এম কোরবান আলী

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও জাতীয় সংসদের ৩য় ডেপুটি স্পিকার
(মোঃ কোরবান আলী থেকে পুনর্নির্দেশিত)

এম কোরবান আলী (২৮ জানুয়ারি ১৯২৪-২৩ জুলাই ১৯৯০) বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের তৃতীয় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালেরের মন্ত্রিসভায় তথ্য ও বেতার সম্প্রচার মন্ত্রী। হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভায় তিনি প্রথমে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের এবং পরে পূর্ত, নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।[১]

এম কোরবান আলী
এম কোরবান আলী.jpg
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার
কাজের মেয়াদ
১০ জুলাই ১৯৮৬ – ২৪ এপ্রিল ১৯৮৮
পূর্বসূরীসুলতান আহমেদ চৌধুরী
উত্তরসূরীরিয়াজ উদ্দিন আহমেদ
ঢাকা-৬ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৭ মার্চ ১৯৭৩ – ৬ নভেম্বর ১৯৭৫
পূর্বসূরীআসন শুরু
উত্তরসূরীএকিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৭ মে ১৯৮৬ – ৩ মার্চ ১৯৮৮
পূর্বসূরীআসন শুরু
উত্তরসূরীইকবাল হোসেন
ঢাকা-৯ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৩ মার্চ ১৯৮৮ – ২৩ জুলাই ১৯৯০
পূর্বসূরীমাহমুদুল হাসান
উত্তরসূরীআবুল হাসনাত
বাকশালেরের তথ্য ও বেতার সম্প্রচার মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৬ জানুয়ারি ১৯৭৫ – ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
বাংলাদেশের ভূমিমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৪ জুলাই ১৯৮৫ – ৯ নভেম্বর ১৯৮৫
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মমোহাম্মদ কোরবান আলী
২৮ জানুয়ারি ১৯২৪
কান্দিপাড়া, লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৩ জুলাই ১৯৯০
ঢাকা
সমাধিস্থলশহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
জাতীয় পার্টি
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জন্ম ও শিক্ষাজীবনসম্পাদনা

তিনি ২৮ জানুয়ারি ১৯২৪ সালে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কান্দিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।[১]

কর্মজীবনসম্পাদনা

কোরবান আলী ১৯৫০ সালে ঢাকা জেলা আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এর পর তিনি প্রথমে হাই কোর্ট এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ্য আইন ব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।[১]

রাজনৈতিক জীবনসম্পাদনা

আওয়ামী লীগসম্পাদনা

এম কোরবান আলী ১৯৫০ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ভাষা আন্দোলনেও তিনি সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৫২ সালে কারাবরণ করেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা সভাপতি ছিলেন।[১]

যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৫৪ সালে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং-টঙ্গীবাড়ী নির্বাচনী এলাকা থেকে পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি চীফ হুইপ ছিলেন।[১]

তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে তিনি পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য ছিলেন।[১]

১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা ও প্রচার সেলের প্রধান ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের উপদেষ্টা ছিলেন।[১]

তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৬ আসন (মুন্সীগঞ্জের লৌহজং - সিরাজদিখান নির্বাচনী এলাকা) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[২] তিনি ২৬ জানুয়ারি ১৯৭৫ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালেরের মন্ত্রিসভায় তথ্য ও বেতার সম্প্রচার মন্ত্রী ছিলেন।[৩] মোশতাকের মন্ত্রিসভায় তিনি যোগ দেননি । ৩রা নভেম্বর জেলখানায় খুনী ডালিমকে জিজ্ঞেস করেছিলেন , তোমার স্টেনগানে কয়টি গুলি আছে ! তার থেকে দুইটি গুলি আমার পক্ষ থেকে খুনী মোস্তাক-কে উপহার দিও ।[১][৩]

১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৬ আসন (মুন্সীগঞ্জের লৌহজং - সিরাজদিখান নির্বাচনী এলাকা) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ১৯৮১ সালে তিনি আওয়ামী লীগ প্রিসিডিয়ামের সদস্য নিযুক্ত হন।[১]

তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর তথ্য ও বেতারমন্ত্রী হয়ে বিক্রমপুর -এর লৌহজং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং বাংলার সুয়েজখাল নামে খ্যাত তালতলা - গৌরগঞ্জ খাল খনন করে এলাকায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন ।

জাতীয় পার্টিসম্পাদনা

১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ৭ মে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মুন্সীগঞ্জ-২ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ মনোনীত প্রার্থী প্রখ্যাত আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম খাঁন'কে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তার এলাকার কর্মিদের সব সময় বলতেন , আমি এরশাদের মন্ত্রী সভায় যোগ দিয়েছি , শাহ মোয়াজ্জেম -এর হাত থেকে তোমাদের রক্ষার জন্য । [৪] হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে ১০ জুলাই ১৯৮৬ থেকে ২৪ এপ্রিল ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। তিনি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভায় প্রথমে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের এবং পরে পূর্ত ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। [১]

৩রা মার্চ ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৯ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৫]

মৃত্যুসম্পাদনা

কোরবান আলী ২৩ জুলাই ১৯৯০ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[৩] তাকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "আলী, এম কোরবান - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৯ 
  2. "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. এমরান হোসাইন শেখ (১৫ আগস্ট ২০২০)। "মোশতাকের কেবিনেট সদস্যদের পরিণতি"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২১ 
  4. "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. "৪র্থ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা

পূর্বসূরী:
এ কে এম মাইদুল ইসলাম
বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রী
২৭ মার্চ ১৯৮৮ – ৬ আগস্ট ১৯৮৮
উত্তরসূরী:
মাহমুদুর রহমান চৌধুরী