মৃগয়া
মৃগয়া (Mrigayaa, রাজকীয় শিকার) ১৯৭৬ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত এবং কে. রাজেশ্বর রাও প্রযোজিত ভারতীয় পিরিয়ড কাহিনী চলচ্চিত্র। এটি ভাগবতী চরণ পানিগ্রাহী রচিত ছোট গল্প "শিকার" এর উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। ছবিতে ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশিক এবং স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে সম্পর্ক এবং ১৯২০-র ভারতীয় ভূস্বামীদের শোষণ চিত্রিত হয়েছে। এটিতে শিকারে আগ্রহী একজন ব্রিটিশ প্রশাসক এবং একজন স্থানীয় আদিবাসীর মধ্যে বন্ধুত্বের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। এই স্থানীয় আদিবাসী ছিল একজন বিশেষজ্ঞ তীরন্দাজ। মুখ্য অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী এবং মমতা শঙ্কর - উভয়েই এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।
মৃগয়া | |
---|---|
![]() | |
পরিচালক | মৃণাল সেন |
প্রযোজক | কে. রাজেশ্বর রাও |
রচয়িতা | |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | সলিল চৌধুরী |
চিত্রগ্রাহক | কে. কে. মহাজন |
সম্পাদক | গঙ্গাধর নস্কর, রাজু নায়েক, দিনকর শেট্টী |
মুক্তি |
|
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা, হিন্দি |
ফিল্ম স্কোর রচনা করেছেন সলিল চৌধুরী এবং সিনেমাটোগ্রাফি পরিচালনা করেছেন কে. কে. মহাজন। ২৪ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এ মৃগয়া দুটি পুরস্কার লাভ করে - সেরা কাহিনী চিত্র এবং সেরা অভিনেতা। এটি ১৯৭৭ সালে দশম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এ স্বর্ণ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়া ছাড়াও সেরা চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কারও লাভ করে।
পটভূমি
সম্পাদনা১৯৩০-এর দশকের পটভূমিতে নির্মিত এই ছবিটিতে বাঘ এবং শুয়োরের মতো বন্য প্রাণীদের মাঝে ওড়িশার একটি ছোট্ট গ্রামে বাস করা এক উপজাতিদের নিয়ে। তারা ফসল নষ্টকারী প্রাণীদের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যার মুখোমুখি হয়। এ ছাড়াও তাদের সম্মুখীন হতে হয় গ্রামের লোভী মহাজন এবং পুলিশের চরদের তৈরী সমস্যারও। এই সময়ে সদ্য নিযুক্ত হওয়া একজন ব্রিটিশ প্রশাসক সেই গ্রামে উপস্থিত হন যিনি শিকারেও আগ্রহী ছিলেন। তিনি ঘিনুয়া নামে এক দক্ষ আদিবাসী তীরন্দাজের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলেন। দু'জনের মধ্যে একটি চুক্তি হয় যেখানে ঘিনুয়া যদি "বড় খেলা" নামায় তবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।
গল্পের শুরুতে মনোনিবেশ করা হয় শোলপু-র দিকে। এই তরুণ বিপ্লবী আত্মত্যাগ করে গ্রামে তাঁর মায়ের সাথে দেখা করতে আসেন। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশচর খবর পেয়ে তার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে তাকে ধাওয়া করেন। তবে পুরো গ্রাম তাঁর বিরুদ্ধে দেখে ফিরে যেতে বাধ্য হন। তিনি শোলপুকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তাঁর পালাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। হঠাৎ গ্রামে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে এবং একজন পুলিশ সদস্য তাতে নিহত হন। দোষ পড়ে শোলপুর উপর এবং প্রশাসনও শোলপুর মাথার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। পুলিশচর এর পূর্ণ সুযোগ নেয় এবং শোলপুকে মেরে ফেলে পুরস্কার দাবি করে। শোলপুর মৃত্যু আদিবাসী ও অ-আদিবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এই সময়ে ঘিনুয়ার স্ত্রী ডুংরিকে একজন মহাজন অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘিনুয়া স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য মহাজনকে হত্যা করে। "বড় গেম" এর সময় এসে গেছে ভেবে ঘিনুয়া আনন্দে প্রশাসক সাহেবের সাথে দেখা করতে যায়। সাহেব অবশ্য হত্যার অপরাধে তাঁকে ফাঁসি দেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ঘিনুয়া বুঝতে পারেনি কেন একই রকমের কাজের জন্য একজনকে পুরস্কৃত করা হয় এবং অপরজনকে শাস্তি দেওয়া হয়।
চরিত্রাভিনেতা
সম্পাদনা- মিঠুন চক্রবর্তী ঘিনুয়া চরিত্রে
- মমতা শঙ্কর ডুঙ্গরির চরিত্রে
- রবার্ট রাইট ব্রিটিশ প্রশাসক হিসাবে
- অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
- শেখর চ্যাটারর্জি
- সাধু মেহের দোরা
- জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়
- অনুপ কুমার
- মহাজন হিসাবে সজল রায় চৌধুরী
- সমিত ভঞ্জ শোলপু হিসাবে
- টম অলটার
মূলভাব এবং প্রভাব
সম্পাদনাছবিটি ওড়িয়া লেখক ভগবতী চরণ পানিগ্রাহীর একটি ছোট গল্প শিকার অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল।[১] ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণকে জাগ্রত করার সময়কালকে এখানে চিত্রিত করা হয়েছে [২] এবং এখানে এই গল্পটিতে একটি উপজাতি সম্প্রদায়ের জীবন বর্ণনা করা হয়েছে যারা একটি ছোট্ট গ্রামে কঠিন জীবনযাপন করে। মূল কাহিনীটি ১৯৩০-এর দশকে স্থাপন করা হলেও স্ক্রিপ্টটি ১৮৫০-এর দশকে সংঘটিত সাঁওতাল বিদ্রোহ এর আদলে বিদ্রোহের পটভূমিতে রচিত;[৩] পরিচালক সেনের অভিমত যে গল্পটি "যে কোনও সময় যে কোনও জায়গায় ঘটতে পারে"। নিষ্ঠুর মহাজন এবং উদ্বোধনী দৃশ্যের বন্য প্রাণীদের সাথে গ্রামবাসীদের মুখোমুখি হওয়ার কঠিন সময়কে থিম হিসাবে মিলিয়ে দেখানো হয় শুয়োরে ফসল ধ্বংস করছে আর তার পরেই এসে পড়েছে একজন মহাজন।[৪]
সঙ্গীত
সম্পাদনা- "গায়া গারুয়া সে ভরতি হ্যায়" - মহম্মদ রফি, পঙ্কজ মিত্র
- "সুহাগ রেক আতাউরি চেতনা কো" - মহম্মদ রফি, পঙ্কজ মিত্র
পুরস্কার
সম্পাদনাপুরস্কার | অনুষ্ঠান | বিভাগ | নমিনি | ফলাফল |
---|---|---|---|---|
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার | ২৪ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৬) | সেরা কাহিনী চিত্র | কে. রাজেশ্বর রাও (প্রডিউসার) মৃণাল সেন (পরিচালক) |
বিজয়ী[২] |
সেরা অভিনেতা | মিঠুন চক্রবর্তী | বিজয়ী[২] | ||
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার | ২৪ তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (১৯৭৬) | সেরা চলচ্চিত্রের জন্য সমালোচকদের পুরস্কার | কে. রাজেশ্বর রাও | বিজয়ী[৩] |
মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব | ১০ম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৭৭) | গোল্ডেন সেন্ট জর্জ | মৃণাল সেন | মনোনীত[৫] |
মন্তব্য
সম্পাদনা- ↑ Gulazāra ও Chatterjee 2003, পৃ. 362।
- ↑ ক খ গ Lokapally, Vijay (১৬ মে ২০১৩)। "Mrigayaa (1976)"। The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ ক খ Kohli, Suresh (১৩ ডিসেম্বর ২০১২)। "Mrigayaa (1976)"। The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Mukhopadhyay 2014, পৃ. 101।
- ↑ "10th Moscow International Film Festival (1977)"। MIFF। ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৩।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- Gulazāra; Chatterjee, Saibal (২০০৩)। Encyclopaedia of Hindi Cinema। Popular Prakashan। আইএসবিএন 978-81-7991-066-5।
- Mukhopadhyay, Dipankar (২০১৪)। Mrinal Sen-60 Years In search of cinema। HarperCollins Publishers India। আইএসবিএন 978-93-5136-048-3।
- Indian Horizons। Indian Council for Cultural Relations। ১৯৭৭।