে জাদু বিশ্ব কালো জাদুকর লর্ড ভোলডেমর্টের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। একরাতে ভোলডেমর্ট গোপনে থাকা পটার পরিবারের সন্ধান পায় এবং লিলি ও জেমস পটারকে হত্যা করে। তবে যখন সে আভাডা কেদাভ্রা বা মৃত্যু অভিশাপ দিয়ে হ্যারি পটারকে হত্যা করার চেষ্টা করে তখন অভিশাপটি হ্যারির কাছ থেকে প্রতিফলিত হয়ে তার দিকে ছুটে আসে। ফলে ভোলডেমর্ট ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং সে জীবন ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী একটি স্থানে আটকে যায়। সে আত্মার মত কিছুতে পরিনত হয়। হ্যারির কোন ক্ষতি হয় না, শুধু তার কপালে একটা বজ্রপাতের মত কাটা দাগ থেকে যায়। ভোলডেমর্টের কাছ থেকে হ্যারির এ রহস্যময়ভাবে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা জাদু সমাজে ছড়িয়ে পড়ে এবং হ্যারি "যে ছেলেটি বেঁচে ছিল" (The Boy Who Lived) নামে পরিচিত হয়।

পরবর্তী রাতে হ্যাগ্রিড নামে এক জাদুকর হ্যারিকে তার খালার বাসায় পৌছে দেয়, যেটি পরবর্তীতে তার বাসস্থান হয়। অনাথ হ্যারি নিষ্ঠুর, মাগল (জাদুকর নয় এমন) আত্মীয় ডার্সলিদের কাছে বড় হয়। হ্যারির জাদুশক্তি থেকে রক্ষা পেতে ডার্সলিরা হ্যারির কাছ থেকে তার জাদুকর পিতা মাতার কথা লুকিয়ে রাখে, এবং তার সাথে যে জাদু বিশ্বের সম্পর্ক রয়েছে তাও গোপন রাখে। একারণে হ্যারির মধ্যে অসাধারণ কোনো জাদু গুণ দেখলে তারা হ্যারিকে শাস্তি দেয়।

পরবর্তীতে হ্যারি তার এগারতম জন্মদিনে প্রথম জাদু বিশ্বের কথা জানতে পারে, যখন সে হগওয়ার্টস স্কুল অব উইচক্র্যাফট এন্ড উইজার্ডরি থেকে ভর্তির চিঠি পায়। অবশ্য হ্যারি সেই চিঠি পড়তে পারেনি কারণ তার খালু ভার্নন তার কাছ থেকে চিঠি কেড়ে নিয়েছিলেন। এগারতম জন্মদিনে হগওয়ার্টসের পক্ষ থেকে হ্যাগ্রিড হ্যারিকে নিতে আসেন। তখনই হ্যারি জানতে পারে সে একজন জাদুকর এবং হগওয়ার্টস স্কুলে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। হ্যারি স্কুলে যোগদান করে এবং জাদু বিদ্যা আয়ত্ত্ব করে। প্রতিটি বইয়ে হ্যারির স্কুল জীবনের এক বছরের বর্ণনা থাকে। এর বেশিরভাগ অংশেই হ্যারি হগওয়ার্টসে থাকাকালীন বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার, জাদু বিদ্যা শেখা, বন্ধুদের সাথে আচরণ, ভোলডেমর্টের সাথে লড়াই, তার মানসিক অবস্থা প্রভৃতির বর্ণনা থাকে।

প্রতিটি উপন্যাসের কাহিনী জানতে সংশ্লিষ্ট বইটি দেখুন।

মহাবিশ্ব

সম্পাদনা
 
চলচ্চিত্রে দেখানো হগওয়ার্টস স্কুল

আমাদের দেখা পৃথিবী থেকে হ্যারির জাদুর পৃথিবী আলাদা এবং গোপনে রাখা হয়েছে। তবুও দুই পৃথিবীর মধ্যে একটি নিবিঢ় যোগসূত্র রয়েছে। অন্যান্য কল্পকাহিনী যেমন দ্য লর্ড অব দ্য রিংস এ জাদুর পৃথিবী থাকে রহস্যময় অতীতে, কিন্তু হ্যারি পটার সিরিজের জাদুর পৃথিবী বর্তমান পৃথিবীর সাথেই সহাবস্থান করে। এই জাদু বিশ্বের প্রায় সকল জাদুময় প্রাণী ও জিনিসের সাথে আমাদের পৃথিবীর সাধারণ জাদুহীন প্রাণী ও জিনিসের মিল লক্ষ করা যায়। জাদুর এই পৃথিবীর অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা আমাদের বিভিন্ন পরিচিত শহরে অবস্থিত, যেমন লন্ডন, যাকে আমরা আমাদের পৃথিবীতে চিনি। এই পৃথিবীতে রয়েছে অনেক ছড়ানো ছিটানো লুকায়িত রাস্তা যার প্রবেশপথ আমাদের পরিচিত পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রাচীন মদ্যশালা, নির্জন প্রাসাদ, পরিত্যাক্ত জনপদ প্রভৃতির মাঝে গোপনে ও সযত্নে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সাধারণ জাদুবিদ্যাহীন জনগণ ("মাগল" নামে পরিচিত) এসব খুঁজে পায় না। জাদুবিদ্যা সম্পর্কিত ক্ষমতা জন্মগতভাবেই পাওয়া যায়, যে কারণে জাদু শিখে যে কোন ব্যক্তিই জাদুকর হতে পারে না। তবে জাদুকর পিতা-মাতার জাদুর গুণাবলীহীন সন্তান ("স্কুইব" নামে পরিচিত) এবং জাদুশক্তিহীন পিতা-মাতার ঘরে জাদুকরের জন্ম ("মাডব্লাড" নামে পরিচিত) হতে পারে। জন্মগত জাদুকরদের জাদুবিদ্যা শিক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ লাভের জন্য জাদু শিক্ষার বিদ্যালয়ে যেতে হয়। জন্মগতভাবে জাদুকর হোক বা না হোক জাদু বিশ্বের মানুষজনের বেশিরভাগই মাগল বিশ্ব সম্পর্কে অজ্ঞ এবং একারণে তাদের চেহারা, পোশাক পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, ব্যবহৃত জিনিসপত্র মাগল সমাজে উদ্ভট দেখায়। তা সত্ত্বেও জাদুবিশ্ব ও এর বিভিন্ন আকর্ষণীয় বিষয় সিরিজে সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে। এই বইয়ের একটি মূল ভাব হচ্ছে জাদুবিশ্বকে আমাদের চেনা বিশ্বের মাধ্যমে দেখা। বইয়ে দেখা যায় জাদু বিশ্বে অনেক সমস্যা রয়েছে, আমরা আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত যার মুখোমুখি হচ্ছি।

কাহিনীর গঠন ও ধরণ

সম্পাদনা

এই সিরিজের উপন্যাসগুলো প্রায় কল্পসাহিত্য ধরনের, কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষাবিষয়ক উপন্যাসের সাথে এর মিল পাওয়া যায়। বিশেষ করে যেখানে হগওয়ার্টসের কথা বলা হয়েছে, যেটি একটি ব্রিটিশ স্কুল এবং যার পাঠ্যক্রমে জাদুর বিভিন্ন ব্যবহার অন্তুর্ভুক্ত রয়েছে। এই অর্থে থমাস হিউগসের টম ব্রাউন'স স্কুল ডেজ উপন্যাসের সাথে এর মিল পাওয়া যায়।[১৮] বইটিতে স্টিফেন কিং এর ভাষায় রহস্যময় গল্প,[১৯] এবং প্রতিটি বই শার্লক হোমস সিরিজের মত রচনার ঢং লক্ষ্য করা যায়। বইটির বর্ণনাতে বিভিন্ন ঘটনার সূত্র লুক্কায়িত থাকে এবং উপন্যাসের চরিত্রেরা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখে এবং কাহিনীর শেষের দিকে ঘটনার মোড় একদম ঘুরে যায়। বইটি তৃতীয় পুরুষের ভাষায় লেখা; তবে বইয়ের কিছু কিছু স্থানে এর ব্যতিক্রম রয়েছে (যেমন গবলেট অব ফায়ার, ফিলোসফার্স স্টোনহাফ ব্লাড প্রিন্স এর শুরুর দিকের কিছু অধ্যায়)। ঘটনার গোপনীয়তাগুলো পাঠক তখনি জানতে পারেন যখন হ্যারি তা জানতে পারে। প্রধান চরিত্র হারমায়োনি ও রন সহ অন্যান্য চরিত্রের চিন্তা চেতনা হ্যারির কাছে প্রকাশের আগে পর্যন্ত পাঠকের কাছে গোপন থাকে।

বইটি কিছু নির্দিষ্ট গৎবাধা নিয়ম মেনে চলে। সপ্তম বই ড্যাথলি হ্যালোজ ছাড়া প্রতিটি বইয়ের সময়সীমা থাকে একবছর এবং প্রতিটি বইয়ের শুরুতে হ্যারি মাগল দুনিয়ায় তার খালা-খালু ডার্সলি পরিবারের সাথে থাকে। পরে হ্যারি জাদুর দুনিয়া ডায়াগন এলি, ওয়িজলিদের বাসা কিংবা বারো নাম্বার, গ্রিমল্ড প্লেস এলাকায় যায়। এরপর বিদ্যালয়ের রেলগাড়িতে করে সে হগওয়ার্টসে ফিরে আসে। হগওয়ার্টসে আসার পর কাহিনী পরিপক্বতা লাভ করে এবং অন্যান্য চরিত্র বর্ণনায় আসে। প্রতি বইতেই দেখা যায় বিদ্যালয়ে পাঠের সময় কঠিন রচনা, কষ্টসাধ্য জাদু, অসহনশীল শিক্ষকের সাথে হ্যারির মানসিক যুদ্ধ। ঘটনা শেষ হয় যখন হ্যারির হাতে ভোলডেমর্ট পরাস্ত হয় এবং অ্যালবাস ডাম্বলডোর হ্যারিকে কাহিনীর বিভিন্ন তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন।

জাদুবিশ্বের বিভিন্ন উপাদান

সম্পাদনা

রক্তের বিশুদ্ধতা: সাধারণ জাদুকরেরা মাগলদের নিচুস্তরের মানুষ হিসেবে সন্দেহের চোখে দেখে, এবং কিছু যাদুকরের জন্য এ আচরণ চরম গোঁড়ামিতে পরিনত হয়েছে। এই ধরনের চরিত্রের লোকেরা নিজেদের পূর্বপুরুষের রক্তের বিশুদ্ধতা নিয়ে গরিমা প্রকাশ করে এবং নিজেদেরকে উঁচুতলার মানুষ বা "পিওর ব্লাড" হিসেবে গণ্য করে, তাদের পরের স্থানে থাকে "হাফ-ব্লাড" যাদুকর (যাদের পিতামাতার একজন যাদুকর অন্যজন মাগল) এবং সর্বনিন্মে থাকে "মাগল-বর্ণ" (যাদের পূর্বপুরুষে কেউ যাদুকর ছিলনা)। বিশুদ্ধ রক্তের সমর্থক যাদুকরেরা মনে করে যাদু বিশ্বের সকল ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ কেবল তাদের হাতেই থাকবে এবং মাগল পিতামাতার যাদুকরেরা আসল যাদুকর নয়। কেউ কেউ আবার চরম গোড়ামির কারণে মনে করে তাদেরকে যাদুবিদ্যা শিখতে দেয়াই উচিত নয়। অধিকাংশ বিশুদ্ধ রক্তের সমর্থক শ্রেণীর যাদুকরেরা নিজারাই বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী, কিন্তু কালযাদুর ভয়ঙ্করতম যাদুকর ভোলডেমর্ট নিজে একজন হাফ-ব্লাড হয়েও বিশুদ্ধ রক্ত তত্ত্বের সমর্থক। তবে যাদু বিশ্বের অনেক কম পরিবারই বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী, কেননা বংশ রক্ষার খাতিরে এদের অনেকেউ এমন কাউকে বিয়ে করেছে যাদের পূর্বপুরুষের অন্তত একজন অবিশুদ্ধ রক্তের যাদুকর ছিলেন। এমন একটি বিশুদ্ধ রক্তের পরিবারের বিলুপ্তি ঘটেছে হ্যারি পটার সিরিজের পঞ্চম বইয়ে, যেখানে "ব্ল্যাক পরিবারের" সর্বশেষ উত্তরাধিকার "সিরিয়াস ব্ল্যাক" মারা যান।

পেঁচা: জাদুবিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ প্রতীকের একটি হচ্ছে পেঁচা। প্রথম উপন্যাস থেকেই এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন বইয়ে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের বিশ্বে যেমন কবুতর দিয়ে চিঠিপত্র বিলি করা হত, সেরকম জাদুবিশ্বে পেঁচার মাধ্যমে চিঠিসহ বিভিন্ন জিনিস পরিবহন করা হয়। এদেরকে পোষা প্রাণী হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। হ্যারির একটি তুষার-সাদা পেঁচা আছে যার নাম হেডউইগ

হগওয়ার্টস হাউজ: বিভিন্ন আবাসিক বিদ্যালয়ের মত হগওয়ার্টসও চারটি হাউজে বিভক্ত, যেগুলোর নাম তাদের প্রতিষ্ঠাতার নামে নামকরণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে একটি বাছাই টুপি রয়েছে যেটি শিক্ষার্থীর বিভিন্ন গুণাবলী বিচার করে বিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই তাদেরকে বিভিন্ন হাউজে ভাগ করে। হাউজগুলো হচ্ছে গ্রিফিন্ডর, গড্রিক গ্রিফিন্ডর এর নামে, যেটি সাহসীদের মূল্যায়ন করে; র‌্যাভেনক্ল, রোয়েনা র‌্যাভেনক্ল এর নামে, যেটি বুদ্ধিমত্তাকে প্রাধান্য দেয়; হাফলপাফ, হেলগা হাফলপাফ এর নামে যেটি নিস্কলুসতা ও বিশ্বাসকে প্রাধান্য দেয়; এবং স্লিদারিন, সালাজার স্লিদারিন এর নামে, যেটি উচ্চাকাংখা ও রক্তের বিশুদ্ধতাকে প্রাধান্য দেয়। বিদ্যালয়ে পড়তে আসার পর হ্যারি তার সবচেয়ে কাছের দুই বন্ধু রন ও হারমায়োনির সাথে গ্রিফিন্ডর হাউজের সদস্য মনোনীত হয়।

কুইডিচ: জাদুবিশ্বের জনপ্রিয়তম খেলা কুইডিচ। ঝাড়ুর ওপর চড়ে বাতাসে উড়ে এ খেলা খেলা হয়ে থাকে। কুইডিচের খেলার ধরন পোলো ও ফুটবলের সাথে কিছুটা মেলে। হ্যারি খুব ভাল একজন কুইডিচ খেলোয়াড় যে গ্রিফিন্ডরের হয়ে বেশ কয়েকটি খেলায় জয় ছিনিয়ে এনেছে। হ্যারি এ খেলায় সিকার হিসেবে খেলে যার প্রধান কাজ হচ্ছে সোনালী স্নিচ ধরা। লি জর্ডান স্কুল থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে সমস্ত কুইডিচ খেলার ধারাবিবরণীর দায়িত্ব তার ওপরেই ছিল। সিরিজের বইগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র সপ্তম বইয়ে কুইডিচ অনুপস্থিত।[২০]

মূলভাব

সম্পাদনা

রাউলিং এর মতে হ্যারি পটার সিরিজের একটি প্রধান থিম হচ্ছে মৃত্যু। তিনি বলেন:[২১]

সিরিজে ভালর সাথে মন্দ, ভালবাসার সাথে মৃত্যুর বিরোধ দেখানো হয়েছে। ভোলডেমর্ট সর্বদা মৃত্যুকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে এবং একারণে সম্ভাব্য সকল উপায় গ্রহণ করেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ফিলোসফার্স স্টোন চুরির চেষ্টা, উইনিকর্নের রক্ত পান, তার আত্মাকে সাতটি হরক্রাক্সে বন্দী করে রাখা ইত্যাদি। এর বিপরীতে রয়েছে ভোলডেমর্টের হাত থেকে সন্তান হ্যারি পটারকে রক্ষা করতে লিলি পটারের আত্মত্যাগের ঘটনা। শেষপর্যন্ত তার ভালবাসাই হ্যারিকে ভোলডেমর্টের মৃত্যু অভিশাপ 'আভাদা কেদাভ্রা থেকে বাঁচিয়েছে, যার মর্ম ভোলডেমর্ট কখনো বুঝতে পারেনি। ভোলডেমর্ট শব্দটি নিজেই মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত। ফরাসিক্যাটালান ভাষায়, ভোল অর্থ আকাশে ওড়া, ডে অর্থ থেকে, এবং মোর্ট অর্থ মৃত্যু, তাই "ভোলডেমর্ট" এর পুরো অর্থ দাঁড়ায় "মৃত্যু থেকে (উড়ে) পালানো"। ল্যাটিনেও মোর্ট অর্থ মৃত্যু

অহংকার ও ভেদাভেদ ব্যাপারগুলোও কাহিনীতে আলোচিত হয়েছে। হ্যারি পড়াশোনার করতে করতে জানতে পারে জাদু বিশ্বে অনেক যাদুকর আছেন যারা মাগলদের সহ্য করতে পারে না। কারণ মাগলদের জাদুকরের মত কোন জাদুশক্তি থাকে না। এছাড়া জাদু বিশ্বে ভেদাবেদ রয়েছে, যেমন মাগল-বর্ন, হাফ-ব্লাড ও পিউর-ব্লাড ইত্যাদি। জাদু বিশ্বের গরিমা বৃদ্ধির সাথে সাথে দিন দিন এই ভেদাভেদ প্রকট হচ্ছে, ফলে জাদুসমাজে শ্রেণীকরন হয়েছে। এই শ্রেনীকরনে সর্বোচ্চ স্তরে ধরা হয়ে থাকে পিউর-ব্লাড (বিশুদ্ধ পূর্বপুরুষ), পরবর্তীতে হাফ-ব্লাড এবং সর্বনিন্ম শ্রেণী হচ্ছে মাগল-বর্ন বা মাডব্লাড। মানুষে মানুষে এই ভেদাভেদ ছাড়াও আধা-মানুষ আধা-প্রাণী (হাফ-ব্রিড) প্রভৃতির প্রতিও সাধারণ জাদুকরদের সন্দেহ ও ঘৃণা বিদ্যমান। পুরো বইয়ের সিরিজে বিভিন্ন প্রাণী ও উপাদানের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ফিনিক্স, গবলিন, হাউজ-এলফ, দানব, ওয়ারউলফসেনট্যার রয়েছে। হারমায়োনি গ্রেঞ্জার স্পিউ (S.P.E.W) নামে একটি প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করে যেটি হাউজ এলফের জন্য কাজ করেছিল। বইয়ে এর মাধ্যমে জীবের প্রতি ভালবাসার ধ্বনি প্রচারিত হয়েছে।

আরেকটি প্রধান ভাবধারা হচ্ছে বাছাই করা। চেম্বার অফ সিক্রেটস এ ডাম্বলডোর এ বিষয়ে একটি উক্তি করেছেন: "এটা আমাদের পছন্দ, হ্যারি, যেটি আমরা যা প্রকৃতপক্ষে তাই দেখায়, যা আমাদের সক্ষমতার অনেক বাইরে।"[২২] এই বিষয়ে তিনি গবলেট অফ ফায়ার গল্পে আবার মন্তব্য করেন যখন কর্নেলিয়াস ফাজকে তিনি বলেন, একজন যেভাবে জন্ম নিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সে কীভাবে বেড়ে উঠেছে।[২৩]

সিরিজের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যেও গুণটি লক্ষ্য করা গেছে, ডাম্বলডোর যার নাম দিয়েছেন "যা সঠিক ও যা সহজ এদের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়া"। এই গুনটিই হ্যারির জীবনকে ভোলডেমর্টের জীবন থেকে ব্যতিক্রমী করেছে। ভোলডেমর্ট ও হ্যারি উভয়েই অনাথ হিসেবে বড় হয়েছে, এবং তাদের মধ্যে অনেক গুণাবলির মিল রয়েছে। ভোলডেমর্টের বিভিন্ন দক্ষতার একটি হল পার্সেলটাং — বা সাপের সাথে কথা বলার ক্ষমতা, যেটা হ্যারি পেয়েছে। এছাড়া হ্যারির মধ্যে ভোলডেমর্টের ইচ্ছাশক্তির প্রকাশ ও নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতা দেখা যায়। [২২] এছাড়া হ্যারি বন্ধুত্ব, দয়াশীলতা, ভালবাসা প্রভৃতি গুনাবলি হ্যারির চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে।

যদিও রাউলিং এর মতে ভালবাসা, আত্মম্ভরিতা, এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রভৃতি ভাব মূল কাহিনীর গভীরে ছড়িয়ে আছে, তবে লেখিকা একই সাথে এগুলোর প্রকাশ করেননি। এগুলো ধীরে ধীরে হ্যারি ও অন্যান্য চরিত্রে প্রকাশ পেয়েছে যা বাস্তবতার সাথে অধিকতর মানানসই।[২৪] এসব থিমের মধ্যে বন্ধুত্ব ও আনুগত্য সবচেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে, যা প্রধানত হ্যারি, রন ও হারমায়োনিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। কাহিনীর চরিত্রদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এদের সম্পর্ক আরও পরিপক্ব হয়েছে, এবং হগওয়ার্টসের বিভিন্ন ঘটনার অভিজ্ঞতায় সবসময় এদের আনুগত্য পরীক্ষিত হয়েছে।[২৫]

হ্যারি পটার বইতে চরিত্রের নামকরনে লেখিকার যত্ন লক্ষ্য করার মত। প্রথম পাতা থেকেই এর প্রকাশ দেখা যায়। ভোলডেমর্ট থেকে শুরু করে গ্রপ ("Grawp", হ্যাগ্রিডের দৈত্য ভাই), মৃত্যু অভিশাপ আভাডা কেডাভ্রা, সব নামেরই কোন না কোন অর্থ রয়েছে। রাউলিং সাধারণত একাধিক অর্থ আছে এমন নাম ব্যবহার করেছেন।

কালানুক্রম

সম্পাদনা

হ্যারি পটার বইতে কাহিনীর সেরকম কোন সঠিক বছর দেয়া হয় নি। তবে কিছু সূত্র ও অতীতের ঘটনা থেকে বইটির বিভিন্ন ঘটনার বছর পাওয়া যায়। যেমন হ্যারির জন্মসাল ১৯৮০ এবং প্রথম বইটি ১৯৯১ সালের ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছে। হ্যারি পটার লেক্সিকন নামে একটি কালানুক্রম প্রস্তাব করা হয়েছে এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্স কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন ডিভিডিতে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। রাউলিং দাতব্য কাজে অর্থ সংগ্রহের জন্য নিলামের জন্য নিজে ব্ল্যাক পরিবার তালিকা তৈরি করেছেন।

প্রধান চরিত্র

সম্পাদনা
  • হ্যারি পটার: জেমস ও লিলি পটারের একমাত্র সন্তান, যাদের সাথে তার চেহারা ও আচরণের অনেক সুনির্দিষ্ট মিল পাওয়া যায়। যেমন: জেমসের অপরিপাটী কালো চুল ও লিলির সবুজ চোখ। পরে জানা যায় যে, সে তার একগুয়ে আচরণ তার মা'র কাছ থেকে পেয়েছে। তার জন্মদিন ৩১ জুলাই, ১৯৮০। তার বয়স যখন এক বছর তখন যাদু বিশ্বের ভয়ঙ্করতম যাদুকর লর্ড ভলডেমর্ট তাদের বাড়ি আক্রমণ করে, তার মা-বাবাকে মেরে ফেলে, কিন্তু তাকে মারতে ব্যর্থ হয়। এই ঘটনার ফলে যাদু বিশ্বে হ্যারি পরিচিতি অর্জন করে। কিন্তু এই আক্রমণের ফলে হ্যারির কপালে বিদ্যুৎ চমকের মত একটা স্পষ্ট কাটা দাগ (স্কার, scar) থেকে যায়। হ্যারির উপর লর্ড ভোলডেমর্টের প্রয়োগ করা মৃত্যু অভিশাপ আভাডা কেডাভ্রা হ্যারির কাছ থেকে বাধা পেয়ে প্রতিফলিত হওয়ার কারণে ভোলডেমর্ট তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হগওয়ার্টসে, হ্যারি নিজেকে মেধাবী যাদুকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। "ডিফেন্স এগেইনস্ট দ্য ডার্ক আর্টস" (কালো যাদু থেকে প্রতিরক্ষা) ও কুইডিচ খেলায় সে সুনাম অর্জন করে। তার হাউজ গ্রিফিন্ডর ও সাধারণ ভাবে বিদ্যালয়ের একজন সক্ষম নেতা হিসেবে সে নিজেকে মেলে ধরে। তার শত চেষ্টাতেও সে তার খ্যাতিকে দমন করতে পারেনি এবং এই কারণে সে অনেক সময় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে (দ্য ডেইলি প্রফেট পত্রিকা) আলোচনা, গুজব, ঠাট্টা (স্কার নিয়ে) তাকে কিছু সংখ্যক অধ্যাপক ও ছাত্রের চক্ষুশুলে পরিনত করেছে। বাইরের শত চাপ সত্ত্বেও সে সব সময় সাহসী ও মহান থেকেছে, যদিও কখনও কখনও তার এসব গুনাবলি বিপদ ডেকে এনেছে। হারমায়োনি গ্রেঞ্জার এর নাম দিয়েছে "সেভিং-পিপল থিং"। তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু রন উইজলি ও হারমায়োনি গ্রেঞ্জার, এবং তার শত্রু হচ্ছে লর্ড ভলডেমর্ট, সেভেরাস স্নেপ ও ড্রাকো ম্যালফয়।
  • রন উইজলি: হ্যারি পটারের সবচেয়ে কাছের বন্ধু এবং দরিদ্র, দয়ালু উইজলি পরিবারের সাত সন্তানের মধ্যে ষষ্ঠ। উইজলি পরিবার ব্লাড ট্রেইটর এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। হগওয়ার্টস স্কুলে প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় হগওয়ার্টস এক্সপ্রেস ট্রেনে হ্যারির সাথে রনের বন্ধুত্ব হয়। সর্বদা হ্যারির ছায়ায় থাকার কারণে একসময় রনের সাথে হ্যারির দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি এবং তারা পুনরায় বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে। রন হ্যারির সকল অ্যাডভেঞ্চারের সহযোগী। রন চরিত্রটি হ্যারির একটি অপূর্ণতা প্রকাশ করেছে, সেটি হলো পরিবারের সমর্থন। রনের সাথে বন্ধুত্ব করার আগে হ্যারি কখনোই পরিবার কি তা বোঝেনি।
  • হারমায়নি গ্রেঞ্জার: হারমায়োনি, হ্যারি ও রনের কাছের বন্ধু এবং হগওয়ার্টস স্কুলে হ্যারির বর্ষের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। তার উচ্চ বুদ্ধিমত্তা ও বাস্তবজ্ঞান বিভিন্ন বিপদাপদ থেকে হ্যারি ও রনকে অনেকবার বাঁচিয়েছে। তবে মাঝে মাঝে তার নেত্রীসুলভ আচরণ হ্যারি ও রনের বিরক্তি উদ্রেক করে থাকে। হ্যারি পটারের চতুর্থ বই হ্যারি পটার এন্ড দ্য গবলেট অব ফায়ারে রন ও হারমায়োনির মাঝে ঝগড়া হয়েছিল। আবার ষষ্ঠ বই হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ-ব্লাড প্রিন্সে তাদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হারমায়োনির পিতা-মাতা উভয়েই মাগল ও পেশায় দাঁতের ডাক্তার। মাগল পিতামাতা থাকার কারণে তাকে সহপাঠী ড্রেকো ম্যালফয় ও অধ্যাপক সেভেরাস স্নেপ বিভিন্ন মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। অনেকে হারমায়োনির মাঝে লেখিকা জে কে রাউলিং এর ছায়া দেখতে পেয়েছেন।

সমালোচনা ও প্রশংসা

সম্পাদনা

সাহিত্যিক সমালোচনা

সম্পাদনা
 
হ্যারি পটারের সফলতার নিদর্শন, হ্যারি পটার সিরিজের সাতটি বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে রয়াল মেইল ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে।[২৬]

হ্যারি পটার প্রকাশের শুরুতে বইটি সর্বসাধারণের কাছে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিল, যা এই সিরিজের বিশাল পাঠকসমাজ তৈরিতে সাহায্য করেছে। হ্যারি পটার এন্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন প্রকাশের পর ইংল্যান্ডের প্রধান সংবাদপত্রগুলি বইটির প্রভূত প্রশংসা করেছে। এসব সংবাদপত্রের মধ্যে রয়েছে: মেইল অন সানডে যারা রাউলিংকে "রুয়াল দাল এর পর কল্পনাতীত অভিষেক" হিসেবে আখ্যায়িত করেছে; সানডে টাইমস প্রায় একই কথা বলেছে ("ডালের সাথে তুলনা এক্ষেত্রে সঠিক হয়েছে"), দ্য গার্ডিয়ান একে "নতুন উদ্ভাবনী চিন্তার সমৃদ্ধশালী উপন্যাস" এবং দ্য স্কটসম্যান "একটি চিরন্তন সহিত্যের সৃষ্টি" বলে আখ্যায়িত করেছে।[২৭] ২০০৩ সালে প্রকাশিত হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অব দ্য ফিনিক্স অবশ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও একাডেমি থেকে বিরুপ সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। এ. এস. বাট নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি সম্পাদকীয় লেখেন যাতে তিনি বলেন রাউলিং বিশ্ব শিশু সাহিত্যের বিভিন্ন ধারা, কার্টুন, ডেইলি সোপ, টিভি অনুষ্ঠান ও তারকাদের গুজব প্রভৃতির কাল্পনিক চরিত্রকে চতুরতার সাহায্যে পরিবর্ধিত করে তার কাল্পনিক জগৎ গড়ে তুলেছেন। বাট সিরিজটির বিশ্লেষণ করে আরও বলেন বড়দের কাছে এটির জনপ্রিয়তার কারণ বড়রা তাদের ফেলে আসা অতীতের ইচ্ছা ও আশাগুলোর অপূর্ণতার সান্ত্বনা পান। ছোটদের কাছে জনপ্রিয়তার কারণ পালানো ও ক্ষমতা পাওয়ার কল্পনা করা এবং গল্পগুলো মজার, সহজে পড়া যায় ও যথেষ্ট ভয়ঙ্কর। এটি বিভিন্ন সংস্কৃতি পড়াশুনা করে এবং সেগুলোর জনপ্রিয়তা ও সাহিত্য মূল্য বিবেচনা বিচার করে লেখা একটি বই।[২৮] লেখক ফে ওয়েল্ডন এই সিরিজ সম্পর্কে একই ধারণা পোষন করেন। তার মতে এটি এমন না যেটি কোন কবি আশা করেন, তবে এটি কবিতা নয়, এটি সহজপাঠ্য, বিক্রয়যোগ্য, সাধারণের জন্য গদ্য।[২৯] সাহিত্য সমালোচক হ্যারল্ড ব্লুমও হ্যারি পটারের সাহিত্য মূল্য সম্পর্কে নেতিবাচক সমালোচনা করেছেন। তিনি প্রচলিত ধারনার সাথে একমত না হয়ে বলে, হ্যারি পটার পড়ে কেউ কিপলিং এর জাস্ট সো স্টোরিস অথবা তার জাঙ্গল বুক পড়বে তা তিনি মনে করেননা। তিনি আরও বলেন হ্যারি পটারের বই পাঠকদের থার্বারের দ্য থার্টিন ক্লকস অথবা কেনেথ গ্রাহামের উইন্ড ইন দ্য উইলোস অথবা লুইস ক্যারলের এলিস পড়ায় আগ্রহী করবে না[৩০]

Salon.com এর চার্লস টেইলর বাটের সমালোচনা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন বাটের সাথে একটা ক্ষেত্রে একমত যে বইটির ভাষা উঠতি বয়সীদের উপযোগী, যেকারণে শিল্পগুনের জটিল বিচার বিশ্লেষনার দিকে না গিয়েই তারা বইটি উপভোগ করতে পেরেছে। তবে বাটের দাবি তিনি প্রত্যাখ্যান করেন, যাতে বাট বলেছিলেন সিরিজটির সাহিত্য গুনের চরম অভাব রয়েছে এবং এটি মানুষের হারানো শৈশবের নতুন বিশ্বাস পাঠকদের মাঝে জাগাতে পেরেছে বলেই ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছে। টেইলর বইটিতে কালো ভাবের দিকে জোর দিয়েছেন, যাতে সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর হত্যার এবং এর ফলে সৃষ্ট মানসিক ক্ষত ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা দেখানো হয়েছে। টেইলর বলেছেন ফিলোসফার্স স্টোন বইটি ছয়টি বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে কমভীতিকর যা শৈশবের উপর পুনঃ আস্থা আনতে পারেনি এবং বাটের দাবিনুযায়ী যেটি ছিল বইটির সাফল্যের মূল কারণ। টেইলরের মতে রাউলিং এর সাফল্যের মূল কারণ তিনি খুব ভালো করে কাহিনী বর্ণনা করতে সিদ্ধহস্ত।[৩১]

স্টিফেন কিং টেইলরের সাথে একমত প্রকাশ করে বলেছেন সিরিজটি কেবল সুদূর কল্পনাশক্তি সম্পন্ন মস্তিষ্ক থেকেই লেখা সম্ভব, এবং তিনি রাউলিং এর হাস্যরসকে অনন্য আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যদিও কাহিনীটি বেশ ভাল, কিন্তু ছয়টি বইয়ের সব কয়টিতেই খালা-খালুর বাসায় হ্যারির ব্যথিত দিন কাটানো দেখতে দেখতে তিনি পরিশ্রান্ত হয়েছেন।[১৯] কিং ঠাট্টা করে বলেন রাউলিং এমন কারো দেখা মনে হয় পাননি যাকে তিনি অপছন্দ করেন। তিনি অবশ্য অনুমান করেছেন যে হ্যারি পটার লাইব্রেরীর তাকে শ্রেষ্ঠ বইগুলোর পাশেই থাকবে, এবং হ্যারি, তার প্রিয় চরিত্র এলিস, হাক ফিন, ফ্রোডো ব্যাগিনস, ডরোথি গেইল প্রভৃতির যায়গা দখল করবে। তিনি আরও বলেন এই সিরিজ কেবল একযুগের জন্য নয় এটি যুগযুগ ধরে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যে পরিনত হবে।[৩২]

টেলিগ্রাফ হ্যারি পটার সিরিজের সর্বসাম্প্রতিক বইটি ও পুরো সিরিজটির সমালোচনা প্রকাশ করে বলেছে রাউলিং এর জনপ্রিয়তা সম্পূর্ণ তার নিজের তৈরী, প্রকাশনা বিশ্বের কোন প্রচারনার ফল নয়।[৩৩] তাকে অন্যান্য জনপ্রিয় লেখক যেমন, ড্যান ব্রাউন, জিওফ্রে আর্চার প্রমুখের চেয়ে কুশলী লেখিকা বলা হয়।

নারীবাদী সমালোচনা

সম্পাদনা

কিছু নারিবাদী লেখকও হ্যারি পটার সিরিজের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে ক্রিস্টিন শোফার অগ্রগামী, যিনি উপন্যাসগুলোকে পুরুষপ্রধান ও অন্ধ দেশপ্রেমে পরিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। শোফারের মতে সিরিজটি এমন এক বিশ উপস্থাপন করেছে যাতে গতানুগতিক পুরুষ সমাজই সবকিছু করে এবং ধরেই নেয়া হয়েছে তারাই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। শোফার বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে হ্যারির সাহসের সাথে হারমায়োনির অনুভূতিপ্রবণ মানসিকতার তুলনা এবং হ্যারি ও রনের সম্মতির জন্য তার প্রয়োজনীতা কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া নারী অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল ও চাপগ্রস্থ অবস্থায় তার মত দুর্বলের সাথে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ডাম্বলডোরের তুলনা করেছেন। তিনি হ্যারি পটারে শক্ত নারী চরিত্রের অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন।[৩৪]

রক্ষনশীল/সামজিক মূল্যবোধের সমালোচনা

সম্পাদনা

সমালোচক অ্যান্থনি হোল্ডেন দ্য অবজারভার পত্রিকায় ১৯৯৯ হুইটব্রেড পুরস্কার এর জন্য মনোনয়নের সময় হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অব আজকাবান বইটি মূল্যায়নের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। বইটি সম্পর্কে তার সামগ্রিক ধারণা নেতিবাচক। তার মতে পটার সিরিজ খুবই রক্ষনশীল, গৌণ, নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত বিগত ব্রিটেনের গুণগান গেয়েছে। তিনি আরও বলেন অন্যান্য বিচারকেরাও তার সাথে এই ব্যাপারে একমত।[৩৫]

যদিও বিভিন্ন রক্ষণশীল গোষ্ঠী যেমন জন বার্চ সোসাইটি, তার বইতে উদারপন্থী/সমাজপন্থী মনোভাবের সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন হ্যারি পটার বইয়ের কিছু যায়গায় আধুনিক মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিপক্ষে কথা বলা হয়েছে, বিশেষত হ্যারি পটারের সাথে ডার্সলি পরিবারের ঘটনায়।[৩৬]

এছাড়া সমাজে রাউলিং এর সংস্কারপন্থী মনোভাব ও বইয়ের চরিত্রের সহজে মৃত্যু ঘটানোকে জেসিকা মিটফোর্ড বামপন্থী ধারার চিন্তার প্রকাশ হিসেবে দেখেছেন।[৩৭] রাউলিং মিটফোর্ডকে বলেছেন, যিনি আমেরিকার কমিউনিস্ট দলের সদস্য (রেড স্কেয়ার), ১৪ বছর বয়স থেকেই মিটফোর্ড রাউলিং এর নায়িকা হিসেবে রয়েছেন।[৩৮]

উদারপন্থী লেখক মাই হার্সের মতে বইয়ের চরিত্রগুলো বড়দের বিরুদ্ধাচরণ করে, নিয়ম ভাঙ্গে, প্রতিকূল পরিবেশে বিপক্ষ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সাহস দেখায়। এইটিই রক্ষণশীলদের সবচেয়ে ভয়ের কারণ, যারা বিশ্বকে তাদের গড়া মূল্যবোধে আবদ্ধ দেখে অভ্যস্ত।[৩৯]

বিতর্ক

সম্পাদনা

জে.কে. রাউলিং এর হ্যারি পটার সিরিজ অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বইটি নিয়ে অনেক আইনি লড়াই হয়েছে, যার অনেকাংশের উৎপত্তি হয়েছে আমেরিকান ধর্মীয় সংস্থা থেকে যারা দাবি করে আসছে বইটি শিশুদের মাঝে ডাকিনীবিদ্যার প্রসার ঘটাচ্ছে। সেসময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সচেতন অভিভাবকেরা উন্মুক্ত স্থানে হ্যারি পটারের বইগুলোতে অগ্নিসংযোগ করে তুমুল প্রতিবাদ করেন এই কারণে যে-এই কাহিনীগুলো কোমলমতি শিশুদের মধ্যে কালো যাদু বা যাদুবিদ্যা সম্পর্কে আগ্রহী করে দিচ্ছে, যেটা শিশুদের জন্যে খুবই নেতিবাচক এবং সমাজ, নীতিবোধ ও বিভিন্ন ধর্মের আদর্শের সাথে ভীষণভাবে সাংঘর্ষিক। এবং আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক আইনের লঙ্ঘনের ফলে। বইয়ের তুমুল জনপ্রিয়তা ও উচ্চ বাজারমূল্যের কারণে রাউলিং, তার প্রকাশক, তার বইয়ের চলচ্চিত্র প্রযোজক ওয়ার্নার ব্রোসকে কপিরাইট নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে, বইয়ের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে, ওয়েবসাইটের ডোমেইন নিয়ে লড়াই করতে হয়েছে। এছাড়া লেখিকা ন্যান্সি স্টোফার রাউলিং তার নিজের রচনার শব্দ ও চরিত্র চুরি করেছেন বলায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। এই আইনি লড়াইয়ে রাউলিং জিতেছেন এবং ন্যান্সি স্টোফারকে ৫০,০০০ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছে।

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

জে কে রাউলিং এবং হ্যারি পটার সিরিজ ফিলোসফার্স স্টোন প্রকাশের পর থেকে অনেক পুরস্কার পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চারটি হুইটেকার প্লাটিনাম বুক এওয়ার্ডস (সবগুলো ২০০১ সালে), তিনটি নেসলে স্মার্টিস বুক প্রাইজ (১৯৯৭-১৯৯৯), দুটি স্কটিশ আর্টস কাউন্সিল বুক এওয়ার্ডস (১৯৯৯ ও ২০০১), উদ্বোধনী হুইটব্রেড বর্ষসেরা শিশুতোষ গ্রন্থ পুরস্কার, (১৯৯৯), ডব্লিউ এইচ স্মিথ বর্ষসেরা বই (২০০৬)। ২০০০ সালে হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অব আজকাবান শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বিভাগে হিউগো পুরস্কারের জন্য মনীত হয় কিন্তু পায়নি। তবে ২০০১ সালে হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার বইটি উক্ত পুরস্কার ছিনিয়ে নেয়। অন্যান্য সম্মাননার মধ্যে রয়েছে কার্নেগি মেডেলের জন্য ১৯৯৭ সালে মনোনয়ন, ১৯৯৮ সালে গার্ডিয়ান চিলড্রেন'স এওয়ার্ড পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান, বিভিন্ন স্থানে স্মরনীয় বইয়ের তালিকায় স্থান, আমেরিকান লাইব্রেরি এসোসিয়েশন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, শিকাগো পাবলিক লাইব্রেরীপাবলিশার্স উইকলি প্রভৃতিতে সম্পাদকের পছন্ধ এবং প্রস্তাবিত শ্রেষ্ঠ বই তালিকায় অবস্থান।[৪০]

বাণিজ্যিক সফলতা

সম্পাদনা

"হ্যারি পটার" সিরিজের জনপ্রিয়তার কারণে রাউলিং, তার প্রকাশক এবং "হ্যারি পটার" লাইসেন্সধারীরা আর্থিক দিক দিয়ে প্রচুর লাভবান হয়েছেন। সিরিজের বইগুলো সারাবিশ্বে ৩২৫ মিলিয়নের অধিক কপি বিক্রি হয়েছে এবং বইয়ের কাহিনী অবলম্বনে ওয়ার্নার ব্রস কর্তৃক নির্মিত সাতটি চলচ্চিত্রও বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছে। হ্যারি পটারের কাহিনী নিয়ে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন আয়ের দিক দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে ছিল। অন্যান্য তিনটি চলচ্চিত্রও শীর্ষ ২০ নম্বর অবস্থানের ভেতর ছিল।[৪১] চলচ্চিত্রগুলো থেকে পাঁচটি ভিডিও গেম নির্মিত হয়েছে এবং সবমিলিয়ে ৪০০ এর অধিক হ্যারি পটার সংক্রান্ত পণ্য (একটি আইপড সহ) বাজারে এসেছে। জুলাই ২০০৫ পর্যন্ত এগুলো থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার এবং রাউলিং বিলিয়নিয়ারে পরিনত হয়েছেন যা তাকে যুক্তরাজ্যের রানীর থেকে বিত্তবানে পরিনত করেছে।[৪২][৪৩]

২০০৭ সালের ১২ এপ্রিল বার্নেস এন্ড নোবেল ঘোষণা করে ডেথলি হ্যালোস আগের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে তাদের সাইটে ৫০০,০০০ কপির অর্ডার পাওয়ার মাধ্যমে।[৪৪]

অনুবাদ

সম্পাদনা
 
হ্যারি পটার বইয়ের বাংলা অনুবাদসমূহের প্রচ্ছদ

সারা বিশ্বে জনপ্রিয় এই সিরিজটি ৬৩ টিরও অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। প্রথম অনুবাদ হয়েছে আমেরিকান ইংরেজিতে কারণ ব্রিটিশ ইংরেজির কিছু শব্দ আমেরিকার শিশুদের জন্য প্রযোজ্য ছিলনা বা আমেরিকায় ভিন্নার্থে ব্যবহৃত হত। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা যেমন বাংলা, ইউক্রেনীয়, হিন্দি, ওয়েলশ এবং ভিয়েতনামী ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে। প্রথম খন্ডটি লাতিন এবং প্রাচীন গ্রীক ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে।[৪৫] গ্রিক ভাষায় অনূদিত রচনাটি তৃতীয় শতকে "হেলিডোরাস অব এমেসা" বইয়ের পর সর্ববৃহৎ অনূদিত বই।[৪৬] বাংলাদেশে অঙ্কুর প্রকাশনী এককভাবে বইগুলোর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে।

বহু আকাঙ্খিত ও জনপ্রিয় বইটির প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য অনুবাদ সহজসাধ্য নয়, এজন্য যত্ন ও ধৈর্য প্রয়োজন। পঞ্চম বইটির রুশ অনুবাদ করেছেন ভিক্টর গোলিশেভ যিনি পূর্বে উইলিয়াম ফকনার এবং জর্জ অরওয়েলের মত লেখকের অনুবাদ করেছেন।[৪৭] তুর্কীতে সিরিজের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম বইয়ের অনুবাদ করেছেন সেভিন ওকায়, যিনি তুরস্কের একজন জনপ্রিয় সাহিত্য সমালোচক এবং সাংস্কৃতিক ভাষ্যকার।[৪৮] প্রয়োজন অনুসারে এসব অনুবাদ পাঠকের কাছে পৌছাতে ইংরেজি বইয়ের চেয়ে বেশি সময় নেয়, যার কারণে অ-ইংরেজি ভাষী দেশেও ইংরেজি সংস্করণ ভালই বিক্রি হয়। সারা বিশ্বে বইটির এতই জনপ্রিয়তা যে সিরিজটির পঞ্চম বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ ফ্রান্সে বিক্রির তালিকায় শীর্ষে ছিল যা কোন ইংরেজি বইয়ের জন্য প্রথম ঘটনা।[১৬] কোন কোন দেশে মূল অনুবাদের আগেই চোরাই অনুবাদ বাজারে চলে আসে,[৪৯] এবং কোন কোন স্থানে, যেমন শ্রীলঙ্কায় চোরাই করা সংস্করণই একমাত্র স্থানীয় অনুবাদ।[৫০]

সাংস্কৃতিক প্রভাব

সম্পাদনা

ফিলোসফার্স স্টোন প্রকাশিত হওয়ার পরে সমাজে বিভিন্ন চল চালু হয়েছে। ২০০৫ সালে, অক্সফোর্ডের জন রেডক্লিফ হাসপাতালের ডাক্তারেরা একটি বিবরনী প্রকাশ করেন, যাতে ২১ জুন, ২০০৩ এবং ১৬ জুলাই, ২০০৫ তারিখের (সপ্তাহান্তের শনিবারে, যেসময় সর্বশেষ দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে) আসা রোগীদের উপর গবেষণা চালানো হয়। এতে দেখা যায় কেবল ৩৬ জন শিশুর দুর্ঘটনার জন্য জরুরি চিকিৎসার দরকার হয়েছিল, অন্যসময় যেখানে গড়ে ৬৭ জনের জন্য চিকিৎসা দেয়া হত।[৫১] এছাড়া শিশুদের মাঝে পড়ালেখার ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রমাণও পাওয়া গেছে। স্কলাস্টিকের পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় ৫-১৭ বছর বয়সী হ্যারি পটার পাঠকের মতে এই বইটি পড়ার আগে তারা কখনো আনন্দ লাভের জন্য বই পড়ত না, যা তারা এখন পড়ে। এই গবেষণা থেকে আরও পাওয়া যায় ৬৫% শিশু এবং ৭৬% অভিভাবকের মতে সিরিজটি পড়া শুরু করার পর বিদ্যালয়ে তাদের ফলাফল ও মানের উন্নতি হয়েছে।[৫২]

 
ডেলাওয়ারের একটি বইয়ের দোকানে মধ্যরাতে প্রকাশিত বইয়ের জন্য অপেক্ষমাণ পাঠকেরা

সিরিজটি প্রকাশিত হওয়ার পর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভক্তগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে। এরা সিরিজটি নিয়ে এতই উৎসাহী যে, ২০০০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বইয়ের দোকানে হ্যারি পটার এন্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার বইটির প্রকাশনার পাশাপাশি উৎসবও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে থাকে জন-সমাগম, গেমস, চেহারায় চিত্রাংকন, ও বিভিন্ন বিষয়াদি। হ্যারি পটার এন্ড দ্য হাফ ব্লাড প্রিন্স বইটির প্রথম সংস্করণ ছাপানো হয়েছিল ১০.৮ মিলিয়ন কপি, যার মধ্যে ৯ মিলিয়নই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়েছিল।[১৭][৫৩] এসব সমর্থকের মধ্যে কিছুসংখ্যক রয়েছেন যারা সিরিজটির অন্ধভক্ত বা সুপার-ফ্যান। ইন্টারনেটের ব্লগ, পডকাস্ট এবং বিভিন্ন ফ্যানসাইট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা বিষয়টিকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। এরা মাঝে মাঝে পটার সম্বন্ধীয় বিষয়ে মেলার আয়োজনও করে থাকে।

হ্যারি পটার সিরিজের মাধ্যমে উইজার্ড রক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সঙ্গীত দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যারা হ্যারি পটারের নাম, চিত্র এবং গানের কথায় পটার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়াদি ব্যবহার করেছে। উদাহরণ হচ্ছে হ্যারি এন্ড দ্য পটারস এবং দ্য ক্রুসিয়েটাস কার্স প্রভৃতি ব্যান্ডদল।

হ্যারি পটারের মাধ্যমে প্রকাশনা বিশ্বেও পরিবর্তন এসেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার লিস্ট এর পুনর্গঠন। ২০০০ সালে গবলেট অব ফায়ার প্রকাশিত হবার পর এটিতে পরিবর্তন আনা হয়, যখন প্রকাশকের অভিযোগ করেন যে তালিকার অধিকাংশ স্থানই হ্যারি পটার ও অন্যানু শিশুতোষ বই দখল করে রেখেছে। দ্য টাইমস পরে শিশুতোষ বইয়ের জন্য আরেকটি বেস্ট সেলার তালিকা প্রণয়ন করে।[৫৪]

হ্যারি পটার বইয়ের মাধ্যমে মাগল শব্দটির ব্যাপক প্রসার হয়েছে এবং অনেকেই যাদের কোন বিষয় দক্ষতা কম রয়েছে তাদের সম্পর্কে মাগল শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ২০০৩ সালে মাগল শব্দটি অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানে যোগ করা হয়েছে।[৫৫]

ভবিষ্যত

সম্পাদনা

থিম পার্ক

সম্পাদনা

২০০৭ সালের ৩১ মে ওয়ার্নার ব্রোস, ইউনিভার্সাল স্টুডিও এবং লেভেসডেন স্টুডিও ঘোষণা দেয় হ্যারি পটার নিয়ে একটি পার্ক তৈরি করা হবে ফ্লোরিডা রাজ্যের অরলান্ডোর ইউনিভার্সাল অরলান্ডো'স আইল্যান্ড অব এডভেঞ্চার' এলাকায়।[৫৬] এই ঘোষণা অনুসারে দ্য উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড অব হ্যারি পটার নামের এই পার্কটি হবে বিশ্বের প্রথম হ্যারি পটার থিম পার্ক। এই পার্কটি উদ্বোধন হতে পারে ২০০৯ সালের শেষের দিকে। এতে থাকবে বিভিন্ন অত্যাধুনিক রাইড এবং হ্যারি পটারে উল্লিখিত বিভিন্ন চরিত্রের বাস্তবরুপ।[৫৭] একটি অনলাইন ঘোষণায় বোঝা যায় এটি লেখিকা রাউলিং এবং স্টুয়ার্ট ক্রেইগের দেড় বছরের চিন্তার ফসল।[৫৬]

সহপাঠ্য

সম্পাদনা

অন্যান্য মাধ্যম

সম্পাদনা

চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Allsobrook, Dr. Marian (২০০৩-০৬-১৮)। "Potter's place in the literary canon"BBC। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১৫ 
  2. Dearbáil Jordan (২০০৭)। "Time comes for Harry to fly to the rescue"Times UK। ২০০৮-০৯-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০৭ 
  3. Rowling, JK। "J.K.Rowling Official Site - Harry Potter and more: Acknowledgements"। ২০০৭-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৭-৩০ 
  4. Wizard revisited
  5. "Publication Date for Harry Potter and the Deathly Hallows"Joanne Rowling। ২০১১-০৭-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-২৬ 
  6. McLaren, Elsa (২০০৭-০৩-১৫)। "Harry Potter's final adventure to get record print run"The Times। ২০০৮-০৭-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-২৭ 
  7. Watson, Julie and Kellner, Tomas. "J.K. Rowling And The Billion-Dollar Empire". Forbes.com, 26 February 2004. Accessed 19 March 2006.
  8. "Release Date Set for Harry Potter 7: Part I"। Comingsoon.net। ২৫ এপ্রিল ২০০৮। ১৮ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০০৮ 
  9. "WB Sets Lots of New Release Dates!"। Comingsoon.net। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  10. Rowling, J.K.। "Biography"। JKRowling.com। ২০০৮-১২-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৫-২১ 
  11. "J.K. Rowling interview transcript, The Connection"। Quick Quote Quill। অক্টোবর ১২, ১৯৯৯। আগস্ট ১, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১, ২০০৬ 
  12. ""Spell Binder" People Magazine"। Quick Quotes Quill। জুলাই ১২, ১৯৯৯। সেপ্টেম্বর ৭, ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১, ২০০৬ 
  13. "Revealed: The eight-year-old girl who saved Harry Potter"। New Zeland Herald। জুলাই ৩, ২০০৫। সেপ্টেম্বর ২৯, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১, ২০০৬ 
  14. "Past winners"। Nestle Smarties Prize। মে ২১, ২০০৬। আগস্ট ২৩, ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১, ২০০৬ 
  15. "Books' Hero Wins Young Minds"। New York Times। জুলাই ১২, ১৯৯৯। 
  16. "OOTP is best seller in France - in English!"। BBC। জুলাই ১, ২০০৩। 
  17. "Potter book smashes sales records"। BBC। জুলাই ১৮, ২০০৫। 
  18. "J. K. Rowling" by Leslie Ellen Jones, NoveList/EBSCO Publishing, 2003, retrieved September 9, 2005
  19. ""Wild About Harry""। New York Times। জুলাই ২৩, ২০০০। 
  20. Accio Quote: Luna commentated last Quidditch match
  21. "'There would be so much to tell her...'"। ২০০৭-০৩-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০৪ 
  22. Rowling, J.K. (১৯৯৯)। Harry Potter and the Chamber of Secrets (US Hardback)। পৃষ্ঠা 333। 
  23. Rowling, J.K. (২০০০)। Harry Potter and the Goblet of Fire (US Hardback)। পৃষ্ঠা 708। 
  24. "Mzimba, Lizo, moderator. Interview with Steve Kloves and J.K. Rowling"। Quick Quotes Quill। ফেব্রুয়ারি ২০০৩। ৯ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০০৭ 
  25. "About the Books: transcript of J.K. Rowling's live interview on Scholastic.com"। Scholastic.com। ১৬ অক্টোবর ২০০০। ১০ জানুয়ারি ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০০৭ 
  26. "Special stamps to mark Potter book release"Australian Broadcasting Corporation। 2007-22-05। ১১ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2007-06-06  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  27. JK Rowling (১৯৯৮)। Harry Potter and the Chamber of Secrets। Bloomsbury। পৃষ্ঠা 253 
  28. "Harry Potter and the Childish Adult"। New York Times। জুলাই ৭, ২০০৩। 
  29. "Rowling books 'for people with stunted imaginations'"। The Guardian। জুলাই ১১, ২০০৩। 
  30. Bloom, Harold। "Dumbing down American readers"। Boston.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-২০ 
  31. "A. S. Byatt and the goblet of bile"। Salon.com। জুলাই ৮, ২০০৩। অক্টোবর ৩০, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৭, ২০০৭ 
  32. Fox, Killian (2006-31-12)। "HJK Rowling:The mistress of all she surveys"। Guardian Unlimited। সংগ্রহের তারিখ 2007-02-10  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  33. "It smacks of the dark arts"। Telegraph.co.uk। ২৭ মে ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০০৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  34. Schoeffer, Christine। "Harry Potter's girl trouble"। Salon.com। ২০০৬-০৭-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-২০ 
  35. "Why Harry Potter doesn't cast a spell over me"। The Observer। জুন ২৫, ২০০০। 
  36. Steve Bonta (২০০২)। "Tolkien's Timeless Tale"The New American। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৩ 
  37. Steve Bonta (২০০২)। "Harry Potter's Hocus Pocus"The Free Republic। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৩ 
  38. J. K. Rowling (২০০৬)। "The first It Girl"Telegraph.co.uk। ২০০৭-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৩ 
  39. Mike Hersh (২০০৩)। "Harry Potter Lessons in Action"। ২০০৭-০৭-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০৫ 
  40. Arthur, Levine। "Awards"। Arthur A. Levine Books। ২০০৬-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৫-২১ 
  41. "Potter book sales top 325 million"। USA Today। February 4th, 2007।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  42. "J.K. Rowling Richer than the Queen"। BBC। এপ্রিল ২৭, ২০০৩। 
  43. "Harry Potter Brand Wizard"। Business Week। জুলাই ২১, ২০০৫। 
  44. "New Harry Potter breaks pre-order record"। RTÉ.ie Entertainment। ২০০৭-০৪-১৩। ২০০৭-০৪-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২৩ 
  45. HP in Ancient Greek. Accessed 25 November 2006.
  46. Greek Harry Accessed 25 November 2006.
  47. Steven Goldstein (২০০৪)। "Translating Harry — Part I: The Language of Magic"GlobalByDesign। ২০০৭-০৩-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৯ 
  48. EMRAH GÜLER (২০০৫)। "Not lost in translation: Harry Potter in Turkish"। ২০০৭-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৯ 
  49. "Harry Potter and the Internet Pirates" (পিডিএফ)Northeastern University। ২০০৩। ২০১৬-০২-২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০৫  অজানা প্যারামিটার |2= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  50. Dilshani Samaraweera (২০০৫)। "Harry Potter to fly into Sri Lanka under tight security"Lanka Business Online। ২০০৭-০৬-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০৫ 
  51. "Reading 'cuts childhood injuries'"। BBC News। ২৩ ডিসেম্বর ২০০৫। 
  52. "New Study Finds That the Harry Potter Series Has a Positive Impact on Kids' Reading and Their School Work"। Scholastic। 2006-25-07। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2007-02-10  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  53. "Harry Potter casts spell at checkouts"। Times Online। জুলাই ১৮, ২০০৫। ডিসেম্বর ২৬, ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৭, ২০০৭ 
  54. "Why 'Harry Potter' did a Harry Houdini"। CNN। জুলাই ২১, ২০০০। জুন ২১, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৭, ২০০৭ 
  55. Meg McCaffrey (২০০৩)। "'Muggle' Redux in the Oxford English Dictionary"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০১ 
  56. "The Wizarding World of Harry Potter – Universal Orlando Resort"। ১১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০০৭ 
  57. Majendie, Paul (২০০৭-০৫-৩১)। "All aboard for the Harry Potter rollercoaster"। Reuters। ২০০৭-০৬-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-৩১ 
  58. "Confirmed  : 'Phoenix' flies on July 13, 2007"HPANA। ২০০৬-০৪-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২৩ 
  59. "Confirmed: HBP movie release date"MuggleNet2006-08-04। ২০০৭-০২-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2006-12-17  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েব সাইট

সম্পাদনা

অন্যান্য আকর্ষণীয় সংযোগসমূহ

সম্পাদনা