রামেশ্বরী নেহরু

ভারতীয় সমাজকর্মী

রামেশ্বরী নেহরু (বিবাহপূর্ব রামেশ্বরী রায়না; ১০ই ডিসেম্বর ১৮৮৬ - ৭ই নভেম্বর ১৯৬৬)[১] ভারতের একজন সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি দরিদ্র শ্রেণী ও নারীদের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন। ১৯০২ সালে, তিনি মতিলাল নেহেরুর ভাইপো এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর খুড়তুতো ভাই ব্রিজলাল নেহরুকে বিবাহ করেন। তাঁর পুত্র ব্রজ কুমার নেহরু একজন ভারতীয় সরকারি কর্মচারী ছিলেন এবং বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ভারতের ১৯৮৭ সালের ডাকটিকিটে রামেশ্বরী নেহরু

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

রামেশ্বরী ১৮৮৬ সালের ১০ই ডিসেম্বর লাহোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যদিও তিনি কাশ্মীরি পন্ডিত বংশের ছিলেন, তাঁর জন্মগ্রহণ এবং বেড়ে ওঠা সবই হয়েছিল পাঞ্জাবে। তাঁর পিতা দিওয়ান বাহাদুর রাজা নরেন্দ্র নাথ ছিলেন পাঞ্জাবের একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা।[১]

রামেশ্বরী নেহরু বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে নিজের প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছিলেন, কারণ সেই দিনগুলিতে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠানো হত না। যদিও তাঁর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, তবুও প্রচুর অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমের সঙ্গে তিনি স্ব-শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত করেছিলেন। গান্ধীজি একটি চিঠিতে তাঁকে "একজন শিক্ষিত মহিলা" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।[১]

ষোল বছর বয়সে ব্রিজলাল নেহরুর সঙ্গে বিবাহ হয় রামেশ্বরীর। ব্রিজলাল ছিলেন মতিলাল নেহরুর বড় ভাই নন্দলালের ছেলে। মতিলাল উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে ইংল্যান্ডে পাঠান। রামেশ্বরী স্বামীর সঙ্গে গিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে থাকার সময় তিনি জওহরলাল নেহরুকে (তিনি আগেই উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন) ভারতে ফিরে আসার জন্য এবং ইংল্যান্ডে পড়াশোনা শেষ করার পর ভারতের স্বাধীনতার জন্য কাজ করতে প্রভাবিত করেছিলেন।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

রামেশ্বরী মহিলাদের জন্য স্ত্রী দর্পণ নামে একটি হিন্দি মাসিক পত্রিকা চালু করেন। পত্রিকাটি নারীদের মধ্যে চেতনা সৃষ্টির একটি কার্যকরী উপকরণ হয়ে উঠেছিল। তিনি ১৯০৯ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত এই পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন। তিনি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা নারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল এবং নারীদের শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব অধিকার এবং পুরুষের সাথে নারীর মর্যাদার সমতার জন্য লড়াই করতেই নয়, পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতায় যোগদানের জন্যও অনুপ্রাণিত করেছিল।[১]

তিনি সর্ব ভারতীয় মহিলা সম্মেলনের (এআইডব্লিউসি) প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন।[২] তিনি ১৯৪২ সালে এর সভাপতি নির্বাচিত হন।[৩] তিনি কোপেনহেগেন এবং কায়রোতে (১৯৬১) এ প্রথম আফ্রো-এশীয় মহিলা সম্মেলনে বিশ্ব মহিলা কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।[৪] রামেশ্বরী নেহরু দিল্লি মহিলা লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়েছিলেন। তিনি বাল্যবিবাহ এবং সমাজকে গ্রাসকারী অন্যান্য সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে নারীকে আলোকিত করেছিলেন।[১]

স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পাদনা

পরে তিনি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কাজ শুরু করেন এবং পাঞ্জাবে ভারত ছাড় আন্দোলনের সংগঠক হন। তিনি একটি গুপ্ত ছাপাখানা থেকে প্রচার পুস্তিকা জারি করেছিলেন এবং মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি নয় মাস লাহোর মহিলা কারাগারে বন্দী ছিলেন।[১]

পুরস্কার সম্পাদনা

১৯৫৫ সালে রামেশ্বরীকে তাঁর সামাজিক কাজের জন্য ভারত সরকার পদ্মভূষণ প্রদান করেন।[৫]তিনি ১৯৬১ সালে লেনিন শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন।[৬]

মৃত্যু সম্পাদনা

রামেশ্বরী নেহরু ১৯৬৬ সালের ৭ই নভেম্বর মারা যান।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Biography of Mata Rameshwari Nehru"। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  2. Sonia Gandhi, সম্পাদক (২০০৪)। Two Alone, Two Together: Letters Between Indira Gandhi and Jawaharlal Nehru 1922–1964। পৃষ্ঠা xxii। আইএসবিএন 9780143032458 
  3. "Past Presidents"। AIWC: All India Women's Conference। ১৯ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৪ 
  4. Sharma, d n (১৯৬৯)। Afro-asian Group In The U.n 
  5. "Padma Awards Directory (1954–2013)" (পিডিএফ)Ministry of Home Affairs। ২০১৭-১১-১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. Vijay Prashad (2008) The Darker Nations: A People's History of the Third World. New Pres. p, 53. আইএসবিএন ৯৭৮১৫৯৫৫৮৩৪২০

আরও পড়ুন সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Nehru-Gandhi family tree