অবশ্রাব্য শব্দ
অবশ্রাব্য শব্দ মানুষের নিম্ন শ্রুতিসীমার (সাধারণত ২০ হার্জ) চেয়ে কম কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গগুকে অবশ্রাব্য শব্দ বলে অভিহিত করা হয়। এটিকে কখনও কখনও শ্রুতিপূর্ব শব্দ, অতিনিম্ন কম্পাঙ্কের শব্দ, ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। ইংরেজিতে একে "ইনফ্রাসাউন্ড" (Infrasound) বলে। শব্দের কম্পাঙ্ক কমার সাথে সাথে মানুষের শ্রবণাঙ্গ ক্রমশ কম সংবেদনশীল হতে থাকে, ফলে মানুষের পক্ষে অবশ্রাব্য শব্দ বুঝতে পারার জন্য শব্দের চাপকে যথেষ্ট পরিমাণে উচ্চ হতে হয়। কান অবশ্রাব্য শব্দ সংবেদনের প্রাথমিক অঙ্গ, তবে উচ্চতর তীব্রতায় শরীরের বিভিন্ন অংশে অবশ্রাব্য কম্পন অনুভব করা সম্ভব।
বিজ্ঞানের যে শাখায় অবশ্রাব্য শব্দ নিয়ে গবেষণা করা হয়, তাকে অবশ্রাব্য শব্দবিজ্ঞান (Infrasonics) বলে। এতে ২০ হার্জ থেকে ০.১ হার্জ কম্পাঙ্ক পর্যন্ত (কদাচিৎ ০.০১ হার্জ ) শব্দ নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। এই কম্পাঙ্ক-সীমার মধ্যে অবস্থিত শব্দ দিয়ে বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেন, ভূপৃষ্ঠের নিচে অবস্থিত শিলা ও খনিজ তেলের মজুদের মানচিত্র অঙ্কন করেন, এমনকি হৃৎপিণ্ডের কর্মপদ্ধতি অধ্যয়ন করেন (ক্ষেপণ-হৃৎচিত্রলিখন)।
ইতিহাস ও গবেষণাসম্পাদনা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রবাহিনী আর্টিলারি বা কামান শনাক্ত করতে প্রথম অবশ্রাব্য শব্দ ব্যবহার করেছিল।[১] অবশ্রাব্য শব্দের গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন ফরাসি বিজ্ঞানী ভ্লাদিমির গ্যাভ্রিউ।[২] ১৯৬০ এর দশকে তার গবেষণাগারে প্রথমবারের মতো অবশ্রাব্য শব্দতরঙ্গের প্রতি তার আগ্রহ জাগে, যখন তিনি এবং তার পরীক্ষাগার সহায়করা পরীক্ষাগারের সরঞ্জামগুলোকে কাঁপতে এবং কানের অংশে ব্যথা পাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, তবে তার মাইক্রোফোনে এই শ্রবণযোগ্য শব্দটি শনাক্ত করতে পারেনি। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এটি ল্যাবরেটরির বিশাল ফ্যান এবং ডাক্ট সিস্টেমের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল এবং শীঘ্রই পরীক্ষাগারে এর পরীক্ষার কাজ শুরু করেন। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন অবশ্রাব্য। তার করা পরীক্ষণের মধ্যে ছিল একটি অবশ্রাব্য শিস-দেওয়া বাঁশি (হুইসেল) ও একটি বড় আকারের অর্গান নল নিয়ে অবশ্রাব্য শব্দ তৈরি করা।[৩][৪][৫]
লোকসংস্কৃতিতে অবশ্রাব্য শব্দসম্পাদনা
মানুষের শ্রবণক্ষমতা ২০ হার্জ থেকে ২০,০০০ হার্জ পর্যন্ত। ২০ হার্জের নিচের অর্থাৎ অবশ্রাব্য কোন শব্দ আমরা শুনতে পাই না। শুনতে না পেলেও আমাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয় এবং মস্তিষ্ক ঠিকই এর কম্পন অনুভব করে। এই অবশ্রাব্য শব্দের প্রভাবেই অস্বস্তি লাগা, চোখের সামনে ছায়া দেখা কিংবা বমির উদ্রেক হতে পারে। আর ভূতুড়ে পরিবেশে এই অস্বস্তি লাগা বা ছায়া দেখাই হঠাৎ তীব্র আতংকের কারণ হয়ে দাড়ায় যাকে প্রায়শই ভূত বলে অভিহিত করা হয়। অবশ্রাব্য শব্দ প্রাকৃতিকভাবেও উৎপন্ন হতে পারে ঝড়ো আবহাওয়াতে, বজ্রপাতের সময়, তীব্র বাতাসে; যে সময়গুলোতে সাধারণত ভূত দেখার কথা শোনা যায়।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ Wired Article, The Sound of Silence by John Geirland. 2006.
- ↑ "Gavreau", in Lost Science ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে by Gerry Vassilatos. Signals, 1999. আইএসবিএন ০-৯৩২৮১৩-৭৫-৫
- ↑ Gavreau V., Infra Sons: Générateurs, Détecteurs, Propriétés physiques, Effets biologiques, in: Acustica, Vel .17, No. 1 (1966), p.1–10
- ↑ Gavreau V., infrasound, in: Science journal 4(1) 1968, S.33
- ↑ Gavreau V., "Sons graves intenses et infrasons" in: Scientific Progress – la Nature (Sept. 1968) p. 336–344