মঙ্গলা বাঈ

ভারতীয় শিল্পী

মঙ্গলা বাই থামপুরাত্তি (১৮৬৫ - ১৯৫৪), যিনি মঙ্গলা বাই নামে পরিচিত, তিনি ভারতের কেরালা রাজ্যের একজন শিল্পী ছিলেন, তাঁর অঙ্কিত প্রতিকৃতি প্রাথমিকভাবে ত্রিবাঙ্কুরের দৈনন্দিন জীবনের গার্হস্থ্য এবং ভক্তিমূলক বিষয়গুলিকে চিত্রিত করেছে। তিনি ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, এবং তাঁর ভাই, রাজা রবি বর্মাও একজন বিখ্যাত ভারতীয় চিত্রশিল্পী ছিলেন।

মঙ্গলা বাই

জীবনী সম্পাদনা

মঙ্গলা বাই ভারতের কেরালা রাজ্যের ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এটি ছিল পূর্ববর্তী ত্রিবাঙ্কুর দেশীয় রাজ্য[১][২][৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

মঙ্গলা বাইয়ের কাকা, রাজা রাজা বর্মা এবং তাঁর পিসি, রোহিনীনাল থামপুরাট্টি এবং মুলামনাল কুঞ্জিকাভু, ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারের মধ্যে শিল্পকে পেশা হিসেবে গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন, তাঁরা ব্রিটিশ শিল্পীদের সাথে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।[৩] রাজা রাজা বর্মা মঙ্গলা বাই এবং তাঁর দুই ভাই, রাজা রবি বর্মা, এবং সি. রাজা রাজা বর্মাকে পশ্চিমী কৌশল এবং চিত্রকলার শৈলীতে, বিশেষ করে প্রতিকৃতি অঙ্কনে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।[১] মঙ্গলা বাই প্রতিকৃতি অঙ্কনের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিভা প্রদর্শন করেছিলেন, এবং তাঁর অঙ্কিত রাজা রবি বর্মার একটি আকর্ষণীয় প্রতিকৃতি এখনও তিরুবনন্তপুরমের শ্রী চিত্র আর্ট গ্যালারীতে প্রদর্শিত হচ্ছে।[১]

কর্ম ও সামাজিক বিধি সম্পাদনা

শিল্পের ক্ষেত্রে পেশাগতভাবে কাজ করতে গিয়ে মঙ্গলা বাইয়ের দক্ষতা নারীদের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী সামাজিক রীতিনীতি দ্বারা সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।[১] তিনি কিছু ব্যক্তিগত চিত্রকর্মের কাজ করেছিলেন বটে, কিন্তু প্রাথমিকভাবে তিনি তাঁর ভাইদের চিত্রাঙ্কনে সহায়তা করতেন, কারণ সামাজিক বিধি নিষেধগুলি তাঁর পেশাগতভাবে ছবি আঁকার পথে অন্তরায় ছিল। বরোদার প্রাক্তন শাসক রাজা রবি বর্মাকে যে চিত্র অঙ্কনের কাজ দিয়েছিলেন, মঙ্গলা বাই বিশেষ করে সেই কর্মভারটিতে রবি বর্মার সহায়তা করেছিলেন, কাজটি ছিল হিন্দু দেবতা রাধা এবং কৃষ্ণের চোদ্দটি চিত্র অঙ্কন। এটি করতে তিনি এক বছর সময় ব্যয় করেন। এগুলি বড়োদরায় তৎকালীন নবনির্মিত লক্ষ্মী বিলাস প্রাসাদের দরবার হলে শোভা পেয়েছিল।[৩] তাঁর বিদ্যমান থাকা স্বতন্ত্র চিত্রগুলির মধ্যে একটি কাজ রয়েছে, যার নাম চ্যারিটি বা দানশীলতা, যেখানে চিত্রিত হয়েছে একজন মহিলার এক দরিদ্র ব্যক্তিকে খাবার দেওয়ার দৃশ্য। এর পাশাপাশি রয়েছে মহাত্মা গান্ধীর একটি প্রতিকৃতি, সেই অঙ্কনটি এখন তিরুবনন্তপুরমের সরকারি মহিলা কলেজের সংগ্রহশালার একটি অংশ।[২][৩] তাঁর বাকি কাজগুলির বেশিরভাগই ব্যক্তিগত সংগ্রহে থেকে গেছে।[২]

বালকৃষ্ণ নায়ারের সাথে মঙ্গলা বাইয়ের কথোপকথনের মাধ্যমে তাঁর পেশাদার এবং ব্যক্তিগত জীবনের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। বালকৃষ্ণ রাজা রবি বর্মার একটি আত্মজীবনী লিখেছিলেন, যার জন্য তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।[২] নায়ারের বইতে, মঙ্গলা বাই বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে বিবাহের পরে ভাইদের সাথে তাঁর সম্পর্ক এবং কাজ করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, সামাজিক রীতিনীতি কারণে ভাইদের সাথে তাঁর যোগাযোগ সীমিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে রাজা রবি বর্মা মাঝে মাঝে নিজের চিত্রকর্ম সম্পর্কে তাঁর মতামত চাইতেন, এবং অপর দিকে, যখন তাঁর ভাইয়েরা তাঁর সাথে কথা বলার অনুমতি পেতেন, কীভাবে তিনি নিজের কাজের বিষয়ে তাঁদের মতামত চাইতেন।[২]

প্রশংসা সম্পাদনা

মঙ্গলা বাই ৮৪ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর অঙ্কন চালিয়ে গেছেন, প্রাথমিকভাবে তিনি তেল রংয়ে কাজ করতেন। মানব রূপের বাস্তবসম্মত চিত্রায়ন করাতে তাঁর দক্ষতার জন্য তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়েছে, সেইসাথে তাঁর বিষয় এবং রচনার ব্যক্তিগত, অন্তরঙ্গ পছন্দের জন্যও তিনি অভিনন্দিত হয়েছেন।[৪][৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Rajeev, Sharat Sunder (২০১৭-০৬-০৯)। "Art and the princess"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৩ 
  2. "Mangala Bayi : the invisible artist & sibling of Raja Ravi Varma"The Heritage Lab (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৪-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৩ 
  3. Simran Agarwal, Sahapedia। "A family affair: Few know about the artistic prowess of Raja Ravi Varma's siblings"Scroll.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১৩ 
  4. Sinha, Gayatri (১৯৯৬)। Expressions & Evocations: Contemporary Women Artists of India (ইংরেজি ভাষায়)। Marg Publications। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 978-81-85026-34-3 
  5. Daniel, Lakshmi Priya (নভেম্বর ২০১৬)। "Signatures of a Collective Self: A Study of Select Contemporary Women Artists from South India"Journal of International Women's Studies18 (1): 52–72 – Bridgewater State University Commons-এর মাধ্যমে।