মাধবিয়া কৃষ্ণান

ভারতীয় আলোকচিত্র শিল্পী

মাধবিয়া কৃষ্ণান (৩০ জুন ১৯১২ - ১৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬), যিনি এম. কৃষ্ণান নামে সুপরিচিত, একজন অগ্রগামী ভারতীয় বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার, লেখক এবং প্রকৃতিবিদ ছিলেন।

জীবনের প্রথমার্ধ সম্পাদনা

এম. কৃষ্ণান ১৯১২ সালের ৩০ জুন তিরুনেলভেলিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তার বাবা এ. মাধবিয়া ছিলেন একজন তামিল লেখক এবং সংস্কারক যিনি মাদ্রাজ সরকারের লবণ ও আবকারি বিভাগে কাজ করতেন।[১] তাঁর লেখার মধ্যে রয়েছে ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত পদ্মাবতী চরিতারম এবং ১৯১৬ সালে প্রকাশিত একটি ইংরেজি উপন্যাস থিলাই গোবিন্দন[১] যেগুলি প্রথম দিকের বাস্তববাদী তামিল উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম। তিনি স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন এবং একটি ছাপাখানা শুরু করেন যেখান থেকে তিনি পঞ্চামৃতম নামে একটি তামিল পত্রিকা প্রকাশ করতেন।[১] ১৯২৫ সালে মাধবিয়া কৃষ্ণানের পিতা মারা যান এবং তার বড় বোন লক্ষ্মী তার যত্ন নেন।[১]

কৃষ্ণান হিন্দু হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন এবং সাহিত্য, শিল্প ও প্রকৃতির প্রতি তার আগ্রহ গড়ে ওঠে। তার পরিবার ময়িলাপুরে বাস করত। সেখানকার ঝোপঝাড়ে আচ্ছাদিত গ্রাম্য পরিবেশের মধ্যে পাখির জীবন, শিয়াল, কালো হরিণ ইত্যাদি অবলোকন করে তিনি বড় হয়ে ওঠেন । কৃষ্ণানের একটি পোষা বেজি ছিল। ১৯২৭ সালে কৃষ্ণান প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগ দেন এবং ১৯৩১ সালে বি এ পাস করেন। তিনি অধ্যাপক পিএফ ফাইসন-এর ছাত্র ছিলেন এবং উদ্ভিদবিদ্যার প্রতি তার গভীর আগ্রহ গড়ে ওঠে।[২] নীলগিরি এবং কোডাইকানাল পাহাড়ে গবেষণামূলক ভ্রমণের সময় তিনি ফাইসনের সাথে ছিলেন। তিনি অধ্যাপক ফাইসনের স্ত্রীর কাছ থেকে জলরঙে ছবি আঁকার কৌশল শিখেছিলেন। কৃষ্ণান তার লেখাপড়ায় ভালো ফল করেননি এবং চাকরি পাওয়া তার কাছে সহজ ছিল না। পুসার ভারতীয় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্যার টি বিজয়রাঘবাচার্যের মেয়ের সাথে তার বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিল। পরামর্শের জন্য তার ভাই কৃষ্ণানকে নিজের শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান। কৃষ্ণানকে বলা হয়েছিল যে তিনি পড়াশোনায় ভাল ফল করতে না পারলে তাকে সাহায্য করা যাবে না।

রচনা সম্পাদনা

কিছু সময়ের জন্য তিনি ছোট পত্রপত্রিকায় লিখে এবং নিজের আঁকা কিছু ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকটি তামিল পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন।[১] [৩] ১৯৪২ সালে, কর্ণাটকের বেলারির কাছে সান্দুরের মহারাজা তাকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন।[১] কৃষ্ণান এই চাকরি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি স্কুল শিক্ষক, বিচারক, প্রচার কর্মকর্তা এবং মহারাজার রাজনৈতিক সচিব ইত্যাদি পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি নিজের অনেকটা সময় প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন ও প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি ভেড়া প্রতিপালনেও উদ্যোগী হয়েছিলেন। আগে পায়রার সাহায্যে চিঠি আদানপ্রদানের কাজ করা হত এবং সেজন্য তিনি কবুতর প্রজনন করেছিলেন। বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফির উপর তার প্রবন্ধগুলি দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়ায় ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফারস ডায়েরি নামে একটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি দ্য হিন্দু পত্রিকাতেও লিখেছিলেন।[১] সানডে স্টেটসম্যানে তিনি স্বনামে কিছু লেখার কাজ করেছিলেন।

১৯৪৯ সালে, সান্দুর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে একীভূত হয়। ১৯৫০ সাল থেকে তিনি কলকাতার স্টেটসম্যান পত্রিকায় 'কান্ট্রি নোটবুক' নামে একটি দ্বি-সাপ্তাহিক কলাম লেখা শুরু করেন। এই কলামে তিনি প্রাকৃতিক ইতিহাসের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন। এই কলামটি ৪৬ বছর অব্যাহত ছিল। ১৯৫০ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ পর্যন্ত, যেদিন তিনি মারা যান, ততোদিন তার এই কলামে তিনি নিজের লেখা প্রকাশ করেছিলেন।

প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পাদনা

কৃষ্ণান একজন পরিবেশগত দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি স্বদেশে বহিরাগত গাছের প্রজননের বিরোধিতা করেছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে তিনি বক্তৃতা দিতে যান। সেসময় সেই অঞ্চলে তাবেবুইয়া বা পিংক ট্রাম্পেট ফুলের সমস্ত গাছগুলি ফুলে ভরে উঠেছিল। এই ফুল সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি মতবাদ দেন যে ওই সমস্ত বিদেশী গাছ উপড়ে ফেলা উচিত এবং দেশের নিজস্ব কিছু গাছ রোপণ করা উচিত।

কৃষ্ণান -এর প্রচেষ্টায় বেদান্থঙ্গলকে পাখির অভয়ারণ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তিনি জানতেন যে সমকালীন বেশিরভাগ সংরক্ষণবাদীদের থেকে তিনি আলাদা গোত্রের।

উল্লেখ করা হয় যে ১৯৭২ সালে, কৃষ্ণান এই সম্ভাবনার কথা তুলেছিলেন যে মানুষের দ্বারা বোধগম্য নয় এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করে হাতিরা পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে। এই ইনফ্রাসাউন্ড কমিউনিকেশনের ভাবনা ক্যাথরিন পেনের পরবর্তী গবেষণার মাধ্যমে সুনিশ্চিত হয়েছে।[৪]

সম্মান সম্পাদনা

১৯৬০ সালে ভারত সরকার কৃষ্ণান-কে তাঁর কাজের জন্য পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেছিল।[৫] ১৯৬৮ সালে তাকে মর্যাদাপূর্ণ জওহরলাল নেহেরু ফেলোশিপ দেওয়া হয়।[৬] ২০১২ সালে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী, মাদ্রাজ ন্যাচারালিস্ট সোসাইটি, প্রকৃতি ফাউন্ডেশন এবং আইআইটি ওয়াইল্ডলাইফ ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে স্মরণ করা হয়।[৭] মাদ্রাজ ন্যাচারালিস্টস সোসাইটি ১৯৯০-এর দশকে তাদের পত্রিকায় কৃষ্ণান-এর বেশিরভাগ লেখা প্রকাশ করেছিল। তাদের পক্ষ থেকে প্রতি বছর "এম. কৃষ্ণান মেমোরিয়াল নেচার রাইটিং অ্যাওয়ার্ড" প্রদান করা হয়।[৮]

মন্তব্য সম্পাদনা

  1. Baskaran, S. Theodore। "Krishnan and his Tamil writings" 
  2. "24 Facts About Madhaviah Krishnan"FactSnippet। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৩ 
  3. Baskaran, S. T. (ed.) (2002) Mazhiakalamum Kuyilosaiyum. Ma.KrishnanIyarkaiyiyal katturaikal. Kalachuvadu Pathipagam.
  4. Payne, Katherine (1999) Silent Thunder: In the Presence of Elephants. Penguin. আইএসবিএন ০-১৪-০২৮৫৯৬-২
  5. "National Portal of India" 
  6. "Official list of Jawaharlal Nehru Fellows (1969-present)"Jawaharlal Nehru Memorial Fund 
  7. Sathasivam, Kumaran। "The national treasure that was M. Krishnan" 
  8. "Essay contest on wildlife"The Hindu। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩।