রাজকুমার চক্রবর্তী

বাঙালি শিক্ষাবিদ ও দেশকর্মী

রাজকুমার চক্রবর্তী (ইংরেজি: Rajkumar Chakraborty) (২৯ এপ্রিল, ১৮৯৪ - ১৫ সেপ্টেম্বর , ১৯৭৫) বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ ও দেশকর্মী। [১] বাঙালির ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সূচনাকারীও ছিলেন তিনি। [২]

রাজকুমার চক্রবর্তী
জন্ম(১৮৯৪-০৪-২৯)২৯ এপ্রিল ১৮৯৪
মৃত্যু১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫(1975-09-15) (বয়স ৮১)
পেশাঅধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

রাজকুমার চক্রবর্তীর জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার সন্দ্বীপে। প্রাথমিক পড়াশোনা সন্দ্বীপে, পরে নোয়াখালি জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও সরকারি বৃত্তি পান। উচ্চশিক্ষার্থে কলকাতায় আসেন এবং রিপন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই.এ ও পরে ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে বি.এ. পাশ করেন। রিপন কলেজে তিনি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক অতুলচন্দ্র সেনের ছাত্র ছিলেন। তার আগেই থেকেই অবশ্য তিনি 'যুগান্তর দল'-এর সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজীতে এম.এ পাশ করেন এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে আইন পাশ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

আইন পাশের পর তিনি প্রথমে সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বঙ্গবাসী কলেজে ইংরাজীর অধ্যাপক হন। তিনি তার অর্ধশতাব্দীকালের অধ্যাপনা জীবনে প্রায় সবটাই ওই কলেজে কাটিয়েছেন। বাংলার এমন অনেক পরিবারের প্রায় তিন পুরুষই তার ছাত্র ছিলেন।

রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনা

অধ্যাপনার পাশাপাশি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন-এ অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন এবং ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অপরাধে কারাবন্দিও হন। দেশ স্বাধীন হলে, অবিভক্ত বাংলার কংগ্রেসী সদস্য হিসাবে তিনি প্রায় পাঁচ বছর পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য থাকেন। সেই সময়ে তিনিই উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে পরিষদের সরকারি ভাষার জন্য গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উত্থাপিত সংশোধনী প্রস্তাবের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। তিনি বলেন-

উর্দু পাকিস্তানের কোন প্রদেশেরই কথ্য ভাষা নয়। তা হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের উপরতলার কিছু সংখ্যক মানুষের ভাষা।..... বাংলাকে আমরা দুই অংশের সাধারণ ভাষা করার জন্য চাপ দিচ্ছি না। আমরা শুধু চাই পরিষদের সরকারি ভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি।"

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অধুনা বাংলাদেশে ভাষার মত স্পর্শকাতর প্রশ্নে গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও রাজকুমার চক্রবর্তীর ভাষণ অনেকাংশে ভাষা আন্দোলনে জনমত গঠনে সহায়ক হয়েছিল। রাজকুমার চক্রবর্তী পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য হিসাবে তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার থেকে বিরূপ আচরণের শিকার হন এবং এক পর্যায়ে তিনি ভারতে চলে আসেন [২] এবং পরিষদীয় কংগ্রেস দলের সম্পাদক হন। তারপরে অবশ্য তিনি মেহনতি মানুষের জন্য নিজেকে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী আন্দোলনে যুক্ত করেন। তিনি রাজ্য বিধান পরিষদের ও ভারতীয় গণ-পরিষদেরও সদস্য হয়েছিলেন। [১]

অবদান সম্পাদনা

তিনি শিক্ষাবিদ হিসাবে বহু অবদান রেখে গেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, রামকৃষ্ণ মিশন , ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট, সন্দ্বীপ হাতিয়া জনকল্যাণ সমিতি সহ বহু প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পরে এর সম্পাদক ও সভাপতি ও হন। তা ছাড়াও তিনি বহু বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন। [১]

মৃত্যু সম্পাদনা

দুই বাংলার এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই সেপ্টেম্বর কলকাতায় প্রয়াত হন। [১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৬৪০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "রাজকুমার চক্রবর্তী বিস্মৃত এবং উপেক্ষিত এক ভাষা সৈনিক"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১৪