মার্গারেট কাজিন্স

(মার্গারেট কাজিনস থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মার্গারেট এলিজাবেথ কাজিন্স, জন্মনাম: গিলেস্পি (৭ নভেম্বর ১৮৭৮ - ১১ মার্চ ১৯৫৪) ছিলেন একজন আইরিশ-ভারতীয় শিক্ষাবিদ, নারীর ভোটাধিকারপন্থী এবং ধর্মতত্ববিদ। তিনি গ্রেটা কাজিন্স নামেও পরিচিত ছিলেন। ১৯২৭ সালে তিনি সর্বভারতীয় নারী সম্মেলন বা "অল ইন্ডিয়া উইমেন কনফারেন্স" (এআইডাব্লিউসি) প্রতিষ্ঠা করেন। [১] কবি ও সাহিত্যিক সমালোচক জেমস কাজিন্স ছিলেন তার স্বামী। ১৯১৫ সালে তিনি তার স্বামীর সাথে ব্রিটিশ ভারতে আসেন। ১৯১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মদনপাল্লে কলেজ পরিদর্শনকালে তিনি ভারতের জাতীয় সংগীত জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে গানের সুর রচনা করেন।[২]

১৯৩২ সালে মার্গারেট এলিজাবেথ কাজিন্স

জীবনী সম্পাদনা

১৮৭৮ সালের ৭ নভেম্বরে আয়ারল্যান্ডের রোজকমন কাউন্টির বয়লের,[৩] একটি আইরিশ প্রোটেস্ট্যান্ট পরিবারে[৪] মার্গারেট গিলস্পির জন্ম হয়। স্থানীয়ভাবে তিনি ডেরিতে শিক্ষা গ্রহণ করেন।[৫] পরবর্তীতে তিনি ডাবলিনের রয়্যাল ইউনিভার্সিটি অফ আয়ারল্যান্ডে সংগীত অধ্যয়ন করেন। ১৯০২ সালে স্নাতক অর্জন করে তিনি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। একজন শিক্ষার্থী হিসাবে তিনি কবি এবং সাহিত্য সমালোচক জেমস কাজিন্সেরর সাথে দেখা করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯০৩ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতি একসাথে সমাজতন্ত্র, নিরামিষবাদ এবং মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা অন্বেষণ করেছিল। ১৯০৬ সালে, ম্যানচেস্টারে "ন্যাশনাল কনফারেন্স অফ উইমেন" (এনসিডাব্লিউ) বা "মহিলা জাতীয় সম্মেলনে" অংশ নেওয়ার পরে তিনি এর আইরিশ শাখায় যোগদান করেন। ১৯০৭ সালে তিনি এবং তার স্বামী থিওসফিক্যাল সোসাইটির লন্ডন কনভেনশনে যোগ দেন এবং তিনি লন্ডনে নারী ভোটাধিকারপন্থী, নিরামিষাশী, জীবচ্ছেদ বিরোধী এবং অতিপ্রাকৃতবাদীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন।[৪]

মার্গারেট কাজিন্স ১৯০৮ সালে হান্না শেহি-স্কেফিংটনের সাথে "আইরিশ নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ"-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং এর প্রথম কোষাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[৬] ১৯১০ সালে তিনি মহিলা সংসদে অংশ নেওয়া ছয়জন ডাবলিন নারীর মধ্যে একজন ছিলেন, যারা প্রধানমন্ত্রীকে একটি প্রস্তাব দেওয়ার জন্য হাউস অফ কমন্সে পদযাত্রার চেষ্টা করেছিল। ১১৯ জন নারীকে গ্রেপ্তার ও ৫০ জনকে আহত করার ফলে প্রতিবাদী নারীরা মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীদের ঘরের জানালা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। সেই পদযাত্রায় মার্গারেটকে গ্রেফতার করে হলওয়ে জেলে এক মাসের সাজা দেওয়া হয়।[৪]

১৯১২ সালে কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের সাথে ছুটি কাটানোর সময় কাজিন্স এবং তার স্বামী ইয়েটসের কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার অনুবাদ শুনেছিলেন। ১৯১৩ সালে দ্বিতীয় হোম বিধি বিলের পাঠের উপর ডাবলিন ক্যাসলের জানালা ভাঙায় কাজিন্স এবং অন্যান্য আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। সেবার তাকে এক মাসের কারাদন্ডে তুল্লামরে কারাগারে রাখা হয়েছিল। কারাগারে তিনি মহিলারা রাজনৈতিক বন্দী হিসাবে গণ্য হওয়ার দাবি করেছিলেন এবং মুক্তি পাওয়ার জন্য অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। [৪]

১৯১৩ সালে তিনি এবং তার স্বামী লিভারপুলে যান। সেখানে তার স্বামী জেমস কাজিন্স একটি নিরামিষ খাবারের কারখানায় কাজ করতেন। ১৯১৫ সালে তারা ভারতে চলে আসেন। জেমস কাজিন্স প্রথম দিকে অ্যানি বেসান্ত প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র নিউ ইন্ডিয়ায় কাজ করেছিলেন। তিবে ইস্টার বিপ্লবের প্রশংসা করে একটি নিবন্ধ লেখায় বেস্যান্ট তাকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হওয়ার পর তিনি নতুন মদনাপাল্লে কলেজের উপাধ্যক্ষ নিযুক্ত করেন। এখানে মার্গারেট কাজিন্স ইংরেজি শিখাতেন।[৪] ১৯১৬ সালে তিনি পুনেতে অবস্থিত ভারতীয় মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অ-ভারতীয় সদস্য হন।[৫]

১৯১৭ সালে মার্গারেট কাজিন্স সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অ্যানি বেসান্ত এবং ডরোথি জিনারাজাদাসের সাথে উইমেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই সংস্থার জার্নাল "শ্রী ধর্ম"-এর সম্পাদক ছিলেন।[৪] মার্গারেট ১৯১৯–২০ সাল মেয়াদে মাঙ্গলুরুর জাতীয় বালিকা বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান ছিলেন। ১৯২২ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট হন। ১৯২৭ সালে তিনি সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলনের সহ-প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৩৬ সালে এর সভানেত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪] ১৯৩৩ সালে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়।[৫] ১৯৩০ এর দশকের শেষের দিকে তিনি আদিবাসী ভারতীয় নারীবাদীদের পথ বাতলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনুধাবন করেছিলেন। তিনি বলেন:

আমি সংগ্রামে থাকতে চেয়েছিলাম, তবে আমার মনে হয়েছিল আমার সরাসরি অংশগ্রহণের প্রয়োজন নেই, এমনকি ভারতের নারীবাদী নেতৃবৃন্দ যারা এখন সম্মুখভাগে আসছেন তাদেরও ইচ্ছা ছিল না।[৭]

১৯৪৪ সালে একটি স্ট্রোক মার্গারেটকে পক্ষাঘাতগ্রস্থ করে দেয়। ভারতে তার পরিষেবার স্বীকৃতি হিসাবে মাদ্রাজ সরকার এবং পরবর্তীকালে জওহরলাল নেহেরুর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলেন।[৫] তিনি ১৯৫৪ সালে মারা যান। তার লিখা পাণ্ডুলিপিগুলো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংকলনে ছড়িয়ে পড়ে।[৮]

কর্ম সম্পাদনা

  • দ্য অ্যাওয়েকিং অফ এশিয়ান ওমেনহুড, ১৯২২
  • দ্য মিউজিক অফ ওরিয়েন্ট অ্যান্ড অক্সিডেন্ট; এসেজ টুওয়ার্ডস মিউচুয়াক আন্ডারস্ট্যান্ডিং, ১৯৩৫
  • ইন্ডিয়ান ওমেনহুড টুডে, ১৯৪১
  • উই টু টুগেদার" (জেমস কাজিন্সের সাথে), মাদ্রাজ: গণেশ, ১৯৫০

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. History ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে AIWC website.
  2. http://www.hindu.com/fr/2009/05/15/stories/2009051551360500.htm[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. https://civilrecords.irishgenealogy.ie/churchrecords/images/birth_returns/births_1878/02938/2076349.pdf
  4. Kum Jayawardena (১৯৯৫)। The White Woman's Other Burden: Western Women and South Asia During British Rule। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 147–155। আইএসবিএন 978-0-415-91104-7। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১২ 
  5. Jennifer S. Uglow, সম্পাদক (১৯৯৯)। The Northeastern Dictionary of Women's Biography। Maggy Hendry। UPNE। পৃষ্ঠা 140। আইএসবিএন 978-1-55553-421-9। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১২ 
  6. Peter Gordon; David Doughan (২০০৫)। Dictionary of British Women's Organisations। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 978-0-7130-4045-6। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১২ 
  7. Margaret Cousins and James Cousins, We Two-Together, 1950, p.746. Quoted in Jayawardena.
  8. Alan Denson, সম্পাদক (১৯৬৭)। James H. Cousins (1873–1956) and Margaret E. Cousins (1878–1954): A Bio-bibliographical Survey। Kendal: published by the author। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১২ 

আরও পড়ুন সম্পাদনা