মোহাম্মদ এজাজুল হক খান
মো. এজাজুল হক খান (জন্ম: ১০ অক্টোবর, ১৯৪৭) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]
মো. এজাজুল হক খান | |
---|---|
জন্ম | ১০ অক্টোবর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ |
মৃত্যু | ২৫ এপ্রিল,২০২০ খ্রিস্টাব্দ নিজ বাড়িতে, গোয়ালগ্রাম,দৌলতপুর, কুষ্টিয়া |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামো. এজাজুল হকের পৈতৃক বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার গোয়ালগ্রাম গ্রামে। তার বাবার নাম কিফাত আলী খান এবং মায়ের নাম শাহেরা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম মলিদা খানম। তাদের এক মেয়ে, তিন ছেলে। [২]
কর্মজীবন
সম্পাদনামো. এজাজুল হক খান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩ কমান্ডো ব্যাটালিয়নে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে এর অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। ২৫ মার্চের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে তিনি বন্দী হন। পাকিস্তানিরা তাকে নির্যাতন করে, তবে হত্যা করেনি। জুলাই মাসের শেষে সেনা কর্তৃপক্ষ অঙ্গীকারণামা নিয়ে তাকে মুক্তি দেয় এবং চাকরিতে পুনর্বহাল করে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ১৪-১৫ নভেম্বর। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কামালপুর গ্রামের মাঝামাঝি বিওপির অবস্থান। এখানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ছিল গোটা বিওপি। বিছানো ছিল অসংখ্য মাইন ও বুবিট্র্যাপ। মূল প্রতিরক্ষার চারপাশে ছিল অনেক বাংকার। মুক্তিযুদ্ধকালে এখানে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেদিন অগ্রবর্তী দলের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুর্ভেদ্য ওই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে মূল প্রতিরক্ষায় ঢুকে যান। অনেক মুক্তিযোদ্ধা মাইন ও গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার পরও তারা থেমে যাননি। দেশমাতৃকার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় এগিয়ে যান। অবশ্য বিজয়ী হতে পারেননি। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটির কাছাকাছি পরিখা খনন করে অবস্থান নেন। কয়েকটি দল ও উপদলে বিভক্ত ছিলেন তারা। তাদের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন আবু তাহের (বীর উত্তম)। তিনি নিজেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার সঙ্গে থাকা উপদলে ছিলেন মো. এজাজুল হক খান। মধ্যরাতে শুরু হয়ে যায় তুমুল যুদ্ধ। বারুদের উৎকট গন্ধ, গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয় চারদিক। এ রকম যুদ্ধে রক্তপাত, একাধিক মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। একপর্যায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যায়। মো. এজাজুল হক খানসহ মুক্তিযোদ্ধারা এতে বিচলিত হননি। বিপুল বিক্রমে তারা যুদ্ধ করেন। সমানতালে যুদ্ধ চলে। সকালের দিকে যুদ্ধের তীব্রতা কমে যায়। এ সময় অগ্রভাগে থাকা মুক্তিযোদ্ধা দলের দলনেতা অধিনায়ক আবু তাহেরকে জানান, তারা পাকিস্তানি দুর্গের প্রায় ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। অধিনায়ক বিজয় প্রায় হাতের মুঠোয় ভেবে মো. এজাজুল হক খানদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। একটু পর তিনি নিজেও সামনে এগিয়ে যান। তখন আনুমানিক সকাল নয়টা। এমন সময় হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া একটি শেল পড়ে অধিনায়কের সামনে। বিস্ফোরিত শেলের স্প্লিন্টার লাগে তার পায়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন তিন-চারজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। মো. এজাজুল হক খান ছিলেন সামনে কিছুটা এগিয়ে। তিনি দ্রুত এসে অধিনায়ককে উদ্ধার করে দ্রুত নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১২-১০-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪০৫। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৮০। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।