মমিনুল হক ভূঁইয়া
মমিনুল হক ভূঁইয়া (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]
মমিনুল হক ভূঁইয়া | |
---|---|
মৃত্যু | ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামমিনুল হক ভূঁইয়ার পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার কালা সাদাধিয়া (ভূঁইয়া বাড়ি) গ্রামে। তার বাবার নাম সিরাজুল হক ভূঁইয়া। তার স্ত্রীর নাম সুফিয়া খাতুন। তাদের ছয় মেয়ে।
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৭১ সালে মমিনুল হক ভূঁইয়া চাকরি করতেন বিদ্যুৎ বিভাগে। কুমিল্লা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। প্রতিরোধযুদ্ধের পর ভারতে যান মমিনুল হক ভূঁইয়া। প্রথমে মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরে সাংগঠনিক নানা কাজে যুক্ত ছিলেন। পরে গেরিলা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, বৈদ্যেরবাজার, সিদ্ধিরগঞ্জসহ আরও কয়েক স্থানে বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে তিনি অংশ নেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত ছিলেন তিনি। কুমিল্লায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় মারা যান।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনাসিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র আক্রমণ করতে ১৯৭১ সালে শীতের রাতে নিঃশব্দে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সমবেত হন মমিনুল হক ভূঁইয়াসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। তারা সমবেত হয়েছিলেন ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের বর্তমান কাঁচপুর সেতুর কাছে। তখন সেখানে সেতু ছিল না। তারা সেদিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে গেরিলা অপারেশন করলেও মমিনুল হক ভূঁইয়া ও তার সহযোদ্ধারা সেখানে আক্রমণ চালাননি। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্রান্সফরমার বিস্ফোরকের সাহায্যে ধ্বংস করে সটকে পড়া। তবে আক্রান্ত হলে যুদ্ধের প্রস্তুতিও ছিল তাদের। দুঃসাধ্য ছিলো মিশনটি। পাকিস্তানি সেনারা টের পেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সব পরিকল্পনাই বানচাল হয়ে যেত। সে জন্য মমিনুল হক ভূঁইয়া ও তার সহযোদ্ধারা সবাই ছিলেন সতর্ক। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাদের ফাঁকি দিয়ে তিনি ও তার কয়েকজন সহযোদ্ধা কেন্দ্রের ভেতরে ট্রান্সফরমারের কাছে যেতে সক্ষম হন। বাকি ব্যক্তিরা বাইরে থাকেন তাদের নিরাপত্তায়। পিকে চার্জ নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। সেগুলো ট্রান্সফরমারের গায়ে লাগিয়ে তারা কর্ডেক্স লাগান। কর্ডের মাঝ বরাবর ছিল ডেটোনেটর। সফলতার সঙ্গেই সব কাজ তারা শেষ করে সংযোগ তারে আগুন দেওয়ার কয়েক মিনিট পর বিদ্যুচ্চমকের মতো এক ঝলক আলো দেখা যায়। আর মূহুর্তেই প্রহরারত পাকিস্তানিদের হতবাক করে দিয়ে একের পর এক ঘটে বিকট বিস্ফোরণ। তারপর চারদিক নিকষ অন্ধকারে ছেয়ে যায়। সেদিন তাদের অপারেশনে ধ্বংস হয় সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ট্রান্সফরমার। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের অনেক অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৩-১২-২০১২"। ২০১৭-০৪-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।