ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি

বাংলাদেশের কুমিল্লাতে অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধিস্থল। ১৯৪১-১৯৪৫ সালে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা), আসাম, এবং বাংলাদেশে ৯টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে, যার অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। প্রতিবছর প্রচুর দর্শনার্থী যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে এসকল রণ সমাধিক্ষেত্রে আসেন।

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি
ময়নামতি যুদ্ধ সমাধিস্থল
কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন
কুমিল্লায় অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (যুদ্ধ সমাধিস্থল)
Used for those deceased
প্রতিষ্ঠিতদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে (১৯৩৯-১৯৪৫)
অবস্থান২৩°২৯′১৪″ উত্তর ৯১°০৬′৪৩″ পূর্ব / ২৩.৪৮৭১০৪৭° উত্তর ৯১.১১১৯৭৯২° পূর্ব / 23.4871047; 91.1119792
near 
মোট কবর৭৩৬
দেশ অনুযায়ী কবর
যুদ্ধের কবর
পরিসংখ্যান সূত্র: CWGC

বিবরণ সম্পাদনা

ময়নামতি রণ সমাধিক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) নিহত ভারতীয় (তৎকালীন) ও ব্রিটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। এটি ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের খুব কাছেই এই যুদ্ধ সমাধির অবস্থান। এই সমাধিক্ষেত্রটি Commonwealth War Graves Commission (CWGC) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ও তারাই এই সমাধিক্ষেত্র পরিচালনা করেন। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সকল ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থণাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

ময়নামতি তখনকার সময়ে একটি ক্ষুদ্র গ্রাম হলেও তৎকালিন সেনাবাহিনীর একটি বড় ঘাঁটিতে পরিনত হয়। এখানে স্থাপিত হয় বড় একটি হাসপাতাল। এছাড়া কুমিল্লা ছিল যুদ্ধ-সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্র, বিমান ঘাঁটি, আর ১৯৪৪ সালে ইম্‌ফলে স্থানান্তরিত হবার আগে চতুর্দশ সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর। এই সমাধিক্ষেত্রের ৭৩৬টি কবর আছে। এর মধ্যে অধিকাংশ হলেন সেসময়কার হাসপাতালের মৃত সৈনিকরা। তাছাড়াও যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ স্থানান্তর করেও এখানে সমাহিত করা হয়। বাহিনী অনুযায়ী এখানে এর মধ্যে রয়েছেন ৩জন নাবিক, ৫৬৭জন সৈনিক এবং ১৬৬জন বৈমানিক।[১] সর্বমোট ৭২৩ জন নিহতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিল।[২]

 
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, কুমিল্লা
 
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি

যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিগণ যেসকল দেশের বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, সেগুলো হলো:[১]

দেশের নাম সৈন্যসংখ্যা
যুক্তরাজ্য ৩৫৭
কানাডা ১২
অস্ট্রেলিয়া ১২
নিউজিল্যান্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা
অবিভক্ত ভারত* ১৭৮
রোডেশিয়া
পূর্ব আফ্রিকা ৫৬
পশ্চিম আফ্রিকা ৮৬
বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার)
বেলজিয়াম
পোল্যান্ড
জাপান ২৪

______________
* "অবিভক্ত ভারত" বলতে বোঝানো হচ্ছে বর্তমানকার ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে নিয়ে যে বিশাল এলাকা, তার সম্পূর্ণটুকুকে।

সমাধিক্ষেত্রটির প্রবেশমুখে একটি তোরণ ঘর, যার ভিতরের দেয়ালে এই সমাধিক্ষেত্রে ইতিহাস ও বিবরণ ইংরেজি ও বাংলায় লিপিবদ্ধ করে একখানা দেয়াল ফলক লাগানো রয়েছে। ভিতরে সরাসরি সামনে প্রশস্থ পথ, যার দুপাশে সারি সারি কবর ফলক। সৈন্যদের ধর্ম অনুযায়ী তাদের কবর ফলকে নাম, মৃত্যু তারিখ, পদবির পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতীক লক্ষ করা যায়- খ্রিস্টানদের কবর ফলকে ক্রুশ, মুসলমানদের কবর ফলকে আরবি লেখা (যেমন: হুয়াল গাফুর) উল্লেখযোগ্য। প্রশস্থ পথ ধরে সোজা সম্মুখে রয়েছে সিঁড়ি দেয়া বেদি, তার উপরে শোভা পাচ্ছে খ্রিস্টধর্মীয় পবিত্র প্রতীক ক্রুশ। বেদির দুপাশে রয়েছে আরো দুটি তোরণ ঘর। এসকল তোরণ ঘর দিয়ে সমাধিক্ষেত্রের পিছন দিকের অংশে যাওয়া যায়। সেখানেও রয়েছে আরো বহু কবর ফলক। প্রতি দুটি কবর ফলকের মাঝখানে একটি করে ফুলগাছ শোভা পাচ্ছে। এছাড়া পুরো সমাধিক্ষেত্রেই রয়েছে প্রচুর গাছ। সমাধিক্ষেত্রের সম্মুখ অংশের প্রশস্ত পথের পাশেই ব্যতিক্রমী একটি কবর রয়েছে, যেখানে একসাথে ২৩টি কবর ফলক দিয়ে একটা স্থানকে ঘিরে রাখা হয়েছে। এই স্থানটি ছিল মূলত ২৩ জন বিমানসৈনিকের একটি গণকবর, যেখানে লেখা রয়েছে:

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ওয়ার সিমেট্রিতে লাগানো ফলক। সংগৃহীত হয়েছে: জুন ২০১১।
  2. [১]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা