মোবারক হোসেন (বীর প্রতীক)
মোবারক হোসেন (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]
মোবারক হোসেন | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামোবারক হোসেনের জন্ম নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ মির্জানগর পূর্বপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম হুসাইন আলী কারি এবং মায়ের নাম আরেফা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম বেগম নূরজাহান। তাদের এক ছেলে দুই মেয়ে।
কর্মজীবন
সম্পাদনামোবারক হোসেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের (তখন পশ্চিম পাকিস্তান) পেশোয়ারে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ডিসেম্বরে তিন মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। এ সময় পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমে অবনতি হলে নির্ধারিত ছুটি শেষ হওয়ার পরও তিনি আর পাকিস্তানে যাননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টরে। [২]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে মুক্তিবাহিনীর ৩ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত হতে থাকলেন চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য। একটি দলে আছেন মোবারক হোসেন। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলো। সেদিন রাতেই তারা অবস্থান নিলেন আগরতলা বিমানবন্দরের উত্তরে। অদূরে ছিলো আখাউড়া। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ চালাবেন। আক্রমণের নির্ধারিত সময় ১ ডিসেম্বর মধ্যরাত। আখাউড়া ও সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে আছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা। সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আখাউড়াকে দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করেছে। মোবারক হোসেনের দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ আবদুল মতিন (বীর প্রতীক)। তার অধীনে আছে আরও একটি দল। ৩০ নভেম্বর সকালে তিনি জরুরি খবর পেয়ে চলে গেলেন সিংগারবিলের মুক্তিযোদ্ধা অবস্থানে। সেদিন বা পরদিনও তিনি ফিরে এলেন না। আক্রমণের নতুন পরিকল্পনার কারণে তাকে সেখানে থেকে যেতে হয়। ওখানে যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। এ খবর মোবারক হোসেনরা পাননি। ক্রমে আক্রমণের সময় ঘনিয়ে এল। মোবারক হোসেন তার অধিনায়কের জন্য রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। শেষে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে তার কাছে থাকা ভেরি লাইট পিস্তল দিয়ে নির্ধারিত সময় সংকেত দিলেন। সংকেত পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সামনে রওনা হলেন। এদিকে আগেই নির্ধারিত ছিল আক্রমণ শুরু করার আগে ভারতীয় গোলন্দাজ দল দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করবে। ১১টা ৪৫ মিনিটে গোলাবর্ষণ শুরু হলো। এর সহায়তায় তারা দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকলেন। পাকিস্তানি বাহিনীও পাল্টা গোলাবর্ষণ শুরু করল। এর তীব্রতা এমন যে অনেক দূরেও মোবারক হোসেনদের পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠল। নির্ধারিত সময় ভারত থেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে গোলাবর্ষণ বন্ধ হয়ে গেল। এরপর দুই পক্ষে শুরু হয়ে গেল রাইফেল, মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্রের অবিরাম গোলাগুলি। ঘণ্টা খানেক যুদ্ধ চলল। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ ও গুরুতর আহত হলেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। মোবারক হোসেন বিচলিত না হয়ে সামনে এগোতে থাকেন। তাকে দেখে তার সহযোদ্ধারাও অনুপ্রাণিত হলো। বীরত্বের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করতে থাকলেন। গোলাগুলির একপর্যায়ে হঠাৎ তার বাঁ পায়ের গোড়ালিতে গুলি লাগে। আহত হন তিনি। পরে এক সহযোদ্ধার সহযোগিতায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পুনরায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই যুদ্ধে মোবারক হোসেন অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২০-০৭-২০১২"। ২০২০-০২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৯৫। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৫৮। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।