যোগেশচন্দ্র বাগল

সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও লেখক

যোগেশচন্দ্র বাগল (ইংরেজি: Jogesh Chandra Bagal) (২৭ মে, ১৯০৩ — ৭ জানুয়ারি, ১৯৭২) ভারতের বাঙালি সাংবাদিক, গবেষক ও ইতিহাসবিদ।[১][২]

যোগেশচন্দ্র বাগল
জন্ম২৭ মে ১৯০৩
মৃত্যু৭ জানুয়ারি ১৯৭২ (বয়স ৬৯)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাসাংবাদিকতা, ইতিহাসবিদ
পিতা-মাতাজগবন্ধু বাগল
তরঙ্গিনী দেবী

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

যোগেশচন্দ্র বাগলের জন্ম অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলার কুমিরমারা গ্রামে মাতুলালয়ে। পিতার নাম জগবন্ধু বাগল আর মাতার নাম তরঙ্গিনী দেবী। তবে তার পৈত্রিক নিবাস ছিল ওই জেলারই চালিশা গ্রামে। গ্রামের রামচরণ দে'র পাঠশালায় তার বিদ্যাভ্যাস শুরু। ছাত্রজীবনেই অশ্বিনীকুমার দত্ত, কামাখ্যাচরণ নাগ প্রমুখের সংস্পর্শে এসে স্বদেশী চিন্তায় প্রভাবিত হন তিনি। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কদমতলা উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাগেরহাট কলেজে (বর্তমানে সরকারী পি.সি কলেজ) ভর্তি হন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে আই.এ পাশ করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার্থে চলে আসেন কলকাতায়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বি.এ পাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ শ্রেণীতে ভর্তি হন, কিন্তু আর্থিক কারণে লেখাপড়া সম্পূর্ণভাবে করতে পারেন নি।[৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত 'প্রবাসী' ও 'মডার্ন রিভিউ' পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন। এখানে তার সহকর্মী ছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সজনীকান্ত দাস, নীরদচন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ গবেষক ও সাহিত্যিকবৃন্দ। তাঁদের প্রেরণায় তিনি গবেষণার কাজে মনোনিবেশ করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তার গবেষণামূলক গ্রন্থ 'ভারতের মুক্তিসন্ধানী' প্রকাশের সাথে সাথে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। ইতিমধ্যে তিনি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর 'দেশ' সাহিত্য পত্রিকায় যোগ দেন এবং এখানে আন্তর্জাতিক বিষয় ও সম্পর্কে লিখতেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে আবার 'প্রবাসী' তে ফিরে যান এবং ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলার আগে পর্যন্ত নিয়মিত কাজ করেছেন। কিন্তু অন্ধ অবস্থাতেও তার গবেষণা বিরামহীন ছিল না। এই সময়ে ইণ্ডিয়ান আর্ট কলেজের শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ সম্পাদনা ও নিজের 'হিন্দুমেলার ইতিবৃত্ত' গ্রন্থ পরিমার্জনা এবং 'ভারতকোষ' ও সাহিত্য-সাধক-চরিতমালার কাজ করেছেন । ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ হতে আগাগোড়া বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সাথে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া ইণ্ডিয়ান হিস্টরিক্যাল রেকর্ডস কমিশন, রিজিওনাল রেকর্ডস কমিশন (পশ্চিমবঙ্গ) এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি সাহিত্য সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত একটি খণ্ডে ইংরাজিসহ মোট তিনটি খণ্ডে 'বঙ্কিম রচনাবলী' এবং 'রমেশ রচনাবলী'র সম্পাদনা করেছেন। স্ত্রীশিক্ষা সম্বন্ধে তার লেখা ইংরাজীতে 'Women's Education in Eastern India' এবং 'স্ত্রীশিক্ষার কথা' বই দুখানি বিশেষ তথ্যবহুল। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫ এর বেশি।[২]

রচিত গ্রন্থ সম্পাদনা

  • সাহসীর জয়যাত্রা
  • মুক্তির সন্ধানে ভারত
  • ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা
  • ভারতের স্বাধীনতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
  • কলিকাতার সংস্কৃতি কেন্দ্র
  • বিদ্রোহ ও বৈরিতা
  • Peasant Revolution of Bengal[২]

সম্মাননা সম্পাদনা

বাংলা সাহিত্য বিষয়ে ও গবেষণায় স্বীকৃতিতে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে 'রামপ্রাণ গুপ্ত পুরস্কার' প্রদান করে। এছাড়া তিনি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে 'সরোজিনী বোস স্মৃতি স্বর্ণপদক' এবং ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে 'শিশিরকুমার পুরস্কার' লাভ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর স্মৃতি বক্তৃতা ও ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র স্মৃতি বক্তৃতা দেন[২][৪]

মৃত্যু সম্পাদনা

যোগেশচন্দ্র বাগল ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই জানুয়ারি ৬৯ বৎসর বয়সে ব্যারাকপুরে প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "কলকাতার কড়চা"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ১১ জুলাই ২০১১। 
  2. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৬১৪,৬১৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  3. "বাগল, যোগেশচন্দ্র - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১০ 
  4. "যোগেশচন্দ্র বাগল - Barisalpedia"www.barisalpedia.net.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১০