রঞ্জন ঘোষাল

ভারতীয় সুরকার

রঞ্জন ঘোষাল (৭ জুন ১৯৫৫ - ৯ জুলাই ২০২০) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী, গায়ক-গীতিকার, লেখক, নাট্যব্যক্তিত্ব এবং স্থপতি।[১] তিনি মহীনের ঘোড়াগুলি বাংলা স্বাধীন রক সঙ্গীত ব্যান্ডের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।[২]

রঞ্জন ঘোষাল
রঞ্জন ঘোষাল
২০০৭ সালে ঘোষাল
জন্ম(১৯৫৫-০৬-০৭)৭ জুন ১৯৫৫
মৃত্যু৯ জুলাই ২০২০(2020-07-09) (বয়স ৬৫)
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তন
পেশা
  • সঙ্গীতজ্ঞ
  • সঙ্গীতশিল্পী
  • গীতিকার
  • লেখক
  • নাট্যব্যক্তিত্ব
  • স্থপতি
কর্মজীবন১৯৭৬–১৯৮১; ১৯৯৫–২০২০
দাম্পত্য সঙ্গীসঙ্গীতা ঘোষ (বি. ১৯৮০; তার মৃত্যু ২০২০)
সন্তান
আত্মীয়
সঙ্গীত কর্মজীবন
ধরন
  • লোক
  • রক
বাদ্যযন্ত্র
  • গিটার
  • কণ্ঠ
লেবেল

প্রাথমিক জীবন ও কর্মজীবন সম্পাদনা

ঘোষাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের, বর্ধমান জেলার মেমারীতে ১৯৫৫ সালের ৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তারাপদ ঘোষাল (১৯১৫-২০০৮) এবং মা লীলা (জন্ম: ১৯২৫) দুজনই বরিশাল জেলার অধিবাসি ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তার বাবা তারাপদ তৎকালীন ভারত সরকারের রাজনৈতিক গোয়েন্দা ব্যুরো থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে অবসর নেন, অন্যদিকে তার মা লীলা একজন গৃহিণী ছিলেন। রঞ্জনের তিন বড় ভাই তপন ঘোষাল (জন্ম: ১৯৪৫), স্বপন (জন্ম: ১৯৪৭), চন্দন (জন্ম: ১৯৫০), বড় বোন মালা (জন্ম: ১৯৫৭) এবং কনিষ্ঠ ভাই কাঞ্চন (জন্ম: ১৯৬০)।

তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন। পরবর্তীতে মুম্বইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে শিল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পিএইচডি করেন।[৩][৪]

কর্মজীবনে ডিজাইনার-উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করার পূর্বে ঘোষাল ভারত হ্যাবি ইল্যাকট্রিক্যালে কিছু সময় ধরে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মরিচ এডভারটাইজিং সংস্থার সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।[১][৫]

সঙ্গীতজীবন সম্পাদনা

 
১৯৭৯ সালে রবীন্দ্রসদনে মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডের একটি কনসার্টের সময়ে; বাম থেকে: রাজা ব্যানার্জী, প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, তাপস দাস, প্রণব সেনগুপ্ত, গৌতম চট্টোপাধ্যায় এবং রঞ্জন ঘোষাল।

ঘোষালের তার প্রথম খুড়তুতো ভাই গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের সাথে সপ্তর্ষি নামে প্রথম ব্যান্ড গঠন করেছিলেন।[৩][৪] পরবর্তীতে তারা দুজন এবং অন্যান্য সদস্য[৬] সহযোগে ১৯৭৫ সালে ভারতের প্রথম বাংলা স্বাধীন রক সঙ্গীত ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৭] তিনি ব্যান্ডের উপস্থাপক এবং গীতিকার হিসেবে সক্রিয় অবদান রাখার পাশাপাশি সমস্ত মিডিয়া মিথস্ক্রিয়া, রেকর্ডের আর্টওয়ার্ক, কভার নকশা ও প্রচারণাপত্র ব্যবস্থাপনার দিকসমূহ পরিচালনা করতেন।

ঘোষাল মহীনের গানের মননশীলতা ধরে রাখার উদ্দেশ্যে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন। প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি অত্যন্ত সফলভাবে বেঙ্গালুরুতে ফার্স্ট রক কনসার্ট – রিমেম্বারিং মহীনের ঘোড়াগুলি এবং কলকাতায় আবার বছর ত্রিশ পরে শিরোনামে দুইটি কনসার্টের আয়োজন করেছিলেন।

নাট্যকর্ম সম্পাদনা

সঙ্গীতের পাশাপাশি ঘোষাল, ইংরেজিবাংলা ভাষায় একাধিক কবিতা, গল্প এবং চলচ্চিত্র ও মঞ্চ নাটকের জন্য চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। এবং বেঙ্গালুরু থিয়েটার দলের একজন সক্রিয় সমদ্য হিসেবে তার স্ত্রী সঙ্গীতা ঘোষালের সঙ্গেে গ্রুপ থ্রি নামে একটি থিয়েটার দলের সঙ্গে ইংরেজি নাটক পরিচালনা এবং পারফর্ম করে থাকেন।[১][৫] তাদের প্রযোজিত নাটকের মধ্যে রয়েছে মনোজ মিত্রের বাঞ্ছারামের বাগানরাজ দর্শন, অরুন মুখোপার্ধায়ের মরিচ: দ্য লেজেন্ডদ্য ট্রু স্টোরি অব অ্যা হাল্ফ ম্যান এবং গিরিশ কর্নডরে হায়াভাদানা প্রতৃতী।

নাট্যতালিকা সম্পাদনা

অভিনেতা, পরিচালক এবং প্রযোজক হিসেবে:

  • রাজরক্ত (১৯৭৮)
  • বাকি ইতিহাস (১৯৭৯)
  • শাহ্‌জাহান (১৯৮০)
  • সাজানো বাগান (১৯৮০)
  • বাঞ্ছারামের বাগান (১৯৮১)
  • হায়াভাডানা (১৯৮২)
  • দ্য জু স্টোরি (১৯৮৩)
  • মারিচ, দ্য লেজেন্ড (১৯৮৪)
  • ওয়েটিং ফর গোডোৎ (১৯৮৫)
  • এ্যনড গেইম (১৯৮৬)
  • রাম-যাত্রা (১৯৮৭)
  • বড় পিসিমা (১৯৮৮)
  • লাঠি (১৯৯০)
  • এন অডিয়েন্স উইথ দ্য কিং (১৯৯৯)
  • জগন্নাথ, স্টোরি অব অ্যা হাল্প ম্যান (২০০১)
  • দ্য আদার সাইড অব হিস্ট্রি (২০০৬)
  • শোয়াইখ ইন দ্য সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার (২০১৪)[৮]

অভিনেতা এবং নাট্যকার হিসেবে:

  • হ্যালো ঠাকুর (২০০৯)
  • হ্যালো রবীন্দ্রনাথ (২০১০)
  • অ্যাজার্নি উইথ টেগর (২০১১)[৯][১০]

ব্যক্তিগত জীবন ও মুত্যু সম্পাদনা

কলকাতায় চারুকলা ইনিস্টিটিউশনে থাকাকালীন ১৯ বছর বয়সে ঘোষালের সাথে সঙ্গীতা ষোষের পরিচয় ঘটে। ১৯৭৪ সালে পেইন্টিং শিক্ষা, নাটকের প্রতি আগ্রহ, পরিবেশনা শিল্প অধ্যয়নে তারা একসাথে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ১৯৮০ সালের ২৭ এপ্রিল তারা বিয়ে করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি স্ত্রী এবং দুই পুত্র, ইন্দ্রয়ুধ ঘোষাল ও অভিমন্যুর ঘোষালের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে বাস করতেন। তার বাড়ি ইয়েলো সাবমেরিন বেঙ্গালুরু শহরের বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীদের মিলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।[১]

মৃত্যু সম্পাদনা

২০২০ সালের ৯ জুলাই ভোর-রাতে বেঙ্গালুরুতে তার নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।[৩][৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাগচি, শ্রাবন্তী (১০ সেপ্টেম্বর ২০০৫)। "Playing it right"দ্য টেলিগ্রাফ। ভারত। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০১৫ 
  2. রাকেশ মিহির (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। "One for the road"দ্য হিন্দু। ভারত। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০১৫ 
  3. দাস, দেবস্মিতা (৯ জুলাই ২০২০)। "প্রয়াত 'মহীনের ঘোড়াগুলি'র রঞ্জন ঘোষাল"ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। ১১ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০২০ 
  4. গোস্বামী, রণিতা (৯ জুলাই ২০২০)। "চিরঘুমে 'মহীনের ঘোড়াগুলি'র রঞ্জন ঘোষাল"জি নিউজ। ১১ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২০ 
  5. Shrabonti Bagchi (৫ অক্টোবর ২০০৮)। "The Bangalore connection"দ্য টেলিগ্রাফ। কলকাতা। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০১৫ 
  6. "Tagore in symphony with Bach and Beethoven - in Germany"deccanherald.com (ইংরেজি ভাষায়)। deccanherald। এপ্রিল ১৭, ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৫ 
  7. শতদ্রু ওঝা (২১ জুন ২০০৯)। "Song of the stallion"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ভারত। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৭, ২০১৫ 
  8. ফয়সাল, ফাহাল (জুন ১৮, ২০১৫)। "When music meets war and epic drama" (ইংরেজি ভাষায়)। বেঙ্গালুরু: বেঙ্গালুরু মিরর। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৫ 
  9. "forumthree"forumthree.in। ফোরাম-থ্রি। ২২ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৮, ২০১৫ 
  10. "WBRi Drama Review: Crisis of Civilization: A journey with Tagore – A tribute to Rabindranath Tagore by Jagriti Theater"washingtonbanglaradio.com (ইংরেজি ভাষায়)। washingtonbanglaradio। ৩ জুন ২০১২। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা