মুস্তাফিজ শফি
মুস্তাফিজ শফি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত। তিনি একজন কবি ও দৈনিক সমকাল ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। কাজ করেছেন প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, আজকের কাগজ সহ বেশ কিছু জাতীয় দৈনিকে। তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কারও পেয়েছেন।[১][২][৩] তিনি বর্তমানে প্রতিদিনের বাংলাদেশ সংবাদপত্রের সম্পাদক।[৪][৫]
মুস্তাফিজ শফি | |
---|---|
জন্ম | ২০ জানুয়ারি ১৯৭১ |
মাতৃশিক্ষায়তন | জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | সাংবাদিক ও লেখক |
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার | সিটি ব্যাংক আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার |
প্রাথমিক পরিচয়
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ২০ জানুয়ারি সিলেটের বিয়ানীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন মুস্তাফিজ শফি। তার পৈতৃক বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের আস্টসাঙ্গন গ্রামে।
মুস্তাফিজ শফির বাবা প্রয়াত সফিক উদ্দিন আহমেদ ও মা প্রয়াত জয়গুন নেসার। বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি পঞ্চম।[১]
শিক্ষা জীবন
সম্পাদনামুস্তাফিজ শফি ১৯৮৭ সালে জলঢুপ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮৯ সালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৯১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ২০০০ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর শেষ করেন।[১]
লেখালেখি
সম্পাদনাছোটবেলা থেকে শফি কবিতা লিখতেন। সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও তার বিচরণ রয়েছে। সৃজনশীল লেখালেখিতেও সক্রিয় রয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে রয়েছে তার নিজস্ব পাঠক গোষ্ঠীও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তার সম্পাদিত তিনটি বই— ‘মুজিব কেন জরুরি’, ‘বহুমাত্রিক বঙ্গবন্ধু’ ও ‘ভাষণ অথবা একটি কবিতার গল্প’। বই তিনটির ভূমিকা লিখেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মহান বিপ্লবী চে গুয়েভারার রাজনীতি ও জীবন নিয়ে লিখেছেন আলোচিত গ্রন্থ ‘চে’। ‘পড় তোমার প্রেমিকার নামে’, ‘দহনের রাত’, ‘মধ্যবিত্ত কবিতাগুচ্ছ’, ‘মায়া মেঘ নির্জনতা’, ‘কবির বিষণ্ন বান্ধবীরা’ তার উল্লেখযোগ্য কবিতার বই। উপন্যাস ‘ঈশ্বরের সন্তানেরা’, ‘জিন্দা লাশ অথবা রমেশ ডোম’, ‘স্পর্শ’। গল্প ‘মাধবী কিংবা বনলতার শেষ বোঝাপড়া’। তিনি সক্রিয় রয়েছেন শিশু সাহিত্যেও। ‘ভূতকল্যাণ সমিতি’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন সিটি ব্যাংক-আনন্দআলো সাহিত্য পুরস্কার। আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ‘একাত্তরের বিজয়িনী’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন মোবাইল ফোন অপারেটর রবির সম্মাননা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ানো হয় তার পুরস্কারপ্রাপ্ত একাধিক প্রতিবেদন। তিনি সক্রিয় আছেন শিশুসাহিত্যেও।[২]
রচিত গ্রন্থ
সম্পাদনাতার লেখা প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—
কাব্যগ্রন্থ
- পড় তোমার প্রেমিকার নামে
- মধ্যবিত্ত কবিতাগুচ্ছ
- দহনের রাত
- মায়া মেঘ নির্জনতা
- কবির বিষণ্ণ বান্ধবীরা
- ব্যক্তিগত রোদ এবং অন্যান্য
উপন্যাস
- ঈশ্বরের সন্তানেরা
- জিন্দা লাশ অথবা রমেশ ডোম
- স্পর্শ
গল্পগ্রন্থ
- মাধবী কিংবা বনলতার শেষ বোঝাপড়া
সাংবাদিকতা বিষয়ক গ্রন্থঃ
- বিলেতের বাঙাল (বিলেতের বাঙালি জীবন নিয়ে ভিন্নধারার অনুসন্ধান)
- নির্বাচিত অনুসন্ধান (পুরস্কারপ্রাপ্ত ও আলোচিত প্রতিবেদন)
জীবনী ও রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থঃ
- চে
শিশুতোষ গ্রন্থঃ
- ভূতের সঙ্গে পদ্য
- মাথাকাটা ভূতবাহিনী
- ভূতকল্যাণ সমিতি
- মায়াবী সেই ভূতকন্যা
- এই ভূত ভালো ভূত
সম্পাদনাঃ
- একাত্তরের বিজয়িনী ( তৃণমূল থেকে তুলে আনা নারী মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মকাহিনী)[১]
- বহুমাত্রিক বঙ্গবন্ধু
- মুজিব কেন জরুরি
- ভাষন অথবা একটি কবিতার গল্প
সাংবাদিকতা
সম্পাদনা১৯৮৮ সালে সাপ্তাহিক সিলেট সংবাদ ও লন্ডনের সাপ্তাহিক সুরমায় লেখালেখির মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন মুস্তাফিজ শফি। এরপর কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নিউজ অ্যান্ড ফিচার সার্ভিসের হয়ে দৈনিক লাল সবুজে দুই মাস চাকরি করেন। একই বছরের আগস্ট মাস থেকে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক আজকের কাগজে নিজস্ব প্রতিবেদক, ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক মানবজমিনে নিজস্ব প্রতিবেদক এবং ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক প্রথম আলোয় নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেন। একই পত্রিকায় পরবর্তী সময়ে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও উপ-প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে ২০০৪ সালের মার্চ পর্যন্ত কাজ করেন।
২০০৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক আমার দেশে বিশেষ প্রতিনিধি, উপ-প্রধান প্রতিবেদক ও পরে যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দৈনিক সমকালে বার্তা সম্পাদক, ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দৈনিক কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ও একই পদমর্যাদায় পরিকল্পনা সম্পাদক, ২০১১ সালের আগস্ট থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত দৈনিক জাগরণে (প্রকাশিতব্য) নির্বাহী সম্পাদক এবং ২০১২ সালের মার্চে দৈনিক সমকালে নির্বাহী সম্পাদক পদে যোগ দেন। পরে তিনি সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১] ২০২২ সালের পহেলা এপ্রিল মোস্তাফিজ শফি প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন।[২]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় জাতীয় পর্যায়ে যেসব প্রতিযোগিতামূলক পুরস্কার রয়েছে মুস্তাফিজ শফি তার বেশিরভাগই পেয়েছেন। এরমধ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, লায়ন্স ক্লাব ও ইউনেস্কো ক্লাব মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য।
ভূতকল্যাণ সমিতি’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন সিটি ব্যাংক আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার।[৬][৭] আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ‘একাত্তরের বিজয়িনী’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন মোবাইল ফোন অপারেটর রবির সম্মাননা।[২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "সমকাল ছাড়লেন মুস্তাফিজ শফি"। https://www.dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২৮।
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ ক খ গ ঘ "'প্রতিদিনের বাংলাদেশ' পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দিলেন মুস্তাফিজ শফি"। Bangla Tribune। ২০২২-০৪-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২৮।
- ↑ "'উজ্জ্বল পঞ্চাশে মুস্তাফিজ শফি' তথ্যচিত্রের ইউটিউব প্রিমিয়ার"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২৮।
- ↑ প্রতিদিনের বাংলাদেশ। "'প্রতিদিনের বাংলাদেশ'র সম্পাদক হলেন মুস্তাফিজ শফি"। bnnews24। ৪ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ প্রতিদিনের বাংলাদেশ। "'প্রতিদিনের বাংলাদেশ' পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দিলেন মুস্তাফিজ শফি"। বাংলা ট্রিব্রিউন। ৮ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "সিটি ব্যাংক আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার"। উইকিপিডিয়া। ২০২২-০৪-২৮।
- ↑ "সিটি ব্যাংক আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ১২ সাহিত্যিক"। দৈনিক যুগান্তর (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২৮।