মোহাম্মদ ইয়াকুব (মেজর)
অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ ইয়াকুব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।[১][২][৩]
মোহাম্মদ ইয়াকুব | |
---|---|
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | গোপালগঞ্জ মহকুমা, ব্রিটিশ ভারত | ২৬ মার্চ ১৯৪৩
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | বাংলাদেশ |
শাখা | বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
কাজের মেয়াদ | ১৯৬৬-১৯৭৭ |
পদ | মেজর |
কমান্ড | বেলুচ রেজিমেন্ট অর্ডন্যান্স কোর |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাঅবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার বর্তমান মুকসুদপুর উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিওনের নওখন্ডা গ্রামে ১৯৪৩ সালের ২৬ এ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।[৪] পিতা মরহুম রতন মৃধা সম্ভ্রান্ত মুসলিম ও কৃষক এবং মাতা মরহুমা ছাহেরা খাতুন গৃহিনী ছিলেন। ৬ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন। ননীক্ষীর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করে, যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজে আই এস সি পাশ করে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন।[৫][৬][৭]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৬৬ সালের ২১ এ নভেম্বর ৬ষ্ঠ ওয়ার কোর্স-এ পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে তৎকালীন উভয় পাকিস্তান এর প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্সাল আইয়ুব খান এর অধীনে কমিশন লাভ করে কোয়েটা সেনানিবাসে ৩৬ বেলুচ রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট ও পরবর্তীতে কোয়ার্টার মাস্টার হিসেবে ১৭ ই এপ্রিল ১৯৭০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৮ ই এপ্রিল করাচি সেনানিবাসের সি ও ডি- তে অর্ডন্যান্স কোর এর অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং জুন মাস পর্যন্ত কর্মরত থাকেন। বাঙ্গালী অফিসার দের দেশে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ তে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এর অফিসার কে গুরুতর আহত করার অভিযোগে ক্যাপ্টেন ইয়াকুব কে গ্রেফতার করা হয় এবং লায়ালপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে শেখ মুজিবুর রহমান এর সাথে বন্দী থাকেন ।।[৮] ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। যশোর ক্যন্টনমেন্ট এর ৮৪ এফ ও ডি এর ৬ষ্ঠ কমান্ডিং অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকেন। পরে ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সালে ঢাকা ক্যন্টনমেন্ট এর অর্ডন্যন্স কোর এর টু আই সি এবং পরবর্তিতে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ২১ এ জুন শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় রক্ষীবাহিনী সংশোধনীর পরে মেজর ইয়াকুব কে রক্ষী বাহিনীর প্রোভস্ট মার্শাল হিসেবে নিযুক্ত করেন কিন্তু ১৫ ই আগস্ট ১৯৭৫, শেখ মুজিবুর রহমান এর নিহত হওয়ার পর সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও তৎকালীন ডাইরেক্টর অর্ডন্যান্স সার্ভিসেস, সেনাসদর, ঢাকা সেনানিবাসের কর্ণেল শওকত আলী, তার টু আই সি মেজর ইয়াকুব কে সাথে নিয়ে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সকাল ৭.০১ ঘটিকায় ধানমন্ডি ৩২ নং এ যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান কাজী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ এর কাছে আদেশ চান। সেনাপ্রধান আদেশ দানে অপারগতা প্রকাশ করলে সকাল ৯.৪৩ ঘটিকায় ২য় দফা আক্রমণ শুরু হয়।[৯] ১৯৭৬ সালের পরবর্তী কালে তিনি প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর এর ডেপুটি ডাইরেক্ট,সেনাবাহিনী হিসেবে কর্মরত থাকেন। পরবর্তীতে ৯ ডিসেম্বর ১৯৭৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও সাবেক সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান এর চাপযুক্ত হয়ে অবসর নেন এবং ১৯৮০ সালে পেনশনে আসেন। রাজনীতি তে যোগদান করেন। পরবর্তিতে সেনা কল্যাণ সংস্থার মহাকর্মাধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হয়ে কর্মরত থাকেন এবং অবসর নেন।[১০][১১][১২]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭০ থেকে ১৯৭১ সালে ক্যপ্টেন থাকাকালীন পাকিস্তান এ বাংলাদেশী অফিসারদের দেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং বিবিসি এর খবর বাঙ্গালী অফিসারদের জানিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ায় সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে থাকায় ও পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অফিসার কে গুরুতর আহত করার অভিযোগে করাচি তে শেখ মুজিবুর রহমান এর সাথে কারাবন্দী হন যার ফলস্বরূপ সরাসরি দেশে এসে যুদ্ধ করার সুযোগ হয় নি। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে কাজ করেন।[১৩][১৪]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনা১৯৮০ সালে অবসর এর পরে মেজর ইয়াকুব(অব.) রাজনীতি তে যোগ দেন। আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে বাকশাল তৈরী করেন এবং মেজর ইয়াকুব (অব.) বাকশাল দ্বিতীয় দফা পূনর্গঠন করেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন। [১৫]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- সমাজ সেবায় স্বর্ণপদক - ২০০১
- অভিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তা - RAOWA
- সর্বাধিক সম্মানিত উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা ব্যাচ -RAOWA
- পিয়ারেল জুবলি - সেনাবাহিনী প্রধান ( মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান )
- চীফ কমান্ডিং অফিসার-অর্ডন্যান্স ডিপো যশোর সেনানিবাস - ১৯৭৪
- প্রধান ব্যবস্থাপক ক্রেস্ট ডিজিডিপি - প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
পাঠ্যধারা(কোর্স)
সম্পাদনা- প্রশাসন ও জনগন ব্যবস্থাপনা
- সামরিক অফিসার অস্ত্র ব্যবস্থাপনা
- সামরিক কর্মকর্তা কৌশল
- যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবস্থাপনা
- কমান্ডো কোর্স (প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন)
- আইন পাঠ্যধারা ও ব্যবস্থাপনা
- বেসিক অর্ডিন্যান্স অফিসার কোর্স
- নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাপনা
- গোয়েন্দা ও বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনা
- উন্নত অর্ডন্যান্স অফিসার কোর্স[১৬]
স্থায়ী সদস্য
সম্পাদনা- রাওয়া(রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন) ক্লাব, সদস্য নং - ১০৮।
- বৃহত্তর ফরিদপুর সমিতি - ঢাকা
- গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি - ঢাকা
- রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
সম্পাদনা- নূর এ মদিনা মাদ্রাসা ও এতিমখানা
- নূর এ মদিনা জামে মসজিদ
- মেজর ইয়াকুব স্মৃতি গণগ্রন্থাগার[১৭]
- মেজর ইয়াকুব কমিউনিটি ক্লিনিক
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ইতিহাস - খন্ড ৪- ISBN ৯৭৮-৯৮৪-৩৩-৯২৩৬-৭।
- ↑ জল্লাদের খাঁচা থেকে মাতৃভূমির রণাঙ্গনে-লেফটিন্যন্ট কর্নেল এস আই নূরুন্নবী, SBN-৯৮৪৭১৩০১৩২।
- ↑ রাস্ট্রীয় দলিল-জাতীয় সংসদ ভবন-কর্ণেল শওকত আলী সাবেক ভারপ্রাপ্ত স্পিকার(২০১৩), ডেপুটি স্পিকার (২০০৯-২০১৪), সাংসদ- ফরিদপুর-১৫আসন-১৯৭৯-১৯৮২ সাংসদ- শরীয়তপুর-২আসন-১৯৯১-১৯৯৬।
- ↑ সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা- ৬বর্ষ ৪৫ সংখ্যা || ২৪-৩০ এপ্রিল ১৯৮৭।
- ↑ সত্য মামলা আগরতলা - কর্নেল শওকত আলী, SBN-৯৭৮৯৮৪৮৭৬৫৬০৯।
- ↑ Members Directory RAOWA- page no.19(মেম্বার্স ডিরেক্টরি রাওয়া-পৃষ্ঠা নং-১৯)।
- ↑ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি প্রকাশিত ফ্যাক্স নং-৮৯১৪০০৬।
- ↑ বাংলাদেশ গ্রন্থাগার তালিকা-২০১৭ ISBN ৯৭৮-৯৮৪-৩৪-২৪৪৯-৫।
- ↑ স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি। ৭১ ফাউন্ডেশন। ১৬ নভেম্বর ২০২১। পৃষ্ঠা ১৩৮ থেকে ১৪০।
- ↑ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ইতিহাস - খন্ড ৪-। আর্মি হেডকোয়ার্টার ঢাকা সেনানিবাস। আগস্ট ২০১২। পৃষ্ঠা ১৫২-১৫৪। আইএসবিএন 9789843392367।
- ↑ সত্য মামলা আগরতলা, (প্রথম খন্ড)। পৃষ্ঠা ১২০ এর পরবর্তী। আইএসবিএন 9789848765609।
- ↑ রাষ্ট্রীয় দলীল, জাতীয় সংসদ ভবন (প্রথম পাতা)। জাতীয় সংসদ: কাজী আব্দুর রশীদ। ১৯৭৯।
- ↑ জল্লাদের খাঁচা থেকে মাতৃভূমির রণাঙ্গনে, (প্রথম খন্ড)। পৃষ্ঠা ৬। আইএসবিএন 9847130132।
- ↑ রাস্ট্রীয় দলিল - জাতীয় সংসদ ভবন - কাজী আব্দুর রশীদ, সাংসদ- ফরিদপুর-৯আসন -১৯৮৮-১৯৮৯ সাংসদ-গোপালগঞ্জ-১আসন-১৯৯১-১৯৯৬।
- ↑ সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা, রাষ্ট্রপতি এরশাদ এর সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড দেখে আকৃষ্ট হচ্ছি। এপ্রিল ১৯৮৭। পৃষ্ঠা ২৫। অজানা প্যারামিটার
|সংখ্যা=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|বর্ষ=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ রাষ্ট্রীয় দলীল। শওকত আলী (ডেপুটি স্পিকার)। ২০০৯। পৃষ্ঠা ১।
- ↑ গ্রন্থাগার তালিকা (প্রথম খন্ড)। এপ্রিল ২০১৭। পৃষ্ঠা ২৫। আইএসবিএন 9789843424495।