মরিয়ম জামিলা
মরিয়ম জামিলা (২৩ মে, ১৯৩৪ - অক্টোবর ৩১, ২০১২) ছিলেন একজন আমেরিকান-পাকিস্তানি লেখক যিনি ইসলামী সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কিত ত্রিশেরও বেশি বই লিখেন। তিনি পশ্চিমা বিশ্ব এবং ইসলাম সম্পর্কে একজন রক্ষণশীল মহিলা কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন।[১] নিউ ইয়র্ক শহরে এক অবহেলিত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণকারী মার্গ্রেট মার্কাস ১৯৬১ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানে হিজরতের আগে কৈশোরে ইহুদী ও অন্যান্য ধর্ম নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। তিনি জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতা মুহাম্মদ ইউসুফ খানের সাথে বিয়ে করেছিলেন, এবং তাঁর পাঁচ সন্তান ছিল। তিনি পরে লাহোর শহরেই স্থায়ী হোন।[২][৩]
মরিয়ম জামিলা | |
---|---|
পেশা | লেখক |
জাতীয়তা | যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তানি |
দাম্পত্যসঙ্গী | মুহাম্মাদ ইউসুফ খান |
জীবনী
সম্পাদনাজামিলাহ নিউ ইয়র্কের নিউ রোশালে, মার্গ্রেট মার্কাস, জার্মান ইহুদি বংশোদ্ভূত পিতামাতার মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং সে তার প্রথম বছরগুলি ওয়েস্টচেস্টারে কাটান। স্কুলে থাকাকালীন তিনি এশীয় এবং বিশেষত আরব সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং আশেপাশের লোকদের মধ্যে যারা ইসরায়েলের সমর্থন করতো তাদের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন, তিনি সাধারণত আরব ও ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।[৪]
১৯৫৩ সালের বসন্তে, তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি সংস্কার ইহুদিবাদ, গোঁড়া ইহুদী ধর্ম, নৈতিক সংস্কৃতি এবং বাহাই ধর্ম নিয়ে জানতে পারেন, কিন্তু এই সবের মধ্যে সে বিশেষত জায়নবাদকে কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য মনে করতো না। ১৯৫৩ সালের গ্রীষ্মে তিনি কুরআন পাঠ করার মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি মুহাম্মদ আসাদের দ্য রোড টু মক্কা দ্বারাও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যা তাঁর ইহুদি ধর্ম থেকে ইসলামে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা পালন করেছিল। নিউইয়র্কে তিনি ইহুদী ধর্মের উপর ইসলামের প্রভাব সম্পর্কে একটি কোর্স গ্রহণ করেছিলেন, যা রাব্বি এবং পণ্ডিত আব্রাহাম ক্যাট্চ শিখিয়েছিলেন, যা উল্টো ইসলামের প্রতি তাঁর আকর্ষণকে জোরদার করেছিল।
১৯৫৯ সালে হোয়াইট প্লেইন থেকে দেশে ফিরে এসে মার্কাস নিজেকে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত করেন এবং আমেরিকার বাইরে বিশেষত পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর (ইসলামিক সোসাইটি) নেতা মাওলানা আবুল আলা মওদূদী[৫] এর মত মুসলিম নেতাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। অবশেষে, ১৯৬১ সালের ২৪শে মে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মরিয়ম জামিলা নামটি গ্রহণ করেন। মাওলানা মওদুদীর আমন্ত্রণ গ্রহণের পরে তিনি ১৯৬২ সালে পাকিস্তানে চলে আসেন, সেখানে তিনি প্রথমে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সাথে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সদস্য মুহাম্মদ ইউসুফ খানকে বিয়ে করেন এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হন। তার পাঁচটি সন্তান ছিল: দুটি ছেলে এবং তিনটি মেয়ে (যার মধ্যে প্রথমটি শৈশবে মারা গিয়েছিল)। জামিলা এই বছরগুলিতে (১৯৬২-৬৪) ইসলামের একজন রক্ষক হিসাবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন।[৩][৪]
কাজ
সম্পাদনাজামিলা তার প্রথম উপন্যাস, আহমদ খলিল: বারো বছর বয়সের ফিলিস্তিনি শরণার্থী ও তাঁর পরিবারের গল্প নিয়ে তার লেখা শুরু করেছিলেন; তিনি পেনসিল স্কেচ এবং রঙিন অঙ্কন নিয়ে তাঁর বইয়ের চিত্র তুলে ধরেছিলেন। তিনি নিউ ইয়র্কের আর্ট স্টুডেন্টস লিগে ১৯৫২ সালের দিকে অঙ্কন নিয়েও অধ্যয়ন করেছিলেন। তাঁর কাজ বাহাই সেন্টারের কারওয়ানে ইস্ট ওয়েস্ট আর্ট গ্যালারীতে প্রদর্শিত হয়েছিল। পাকিস্তানে তাঁর দেশত্যাগের সময় তাকে মওদূদী বলেছিল যে এই শিল্পটি ইসলাম দ্বারা বৈধ নয় আর তাই সে লেখার বদৌলতে তা ত্যাগ করেন।[৩][৪] তার লেখাগুলি বেশ কয়েকটি অডিও এবং ভিডিও তে সংরক্ষিত রয়েছে।[৬]
জামিলা ছিলেন এক বিখ্যাত লেখক যিনি প্রথাগত ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির রক্ষণশীলতা রক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি পশ্চিমা সমাজ এবং পাশাপাশি ইসলাম উভয় ক্ষেত্রেই ধর্মনিরপেক্ষতা, বস্তুবাদ ও আধুনিকায়নের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি কুরআন ও মুহাম্মদ (সা) এর বাণী দ্বারা পর্দা, বহুবিবাহ এবং লিঙ্গ বিভাজন প্রভৃতি রীতিনীতিগুলিকে পরিবর্তনের আন্দোলনকে ইসলামী শিক্ষার বিপরীত হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন।[৭] জামিলার বই এবং নিবন্ধ উর্দু, ফার্সি, তুর্কি, বাংলা এবং ইন্দোনেশীয় সহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।[৪] নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরিতে তার চিঠিপত্র, পান্ডুলিপি, গ্রন্থলিপি, কালানুক্রমিক, বক্তৃতা, প্রশ্নাবলী, প্রকাশিত নিবন্ধ, ফটোগ্রাফ, ভিডিও এবং শিল্পকর্ম যার মধ্যে মানবতা ও সামাজিক বিজ্ঞান সংরক্ষিত রয়েছে।[৩] জীবনী বিদ দেবোরা বাকেরের বইয়ে তাকে নিয়ে একটি বিষয় রয়েছে।[৮]
গ্রন্থসমূহ
সম্পাদনা- জামিলার লেখা বই
- তুরস্কের একটি মহান ইসলামী আন্দোলন: বাদি-উ-জামান সাইদ নুরসি
- ইসলামী আন্দোলনের মেনিফেষ্টো[৯]
- আহমদ খলিল: একজন ফিলিস্তিনি আরব শরণার্থীর জীবনী
- পাকিস্তানি বাড়িতে (১৯৬২-১৯৮৯): একজন আমেরিকান প্রবাসীর গল্প
- আবুল আলা আল মওদূদী এবং মরিয়ম জামিলার মধ্যে চিঠিপত্র[৫]
- ইসলাম ও আধুনিকতা[১০]
- ইসলাম ও প্রাচ্যবাদ
- ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ[১১]
- ইসলাম ও আধুনিক মুসলিম নারী[১২]
- ইসলাম এবং আমাদের সামাজিক অভ্যাস : ইসলামী শিষ্টাচার বনাম পাশ্চাত্য শিষ্টাচার
- ইসলাম ও আধুনিক মানুষ : ইসলামিক নবজাগরণের আলোকে, আধুনিক মানুষের কাছে ইসলামের আহ্বান
- ইসলাম বনাম আহলে কিতাব: অতীত ও বর্তমান
- ইসলাম বনাম পশ্চিমা বিশ্ব
- তত্ত্ব ও অনুশীলনে ইসলামী সংস্কৃতি
- বর্তমান সংকট মোকাবিলায় ইসলাম
- পাশ্চাত্য সভ্যতা কি সর্বজনীন?
- আমেরিকাতে শৈশব এবং তারুণ্যের স্মৃতি (১৯৪৫-১৯৬২) : সত্যের সন্ধানের জন্য এক পশ্চিমা ধর্ম ত্যাগকারীর গল্প
- আধুনিক প্রযুক্তি এবং মানুষের অমানবিকরণ
- শায়খ হাসান আল বান্না ও আল ইখওয়ানুল মুসলিমুন
- শায়খ ইজ-উদ-দীন আল-কাসেম শহীদ : একজন মহান ফিলিস্তিনি মুজাহিদ, (১৮৮২-১৯৩৫) : তার জীবন এবং কাজ
- শেহু উসমান দান ফোদিও, পশ্চিম আফ্রিকার এক মহান মুজাদ্দিদ
- জেনারেশন গ্যাপ - এর কারণ এবং ফলাফল
- মহানবী (সা) এবং আমার জীবনে তাঁর প্রভাব
- ঔপনিবেশিক থেকে ইসলামের পুনরুত্থান এবং আমাদের মুক্তি
- আরব বিশ্বে সাম্প্রতিক তিনটি সেরা ইসলামি আন্দোলন
- সাম্প্রতিক দুটি মহান মুজাহাদীন এবং তাদের বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম : সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ; ইমাম শামিল: রাশিয়ার এক মহান মুজাহিদ
- পাশ্চাত্যকরণ এবং মানব কল্যাণ
- পাশ্চাত্য সভ্যতা নিজেই নিন্দিত; নৈতিক বিদ্রোহ এবং এর পরিণতি সম্পর্কে একটি বিস্তৃত অধ্যয়ন
- পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ মুসলমানদের হুমকি দেয়
- কেন আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি
- জীবনী
- The Convert: A Tale of Exile and Extremism, Deborah Baker, Macmillan, 2011
টীকা
সম্পাদনা- ↑ "Maryam Jameelah, 1934-2012"। Thefridaytimes.com। ২০১৩-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-০৬।
- ↑ Esposito Voll
- ↑ ক খ গ ঘ "Maryam Jameelah Papers" (পিডিএফ)। Manuscripts and Archives Division, New York Public Library।
- ↑ ক খ গ ঘ Esposito ও Voll 2001
- ↑ ক খ Naseem, Mirza। Contribution of Maryam Jameelah to Islamic thought (পিডিএফ)। পৃষ্ঠা 94। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Haddad, Smith এবং Moore 2006
- ↑ Feener 2004
- ↑ Adams, Lorraine (২০ মে ২০১১)। "Book Review - The Convert - By Deborah Baker"। The New York Times।
- ↑ "ইসলামী আন্দোলনের মেনিফেষ্টো"। পাঠাগার। ১ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২০।
- ↑ "পার্ট ১ - ইসলাম ও আধুনিকতা"। পাঠাগার। ১ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২০।
- ↑ "ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ"। পাঠাগার। ৬ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২০।
- ↑ "ইসলাম ও আধুনিক নারী"। পাঠাগার। ১ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২০।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- Voll, John Obert; Esposito, John L. (২০০১)। "Maryam Jameelah: Voice of conservative Islam"। Makers of contemporary Islam । Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 54–67। আইএসবিএন 0-19-514127-X।
- "Maryam Jameelah Papers" (পিডিএফ)। Manuscripts and Archives Division, New York Public Library।
- Rozehnal, Robert (২০০৪)। "Debating orthodoxy, contesting tradition: Islam in contemporary South Asia"। R. Michael, Feener। Islam in World Cultures: Comparative Perspectives। Santa Barbara, Calif: ABC-CLIO। আইএসবিএন 1-57607-516-8।
- Haddad, Yvonne Yazbeck; Smith, Jane Bandy; Moore, Kathleen Dean (২০০৬)। Muslim women in America: the challenge of Islamic identity today । Oxford: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-517783-5।
- Baker, Deborah (২০১১)। The Convert, A Tale of Exile and Extremism। New York: Graywolf Press। আইএসবিএন 978-1-55597-582-1।