মার্কিন সেনাবাহিনীতে নারী

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীতে নারীরা মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কাল থেকে কাজ করছেন, তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গঠিত মহিলা সৈন্য শাখা ছিলো মার্কিন নারীদের সামরিক বাহিনীতে মূল পদচারণা এবং নিয়মিত সৈনিক হিসেবে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে প্রথম।[৩] নারীরা এখন মার্কিন সেনাবাহিনীর পদাতিক, সাঁজোয়া, গোলন্দাজ সহ সব শাখাতেই সৈনিক হিসেবে যোগ দিতে পারেন যদিও পুরুষদের তুলনায় অনেক কম নারীই সেনা সদস্য হতে পারেন তবে ১৯৭০-এর দশকের আগে নারীদের সেনাবাহিনীতে আলাদা একটি শাখায় যোগ দিতে হতো যেটার নাম ছিলো মহিলা সৈনিক শাখা এবং তখন নারীরা পুরুষদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেতেননা।

অ্যান এলিজাবেথ ডানউডি ছিলেন প্রথম নারী যিনি ২০০৮ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রথম চার তারকাপ্রাপ্ত জেনারেল পদ লাভ করেন।[১][২]

২০০৮ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম উর্ধ্বতন জেনারেল হিসেবে একজন নারী কর্মকর্তা নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং তিনি ছিলেন জেনারেল অ্যান এলিজাবেথ ডানউডি যিনি সেনাবাহিনীর সরবরাহ শাখার একজন কর্মকর্তা ছিলেন এবং সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে কর্মজীবনের শেষের দিকে একজন স্টাফ জেনারেল ছিলেন, মার্কিন সেনাবাহিনীতে চার তারকা জেনারেল পদমর্যাদা সাধারণত নারীদেরকে দেওয়া হয়না, এক্ষেত্রে জেনারেল অ্যান ছিলেন ব্যতিক্রম।[১][২] প্যাট্রিশিয়া হরোহো এবং নাডজা ওয়েস্ট নামের দুইজন নারী জেনারেল হয়েছিলেন তবে এরা দুজনেই সেনা চিকিৎসা শাখার সদস্য ছিলেন।

ইতিহাস

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে

মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীরা সামরিক বাহিনী পদাতিক সৈন্য হিসেবে যোগ দিতেন যদিও তারা পুরুষ সেজে যোগ দিয়েছিলেন কারণ তখন মার্কিন সমাজ নারীদেরকে সেনাবাহিনীতে দেখতে প্রস্তুত ছিলোনা।[৪] কোনো নারী সেনার লিঙ্গ সেনা কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা পড়লে তিনি চাকরিচ্যুত হতেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধতেও নারীরা যোগদানের সুযোগ পাননি, এক্ষেত্রেও তারা পুরুষ সেজে যুদ্ধ করতেন।[৫]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে মার্কিন সেনাবাহিনী 'আর্মি নার্স কোর' নামের একটি নিয়মিত নারী সেনা শাখা গড়ে তোলে ১৯০১ সালে। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত এই শাখাটি শুধুমাত্র নারী সেনা দ্বারা গঠিত ছিলো; এই বছর থেকে আবার এই শাখায় পুরুষরাও সেনা নার্স হিসেবে যোগদানের সুযোগ পেয়ে যান।[৬][৭]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিলো মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য একটি পরীক্ষা যে নারীরা যুদ্ধে কি রকম ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং তারা যুদ্ধে বীরত্ব দেখাতে পারে কিনা; ১৯০১ সালে তৈরি করা 'আর্মি নার্স কোর'-এর সদস্যরা যুদ্ধে নেমে পড়ে, তারা মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে চড়ে সারা বিশ্ব ঘোরে এবং যুদ্ধে ভালো ভূমিকা দেখায় এবং সমর-পদক অর্জন করতে সক্ষম হয়।

মোট ২১,০০০ নারী নার্স সেনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।[৮] যুদ্ধচলাকালীন ১৯১৭ সালের ২০ মে এডিথ আইরেস এবং হেলেন উড নৌবাহিনীর রণতরীতে শত্রুবাহিনীর গোলার আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন এবং মার্কিন সেনা কর্তৃপক্ষ এই দুই নার্স সেনাকে মরণোত্তর পদকে ভূষিত করে তাদের সেনাবাহিনীর কর্মদক্ষতার জন্য; প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত হওয়া এই দুই নারীই ছিলেন প্রথম যারা শত্রুর হাতে নিহত হন।[৯]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নারীদের জন্য মহিলা সৈন্য শাখা নামের একটি শাখা গড়ে তোলা হয়। মার্কিন সেনা কর্তৃপক্ষ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নারী সেনা নার্সদের দক্ষতা দেখে এই শাখা গড়ে তুলেছিলো এবং নারীরা এবার অনেক ধরনের কাজের সুযোগ পান যেটা তারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পাননি; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১,৫০,০০০-এর মতো নারী সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।[৬][১০]

মহিলা সৈনিক শাখার সদস্যরা যারা ছিলো তারা ছিলো করণিক, চিকিৎসা সহকারী, ট্যাংক মেরামতকারী, গাড়ি মেরামতকারী, সেনা বিমান শাখায় বিমান মেরামতকারী, পুরুষ সৈন্য বহনকারী ট্রাক চালক এবং পুরুষ কর্মকর্তাদের গাড়ি চালক। এই শাখার কর্মকর্তারাও সকলেই নারী ছিলেন তবে এই শাখার সৈনিক এবং কর্মকর্তাদের পদবী, সম্মান এবং বেতন পুরুষদের সমকক্ষ ছিলো।[১১]

কোরীয় যুদ্ধ

কোরীয় যুদ্ধে মার্কিন নারীদের শুধু নার্স হিসেবে নেওয়া হয়েছিলো।[৬] এবং অতি অল্প কিছু মহিলা সৈন্য শাখার সদস্য এই যুদ্ধে যোগ দিতে পেরেছিলেন।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ

ভিয়েতনাম যুদ্ধ যেটি ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত হয়েছিলো ছিলো একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং মার্কিন নারী সৈন্যরা এখানেও নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তবে শুধু নার্স হিসেবে।[১২] যদিও মহিলা সৈন্য শাখার অল্প কিছু সদস্যদেরকে পরে নেওয়া হয়েছিলো।

১৯৭০-এর দশক থেকে মার্কিন সেনাবাহিনীতে নারী

১৯৭০-এর দশকে মার্কিন নারীরা সেনাবাহিনীতে আগের তুলনায় আরো বেশি করে যোগদানের সুযোগ পান এবং আগে যেখানে নারীদের কমিশন নিয়মিত ছিলোনা সেখানে তারা নিয়মিত কমিশন পাওয়া শুরু করেন; ১৯৭৬ সালে মার্কিন সেনা একাডেমীতে সর্বপ্রথম ১১৯ জন নারী ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন এবং এরা কমিশন পান ১৯৮০ সালে। নারীরা এই ১৯৭০-এর দশকে আগেকার যুগের ঘাঘরার পরিবর্তে পুরুষদের মতো প্যান্ট-শার্ট পরার নির্দেশ পান মার্কিন সেনা কর্তৃপক্ষ থেকে (যদিও ঘাঘরা পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছিলো না) এবং নারীদের শারীরিক প্রশিক্ষণ মান পুরুষদের মতো এবং থাকার ব্যারাক পুরুষদের সঙ্গে মিলিত করে দেওয়া হয় এই দশকেই যেটা আগে ছিলোনা। ১৯৭৮ সালে মহিলা সৈন্য শাখা অর্থাৎ মার্কিন নারীদের সেনাবাহিনীর পৃথক শাখা ভেঙে দিয়ে সকল নারী সৈন্যকে পুরুষদের সেনা ইউনিটগুলোতে মিশ্রিত করে দেওয়া হয়।[১৩][১৪]

১৯৯০-'৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধ (মধ্যপ্রাচ্য) তেও নারীরা অংশ নেন এবং ইরাকি সেনাদের দ্বারা ধর্ষিত এবং যুদ্ধবন্দী হন; এক্ষেত্রে দু'জন উল্লেখযোগ্য নারী সেনা সদস্য হচ্ছেন প্রাইভেট মেলিসা রেথবান নেলি এবং মেজর রণ্ডা করনাম। ইরাকি কর্তৃপক্ষ পরে এদেরকে ছেড়ে দেয় এবং এরা মার্কিন দেশে গমন করার পর সেনা পদক প্রাপ্ত হন।[১৫][১৬][১৭]

মার্কিন সেনাবাহিনীর পুরুষ সৈন্যরা নারী সৈন্যদের যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ করলে সাজা প্রাপ্তি সহ সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন, এরকম উদাহরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকেই চলে আসছে।

ইরাক যুদ্ধে (২০০৩) লেই এন হেস্টার নামের একজন নারী সেনা 'সিলভার স্টার' পদক প্রাপ্ত হন তার অসীম সাহসিকতা এবং বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য।[১৮]

২০১৭ সালে সর্বপ্রথম ১৮ জন নারী সৈনিক পুরুষদের সঙ্গে পদাতিক যুদ্ধ অনুশীলনে পুরুষদের চেয়ে ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হন।[১৯]

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

  1. Asfar, Roy (নভেম্বর ২৪, ২০০৮)। "Ann Dunwoody:First Female 4-Star General|Top Vets"। Veterans Advantage। জুলাই ৫, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৬-২৯ 
  2. "U.S. Names First Female 4-Star General"CBS News। নভেম্বর ১৪, ২০০৮। মে ১৬, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৭, ২০২১ 
  3. "Women in the U.S. Army | The United States Army"। Army.mil। ২০১২-১০-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-০৯ 
  4. "Women's Service with the Revolutionary Army : The Colonial Williamsburg Official History & Citizenship Site"। History.org। ২০০৯-১১-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-০৯ 
  5. "Female Soldiers in the Civil War"। Civilwar.org। ২০১৫-০৮-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-০৯ 
  6. "Highlights in the History of Military Women"Women In Military Service For America Memorial। জুন ২২, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২২, ২০১৩ 
  7. O'Lynn, Chad E.; Tranbarger, Russell E., সম্পাদকগণ (২০০৬)। Men in Nursing: History, Challenges, and Opportunities। New York: Springer Publishing। পৃষ্ঠা 88। আইএসবিএন 9780826103499। সংগ্রহের তারিখ জুন ২২, ২০১৩ 
  8. "Women in the Army"। Army.mil। ১৯১৭-০৬-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-০৯ 
  9. "Women in Military Service for America Memorial"Women In Military Service For America Memorial Foundation। ২০০৬-০৫-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৩-১১ 
  10. Cowan, Ruth (ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৪৩)। "Waac Skipper In North Africa Can Make A Very Nice Lemon Pie"The Palm Beach Post। AP। পৃষ্ঠা 6। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৯ 
  11. "150 Hear Capt. Marquis Tell of Overseas Service"The Rutland Daily Herald। ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯৪৪। পৃষ্ঠা 12। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৯ 
  12. "Women In Military Service For America Memorial"। Womensmemorial.org। ২০১৫-০৯-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-১২ 
  13. "Highlights in the History of Military Women"। Women in Military Service for America Memorial Foundation। ২০১৩-০৪-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৮ 
  14. "Frontiero v. Richardson | The Oyez Project at IIT Chicago-Kent College of Law"। Oyez.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-০৯ 
  15. Healy, Melissa (১৯৯১-০৮-০২)। "Pentagon Details Abuse of American POWs in Iraq : Gulf War: Broken bones, torture, sexual threats are reported. It could spur further calls for war crimes trial. - latimes"। Articles.latimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-১০ 
  16. "bio, Rathbun-Nealy, Melissa"। Pownetwork.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-১০ 
  17. "A Woman's Burden - TIME"। Content.time.com। ২০০৩-০৩-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-১০ 
  18. Sergeant Sara Wood। "Female Soldier receives Silver Star in Iraq"Department of Defense। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০১১ 
  19. Associated, The। "18 women graduate from the Army's first gender-integrated infantry basic training"। Armytimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-২০ 

বহিঃসংযোগ