আরমিন নাওয়াবি
আরমিন নাওয়াবি (ফার্সি ভাষা: آرمین نوابی. জন্ম: ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৩) আরমিন নাওয়াবি হলেন একজন ইরানি-কানাডিয়ান নাস্তিক এবং একজন ধর্মনিরপেক্ষ সক্রিয়তাবাদী ব্যক্তি, লেখক এবং পডকাস্টার। বর্তমানে তিনি ভ্যানকুয়েভার, ব্রিটিশ কলম্বিয়া এবং কানাডায় থাকেন। ২০১১ সালে তিনি অনলাইন মুক্তচিন্তা বিষয়ক কমিউনিটি ‘Atheist Republic' প্রতিষ্ঠা করেন, এটি একটি কানাডা ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান,[১] যেটির বর্তমানে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স[২] সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০০টির ও বেশি শাখা রয়েছে যেগুলোকে ‘Consulates' বলা হয়, যা ধর্মহীন ও অবিশ্বাসীদেরকে সে সমাজে সক্রিয় হতে সক্ষম করছে, যে সমাজে ধর্মদ্রোহিতা, ধর্মনিন্দা ও ধর্মত্যাগ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।[৩] লেখক হিসেবে তার অভিষেক হয়েছিলো Why There Is No God (২০১৪) বইটি দিয়ে , ২০১৭ সালে তিনি আলী এ. রিজভী, ইয়াসমিন মোহাম্মদ এবং ফয়সাল সাঈদ আল মুতার এর সাথে Secular Jihadists from the Middle East পডকাস্ট এর সহ-উপস্থাপক হন।[৪] জানুয়ারি ২০১৮-তে রিজভী এবং নাওয়াবি সহ-উপস্থাপক থাকা অবস্থায় অনুষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় Secular Jihadists for a Muslim Enlightenment।[৫]
আরমিন নাওয়াবি | |
---|---|
জন্ম | ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ |
জাতীয়তা | ইরানের |
পেশা | নাস্তিক ক্রিয়াকলাপ, মানবাধিকার সক্রিয়তা, প্রাক্তন মুসলিম |
ওয়েবসাইট | www.atheistrepublic.com |
জীবনচরিত
সম্পাদনাযৌবনকাল
সম্পাদনানাওয়াবির জন্ম ১৯৮৩ সালে এবং তিনি তেহরানে একটি শিয়া মুসলিম পরিবারে বড় হন। এর মধ্যে তিনি ১৯৮৫ সালে জার্মানিতে এবং ১৯৮৬ সালে লন্ডনে যান ১৯৮৮ সালে তেহরানে ফেরত আসার আগে। তার পরিবার সাম্প্রদায়িক বা ধর্মপ্রাণ না হলেও স্কুলে তাকে ক্ষুদ্রতম পাপ কাজেও জাহান্নামে যাওয়ার উপর বিশ্বাস শেখানো হয়। নাওয়াবি মনে করা শুরু করলেন যে পরকাল যদি অনন্তকালের জন্য স্থায়ী হয়, তাহলে মানুষের উচিত দুনিয়ার চাইতে পরকালকেই অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু তারপরেও তিনি তার আশেপাশে এমন কিছু মানুষকে দেখেন, যারা পরকালের গুরুত্বে বিশ্বাস করলেও এটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতো না।[৬] যেকোনো ভাবেই হোক জাহান্নাম এড়াতে তিনি শিয়া ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী সাবালক বয়সের (১৫, মেয়েদের ক্ষেত্রে ৯) আগে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেহেতু সে বয়সের আগে করা পাপ (আত্মহত্যা সহ) গণনা হতো না[৭] ১২ বছর বয়সে নাওয়াবি স্কুলের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার আত্মহত্যা সফল হয়নি। এরফলে তিনি মারাত্মক আহত হয়ে ৭ মাস হুইলচেয়ারে কাটিয়েছিলেন এবং সেইবছর পড়ালেখা বন্ধ রাখতে হয়। [৬][৮]
ধর্মত্যাগ এবং প্রবাস
সম্পাদনাআত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হওয়া থেকে সুস্থ হওয়া এবং পরিবারকে কষ্ট দিয়ে খারাপ লাগার কারণে নাওয়াবি আরো বেশি ধার্মিক মুসলমান হয়ে উঠেন। কখনো নামাজ বাদ দিতেন না, মেয়েদের দিকে তাকাতেন না যদি না আবার প্রলুব্ধ হয়ে যান, সযত্নে ইসলাম ধর্ম চর্চা করতেন।[৬][৭] কিন্তু যত বেশি তিনি জানতে থাকেন ততই তার সন্দেহ বাড়তে থাকে কারণ তিনি এ ধর্মের কোনো ব্যাখ্যাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না, মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনের উপর পাওনা দাবি আর অমুসলিমদেরকে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে অনন্তকালের জন্য শাস্তিস্বরূপ যন্ত্রণা।[৭] অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করার পর তার সংশয়বাদী মনোভাব আরো প্রবল হতে থাকে।[৬] একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল কলেজে ধর্মের ইতিহাস বিষয়ক একটি বই পড়া। এরপর তিনি নিজেকে বলেন “আমি দেখেছিলাম কীভাবে তৎকালীন রাজনীতির উপর ভিত্তি করে আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা, আল্লাহ কি চান তা পরিবর্তন করা সুবিধাজনক ছিল। আমি কেনই বা এটাকে সত্য মানবো? আমি কখনোই নিজেকে প্রশ্ন করিনি এসব কি আসলে বানানো কিনা”।[৮] জাহান্নামের ভয়ে এবং মরিয়া প্রার্থনাতে নাওয়াবি আল্লাহর কাছে চান যেন আল্লাহ নিজেকে নাওয়াবির সামনে দেখা দেন এবং নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন, কিন্তু তিনি কোনো উত্তর পেলেন না, তিনি ইসলামের বিশ্বাস হারালেন এবং আল্লাহ বা ঈশ্বর যে কাল্পনিক চরিত্র এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন।[৭][৮]
নাওয়াবি University of Tehran এ এক বছরের জন্য আণবিক জীববিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।[৮] কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি শুরুতে ভাবতেন তিনি হয়ত কিছুটা পাগল, কারণ তার জানামতে তিনিই ছিলেন একমাত্র নাস্তিক। কিন্তু তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মধ্যে দুইজনের উপর আস্থা রেখে, তার নতুন উন্নত কিছু মতামত প্রকাশ করেন, তারা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে সংশয়বাদী হয়ে যান। এটিই তাকে ইন্টারনেটে তার মত আরো নাস্তিকদেরকে খুঁজতে উৎসাহিত করে।[৪][৬] তিনি তেহরানে থাকতে চাননি, এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-তে অর্থসংস্থান নিয়ে পড়ালেখা করার জন্য একটি স্টুডেন্ট ভিসা পেতে সক্ষম হন।[৮] তিনি Vancouver-এ আসেন ১০ই অক্টোবর, ২০০৪ সালে, পরবর্তীতে স্থায়ী বাসিন্দা হন এবং অবশেষে কানাডার নাগরিকত্ব পান। সেখানে তিনি ২০১২ সালে Atheist Republic গঠন করেন, বিশ্বব্যাপী একটি নাস্তিক কমিউনিটি এবং তার সক্রিয়তা প্রচারের মাধ্যম হিসেবে।[৭]
অপসারণমূলক ঘটনাসমূহ
সম্পাদনা২০১৯ সালে নাওয়াবি বেশ কয়েকটি অপসারণমূলক প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এ, Cherwell, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর একটি ছাত্রপত্রিকা, এটির অনলাইন সংস্করণে নাওয়াবির একটি সাক্ষাৎকারকে ‘আক্রমণাত্মক’ বিবেচনা করে প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। সাক্ষাৎকারটি পত্রিকার ছাপা সংস্করণে ছাপানো হয়। Profile Editor Freddie Hayward, যিনি সাক্ষাৎকারটি পরিচালনা করেছিলেন, তিনি প্রতিবাদের মুখে পরে পদত্যাগ করেন।[৯]
মার্চ ২০১৯ এ, কানাডার Calgary শহরের Mount Royal University নাওয়াবিকে সমন্বিত করা একটি পূর্বনির্ধারিত বক্তৃতানুষ্ঠান বাতিল করে, যেটি সংগঠিত করেছিল Atheist Society of Calgary. Mount Royal University জানায়, তারা ক্রাইস্টচার্চ মসজিদ হামলা ঘটনার পর অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে অনিচ্ছুক, তবে তারা বক্তাকে তাদের ক্যাম্পাসে অন্য যেকোনো সময় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।[১০]
Atheist Republic
সম্পাদনাপ্রতিষ্ঠা
সম্পাদনাসংক্ষেপে | AR |
---|---|
পূর্বসূরী | Iranian Atheists (Orkut)[১১] |
গঠিত | জানুয়ারি, ২০১২ |
প্রতিষ্ঠাতা | আরমিন নাওয়াবি |
প্রতিষ্ঠাস্থান | ভ্যানকুয়েভার |
যে অঞ্চলে | বিশ্ব |
CEO | এলি জ্যাকসন[১২] |
ওয়েবসাইট | www |
ইরানে থাকা অবস্থায় নাওয়াবি ২০০৩ সালের দিকে Orkut-এ “Iranian Atheists” নামে একটি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন, দেশের অন্যান্য নাস্তিকদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য। সেখানে তিনি নিজের মত আরো অনেকজনকে পেয়ে বিস্মিত এবং খুশি হয়েছিলেন, এবং সেই অনুভূতিটা ছিল পারস্পরিক। তার মতে “এটা এমন একটা অনুভূতি যেন একটি পরিবারে আসা যেটা তুমি জানতেই না তোমার ছিল”[১১] কিছু সময় পর নাওয়াবি ইরানের বাইরেও অন্যান্য নাস্তিকদের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নিলেন, এবং ২০১২ সালে ফেসবুকে “Atheist Republic” নামে একটি পেইজ গঠন করেন। পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি, ২০১২-তে ফেসবুক গ্রুপ এবং পরবর্তীতে ২০১২ সালেই www.atheistrepublic.com ওয়েবসাইট গঠন করেন যেটা জুলাই, ২০১৭ এর হিসাবে প্রতি সপ্তাহে আনুমানিক ৫ মিলিয়ন বার দেখা হয়।[৭] Atheist Republic পুরো বিশ্ব থেকে অবিশ্বাসীদেরকে একসাথ করে, তারা LGBTQA+ এবং নারী অধিকার সমর্থন করে এবং ধর্মহীনদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করে।[৯][১০][১৩] নাওয়াবির মতে, এসব স্বাধীনতার মূল্য, যেটা Atheist Republic ছড়িয়ে দিতে চাইছে, সেটার উপর Islamism, alt-right এবং regressive-left আক্রমণ করছে।[৮]
ক্রমবিকাশ
সম্পাদনাজুন, ২০১৪-তে BBC Trending-এ Atheist Republic কমিউনিটি এর ব্যাপারে বলতে গিয়ে নাওয়াবি বলেন: “আমরা মানুষকে এটা বোঝাতে চাই যে তারা একা নয়, আমরা তাদেরকে এটা জানাতে চাই যে তাদের নিজেদের প্রতি লজ্জাবোধ করার কোনো প্রয়োজন নেই”[১৫]
২০১৪ সালে, সৌদি প্রাক্তন-মুসলিম রানা আহমেদের তার পরিবারের সাথে সমস্যা হচ্ছিল, তিনি Atheist Republic এবং একই রকম অন্যান্য অনলাইন প্রতিষ্ঠানের সাহায্য চেয়েছিলেন এবং পেয়েছিলেন। তার পরিবার যখন তাকে হজে যেতে বাধ্য করেছিল তিনি ইসলামের পবিত্রতম স্থান মসজিদ আল-হারাম-র ভিতরে দাঁড়িয়ে “Atheist Republic” লেখা একটি কাগজ হাতে নিজের ছবি তুলেছিলেন।[১৪] পরবর্তীকালে তিনি Faith to Faithless এবং Atheist Republic এর সাহায্যে জার্মানিতে চলে আসেন।[১৪][১৬]
মে, ২০১৭ সালের হিসাবে Atheist Republic এর ফেসবুক পেইজ এর ফলোয়ার সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ [১৭] ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে সে সংখ্যা বেড়ে হয় ২১ লাখ। [৮]
ইসলামপন্থী ফেসবুক রিপোর্টিং স্ক্যান্ডাল
সম্পাদনামে, ২০১৭ সালে Atheist Republic এর এডমিনরা জানায় তাদের ফেসবুক পেইজটি তিনবার বন্ধ করা হয়েছিল, পরবর্তীতে যা জানা যায় সেটা ছিল কিছু ধার্মিক সক্রিয়তাবাদীর সমন্বিত অভিযান। তখন ২১ লক্ষের বেশি ফলোয়ার থাকায় এটিকে বলা হত “যেকোনো সামাজিক মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় নাস্তিক কমিউনিটি”। পুনরুদ্ধারের পর Atheist Republic স্বয়ংক্রিয় “Unpublication” সিস্টেম থেকে অব্যাহতি অনুরোধ করেছিল, যেটা সক্রিয় হত যখন একটি পেইজ প্রায়ই “Flagged” হত, যা বেশি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে যেকোনো পেইজকেই বন্ধ হওয়ার দিকে অসুরক্ষিত রাখত।[১৭]
Atheist Republic-ই একমাত্র শিকার ছিল না, ধার্মিক সক্রিয়তাবাদীরা “Report Anti-Islamic Pages” to স্লোগানে আরো অনেক নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রাক্তন-মুসলিম পেইজ এবং গ্রুপ আক্রমণ করেছিল যেমন Ex-Muslims of North America (তখন ২৪০০০ সদস্যের গ্রুপ ছিল) এবং আরো ১০টি গ্রুপ।[১২] Atheist Republic এর সিইও এলি জ্যাকসন এবং Ex-Muslims of North America এর প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ সায়েদ পেইজ এবং গ্রুপ গুলোকে অনলাইনে ফেরত আনার জন্য একত্রে কাজ করেছিলেন এবং একটি change.org petition চালু করেছিলেন (যেটিতে ৮০০০ এর অধিক সিগনেচার জমা পড়েছিল) ১০ মে, ২০১৭-তে Atheist Republic এবং আরো প্রায় ৪০টি নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রাক্তন-মুসলিম সংগঠন অসুরক্ষিত গ্রুপগুলোকে ধার্মিক অন্ধবিশ্বাসীদের রিপোর্টিং ফাংশনের অপব্যবহার থেকে নিরাপত্তা দিতে ফেসবুক প্রশাসকের নিকট রিপোর্টিং সিস্টেম উন্নত করার অনুরোধ করে খোলা চিঠি পাঠায়।[১২] ফেসবুক এক মুখপাত্র উত্তরে জানান যে তারা অনেক দুঃখিত পেইজগুলোর এমন ভ্রান্ত অপসারণের কারণে। এবং আরো জানায় যে, তারা পেইজগুলো তদন্ত করার পর ফিরিয়ে দিবে।[১২]
মালয়েশিয়া সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়াস
সম্পাদনা২০১৭ সালে, Atheist Republic এর ফেসবুক পেইজে Atheist Republic Consulate of Kuala Lumpur এর একটি সম্মেলনের ছবি দেওয়া হয়েছিল। ইসলামিক এফেয়ার্স বিষয়ক উপমন্ত্রী Asyraf Wajdi Dusuki ওই ছবিতে থাকা লোকগুলো ধর্মত্যাগ করেছে কিনা সেটি জানার জন্য তদন্তের নির্দেশ দেন, যা মালয়েশিয়া-তে বেআইনি[৩] এবং প্রাক্তন-মুসলিমদেরকে জরিমানা, কারাবন্দি বা কাউন্সেলিং-এ দেওয়া হয়।[১] পরদিন প্রধান মন্ত্রীর বিভাগের এক মন্ত্রী Shahidan Kassim বলেন যে নাস্তিকদের কে গ্রেপ্তার করা উচিত কারণ ফেডারেল সংবিধানের ছায়াতলে এরকম গ্রুপের কোনো আশ্রয় নেই।[১৮][১৯]
সেই সম্মেলনে থাকা Atheist Republic এর সদস্যদেরকে সামাজিক মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল এবং তারা মুসলিমদের মাঝে নাস্তিকতা ছড়িয়েছে কিনা সেটা তদন্ত করা হচ্ছিল, যেটাও মালয়েশিয়াতে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছিল।[১][৩] নাওয়াবি প্রশ্ন করেছিলেন: “এই গ্রুপটি কীভাবে কারো ক্ষতি করছে?”, সতর্ক করেছিলেন যে সরকারের এমন কাজে মধ্যম মুসলিম প্রধান (৬০%) দেশ[৩] হিসেবে মালয়েশিয়ার সুনাম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল। এটি কিছু মালেশিয়ানদের মাঝে হিংসাত্মক প্রতিবাদের সৃষ্টি করে, তারা নাওয়াবিকে ধর্মত্যাগী বলে এবং তাকে শিরশ্ছেদের হুমকি দেয়।[২০]
কুয়ালালামপুর AR Consulate এর এক এডমিন “Michael” ছদ্মনামে BBC OS-কে বলেন বছরে দুই বা তিনবার কিছু মানুষ যারা সাধারণত ইন্টারনেটে যোগাযোগ করে, তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়:
যখন আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তখন আমরা শুধুমাত্র বসি, একে অপরের সাথে পরিচিত হই (…) কিছু পান করি, কিছু খাওয়াদাওয়া করি, এবং নিজেদের জীবন নিয়ে কথা বলি, এটুকুই।(...) অবশ্যই, এতে অন্তর্ভুক্তরা নাস্তিক, আইনগত ভাবে মুসলিম এছাড়া অন্যান্য ধর্মেরও মানুষ। মূলত আমরা শুধুমাত্র একে অপরের সম্পর্কে ভালো জানতে চাই এবং বন্ধু হতে চাই।(…) এজন্যই আমরা একটা গ্রুপ ছবি তুলি এবং Atheist Republic-কে সেটা পোস্ট করতে বলি। পরে যা জানলাম, কিছু মালয়েশিয়ান মুসলিম গ্রুপ ছবিটি পেয়ে যায়(…) এবং ধারণা বানিয়ে ফেলে যে ছবিটিতে মুসলিমরাও আছে। পরে ছবিটি সরকারের কাছে পৌঁছে যায় এবং তারা মালয়েশিয়া তে প্রাক্তন-মুসলিমের অস্তিতে বিস্ময় প্রকাশ করে এবং বলে কিছু একটা করা দরকার।(…) এতে করে অনেক লোক, বিশেষত ওই ছবিতে যারা ছিল তারা আড়ালে চলে যায় কারণ আমরা জানিনা কি হবে।(…) অবশ্যই, আমিও শঙ্কিত।[১৯]
নভেম্বর, ২০১৭-তে সরকার এবং ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক Malaysian Communications and Multimedia Commission Atheist Republic এর পেইজ এবং ফেসবুকের এমন অন্যান্য পেইজ বন্ধের দাবি জানায়। কিন্টু ফেসবুক তেমনটা করতে রাজি হয় না কারণ পেইজগুলো ফেসবুকের কোনো কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করেনি।[২]
ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ, নাওয়াবি নিরাশা প্রকাশ করে বলেন “এর কোনো পরিণতি হয় নি, মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির ক্রোধ অনুভব করেন। যেমনটা তুমি করতে যদি তুমি ইহুদি বা মুসলিমদের মারার কথা বলতে। অবশ্যই করতে, কারণ এর বিরুদ্ধে গুরুতর পরিণতির ব্যবস্থা আছে, সৌভাগ্যক্রমে। কিন্তু নাস্তিকদেরকে মারার ক্ষেত্রে কোনো পরিণতির ব্যবস্থা নেই কেন?”[৮]
কাজসমূহ
সম্পাদনা- নাওয়াবি, আরমিন; Hise, Nicki (২০১৪)। Why There Is No God. Simple Responses to 20 Common Arguments for the Existence of God। CreateSpace Independent Publishing Platform। পৃষ্ঠা 128। আইএসবিএন 9781502775283।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ Loulla-Mae Eleftheriou-Smith (৮ আগস্ট ২০১৭)। "Malaysian atheist group under investigation over alleged Muslim apostate members"। The Independent। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ "Atheism is unconstitutional, says Malaysian deputy minister"। Today Online। Mediacorp। ২৩ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ Wouter van Cleef (৭ আগস্ট ২০১৭)। "In Maleisië geldt: gij zult geen atheïst zijn"। Trouw (ওলন্দাজ ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ Seth Andrews (১৫ জুলাই ২০১৭)। "Armin Navabi: The Poison Pill of Islam (Part 2 of 2)"। The Thinking Atheist। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ "Secular Jihadists for a Muslim Enlightenment"। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Scott Jacobsen (১৩ মে ২০১৭)। "Interview with Armin Navabi - Founder of Atheist Republic"। Conatus News। ৫ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Seth Andrews (১৩ জুলাই ২০১৭)। "Armin Navabi: The Poison Pill of Islam (Part 1 of 2)"। The Thinking Atheist। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Freddy Hayward (৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। "Armin Navabi on transgender rights, the regressive left, and atheism"। Cherwell। Oxford Student Publications Limited।
- ↑ ক খ Hayward, Freddie (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। "An illiberal tide is sweeping British universities and thwarting debate"। New Statesman। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৯।
- ↑ ক খ Hopper, Tristin (২১ মার্চ ২০১৯)। "Calgary university cancels event by ex-Muslim, citing sensitivity after New Zealand attacks"। National Post। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৯।
- ↑ ক খ Maryam Namazie and Fariborz Pooya (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫)। "Religion and self-harm"। Bread and Roses TV। Council of Ex-Muslims of Britain। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭। (16:17)
- ↑ ক খ গ ঘ John Bonazzo (১২ মে ২০১৭)। "Facebook Blocks Posts From Atheist, Ex-Muslim Pages"। The New York Observer। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৯।
- ↑ Caroline Overington (২৩ জানুয়ারি ২০১৯)। "Liberated by lack of faith"। The Australian। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৯।
- ↑ ক খ গ Poppy Begum (১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "Rescuing Ex-Muslims: Leaving Islam"। Vice News। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ Benjamin Zand (৩ জুন ২০১৪)। "The man who says he can 'destroy' evolution - BBC Trending"। BBC Trending। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ Charlotte Sophie Meyn (১৬ জুন ২০১৬)। "Flucht vor der Religion"। Frankfurter Allgemeiner Zeitung (জার্মান ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ Andrew Griffin (১১ মে ২০১৭)। "Facebook repeatedly 'unpublishing' world's biggest atheist page, owners claim"। The Independent। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ Kamles Kumar (৮ আগস্ট ২০১৭)। "Atheists in Malaysia should be hunted down, minister says"। Malay Mail। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ Atkins, Ros (৯ আগস্ট ২০১৭)। "What's it like being an atheist in Malaysia?"। BBC OS (radio)। BBC World Service। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ Lesthia Kertopati (৮ আগস্ট ২০১৭)। "Malaysia Buru Muslim yang Datangi Perkumpulan Ateis"। CNN Indonesia (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৭।