অ্যানি বেসান্ত

ব্রিটিশ সমাজকর্মী, নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী, লেখিকা, আধ্যাত্মিক জ্ঞানী এবং সুবক্তা

অ্যানি বেসান্ত, বিবাহপূর্ব উড (১লা অক্টোবর ১৮৪৭ – ২০শে সেপ্টেম্বর ১৯৩৩), একজন প্রাক্তন ব্রিটিশ সমাজতান্ত্রিক, ব্রহ্মজ্ঞানী, নারী অধিকার আন্দোলনকারী, লেখিকা, বাগ্মী, এবং আইরিশ ও ভারতীয় স্বায়ত্বশাসনের সমর্থক।

অ্যানি বেসান্ত
অ্যানি বেসান্ত
জন্ম
অ্যানি উড

(১৮৪৭-১০-০১)১ অক্টোবর ১৮৪৭
মৃত্যু২০ সেপ্টেম্বর ১৯৩৩(1933-09-20) (বয়স ৮৫)
জাতীয়তাব্রিটিশ
পরিচিতির কারণব্রহ্মজ্ঞানী, নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলন, লেখিকা এবং বাগ্মী
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
আন্দোলনভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন
দাম্পত্য সঙ্গীফ্রাংক বেসান্ত (বি. ১৮৬৭; বিচ্ছেদ. ১৮৭৩)
সন্তানআর্থার, মাবেল

১৮৬৭ সালে, ২০ বছর বয়সে, অ্যানি, ফ্রাংক বেসান্তকে বিবাহ করেন। ফ্রাংক একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন, তাদের দুটি সন্তান ছিল। তবে, অ্যানির ক্রমবর্ধমান অচিরাচরিত ধর্মীয় মতামতের ফলে মতবিরোধ হয়ে ১৮৭৩ সালে তাদের আইনি বিচ্ছেদ ঘটে।[] তখন তিনি ন্যাশনাল সেকুলার সোসাইটির (এনএসএস) একজন বক্তা, একজন লেখক এবং চার্লস ব্র্যাডলফ এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন। ১৮৭৭ সালে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ অভিযানকারী চার্লস নোল্টনের একটি বই প্রকাশ করে তারা অভিযুক্ত হন। এই বিতর্ক তাদের বিখ্যাত করে তোলে, এবং পরবর্তীতে, ১৮৮০ সালে, ব্র্যাডলফ নর্থাম্পটনের এমপি নির্বাচিত হন।

তারপরে, তিনি ইউনিয়নের কাজকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তার কাজের মধ্যে ছিল রক্তাক্ত রবিবার প্রদর্শন এবং ১৮৮৮ সালের লন্ডন দেশলাই কারখানা কর্মী ধর্মঘট। তিনি ফেবিয়ান সোসাইটি এবং মার্কসবাদী সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ফেডারেশন (এসডিএফ) উভয়ের পক্ষে একজন স্বনামধন্য বক্তা ছিলেন। তিনি টাওয়ার হ্যামলেট্‌স এর জন্য লন্ডন স্কুল বোর্ডে নির্বাচিত হন। যদিও সেই সময়ে অল্প সংখ্যক মহিলাই ভোট দেওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতেন, তবুও তিনি ভোট পর্বে শীর্ষস্থান লাভ করেন। ১৮৯০ সালে, বেসান্তের সঙ্গে হেলেনা ব্লাভাৎস্কির দেখা হয়, এবং পরবর্তী কয়েক বছরে ব্রহ্মজ্ঞানে তার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, এবং ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়ে তার আগ্রহ কমতে থাকে। তিনি ব্রহ্মজ্ঞানী সমাজের সদস্য হন। এবং এই বিষয়ে এক জন বিশিষ্ট বক্তা হয়ে ওঠেন। তার ব্রহ্মচর্চা সম্পর্কিত কাজের অংশ হিসাবে, তিনি ভারতে আসেন। ১৮৯৮ সালে, তিনি কেন্দ্রীয় হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিলেন],[] এবং ১৯২২ সালে, তিনি ভারতের মুম্বইতে হায়দ্রাবাদ (সিন্ধু) জাতীয় কলেজিয়েট বোর্ড প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন।[] ১৯০২ সালে, তিনি আন্তর্জাতিক অর্ডার অফ কো-ফ্রীম্যাসোনারি প্রথম বিদেশী লজ লা ড্রোয়া হুমাঁ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী কয়েক বছরে তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অনেক অংশে লজ স্থাপন করেন। ১৯০৭ সালে তিনি ব্রহ্মজ্ঞানী সমাজের সভাপতি হন। তখন এর আন্তর্জাতিক সদর দপ্তর ছিল মাদ্রাজের আদিয়ার

তিনি ভারতীয় রাজনীতিতেও যুক্ত হয়ে পড়েন, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, তিনি ভারতে গণতন্ত্রের প্রচারের জন্য এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য মধ্যেই কর্তৃত্ব পেতে, হোম রুল লীগ চালু করতে সহায়তা করেছিলেন। এর ফলে, ১৯১৭ এর শেষের দিকে তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৯২০ এর শেষ দিকে, বেসান্ত তার আশ্রিত এবং দত্তক পুত্র জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তিকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন, যাঁকে তিনি দাবি করেন নতুন মেসায়া এবং বুদ্ধের অবতার বলে। কৃষ্ণমূর্তি ১৯২৯ সালে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[] যুদ্ধ শেষে, ১৯৩৩ সালে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত, তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা এবং থিওসফির কারণগুলির জন্য প্রচার চালিয়ে যান।

তার উদ্দেশ্য পূরণের প্রধান উপায় হিসাবে তিনি বেনারসে কেন্দ্রীয় হিন্দু স্কুলটি শুরু করেন।

প্রথম জীবন

সম্পাদনা
 
সিবসিতে সেন্ট মার্গারেটের গির্জা, যেখানে ফ্রাঙ্ক বেসান্ত পল্লীযাজক ছিলেন, ১৮৭১-১৯১৭

অ্যানি উড ১৮৪৭ সালে, লন্ডনে, এক মধ্যবিত্ত আইরিশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে গর্ব অনুভব করতেন এবং তার জীবন জুড়ে আইরিশ স্বায়ত্ব-শাসন সমর্থন করেছিলেন। তার পাঁচ বছর বয়সে, তাদের পরিবারকে প্রায় কপর্দকশূণ্য অবস্থায় রেখে তার বাবা মারা যান। হ্যারো স্কুলে ছেলেদের জন্য একটি বোর্ডিং চালিয়ে তার মা পরিবারের ভরণপোষণ করতেন। যাইহোক, তিনি অ্যানির খরচ চালাতে পারেননি এবং তার বন্ধু এলেন ম্যারিয়াতকে তার দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। যাতে তিনি ভালো শিক্ষা পান, তা ম্যারিয়াত নিশ্চিত করেছিলেন। অ্যানিকে সমাজের প্রতি কর্তব্যের দৃঢ় অনুভূতি দেওয়া হয়েছিল এবং স্বাধীন নারী অর্জন কি করতে পারে তার শক্তিশালী ধারণা দেওয়া হয়েছিল।[] একজন যুবতী হিসাবে, তিনি ইউরোপে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করতে সক্ষম ছিলেন। সেখানে তিনি রোমান ক্যাথলিকদের যুক্তি এবং অনুষ্ঠান পালনকে অনুভব করেছিলেন যা তিনি চিরকাল মেনে চলেছেন।

১৮৬৭ সালে, কুড়ি বছর বয়সে, তিনি ওয়াল্টার বেসান্তের ছোট ভাই ২৬ বছর বয়সী পাদরী ফ্রাঙ্ক বেসান্তকে (১৮৪০-১৯১৭) বিবাহ করেন। তিনি একজন বিলাতী ধর্মপ্রচারক ছিলেন এবং অ্যানির অনেক উদ্বেগ ভাগ করে নিতেন।[] তার বিয়ের প্রাক্কালে, তিনি ম্যানচেস্টারে বন্ধুদের কাছে গিয়ে আরো বেশি রাজনীতিক হয়ে ওঠেন। বন্ধুরা তাকে ইংরেজ মৌলবাদ এবং আইরিশ প্রজাতান্ত্রিক ফেনিয়ান ব্রাদারহুডএর ম্যানচেস্টার শহীদদের সংস্পর্শে আনেন,[] পাশাপাশি শহুরে দরিদ্র অবস্থার সঙ্গেও তার পরিচয় করান।

 
অ্যানি বেসান্ত
 
সিবসেতে ফ্রাঙ্ক বেসান্তের কবর, যেখানে তিনি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যাজক ছিলেন

শীঘ্রই ফ্রাঙ্ক লিংকনশায়ারের সিবসেতে যাজক হয়ে গেলেন। অ্যানি তার স্বামীর সঙ্গে সিবসেতে আসেন, এবং কয়েক বছরের মধ্যে তাদের দুটি সন্তান হয়, আর্থার এবং মাবেল; যাইহোক, তাদের খুব শীঘ্রই বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অ্যানি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, "আমাদের জুটির মিল হয়নি"।[] তাদের প্রথম দ্বন্দ্ব এসেছিল অর্থ এবং অ্যানির স্বাধীনতা নিয়ে। অ্যানি ছোট গল্প, শিশুদের জন্য বই, এবং নিবন্ধ লিখতেন। যেহেতু বিবাহিত মহিলাদের সম্পত্তি মালিকানার আইনি অধিকার ছিল না, তার অর্জিত সমস্ত টাকা ফ্রাঙ্ক নিয়ে নিতেন। রাজনীতি এই দম্পতিকে আরও বিভক্ত করে দিল। অ্যানি কৃষকদের সহায়তা দিতে শুরু করেছিলেন। এই কৃষকেরা জোটবদ্ধ হবার জন্য এবং ভাল অবস্থা পাবার জন্য লড়াই করছিলেন। ফ্রাঙ্ক একজন টরি হিসাবে জমিদারদের পক্ষে ছিলেন। অ্যানি যখন কমিউনিয়নে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান তখন তার ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। ১৮৭৩ সালে তিনি তাকে ছেড়ে লন্ডনে ফিরে আসেন। তারা আইনত আলাদা হয়ে যান এবং অ্যানি তার সঙ্গে তার মেয়েকে নিয়ে আসেন।

বেসান্ত তার নিজের বিশ্বাসকে নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেন। তিনি পরামর্শের জন্য নেতৃস্থানীয় পাদ্রীদের কাছে যান, ইংল্যান্ডের চার্চের অক্সফোর্ড আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে একজন এডওয়ার্ড বুভেরি পুসের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি যখন তাকে তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য কিছু বই এর সুপারিশ করতে বললেন, তখন তিনি তাকে বলেন যে তিনি আগেই অনেক পড়ে নিয়েছেন।[] বেসান্ত ফ্রাংকের কাছে গিয়ে বিবাহ টিঁকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা করলেন, কিন্তু তা সফল হলনা। তিনি অবশেষে লন্ডনে ফিরে গেলেন।

বার্কবেক

সম্পাদনা

১৮৮০ এর দশকের শেষের দিকে তিনি বার্কবেক সাহিত্য ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেন।[] সেখানে তার ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে বিপদাশঙ্কা তৈরী হয়। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের গভর্নরেরা তার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ আটকে দিতে চেয়েছিলেন।[১০]

সংস্কারক এবং ধর্মনিরপেক্ষ

সম্পাদনা
 
অ্যানি বেসান্ত – ১৮৮০র দশক

তিনি কারণের জন্য লড়াই করেছেন, তার চিন্তা ভাবনা সঠিক ছিল, চিন্তার স্বাধীনতা থেকে শুরু করে, নারীর অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, ফ্যাবিয়ান সমাজতন্ত্র এবং শ্রমিকের অধিকার, সবই। তিনি চার্লস ব্র্যাডলফএর মতই জাতীয় ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ এবং সাউথ প্লেস এথিকাল সোসাইটির নেতৃস্থানীয় সদস্য ছিলেন।[১১]

বিবাহবিচ্ছেদ ফ্রাঙ্কের জন্য অবিশ্বাস্য ছিল, এবং এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগালের মধ্যেও ছিল না। অ্যানিকে তার সারা জীবন শ্রীমতী বেসান্ত হয়েই থাকতে হয়েছিল। প্রথমদিকে তিনি উভয় সন্তানের সাথেই যোগাযোগ রাখতে পেরেছিলেন এবং মাবেল তার সাথেই বসবাস করত; তিনি তার স্বামীর কাছ থেকে অল্প কিছু টাকাও পেতেন। ফ্রাঙ্ক বেসান্তকে ছেড়ে বেরিয়ে এসে, এবং চিন্তার নতুন স্রোতের দিকে উন্মুক্ত হয়ে, তিনি কেবল তার দীর্ঘস্থায়ী ধর্মীয় বিশ্বাসগুলিই নয়, বরং সমগ্র প্রচলিত চিন্তাভাবনাগুলি নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। তিনি গির্জাকে আক্রমণ করে এবং কীভাবে তারা মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে তা নিয়ে লিখতে শুরু করলেন। বিশেষ করে তিনি ইংল্যান্ডের চার্চকে আক্রমণ করে লিখেছিলেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বাসের ধারক হিসাবে।

শীঘ্রই তিনি, এনএসএস এর সংবাদপত্র জাতীয় সংস্কারক এর জন্য লিখে সাপ্তাহিক মজুরি উপার্জন করা শুরু করলেন। এনএসএস একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তৈরীর উদ্দেশ্যে এবং খ্রিস্টানদের বিশেষ অবস্থা দেওয়ার বিরুদ্ধে সওয়াল করে এবং তাকে প্রবক্তা হিসাবে কাজ করার অনুমতি দেয়। জনতার মাঝে বক্তৃতা ভিক্টোরীয় যুগে খুব জনপ্রিয় বিনোদন ছিল। বেসান্ত সুবক্তা ছিলেন, এবং শীঘ্রই তার চাহিদা বেড়ে গেল। রেল ব্যবহার করে, তিনি দেশ জুড়ে ঘুরে বেড়াতেন, দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সব কথা বলতেন, সবসময় উন্নতি, সংস্কার এবং স্বাধীনতার দাবি করতেন। বহু বছর ধরে বেসান্ত ন্যাশনাল সেকুলার সোসাইটির নেতা, চার্লস ব্র্যাডলফ এর বন্ধু ছিলেন। প্রাক্তন সৈনিক ব্র্যাডলফ, বহুদিন থেকে বিবাহ বিচ্ছিন্ন ছিলেন; বেসান্ত তার ও তার মেয়েদের সাথে থাকতেন, এবং তারা অনেক প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করতেন। তিনি একজন নাস্তিক এবং একজন গণপ্রজাতন্ত্রী ছিলেন; তিনি নর্থাম্পটন সংসদ সদস্য (এমপি) হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আমেরিকান জন্ম নিয়ন্ত্রণ অভিযানকারী চার্লস নোল্টন এর একটি বই ফ্রুটস অফ ফিলোসফি ১৮৭৭ সালে প্রকাশ করে, বেসান্ত এবং ব্র্যাডলফের নাম ঘরে ঘরে চর্চিত হতে থাকে। এতে দাবি করা হয়েছিল যে, শ্রমিক পরিবার কত সন্তান চায়, তা নির্ধারণ করতে না পারলে তারা কখনই সুখী হতে পারে না। এটিতে তাদের পরিবার ছোট রাখার উপায়ও বলা হয়েছিল।[১২] নোল্টনের বই অত্যন্ত বিতর্কিত ছিল, এবং গির্জাগুলি জোরালোভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। বেসান্ত ও ব্র্যাডলফ জাতীয় সংস্কারকএ বলেন:

আমরা নৈতিকভাবে প্রতিরক্ষা করতে পারি না এমন কিছুই আমরা প্রকাশ করতে চাই না। আমরা যা প্রকাশ করি তাকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।[১৩]

তাদের দুজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং নোল্টনের বই প্রকাশের জন্য তারা বিচারের সম্মুখীন হন। তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়, কিন্তু আবেদনের ভিত্তিতে ছাড়া হয়। বিরোধিতার সঙ্গে সঙ্গে বেসান্ত ও ব্র্যাডলফ, লিবারেল প্রেসে, ব্যাপক সমর্থনও পেয়েছিলেন। চিঠিপত্রে এবং মতামত বিভাগে, এবং এর সঙ্গে আদালতেও যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি চলতে থাকে। বিচারের সময় মলথুসিয়ান লীগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেসান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই লীগ, গর্ভনিরোধের প্রচারে যে জরিমানা করা হ্ত তা বিলুপ্তির জন্য প্রচার চালাতে থাকে।[১৪] কিছু সময়ের জন্য, মনে হচ্ছিল তাদের কারাগারে যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত, অভিযোগগুলি যথাযথভাবে সাজানো হয়নি, এই প্রযুক্তিগত বিন্দুতে, মামলাটি রদ হয়ে যায়। এই ঘটনার ফলে বেসান্তের কাছ থেকে বাচ্ছাদের হেফাজত হাতছাড়া হয়। তার স্বামী আদালতকে বোঝাতে পেরেছিলেন যে, অ্যানি তাদের যত্ন নেওয়ার যোগ্য নন, এবং বাচ্ছাদের স্থায়ীভাবে তাকে হস্তান্তর করা হয়।

৬ই মার্চ ১৮৮১ সালে, তিনি, লীসেস্টারের হাম্বারস্টোন গেটে, লীসেস্টার সেকুলার সোসাইটির নতুন সেক্যুলার হলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অন্যান্য বক্তারা ছিলেন জর্জ জেকব হোলিওক, হ্যারিয়েট ল এবং চার্লস ব্র্যাডলফ[১৫] ব্র্যাডলফের রাজনৈতিক সম্ভাবনা নোল্টন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি এবং ১৮৮১ সালে তিনি সংসদে নির্বাচিত হন। তার নাস্তিকতার জন্য, আনুগত্যের শপথের পরিবর্তে তিনি নিশ্চিতকরণ করার অনুমতি চান। যখন নিশ্চিতকরণ প্রত্যাখ্যান করা হয়, ব্র্যাডলফ শপথ নিতে রাজি হন। কিন্তু এই বিকল্পটিকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। যদিও অনেক খ্রিস্টান ব্র্যাডলফের কথা শুনে বিস্মিত ছিল, অন্যরা (যেমন উদার নেতা গ্ল্যাডস্টোন) বিশ্বাসের স্বাধীনতার জন্য কথা বলেছিলেন। উপ-নির্বাচনের এবং আদালতে উপস্থিতির ধারাবাহিকতার পর বিষয়টি মিটতে (ব্র্যাডলফের পক্ষে) ছয় বছরেরও বেশি সময় নেয়। এর মধ্যে, বেসান্ত আইরিশ হোম রুলার্স দের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে যান এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার সংবাদপত্রে তাদের সমর্থন করতে থাকেন। এই সময় আইরিশ জাতীয়তাবাদীরা উদারপন্থী এবং মৌলবাদীদের সাথে একটি জোট গঠন করেন। বেসান্ত আইরিশ হোম রুল আন্দোলনের নেতাদের সাথে দেখা করেন। বিশেষ করে, যিনি ভূমিযুদ্ধের মাধ্যমে, জমিদারদের বিরুদ্ধে সরাসরি সংগ্রামে, আইরিশ কৃষককে সংগঠিত করতে চেয়েছিলেন, সেই মাইকেল ডেভিটের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি পরবর্তী কয়েক দশক ধরে ডেভিট এবং তার ল্যান্ড লীগের পক্ষে অনেকবার বলেছিলেন এবং লিখেছিলেন।

যাইহোক, ব্র্যাডলফের সংসদীয় কাজ ধীরে ধীরে বেসান্তকে তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে। সংসদীয় রাজনীতিতে নারীর কোনো অংশ থাকত না। বেসান্ত আসল রাজনৈতিক নির্গমপথ খুঁজছিলেন, যেখানে একজন বক্তা, লেখক এবং সংগঠক হিসাবে তার দক্ষতা কিছু বাস্তব ভাল কাজ করতে পারবে।

রাজনৈতিক সক্রিয়তা

সম্পাদনা

বেসান্তের কাছে, রাজনীতি, বন্ধুত্ব ও ভালবাসা সবসময় ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ছিল। লন্ডনে বসবাসরত সংগ্রামরত তরুণ আইরিশ লেখক জর্জ বার্নার্ড শ', এবং ফেবিয়ান সোসাইটির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তার মধ্যে সমাজতন্ত্রের বীজ বপন করেছিল। অ্যানি শ'এর কাজের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং ১৮৮০র দশকের প্রথম দিকে তার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। শ'কে তার সাথে বসবাসের আমন্ত্রণ করে, প্রথম পদক্ষেপটি করেছিলেন বেসান্ত। এটি শ' প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কিন্তু তিনিই বেসান্তকে ফেবিয়ান সোসাইটিতে যোগ দিতে সাহায্য করেছিলেন। প্রথম দিকে, রাজনৈতিক পুঁজিবাদী বিকল্প ব্যবস্থার পরিবর্তে সমাজটি আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের একত্রিত করছিল।[১৬] বেসান্ত ফেবিয়ানদের জন্য লিখতে শুরু করলেন। এই নতুন গৃহীত দায়িত্ব – এবং শ'এর সঙ্গে তার সম্পর্ক – বেসান্তের সঙ্গে ব্র্যাডলফের, যিনি যেকোন ধরনের সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা করতেন, মধ্যে দূরত্ব রচনা করল। যদিও ব্র্যাডলফ যেকোন মূল্যে বাকস্বাধীনতা রক্ষার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু তিনি শ্রমিকশ্রেণির জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করার বিষয়ে খুব সতর্ক ছিলেন।[১৭] বেকারত্ব ছিল সে সময়ের একটি কেন্দ্রীয় বিষয়, এবং ১৮৮৭ সালে লন্ডনের কিছু বেকার ট্রাফালগার স্কয়ারে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে। ১৩ই নভেম্বরের সভায় বক্তব্য রাখতে রাজি হন বেসান্ত। পুলিশ জমায়েতকে আটকানোর চেষ্টা করে, লড়াই শুরু হয়, এবং সৈন্য ডাকা হয়। অনেকে আহত হন, একজন মারা যান, এবং অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়; বেসান্ত নিজেই গ্রেফতার বরণ করতে যান, কিন্তু পুলিশ তা স্বীকার করেনি।[১৮] ঘটনাটি একটি সংবেদন তৈরি করে, এবং রক্তাক্ত রবিবার হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। বেসান্তকে এর জন্য ব্যাপকভাবে দায়ী করা - বা তার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি কারাগারে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য আইনি সহায়তা আয়োজনে এবং তাদের পরিবারের জন্য সমর্থন দেওয়ার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।[১৯] শেষ পর্যন্ত ব্র্যাডলফ তার সাথে বিচ্ছেদ ঘটান, কারণ তার মনে হয়েছিল যে, সভায় এগিয়ে যাওয়ার আগে বেসান্তের তার পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল। এই সময়ে তার আরেকটি কার্যকলাপ ছিল ১৮৮৮ সালের লন্ডন দেশলাই কারখানা কর্মী ধর্মঘট। তিনি তরুণ সমাজতান্ত্রিক, হার্বার্ট বারোজ দ্বারা এই "নতুন ইউনিয়নবাদ" এ আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি বো, লন্ডনএর ব্রায়ান্ট এবং মে এর দেশলাই কারখানা কর্মীরা, যারা প্রধানত তরুণী ছিল এবং খুব সামান্য বেতন পেত, তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তারাও হাড় ক্ষয়ের ফসসি চোয়ালএর মত শিল্প সংক্রান্ত অসুস্থতার শিকার ছিল। এটি দেশলাই উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্বারা সৃষ্ট হত।[২০] কিছু দেশলাই কর্মী, ইউনিয়ন গড়ে তোলার জন্য, বারোজ এবং বেসান্তের সাহায্য চেয়েছিল।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Orosz, Kenneth J. (২০০২)। "Besant, Annie (1847–1933)"। Women in World History: A Biographical Encyclopedia। Gale Research Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৯ 
  2. Ncert 
  3. "History and Development of the Board"Hyderabad (Sind) National Collegiate Board। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. "Annie Besant (1847–1933)" BBC UK Archive
  5. Anne Taylor, 'Besant, Annie (1847–1933)', Oxford Dictionary of National Biography, Oxford University Press, 2004; online edn, Jan 2008 accessed 30 March 2015. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে
  6. Annie Besant: An Autobiography, London, 1885, chapter 4.
  7. Annie Besant: an Autobiography (Unwin, 1908), 81.
  8. Annie Besant: An Autobiography, London, 1885, chapter 5.
  9. "Notable Birkbeckians"। Birkbeck, University of London। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৭ 
  10. "The History of Birkbeck"। Birkbeck, University of London। ৬ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০০৬ 
  11. MacKillop, I. D. (1986) The British Ethical Societies, Cambridge University Press (Accessed 13 May 2014).
  12. Knowlton, Charles (অক্টোবর ১৮৯১) [1840]। Besant, Annie; Bradlaugh, Charles, সম্পাদকগণ। Fruits of philosophy: a treatise on the population question। San Francisco: Reader's Library। ওসিএলসি 626706770  A publication about birth control. View original copy.
  13. Annie Besant (১৮৮৫)। Autobiographical sketches। Freethought Publishing। পৃষ্ঠা 116ওএল 26315876M 
  14. F. D'arcy (নভে ১৯৭৭)। "The Malthusian League and resistance to birth control propaganda in late Victorian Britain"। Population Studies31 (3): 429–448। জেস্টোর 2173367ডিওআই:10.1080/00324728.1977.10412759 
  15. Gimson 1932
  16. Edward R. Pease, The History of the Fabian Society (E. P. Dutton, 1916, rpt Aware Journalism, 2014), 62.
  17. Theresa Notare, A Revolution in Christian Morals: Lambeth 1930-Resolution #15. History and Reception (ProQuest, 2008), 188.
  18. Sally Peters, Bernard Shaw: The Ascent of the Superman (Yale University, 1996), 94.
  19. Kumar, Raj, Annie Besant's Rise to Power in Indian Politics, 1914–1917 (Concept Publishing, 1981), 36.
  20. "White slavery in London" The Link, Issue no. 21 (via Tower Hamlets' Local History Library and Archives)

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা
  • Briggs, Julia. A Woman of Passion: The Life of E. Nesbit. New Amsterdam Books, 2000, 68, 81-82, 92-96, 135-139
  • Chandrasekhar, S. A Dirty, Filthy Book: The Writing of Charles Knowlton and Annie Besant on Reproductive Physiology and Birth Control and an Account of the Bradlaugh-Besant Trial. University of California Berkeley 1981
  • Grover, Verinder and Ranjana Arora (eds.) Annie Besant: Great Women of Modern India – 1 : Published by Deep of Deep Publications, New Delhi, India, 1993
  • Kumar, Raj, Annie Besant's Rise to Power in Indian Politics, 1914–1917. Concept Publishing, 1981
  • Kumar, Raj Rameshwari Devi and Romila Pruthi. Annie Besant: Founder of Home Rule Movement, Pointer Publishers, 2003 আইএসবিএন ৮১-৭১৩২-৩২১-৯
  • Manvell, Roger. The trial of Annie Besant and Charles Bradlaugh. Elek, London 1976
  • Nethercot, Arthur H. The first five lives of Annie Besant Hart-Davis: London, 1961
  • Nethercot, Arthur H. The last four lives of Annie Besant Hart-Davis: London (also University of Chicago Press 1963) আইএসবিএন ০-২২৬-৫৭৩১৭-৬
  • Taylor, Anne. Annie Besant: A Biography, Oxford University Press, 1991 (also US edition 1992) আইএসবিএন ০-১৯-২১১৭৯৬-৩
  • Uglow, Jennifer S., Maggy Hendry, The Northeastern Dictionary of Women's Biography. Northeastern University, 1999

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
অম্বিকাচরণ মজুমদার
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি
১৯১৭
উত্তরসূরী
মদনমোহন মালব্য

টেমপ্লেট:Theosophy series