মামাবাবু
মামাবাবু বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম প্রধান কাল্পনিক চরিত্র। এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র। মামাবাবুর প্রথম উপন্যাস কুহকের দেশে প্রকাশিত হয় বিগত শতকের তিরিশের দশকের প্রথমদিকে, মাসিক মৌচাক পত্রিকায়।[১] মামাবাবুর দুঃসাহসিক অভিযানগুলিতে আছে রহস্য, রোমাঞ্চ এবং বিজ্ঞানের ছোঁয়া।
মামাবাবু | |
---|---|
প্রথম উপস্থিতি | কুহকের দেশে |
শেষ উপস্থিতি | পরচুলা সাহেব ও মামাবাবু |
স্রষ্টা | প্রেমেন্দ্র মিত্র |
তথ্য | |
লিঙ্গ | পুরুষ |
পদবি | মামাবাবু |
পেশা | মাইনিং প্রসপেক্টর |
পরিবার | মিঃ সেন/গণপতি হাজরা (ভাগ্নে) |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
বাসস্থান | মিচিন,বর্মা কলকাতা |
চরিত্র
সম্পাদনামামাবাবুর কাহিনীগুলি থেকে তার আসল নাম সঠিকভাবে জানা যায় না। বিভিন্ন রচনায় তাকে কখনও মিঃ রায় আবার কখনও মিঃ সেন বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আর কুহকের দেশে উপন্যাসের একদম শুরুতেই লেখক মামাবাবুর সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা হল:[১]"মামাবাবু দেখতে নাদুস-নুদুস নিরীহ চেহারার লোক। কথায় বার্তায়, আচারে ব্যবহারে, কোথাও তাঁর এমন কোনো লক্ষণ নেই যার দ্বারা মনে হতে পারে যে, তিনি অসাধারণ কিছু করতে পারেন। চেহারা ও প্রকৃতির দিক দিয়ে মনে হয় যে, সাধারণ কলেজের প্রফেসর বা অফিসের বড়বাবু হলেই বুঝি তাঁকে মানাত। ছেলেবেলায় তাঁর সম্বন্ধে সেই রকম আশাই সবাই করেছিল। পড়াশোনায় তিনি ভালো। সবাই ভেবেছিল বড় হয়ে একটা আরামের কাজই তিনি বেছে নেবেন। কিন্তু তার বদলে সবাইকে অবাক করে মামাবাবু গেলেন মাইনিং পড়তে। সসম্মানে মাইনিং পাশ করে এসে দেশে চাকরী পাবার সুবিধে থাকতেও তিনি গেলেন সুদূর বর্মার জঙ্গলে প্রসপেক্টর হয়ে। তাঁর চেহারা বিলেত ঘুরে এসেও তেমনি আয়েসী নাদুস-নুদুস ভদ্রলোকের মতো ছিল তখন।" দৈহিক বিশেষত্ব না থাকা সত্ত্বেও ক্ষুরধার বুদ্ধি, সকল বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্য আর বরফশীতল মস্তিষ্কের জোরে তিনি নানান রহস্যের সমাধান করে ফেলেন অতি সহজেই। আরও জানা যায়, মামাবাবুর বিভিন্ন অদ্ভুত বিষয়ে আগ্রহের কথাও, মিচিনায় বা কলকাতায় তার বাড়ি জাদুঘরের সঙ্গে তুলনীয়। আর-পাঁচটা বাঙালীর মতোই তিনিও খাদ্যরসিক এবং নিদ্রাবিলাসী। মামাবাবু অবিবাহিত। তার অনুগত শাগরেদের নাম মংপো।
মামাবাবু তার প্রথম অভিযান শুরু করেন কুহকের দেশে নামক একটি উপন্যাসে। উপন্যাসটি ছাপা হয়েছিল বিগত শতকের তিরিশের দশকের প্রথমদিকে, মৌচাক পত্রিকায়। যদিও মামাবাবু তখনও পাঠকমনে ততটা সাড়া ফেলতে পারেননি। সেটা পেরেছিলেন তার দ্বিতীয় অভিযানের মাধ্যমে। ১৯৪৮ সালে সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় মামাবাবুর দ্বিতীয় উপন্যাস – ড্র্যাগনের নিঃশ্বাস। বইটির প্রচ্ছদ আঁকেন সত্যজিৎ রায়। এই বইটি বেরোবার পর পাঠকদের মনে নতুনভাবে দাগ কাটে 'মামাবাবু সিরিজ'। কল্পবিজ্ঞান জায়গা করে নেয় বাঙালি পাঠকদের মনে। যদিও এরপর অনেকদিন মামাবাবুকে নিয়ে নতুন কিছু লিখলেন না লেখক। এরই মাঝে প্রায় পনেরো বছর পর শ্রীপ্রকাশ ভবন থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল মামাবাবুর প্রথম উপন্যাস কুহকের দেশে। তখন সমগ্র বিশ্বের মতো বাঙালি পাঠকদের মনেও কোথাও যেন কল্পবিজ্ঞান কাহিনির প্রবল চাহিদা, কিন্তু জোগান খুবই অল্প। তাই লেখক আবার কলম তুললেন।
ষাটের দশকে আলফা-বিটা থেকে প্রকাশ পেল মামাবাবুর তিনটি নতুন কাহিনী – মামাবাবুর প্রতিদান, আবার সেই মেয়েটি এবং অতলের গুপ্তধন। অনেকদিন পর মামাবাবুকে ফেরালেন লেখক। তাই সেইমতো তিনটি কাহিনী সমন্বিত গ্রন্থের নাম রাখা হল মামাবাবু ফিরলেন।
এরপর ১৯৭২ সালে শৈব্যা পুস্তকালয় থেকে বের হয় খুনে পাহাড়, যা পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তন করে হয় পাহাড়ের নাম করালী। লেখকের মৃত্যুর পরে ১৯৮৯ সালে মুক্তপত্র পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত ঘনাদা ও দুই দোসর মামাবাবু ও পরাশর-এ প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় মামাবাবুর শেষ কাহিনী পরচুলা সাহেব ও মামাবাবু। ১৯৮৩ সালে মামাবাবুর সমগ্র লেখাগুলোকে একত্র করে বিদ্যোদয় লাইব্রেরি থেকে প্রকাশ পায় প্রথম মামাবাবু সমগ্র, যা পাঠকদের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলে দেয়। তাতে রচনাকাল অনুসারে এবং বিগত ভুলত্রুটিগুলোকে দূর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে মামাবাবুকে অনুরাগীদের সামনে উপস্থিত করা হয়। ২০০৭ সালে পরচুলা সাহেব ও মামাবাবু রচনাটি এই বইটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০০৮ সালে সুরজিৎ দাশগুপ্তের সম্পাদনায় দে’জ পাবলিশিং থেকে মামাবাবু সমগ্র বইটি প্রকাশ পায়।
কাহিনীসমূহ
সম্পাদনামামাবাবু সিরিজের উপন্যাসগুলি হল:[১]
- কুহকের দেশে
- ড্র্যাগনের নিঃশ্বাস
- মামাবাবুর প্রতিদান
- আবার সেই মেয়েটি
- অতলের গুপ্তধন
- পাহাড়ের নাম করালী
- পরচুলা সাহেব ও মামাবাবু