কোড়াইকানাল

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ডিন্ডিগুল জেলার একটি পাহাড়ী শহর

কোড়াইকানাল হল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ডিন্ডিগুল জেলার একটি পাহাড়ী শহর।[]তামিল ভাষায় এই নামটির অর্থ "বনের উপহার"।[] কোড়াইকানালকে "পার্বত্য শহরের রাজকন্যা" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি বহুদিনের পুরোনো স্বাস্থ্যকর স্থান এবং জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

কোড়াইকানাল
কোড়াইকানালএর দৃশ্য, ২০০৮
কোড়াইকানালএর দৃশ্য, ২০০৮
ডাকনাম: পার্বত্য শহরের রাজকন্যা
কোড়াইকানাল তামিলনাড়ু-এ অবস্থিত
কোড়াইকানাল
কোড়াইকানাল
ভারতের তামিলনাড়ুতে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ১০°১৪′ উত্তর ৭৭°২৯′ পূর্ব / ১০.২৩° উত্তর ৭৭.৪৮° পূর্ব / 10.23; 77.48
দেশভারত
রাজ্যতামিলনাড়ু
অঞ্চলকঙ্গু নাড়ু
জেলাডিন্ডিগুল
স্থাপিত১৮৪৫[]
আয়তন
 • মোট২১.৪৫ বর্গকিমি (৮.২৮ বর্গমাইল)
উচ্চতা২,১৩৩ মিটার (৬,৯৯৮ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৩৬,৫০১
 • জনঘনত্ব১,১০০/বর্গকিমি (৩,০০০/বর্গমাইল)
ভাষা
 • সরকারিতামিল
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০)
পিন৬২৪১০১
টেলিফোন কোড০৪৫৪২
যানবাহন নিবন্ধনটিএন 57
নিকটস্থ শহরপালানি
যৌন অনুপাতপুরুষ ৫১% মহিলা ৪৯% /
সাক্ষরতা৮৯.৫০% (২০১১)
বৃষ্টিপাত১,৬৫০ মিলিমিটার (৬৫ ইঞ্চি)
গ্রীষ্মের গড় তাপমাত্রা১৯.৮ °সে (৬৭.৬ °ফা)
শীতের গড় তাপমাত্রা৮.৩ °সে (৪৬.৯ °ফা)
ওয়েবসাইটwww.municipality.tn.gov.in/kodaikanal/index.htm
Website: Kodaikanal Municipality
কুয়াশায় ঢাকা কোড়াইকানাল শহর
কোড়াইকানাল লেকে নৌকাবিহার

১৮৪৫ সালে কোড়াইকানাল শহরটি স্থাপিত হয়েছিল, মূলত সমভূমির উচ্চ তাপমাত্রা এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ থেকে বাঁচার জন্য।[] এখানকার অর্থনীতির বেশিরভাগ অংশ পর্যটনের উপর ভিত্তি করে আতিথেয়তা শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। ২০১১ সালের হিসাবে, শহরটির জনসংখ্যা ৩৬,৫০১ জন।

ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

কে প্রথমে এই নামটি ব্যবহার করেছিল বা তারা এর অর্থ কী বোঝাতে চেয়েছিল তা এখনও জানা যায়নি। কোড়াইকানাল শব্দটি কোড়াই এবং কানাল এই দুটি শব্দের সংমিশ্রণ। তামিল ভাষায় কোড়াইকানাল নামের কমপক্ষে চারটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে। কোড়াইকানালের প্রথম ভাগ লম্বা তামিল 'ও' দিয়ে উচ্চারণ করে, অর্থ বোঝায় "গ্রীষ্ম", শেষ দুটি ভাগ কানাল এর অর্থ "দেখা", দুটি মিলিয়ে কোড়াইকানাল এর অর্থ বোঝায় "গ্রীষ্মে দেখার জায়গা"। কোডাইকানাল হল গ্রীষ্মের আশ্রয়, এবং মিশনারিরা প্রথম, সমভূমির মশা ও দাবদাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করেছিল।

তামিল ভাষায় কানাল এর অর্থ ঘন বা বদ্ধ বন হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, কোডাই এর কমপক্ষে চারটি অর্থ হতে পারে। দীর্ঘ তামিল 'ও' এবং সংক্ষিপ্ত 'ই' দিয়ে কোড়াই উচ্চারণ করলে, কো-ড়াই মানে "শেষ"। কোড়াইকানালের অর্থ "বনের শেষ" হতে পারে যা কাব্যিক এবং ভৌগোলিক অনুভূতি তৈরি করে — কোড়াইকানাল শহরটি পালানি পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত এবং চারপাশে ঘন বন দ্বারা সুরক্ষিত।[]

সংক্ষিপ্ত তামিল 'ও' দিয়ে কোড়াই উচ্চারণ করে (কোড়ির মতো), এর অর্থ "লতা"। কোড়াইকানালের অর্থ "লতার বন" বা আঙুরের বন হতে পারে। ১৮৮৫ সালে পাশ্চাত্য আবাসের সময় ইংরেজি ভাষায় দেওয়া নামের অর্থ "লতার বন" বলে মনে করা হয়[] এবং এই ব্যাখ্যাটিই এখনও গ্রহণ করা হয়।[]

একটি সংক্ষিপ্ত তামিল 'ও' এবং দীর্ঘ 'ই' দিয়ে কোড়াই উচ্চারণ করে, এর অর্থ হতে পারে "উপহার", অর্থাৎ "কোড়াইকানাল" এর অর্থ "বনের উপহার"। সংক্ষিপ্ত তামিল 'ও' এবং একটি দীর্ঘ 'আ' দিয়ে কোড়াই উচ্চারণ করে, তামিল ভাষায় এর অর্থ ছাতা, যেখানে কোড়াইকানাল একটি রক্ষাকারী ছাতার মতো বনভূমি।[]

লতা বা আঙুরের জন্য আর একটি তামিল শব্দ হল ভালি, বেদদাস পার্বত্য উপজাতির প্রধানের মধু সংগ্রহকারী কন্যা। প্রধান এবং তার স্ত্রী একটি মেয়ের জন্য পাহাড়ের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিল। একটি শিকার অভিযানের সময়, প্রধান একটি নবজাতক শিশু কন্যাকে দেখতে পায় এবং এইভাবে তাদের প্রার্থনা পূরণ হয়েছিল। তাকে লতা গুল্মের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল বলে, তারা তার নাম রাখল ভালি এবং সে কুরিঞ্জি উপজাতির রাজকন্যা হিসাবে বেড়ে ওঠে। সে হয় কার্তিক দেবতার স্ত্রী।[] সঙ্গম সাহিত্যে কার্তিকের কল্পনাসমৃদ্ধ ঐতিহ্যগুলি এভাবেই কোড়াইকানাল নামের সাথে জড়িত।

ইতিহাস

সম্পাদনা

কোড়াইকানালের আদি বাসিন্দারা ছিল পালাইয়ার উপজাতির মানুষ। কোড়াইকানাল এবং পালানি পাহাড়ের সর্বাগ্রে সুনির্দিষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় প্রথম যুগের তামিল ভাষার সঙ্গম সাহিত্যে[] ১৮৪৫ সালে আমেরিকান খ্রিস্টান মিশনারি এবং ব্রিটিশ আমলা দ্বারা আধুনিক কোড়াইকানাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সমভূমির উচ্চ তাপমাত্রা এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ থেকে বাঁচার জন্য এই অঞ্চলের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।[] বিংশ শতাব্দীতে কয়েকজন অভিজাত ভারতীয় এই মোহময়ী পার্বত্য শহরের মূল্য বুঝতে পেরে এখানে এসে থাকতে শুরু করেছিলেন।[]

ইউনিলিভারের ভারতীয় সহায়ক সংস্থা হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের বিস্তৃত পারদ দূষণ প্রমাণের পরে শিল্প দূষণ সংক্রান্ত সমস্যা পর্যটনকে প্রভাবিত করেছে।[১০] আজ অবধি কোনও যথাযথ পরিষ্কারকরণের বন্দোবস্ত করা হয়নি।

জনসংখ্যার উপাত্ত

সম্পাদনা

[২০১১ সালে ভারতের জনগণনা অনুসারে কোড়াইকানালের জনসংখ্যা ছিল ৩৬,৫০১ জন। এখানকার যৌন অনুপাত এক হাজার পুরুষ পিছু ১,০০৪ জন মহিলা, জাতীয় গড় ৯২৯ জনের থেকে অনেক বেশি।[১১] মোট ৩,৮৯৩ জন ছয় বছরের কম বয়সী, ১,৯৪৫ জন পুরুষ এবং ১,৯৪৮ জন মহিলা। তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি যথাক্রমে জনসংখ্যার ১৯.৮৬% এবং ০.২৮%। শহরের গড় সাক্ষরতার হার ৭৯.৭৮%, যেখানে জাতীয় গড় ৭২.৯৯%।[১১] শহরে মোট ৯৪৪২ পরিবার ছিল। এখানে ১৬৩ জন কৃষক, ৭৪৪ জন প্রধান কৃষি শ্রমিক, কুটিরশিল্পী ১৩০ জন, অন্যান্য শ্রমিক ১২,১১৮ জন, ৯৪৮ জন প্রান্তিক শ্রমিক, ১০ জন প্রান্তিক কৃষক, ৫১ প্রান্তিক কৃষি শ্রমিক, কুটির শিল্পে ৩৪ জন প্রান্তিক শ্রমিক এবং ৮৫৩ জন অন্যান্য প্রান্তিক শ্রমিক নিয়ে মোট ১৪,১০৩ জন শ্রমিক ছিল। ।[১২] ২০১১ সালের ধর্ম শুমারি অনুসারে, কোড়াইকানালে ৪৮.৮৪% হিন্দু, ১২.০% মুসলমান, ৩৮.৬৯% খ্রিষ্টান, ০.০২% শিখ, ০.২২% বৌদ্ধ, ০.০৪% জৈন, ০.১৫% অন্যান্য ধর্ম অনুসরণ করছে এবং ০.০৪% কোনও ধর্ম অনুসরণ করছে না বা কোনও ধর্মীয় পছন্দের কথা জানায়নি।[১৩]

জলবায়ু

সম্পাদনা

কোড়াইকানালে বর্ষা-প্রভাবিত উপনিবেশীয় উচ্চভূমি জলবায়ু দেখা যায় (সিএফবি কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী সিডবলিউবি প্রবণতা রয়েছে)। শহরটির উচ্চতার কারণে সারা বছর এখানকার তাপমাত্রা শীতল থাকে।

কোড়াইকানাল-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ১৭.৫
(৬৩.৫)
১৮.৬
(৬৫.৫)
২০.১
(৬৮.২)
২০.৬
(৬৯.১)
২০.৯
(৬৯.৬)
১৮.৯
(৬৬.০)
১৭.৭
(৬৩.৯)
১৭.৯
(৬৪.২)
১৮.১
(৬৪.৬)
১৭.৪
(৬৩.৩)
১৬.৪
(৬১.৫)
১৬.৭
(৬২.১)
১৮.৪
(৬৫.১)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ৮.১
(৪৬.৬)
৮.৫
(৪৭.৩)
১০.১
(৫০.২)
১১.৭
(৫৩.১)
১২.৬
(৫৪.৭)
১২.০
(৫৩.৬)
১১.৪
(৫২.৫)
১১.৩
(৫২.৩)
১১.২
(৫২.২)
১০.৭
(৫১.৩)
৯.৭
(৪৯.৫)
৮.৭
(৪৭.৭)
১০.৫
(৫০.৯)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) ৫৯.১
(২.৩৩)
৩৪.৬
(১.৩৬)
৫২.৬
(২.০৭)
১৩৬.০
(৫.৩৫)
১৪৬.১
(৫.৭৫)
৯৭.৭
(৩.৮৫)
১২২.১
(৪.৮১)
১৫৩.১
(৬.০৩)
১৮৫.৬
(৭.৩১)
২৫৩.৯
(১০.০০)
২৩৫.০
(৯.২৫)
১৪১.৪
(৫.৫৭)
১,৬১৭.২
(৬৩.৬৮)
উৎস: World Meteorological Organization.[১৪]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Kodaikanal Department Of Municipal Administration And Water Supply, Historical Moments ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ মার্চ ২০০৯ তারিখে, 2005
  2. "Aringnar Anna Zoological Park"। Tamilnadu.com। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "About City"Government of Tamil Nadu। Kodaikanal Department Of Municipal Administration And Water Supply। ১৬ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০০৯ 
  4. Mitchell Nora, Indian Hill Station: Kodaikanal, University of Chicago, Dept. of Geography, ch 2, Rational for Tropical Hill Sations, pp13-15, 1972. Original from the University of California Digitized 28 Jan 2008
  5. The Cyclopaedia of India and of Eastern and Southern Asia by Edward Balfour, Published by B. Quaritch, 1885, Item notes: vol.2 H-NYSA, P583, Original from the University of Michigan, Digitized 29 Jan 2008
  6. Mitchell Nora, Indian Hill Station: Kodaikanal, University of Chicago, Dept. of Geography, place creepers, p. 98, 1972. Original from the University of California, digitized 28 Jan 2008
  7. Sangam landscape#Kurinji .E2.80.93 Mountainous Region
  8. Mitchell Nora, Indian Hill Station: Kodaikanal, University of Chicago, Dept. of Geography, Kodaikanal Sangam, p97, 1972 Original from the University of California Digitized 28 Jan 2008
  9. Tamil Nadu Tourism Development Corporation and Department of Tourism, Kodaikanal Princess of Hill Stations[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. "Unilever Environmental Pollution"Corporate Watch। ২০০৭-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০৮ 
  11. "Census Info 2011 Final population totals"। Office of The Registrar General and Census Commissioner, Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানু ২০১৪ 
  12. "Census Info 2011 Final population totals - Kodaikanal"। Office of The Registrar General and Census Commissioner, Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানু ২০১৪ 
  13. "Population By Religious Community - Tamil Nadu" (XLS)। Office of The Registrar General and Census Commissioner, Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  14. [১]

আরো পড়ুন

সম্পাদনা
  • Charlotte Chandler Wyckoff: Kodaikanal: 1845-1945. London Mission Press, Nagercoil, Travancore, Indien. 1945.
  • Nora Mitchell: The Indian Hill Station Kodaikanal. Research paper, University of Chicago, Department of Geography, No. 141. Chicago Ill., 1972.
  • Volker Winkler: Kodaikanal. Land of the Clouds. Hillsboro Press, Franklin (Tennessee) 1999.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Municipalities of Tamil Nadu টেমপ্লেট:Dindigul District