মুড়িয়াউক ইউনিয়ন
মুড়িয়াউক ইউনিয়ন বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার একটি ইউনিয়ন। ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হচ্ছেন রফিকুল ইসলাম মলাই। [১]
মুড়িয়াউক | |
---|---|
ইউনিয়ন | |
৩নং মুড়িয়াউক ইউনিয়ন | |
বাংলাদেশে মুড়িয়াউক ইউনিয়নের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°১৫′৫০.০০০″ উত্তর ৯১°১৬′৪৮.০০০″ পূর্ব / ২৪.২৬৩৮৮৮৮৯° উত্তর ৯১.২৮০০০০০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
জেলা | হবিগঞ্জ জেলা |
উপজেলা | লাখাই উপজেলা |
সরকার | |
• চেয়ারম্যান | রফিকুল ইসলাম মলাই[১] |
আয়তন- তথ্যসূত্র [২] | |
• মোট | ১৯.০৩ বর্গকিমি (৭.৩৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (তথ্যসূত্র [২]) | |
• মোট | ১৭,৭৬২ |
• জনঘনত্ব | ৯৩০/বর্গকিমি (২,৪০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৬০ ৩৬ ৬৮ ৮১ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
সম্পাদনামুড়িয়াউক ইউনিয়ন বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার দক্ষিন দিকে অবস্থিত একটি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের উত্তরে বামৈ ইউনিয়ন, দক্ষিনে মোড়াকরি ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা, পূর্বে করাব ইউনিয়ন ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা এবং পশ্চিমে বামৈ ও মোড়াকরি ইউনিয়ন অবস্থিত। মুড়িয়াউকের আয়তন ৪,৭০৪ একর। [২]
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনাগ্রামের কৃতি বাসিন্দা মরহুম হাজী মোহাম্মদ রজব আলী সাহেবের দান কৃত জমির উপর নির্মিত ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবনটি মুড়িয়াউক গ্রামের দক্ষিণে অবস্থিত।
গ্রামের সংখ্যাঃ ৯। গ্রামসমূহের নাম সাতাউক, লখনাউক, ধর্মপুর, মশাদিয়া, মুড়িয়াউক, কাসিমপুর, তেঘরিয়া, সুনেশ্বর, মৌবাড়ী। এ ইউনিয়নের সাথে নাসিরনগরের সীমানা আছে।
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনাজনসংখ্যাঃ ১৭৭৬২ জন।
শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য
সম্পাদনাএ ইউনিয়নে দুইটি উচ্চ বিদ্যালয়, ১৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। মুড়িয়াউক গ্রামের কৃতি সন্তান মরহুম হাজী মোহাম্মদ রজব আলী এবং মরহুম হাজী মোহাম্মদ শামসুল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও গ্রামবাসীর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সর্ব বৃহৎ একটি মাদ্রাসা রয়েছে যা মুড়িয়াউক গ্রামের উত্তরে অবস্থিত। এছাড়াও বেশ কয়েকটি কওমী মাদ্রাসা সহ মোট ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষার হার ৩৫%। [৩]
কমিউনিটি ক্লিনিক ৩ টি,ইউনিয়ন পরিবার কল্যান কেন্দ্র রয়েছে ১ টি
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি
সম্পাদনাএই ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে ৩৮ জন।
অত্র ইউনিয়নের মুড়িয়াউক গ্রামেই জন্ম গ্রহণ করেছেন হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম এডভোকেট মোস্তফা আলী, যিনি ধারাবাহিকভাবে গণপরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য এবং হবিগঞ্জ মহকুমার গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭১ সালের ২৯ শে অক্টোবরে কতিপয় রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় সুদূর লাখাই ইউনিয়ন থেকে পাক হানাদার বাহিনী মুড়িয়াউক গ্রামে আসে এবং রাতের বেলা কতিপয় দালালের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। খুব ভোর বেলা তারা মুড়িয়াউক গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জনাব শাহজাহান চিশতির বাড়ীতে চায়। শাহাজান চিশতিকে বাড়ীতে না পেয়ে পাক আর্মিরা তাঁর পিতা জনাব আব্দুল জববারকে(৭০) ধরে নিয়ে যায় এবং তাঁর বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে ছারখার করে দেয়। একই সময়ে পাক আর্মিরা মুড়িয়াউক গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইলিয়াছ কামালের পিতা-ইদ্রিছ আলী (৬৫)কেও ধরে নিয়ে যায়। উক্ত দুইজন বর্ষীয়ান লোককে তারা লাখাই ইউনিয়নে নিয়ে যায়। পরদিন সেখান থেকে স্পীড বোট যোগে ভৈরব নেবার পথে গুলি করে হত্যা করে মর্মে জানা যায়। তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।[৪]
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাইউনিয়নটির অভ্যন্তরে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা বিদ্যমান।
ঐতিহাসিক স্থান
সম্পাদনাদর্শনীয় স্থান
সম্পাদনা৩৩ একর জমির উপর তৈরী 'ওয়াহেদুজ্জামান আগা মিয়ার' পুকুর মুড়িয়াউক গ্রামের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। শীতকালে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে, তাই শীতে এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসেন অতিথি পাখি ও পুকুরের মাছ দেখার জন্য। মুড়িয়াউক গ্রামকে পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে দ্বিখণ্ডিত করে গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে বিশাল এক দীঘি যা যেকোনো দর্শকের মন কাড়ার জন্য যথেষ্ট। দানবীর মরহুম হাজী মোহাম্মদ রজব আলী সাহেবের দান কৃত জমির উপর সদ্য নির্মিত ইউনিয়ন পরিষদের নান্দনিক ভবন এবং একটি সুবিশাল খেলার মাঠ মুড়িয়াউক গ্রামের দক্ষিণে অবস্থিত যা গ্রামের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রামের পূর্ব-দক্ষিণ অংশে বিস্তৃত আবাদি জমির হাওরের দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর। সেচ বিল, সরিষা বিল, ল্যাংড়ি বিল,মনাই বিল সহ ছোট বড় অনেক বিলের অস্তিত্ব রয়েছে এই ইউনিয়নে। এছাড়াও ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রাম সহ বিভিন্ন গ্রামে ছোট বড় অনেক দর্শনীয় স্থানের অস্তিত্ব রয়েছে।
হাট-বাজার
সম্পাদনাইউনিয়নে রয়েছে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হাট ও বাজার, যেমন- বাদশা বাড়ি সুপার মার্কেট (অবস্থান- মুড়িয়াউক গ্রাম), চক বাজার (অবস্থান- ধর্মপুর গ্রাম), মুড়িয়াউক ফুলতৈল বাজার ও মুড়িয়াউক দক্ষিণ বাজার (অবস্থান: মুড়িয়াউক গ্রামে), খানিপুরের বাজার (তেঘরিয়া), সাতাউক মাদ্রাসা বাজার (অবস্থান : সাতাউক গ্রামে)। এ বাজারগুলো এলাকার মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন নিবারণের ভরসা। এ বাজারগুলো ইজারার মাধ্যমে আসে রাজস্ব আয়। [৫]
বিবিধ
সম্পাদনাএ অঞ্চলের সাতাউক গ্রামের অনেক মানুষ প্রবাসে, বিশেষ করে গ্রীসে অবস্থান করেন। তবে এ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষই ঢাকা ভিত্তিক রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত, যদিও ইউনিয়নের প্রধান ও প্রাচীন পেশা হচ্ছে কৃষি কাজ। এ ইউনিয়নে ষ্টেডিয়ামের জন্য প্রস্তাবিত একটি বড় মাঠ আছে যা মুড়িয়াউক গ্রামের "নয়া বাড়ি" সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ sylhetview24.com (২০১৬-০৬-০৫)। "ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে সিলেট বিভাগে চেয়ারম্যান হলেন যারা"। www.sylhetview24.net। ২০১৯-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৭।
- ↑ ক খ গ "লাখাই উপজেলা"। ২০১৯-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৭।
- ↑ "মুড়িয়াউক ইউনিয়ন"। http (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৭।
- ↑ "লাখাই উপজেলা"। ২০১৯-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৭।
- ↑ "মুড়িয়াউক ইউনিয়নের হাট বাজার"। muriaukup.habiganj.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৭।