মহারানি চক্রবর্তী

ভারতীয় জীববিজ্ঞানী

মহারানি চক্রবর্তী (১৯৩৭ - ২০১৫) ছিলেন একজন ভারতীয় আণবিক জীববিজ্ঞানী। তিনি ১৯৮১ সালে এশিয়া এবং সুদূর প্রাচ্যে রিকম্বিন্যান্ট (পুনর্মিলন দ্বারা গঠিত একটি জীব, কোষ বা জেনেটিক উপাদান সম্পর্কিত) ডিএনএ কৌশলগুলির উপর প্রথম গবেষণাগার কার্যক্রমের আয়োজন করেছিলেন।[১]

মহারানি চক্রবর্তী
জন্ম১৯৩৭
মৃত্যু২০১৫ (বয়স ৭৭–৭৮)
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনপ্রেসিডেন্সি কলেজ (বিএসসি)
রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ (এমএসসি)
বোস ইনস্টিটিউট (পিএইচডি)
দাম্পত্য সঙ্গীদেবী প্রসাদ বর্মা

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মহারানি চক্রবর্তী ১৯৩৭ সালে বিহারের ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন।[২] মাতামহের প্রভাবের কারণে বিজ্ঞান এবং গণিতে তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। তিনি ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন এবং এরপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি করে স্নাতক হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাপূর্ণ রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ থেকে এমএসসি এবং কলকাতারই বোস ইনস্টিটিউট থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[১]

কর্মজীবন এবং গবেষণা সম্পাদনা

মহারানি চক্রবর্তী ডাঃ দেবী প্রসাদ বর্মার পরামর্শে কলকাতার বোস ইনস্টিটিউট থেকে মাইক্রোবিয়াল প্রোটিন সংশ্লেষণের উপর পিএইচডি করেছেন। তাঁর গবেষণা কাজের একটি অংশ হিসাবে, তিনি অ্যাজোটোব্যাক্টর ভিনেল্যাণ্ডি থেকে একটি কণা প্রস্তুতির সাথে কোষ মুক্ত প্রোটিন সংশ্লেষণ প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিনে বিএল হোরেকারের পরীক্ষাগারে উৎসেচক রসায়নে তাঁর পোস্ট-ডক্টরাল প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লং আইল্যাণ্ডের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি[৩] থেকে 'ব্যাকটেরিয়াল জেনেটিক্স এবং ভাইরাসবিদ্যা' বিষয়ে তাঁর বিশেষ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছিল। ১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের অ্যান আর্বারে হিউম্যান জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক মাইরন লেভিনের গবেষণাগারে কাজ করেছেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন যে সালমোনেলা টাইফিমুরিয়ামের ঝিল্লি (মেমব্রেন কমপ্লেক্স), যার অবক্ষেপন ধ্রুবক ১০০০এস, সেখানে কেবল ডিএনএ সংশ্লেষণ হয় তাই নয়, আরএনএ সংশ্লেষণও হয়। গবেষণার পর, তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং বোস ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। তিনি এককোষী জীবের বিপাকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা করেন। পরে, তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে যোগদান করেন। বিএইচইউ-তে, তিনি লাইসোজেনি এবং লাইসিস হতে থাকা কোষগুলির মধ্যে জৈব রাসায়নিক পার্থক্য বোঝার জন্য গবেষণা করেন। তিনি অনুমান করেছিলেন যে ভাইরাল সংক্রমণের পর প্রোটিন সংশ্লেষণ নিয়ন্ত্রিত হয় চলনের স্তরে। তিনি নিজের গবেষণা চলাকালীন সালমোনেলা টাইফিমুরিয়ামের একটি রিবোনিউক্লিজ আই কমজোরী মিউট্যান্টকে (পরিব্যক্তির ফলে উৎপন্ন) বিচ্ছিন্ন করেছিলেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

২০১৫ সালে মহারানি চক্রবর্তী মারা যান। তিনি সহকর্মী বিজ্ঞানী দেবী প্রসাদ বর্মাকে বিয়ে করেছিলেন এবং দুই সন্তান রেখে গেছেন।[১]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

মহারানি চক্রবর্তী তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সারা জীবন ধরে অনেক সম্মান পেয়েছিলেন, তার মধ্যে কিছু হলো-

  • ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস, বিএইচইউ (১৯৭৫ - ৭৬) এর মেরিট সার্টিফিকেট
  • ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস, বিএইচইউ এর সেরা গবেষণা পুরস্কার (১৯৭৯)
  • আইসিএমআর দ্বারা ক্ষনিক বক্তৃতা পুরস্কার (১৯৭৯)[৪]
  • আইসিএমআর দ্বারা ওয়াইএস নারায়ণ রাও পুরস্কার (১৯৮১)[৪]
  • মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া দ্বারা হরি ওম আশ্রম অ্যালেম্বিক রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড (১৯৮১)[৪]
  • জে সি সেনগুপ্ত মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড[৪]
  • আইএনএসএ-এর অধ্যাপক দর্শন রঙ্গনাথন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড (২০০৭)।[৪]

এছাড়াও তিনি ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস, (ভারত), এলাহাবাদ, ন্যাশনাল একাডেমি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (ভারত), নিউ দিল্লি এবং ইণ্ডিয়ান ভাইরোলজি সোসাইটির ফেলো ছিলেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Chakravorthy, Maharani। "Why and how I became a scientist" (পিডিএফ)। Lilavati's daughters। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১২ 
  2. "Why and how I became a scientist" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪  line feed character in |শিরোনাম= at position 23 (সাহায্য)
  3. "Author Profile : Maharani Chakraborthy"। Pearson। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১২ 
  4. G, Ambica (২০১৯-০৩-১৭)। "Maharani Chakravorty: One Of India's Earliest Molecular Biologists | #IndianWomenInHistory"Feminism in India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০২