মাসলামা ইবনে আবদুল মালিক
মাসলামা ইবনে আবদুল মালিক (আরবি: مسلمة بن عبد الملك, গ্রিক সূত্রে Μασαλμᾶς, Masalmas; মৃত্যু ৭৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন একজন উমাইয়া রাজপুত্র এবং ৮ম শতাব্দীর প্রথমদিকের একজন বিখ্যাত আরব সেনাপতি। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও খাজার খানাতের বিরুদ্ধে তিনি কিছুসংখ্যক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কনস্টান্টিনোপলে দ্বিতীয় ও শেষ আরব অবরোধে নেতৃত্ব প্রদান এবং ককেশাসে মুসলিমদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য তিনি অধিক পরিচিতি পান। তিনি মুসলিম দারবান্দের প্রতিষ্ঠাতা।[২]
মাসলামা ইবনে আবদুল মালিক | |
---|---|
আল-জাজিরা, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের গভর্নর | |
কাজের মেয়াদ ৭০৯–৭২১ | |
পূর্বসূরী | আব্দুল আজিজ ইবনে হাতিম আল-বাহিলি |
উত্তরসূরী | আল-জাররাহ ইবনে আবদুল্লাহ |
কাজের মেয়াদ ৭২৫–৭২৯ | |
পূর্বসূরী | আল-জাররাহ ইবনে আবদুল্লাহ |
উত্তরসূরী | আল-জাররাহ ইবনে আবদুল্লাহ |
কাজের মেয়াদ ৭৩০–৭৩২ | |
পূর্বসূরী | আল-জাররাহ ইবনে আবদুল্লাহ |
উত্তরসূরী | মারওয়ান ইবনে মুহাম্মদ |
ইরাকের গভর্নর | |
কাজের মেয়াদ ৭২০ – ৭২১ | |
সার্বভৌম শাসক | দ্বিতীয় ইয়াজিদ |
পূর্বসূরী | বসরা এবং কুফা এই সময়ের মধ্যে পৃথক গভর্নরের অধীনে ছিলেন[১] (৭১৭–৭২০) |
উত্তরসূরী | উমর ইবনে হুবায়রা |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
মৃত্যু | ২৪ ডিসেম্বর ৭৩৮ সিরিয়া |
দাম্পত্য সঙ্গী | আল-রাবাব বিনতে জুফার ইবনে হারিস আল-কিলাবী |
সম্পর্ক | উমাইয়া রাজবংশ |
পিতা | আবদুল মালিক |
আত্মীয়স্বজন | মুহাম্মদ (চাচা) প্রথম আল ওয়ালিদ (ভাই) সুলাইমান (ভাই) দ্বিতীয় উমর (চাচা) দ্বিতীয় ইয়াজিদ (ভাই) হিশাম (ভাই) |
সামরিক কর্মজীবন | |
আনুগত্য | উমাইয়া খিলাফত |
সেবা/ | উমাইয়া সেনাবাহিনী |
কার্যকাল | ৭৩০–৭৪০ |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | |
প্রথম জীবন ও কর্ম
সম্পাদনামাসলামা ছিলেন উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের (শাসনকাল ৬৮৫–৭০৫) পুত্র। খলিফা প্রথম আল-ওয়ালিদ (শাসনকাল ৭০৫–৭১৫), সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক (শাসনকাল ৭১৫-৭১৭), দ্বিতীয় ইয়াজিদ (শাসনকাল ৭২০–৭২৪) ও হিশাম ইবনে আবদুল মালিক (শাসনকাল ৭২৪–৭৪৩) তার সৎভাই ছিলেন।[৩][৪] মাসলামার মা দাসী হওয়ায় তিনি উত্তরাধিকারী হননি।[২][৫]
৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে গ্রীষ্মকালের বার্ষিক অভিযানের সময় তিনি প্রথম নেতৃত্ব দেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।[২] এশিয়া মাইনরের দক্ষিণপূর্বে বাইজেন্টাইন শহর তিয়ানার বিরুদ্ধে ৭০৭-৭০৮ খ্রিষ্টাব্দের অবরোধ তার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অভিযান। আগের বছর সেনাপতি মাইমুনের পরাজয় ও মৃত্যুর পাল্টা আঘাত হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়। এই অবরোধ শীতকাল পর্যন্ত চলেছিল। অবরোধের সময় আরবরা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তবে ৭০৮ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টাইনদের উদ্ধারকারী বাহিনীকে পরাজিত করার পর শহর আত্মসমর্পণ করে।[৪][৫][৬] কয়েকমাস পর গ্রীষ্মকালে মাসলামা এশিয়া মাইনরে আরেকটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন। এসময় এমোরিয়ামের নিকটে তিনি বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করেন। ৭০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইসাওরিয়া অঞ্চলে অভিযান চালান।[৬]
একই বছর তিনি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সামরিক গভর্নর হিসেবে তার চাচা মুহাম্মদ ইবনে মারওয়ানের স্থলাভিষিক্ত হন।[২][৩][৫] দায়িত্বগ্রহণের সময় তিনি উত্তর সিরিয়ার জুন্দ কিন্নাসরিনের গভর্নর ছিলেন। তবে তার অন্যান্য দায়িত্ব সংক্রান্ত তথ্য প্রথমদিককার আরব বিবরণগুলোতে ভালোভাবে লিপিবদ্ধ হলেও জুন্দ কিন্নাসরিনের দায়িত্ব সংক্রান্ত তথ্য বেশি পাওয়া যায় না। তবে ইতিহাসবিদ জেরে লি ব্যাচেরেচ দাবি করেন যে মাসলামা আলেপ্পোর উমাইয়া মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন এবং সম্ভবত কিন্নাসরিনে কিছু নির্মাণের দায়িত্ব পালন করেছেন।[৭] এসকল প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্তির ফলে খিলাফতের সমগ্র উত্তরপশ্চিম সীমান্ত জুড়ে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অবস্থান থেকে তিনি বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান চালান।[২][৩][৫] তিনি সর্বপ্রথম ককেশাসের উত্তরে খিলাফত প্রসারিত করেন। খাজারদের বিরুদ্ধে অভিযানে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।[৮] ৭১০ খ্রিষ্টাব্দে ও পরে ৭১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ও তার বাহিনী বাব আল-আবওয়াব (দারবান্দের আরবি নাম, অর্থ "ফটকের ফটক") অভিমুখে যাত্রা করেন। দ্বিতীয় অভিযানটিতে তিনি তা জয় করেন।[২]
কনস্টান্টিনোপল অবরোধ
সম্পাদনা৭১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মাসলামা কনস্টান্টিনোপল জয়ের জন্য তার ভাই খলিফা সুলাইমানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রধান সেনাপতি ছিলেন। এসময় সুলাইমান খুব অসুস্থ ছিলেন বলে ব্যক্তিগতভাবে অভিযানে অংশ নিতে পারছিলেন না।[৯] মাসলামা একটি বিশাল বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। বিভিন্ন সূত্র মোতাবেক এই বাহিনীতে ১,২০,০০০ সৈনিক ও ১,৮০০ জাহাজ ছিল।[১০][১১] ৭১৫ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে আরবদের অগ্রবর্তী বাহিনী তোরোস পর্বতমালা অতিক্রম করে বাইজেন্টাইন এলাকায় প্রবেশ করে। ৭১৬ খ্রিষ্টাব্দের বসন্তে মাসলামা তার প্রধান সেনাবাহিনী ও নৌবহর নিয়ে উপস্থিত হন। ৬৯৫ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হওয়া বিশ বছরের বিশৃঙ্খলার কারণে আরবদের সুবিধা হয়। সম্রাট দ্বিতীয় আনাস্টাসিওসকে তৃতীয় থিওডোসিয়াস ৭১৫ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। মাসলামা বাইজেন্টাইনদের মধ্যকার বিরোধকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। তিনি তৃতীয় থিওডোসিয়াসের আরেক প্রতিপক্ষ সেনাপতি (পরে সম্রাট) তৃতীয় লিওয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু লিও আলোচনাকে ব্যবহার করে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এমোরিয়াম শহর নিজের অধিকারে নিয়ে নেন। অন্যদিকে মাসলামা এই শহরকে শীতকালীন শিবির হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে মাসলামা আরো পশ্চিমে থ্রেসেসিয়ান থিমের উপকূলের দিকে অগ্রসর হন। সেখানে তিনি শীতকাল অতিবাহিত করেন। এদিকে লিও কনস্টান্টিনোপলের দিকে অগ্রসর হন এবং ৭১৭ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে শহরে প্রবেশ করেন।[১২][১৩]
৭১৭ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মের প্রথমদিকে মাসলামা তার বাহিনী নিয়ে দারদানেলেসের মধ্য দিয়ে এশিয়া থেকে ইউরোপে প্রবেশ করেন। তিনি স্থল ও সমুদ্র থেকে কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করেন। তবে গ্রীক ফায়ারের কারণে তার নৌবাহিনী বেশি অগ্রসর হতে পারছিল না। এদিকে শহরের প্রতিরক্ষা ভেদ করে স্থলবাহিনীও শহরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হচ্ছিল। এই অবরোধের স্থায়ীত্বকাল শীতকাল পর্যন্ত পৌছায়। সে বছর তীব্র শীত অনুভূত হয় এবং প্রায় তিন মাস যাবত তুষার আবৃত ছিল। মাসলামা প্রচুর পরিমাণ রসদ নিয়ে এলেও তা দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এদিকে লিও তার রসদ ধ্বংস করে ক্ষতিগ্রস্ত করেন।[১৪] ফলে সেনাবাহিনী ক্ষুধা ও রোগব্যাধিতে ভুগতে থাকে।[১৫][১৬] বসন্তে মিশর ও ইফ্রিকিয়া থেকে দুইটি বড় নৌবহরের মাধ্যমে সাহায্য পাঠানো হয়। এসব জাহাজের অনেক ক্রু ছিল খ্রিষ্টান। তাদের একটি বড় অংশ বাইজেন্টাইনদের পক্ষে চলে যায় এবং লিওর নৌবাহিনী আরব নৌবহরকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও এশিয়া মাইনরের মধ্য দিয়ে অবরোধকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসা আরব বাহিনীকে বাইজেন্টাইনরা পরাজিত করতে সক্ষম হয়। এসময় মাসলামার সৈনিকরা বুলগারদের আক্রমণ প্রতিহত করতে মাঠে নামে এবং এতে তাদের অনেক সৈনিক মারা যায়। এই অবরোধ ব্যর্থ হয় এবং নতুন খলিফা দ্বিতীয় উমর (শাসনকাল ৭১৭-৭২০) মাসলামাকে ফিরে আসার নির্দেশ দেন। অবরোধের তের মাস পরে ৭১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট আরবরা ফিরে আসে।[১৭][১৮]
ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও মাসলামার কনস্টান্টিনোপল অভিযান মুসলিম সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এসবের কিছু ক্ষেত্রে সত্য ও গল্পের মিশ্রণ দেখা যায়। কিছু ভাষ্যে এই অভিযানের ব্যর্থতাকে স্বল্প মাত্রার বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে মাসলামা ত্রিশজন ঘোড়সওয়ারসহ ঘোড়ায় চরে প্রতীকিভাবে বাইজেন্টাইন রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে প্রবেশের পরই ফিরে এসেছিলেন; লিও তাকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করেন এবং তাকে হাজিয়া সোফিয়া নিয়ে সেখানে সম্রাট আরব সেনাপতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।[১৯][২০] অবরোধ সংক্রান্ত গল্প এ বিষয়ে আরবি মহাকাব্যিক সাহিত্যে প্রভাব ফেলেছে। এতে বাইজেন্টিয়ামের বিরুদ্ধে লড়াই করা আরেক কিংবদন্তি আরব বীর আবদুল্লাহ আল-বাত্তালের সাথে মাসলামাকে সম্পর্কিত দেখানো হয়।[২১][২২] উপরন্তু ১০ম শতাব্দীতে লিপিবদ্ধ বাইজেন্টাইন বিবরণ দ্য এডমিনিস্ট্রান্ডো ইম্পেরিওতে বলা হয়েছে যে প্রাইটোরিয়ামের কাছে কনস্টান্টিনোপলের প্রথম মসজিদ নির্মাণের জন্য মাসলামা বাইজেন্টাইনদের রাজি করাতে সক্ষম হন।[৪] পরবর্তীতে উসমানীয় বিবরণে আরাপ মসজিদ নির্মাণ বিষয়ে মাসলামার কথা বলা হয়েছে। তবে এতে তারিখ ৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি উল্লেখ করা হয় যা সম্ভবত কনস্টান্টিনোপলে প্রথম আরব অবরোধ ভেবে ভুল করা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে প্রাইটরিয়ামের নিকটের মসজিদ ৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে আরব দূতাবাস স্থাপনের কারণে নির্মিত হয়ে থাকতে পারে।[২৩]
ইরাক ও ককেশাসের শাসক
সম্পাদনাকনস্টান্টিনোপল থেকে ফিরে আসার পর খারিজিদের দমনের জন্য মাসলামাকে ইরাক পাঠানো হয়। দ্বিতীয় উমরের মৃত্যুর পর মাসলামার ভাই দ্বিতীয় ইয়াজিদ খলিফা হন। মাসলামাকে এসময় ইয়াজিদ ইবনে আল-মুহাল্লাবের বিদ্রোহ দমনের দায়িত্ব দেয়া হয়। ৭২০ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে মাসলামা তাকে পরাজিত ও হত্যা করেন।[২][৪][৫] তবে শেষপর্যন্ত মাসলামার প্রতি খলিফার অসন্তুষ্ট হন। উত্তরাধিকার প্রশ্নে মাসলামা দ্বিতীয় ইয়াজিদের পুত্র ওয়ালিদের চেয়ে নিজ ভাই হিশামের সমর্থক ছিলেন। নিজ প্রদেশের কর দামেস্কে পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় মাসলামাকে এরপর তার পদ থেকে ফিরিয়ে আনা হয় এবং উমর ইবনে হুবাইরাকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[২][৫][২৪]
তৎকালীন সূত্রে এরপর মাসলামাকে পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় ইয়াজিদের মৃত্যু ও হিশামের খলিফা হওয়ার স্বল্পকাল পরে ৭২৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুনরায় আবির্ভূত হন। হিশাম মাসলামাকে ককেশাস যুদ্ধক্ষেত্রে খাজারদের বিরুদ্ধে আল-জাররাহ ইবনে আবদুল্লাহ আল-হাকামির স্থলাভিষিক্ত করে পাঠান। তবে প্রথমদিকে মাসলামা বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিলেন এবং আল-হারিস ইবনে আমর আল-তায়ি তার প্রতিনিধি হিসেবে খাজারদের বিরুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।[২][২৫] ৭২৫ খ্রিষ্টাব্দের শীতে মাসলামা এশিয়া মাইনরে একটি অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এই অভিযানে ৭২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি কায়সারিয়া জয় করা হয়। ৭২৭ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল্লাহ আল-বাত্তাল কর্তৃক চানকিরি জয়ের মত কায়সারিয়া জয়ও বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে আরবদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ছিল। কয়েকমাস পরে তিনি উত্তরে বাইজেন্টাইন অঞ্চলে গ্রীষ্মকালের অভিযানে নেতৃত্ব দেন।[৩][৪][২৬] ৭২৭-৭২৮ সময়কালে খাজারদের আক্রমণের প্রতি তিনি মনোযোগী হন। খাজাররা এসময় আজারবাইজানের অনেক ভেতরে প্রবেশ করেছিল। ৭২৮ খ্রিষ্টাব্দে ককেশাসে তার অভিযান কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়। তার সেনাবাহিনী প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ দিন লড়াই করেছিল এমনটা বলা হয়ে থাকে। তবে এই অভিযান তেমন ফল বয়ে আনেনি। সে বছর আল-জাররাহকে মাসলামার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[৪][২৭] বাইজেন্টাইন লেখক থিওফানস দ্য কনফেসারের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ৭৩০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কারসিয়ানন দুর্গ ধ্বংস করেছিলেন। তবে আরব সূত্রগুলোতে মুয়াবিয়া ইবনে হিশামের নাম উল্লেখ রয়েছে।[২৮]
মাসলামার প্রস্থানের পর ককেশাসের অবস্থা বদলে যায়। আল-জাররাহ ককেশাসের উত্তরে অভিযান চালানোর সময় খাজাররা তার মূল ঘাটি আরদাবিল আক্রমণ করে। তিনি শহর রক্ষায় এগিয়ে আসেন। ৭৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর সংঘটিত আরদাবিলের যুদ্ধে তার বাহিনী আংশিক ধ্বংস হয়ে যায়।[২৯] এসকল সংকটের কারণে খলিফা মাসলামাকে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন। ইতিমধ্যে সেনাপতি সাইদ ইবনে আমর আল-হারাশি খাজারদের পরাজিত করেন এবং পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। অভিযোগ রয়েছে যে সাইদের সাফল্যের কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে মাসলামা তাকে বন্দী করেন এবং খলিফা নির্দেশ দেয়ার পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। ৭৩০ ও ৭৩১ খ্রিষ্টাব্দ জুড়ে মাসলামা তার বাহিনী নিয়ে ককেশাসের দক্ষিণের প্রদেশগুলো থেকে খাজারদের বিতাড়িত করেন এবং পর্বতমালার অপর পাশের শহরে অভিযান চালিয়ে খাগানকে পরাজিত করেন। বাব আল-আবওয়াবের কৌশলগত দুর্গ তিনি খাজারদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন। ৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে মারওয়ান ইবনে মুহাম্মদকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[২][৩০]
এরপর মাসলামা অবসর জীবন যাপন করেন। উত্তর সিরিয়ায় তার ভূসম্পত্তিতে তিনি বাকি জীবন অতিবাহিত করে থাকতে পারেন। ৭৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Al-Tabari, v. 24: pp. 75, 88, 126
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট Rotter 1991, পৃ. 740
- ↑ ক খ গ ঘ ODB, "Maslama" (P. A. Hollingsworth), p. 1311
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ PmbZ, পৃ. 190–191
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Lammens 1987, পৃ. 394
- ↑ ক খ Treadgold 1997, পৃ. 341
- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 108
- ↑ Blankinship (1994), p. 108
- ↑ Guilland (1959), pp. 110–111
- ↑ Guilland (1959), p. 110
- ↑ Treadgold (1997), p. 346
- ↑ Guilland (1959), pp. 111–114, 124–126
- ↑ Treadgold (1997), pp. 344–345
- ↑ Brooks (1899), pp. 24–28
- ↑ Guilland (1959), pp. 119–123
- ↑ Treadgold (1997), pp. 346–347
- ↑ Guilland (1959), pp. 121–123
- ↑ Treadgold (1997), pp. 347–349
- ↑ Canard (1926), pp. 99–102
- ↑ Guilland (1959), pp. 130–131
- ↑ Canard (1926), pp. 112–121
- ↑ Guilland (1959), pp. 131–132
- ↑ Hasluck (1929), pp. 718–720
- ↑ Blankinship (1994), pp. 87–88
- ↑ Blankinship (1994), p. 123
- ↑ Blankinship (1994), pp. 120–121
- ↑ Blankinship (1994), pp. 124–125, 149
- ↑ Blankinship (1994), p. 162
- ↑ Blankinship (1994), pp. 149–150
- ↑ Blankinship (1994), pp. 150–152
উৎস
সম্পাদনা- Bacharach, Jere L. (১৯৯৬)। "Marwanid Umayyad Building Activities: Speculations on Patronage"। Necipoğlu, Gülru। Muqarnas: An Annual on the Visual Culture of the Islamic World। 13। Leiden: BRILL। পৃষ্ঠা 27–44। আইএসবিএন 90-04-10633-2।
- Blankinship, Khalid Yahya (১৯৯৪)। The End of the Jihâd State: The Reign of Hishām ibn ʻAbd al-Malik and the Collapse of the Umayyads। State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-1827-7।
- Brooks, E. W. (১৮৯৯)। "The Campaign of 716–718 from Arabic Sources"। The Journal of Hellenic Studies। The Society for the Promotion of Hellenic Studies। XIX: 19–33। ডিওআই:10.2307/623841।
- Canard, Marius (১৯২৬)। "Les expéditions des Arabes contre Constantinople dans l'histoire et dans la légende"। Journal Asiatique (French ভাষায়) (208): 61–121। আইএসএসএন 0021-762X।
- Guilland, Rodolphe (১৯৫৯)। "L'Expedition de Maslama contre Constantinople (717-718)"। Études byzantines (French ভাষায়)। Paris: Publications de la Faculté des Lettres et Sciences Humaines de Paris: 109–133। ওসিএলসি 603552986।
- Hasluck, F. W. (২০০৮) [1929]। "LVII. The Mosques of the Arabs in Constantinople"। Christianity and Islam Under the Sultans, Vol. 2। READ BOOKS। পৃষ্ঠা 717–735। আইএসবিএন 978-1-4437-2922-2।
- Kazhdan, Alexander, সম্পাদক (১৯৯১)। Oxford Dictionary of Byzantium। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-504652-6।
- Lammens, H. (১৯৮৭)। "MASLAMA"। Houtsma, Martijn Theodoor। E.J. Brill's first encyclopaedia of Islam, 1913–1936, Volume V। Leiden: BRILL। পৃষ্ঠা 394। আইএসবিএন 90-04-08265-4।
- Rotter, G. (১৯৯১)। "Maslama b. ʿAbd al-Malik b. Marwān"। The Encyclopedia of Islam, New Edition, Volume VI: Mahk–Mid। Leiden and New York: BRILL। পৃষ্ঠা 740। আইএসবিএন 90-04-08112-7।
- Treadgold, Warren T. (১৯৯৭)। A History of the Byzantine State and Society। Stanford, CA: Stanford University Press। আইএসবিএন 0-8047-2630-2।
- Winkelmann, Friedhelm; Lilie, Ralph-Johannes; ও অন্যান্য (১৯৯৮)। "Maslama ibn 'Abd al-Malik (#4868)"। Prosopographie der mittelbyzantinischen Zeit: I. Abteilung (641–867), 3. Band: Leon (#4271) – Placentius (#6265) (German ভাষায়)। Walter de Gruyter। পৃষ্ঠা 190–191। আইএসবিএন 3-11-016673-9।