ব্যবহারকারী:Jewel2022/মারমা-বাংলা অভিধান

মারমা-বাংলা অভিধান
မရမာ-ဘင်္ဂလား အဘိဓာန်
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
 বাংলাদেশ: বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি২ লক্ষ (প্রায়)
 মিয়ানমার: রাখাইন রাজ্যমিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে লেমাই গােয়ং, পুলুতং ও নাজিরােওয়া, খ্যান প্রদেশের ডালাক্‌মে, পালাক ওয়া, কুখ্যং, পিক্ষ্যং ও কুলাডাইন নদীর উজানে, রেঙ্গুন শহরের বিভিন্ন এলাকায় মারমা জনগােষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
 ভারত: ত্রিপুরা৫০,০০০ (প্রায়)। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বঙ্গু, খােয়ে, শিলো, থৌলে ও সাব্রুম এলাকা, মিজোরামের রাইক্ষ্যং ও সাংলাকক্ষ্যং এলাকা।
ভাষা
মারমা ভাষা မရမာ စကား
Jewel2022/মারমা-বাংলা অভিধান
উচ্চারণআইপিএ: [Màrmàbàθà]
মাতৃভাষী
৩ লাখ (২০২২)
চীনা-তিব্বতি
  • তিব্বতী-বর্মী
    • লোলো-বর্মী
      • বর্মিশ
        • ম্রাইঁমা
          • আরাকানি
            • Jewel2022/মারমা-বাংলা অভিধান
উপভাষা
মারমা লিপি
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-৩দুইয়ের মধ্যে এক:
rki – রাখাইন ("আরাকানি")
rmz – মারমা ("ম্রাইঁমা")
গ্লোটোলগarak1255[১]

মারমা-বাংলা অভিধান একটি দ্বিভাষিক অভিধান। ২০১৭ সালে এই অভিধান লেখার কাজ শুরু হয়। এছাড়াও International Mother Language Institute (IMLI) বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই) গ্রন্থাগারে মারমা-বাংলা অভিধান স্থান অলংকৃত করে ভাষাসংক্রান্ত গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মারমা ভাষা আইপিএ: [Màrmàbàθà] বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জীবন্ত ঋদ্ধ ভাষা।[২][৩] তিন পার্বত্য জেলায় মারমা ভাষাভাষী মানুষের বসবাস দেখা গেলেও মূল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের বসবাস বান্দরবান জেলায়[৪] মারমা’ শব্দটি ‘ম্রাইঁমা’ থেকে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমারা মিয়ানমার থেকে এসেছে বিধায় তাদের ‘ম্রাইঁমা’ নাম থেকে নিজেদের ‘মারমা’ নামে ভূষিত করে।[৫] তবে কারো কারো মতে, মোয়ে (মোন) বা ম্রাইঁমা (মায়ানমার) নয়, ভিন্ন এক প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশে মারমা জাতির বিকাশ ঘটেছে।[৬] মারমাগণ নিজস্ব ভাষার মারমা বর্ণমালা ব্যবহার করেন। মারমা-বাংলা অভিধান মারমা সাহিত্যের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান।[৭] মারমা লিপির উৎপত্তি অশোক লিপি বা ব্রাহ্মী লিপি থেকে - এ ব্যাপারে ভাষাবিদগণ একমত হয়েছেন।

মারমা-বাংলা প্রতিবর্ণীকরণ সম্পাদনা

মারমা সাংবুঁঃগ্রী (သင်ပုန်းကြီ) প্রথম পাঠে বর্ণমালা দুই প্রকারঃ

  1. ব্যঞ্জনবর্ণ
  2. স্বরবর্ণ

ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ৩৩টি হলেও অভিধানে ৩৪টি বর্ণের শব্দভূক্তি করা হয়েছে। প্রচলিত শিক্ষায় ৩৩টি বর্ণ পঠিত হয়ে থাকে। প্রথম ২৫টি ব্যঞ্জনবর্ণ বর্গযুক্ত এবং শেষ ৮টি বর্ন অবর্গ বা বর্গহীন। পালি বর্ণমালার সাদৃশ্যকরণ করে মারমা বর্ণমালা বিন্যস্ত করা হয়। স্বরবর্ণের সংখ্যা ১২টি। এ ১২টি স্বরবর্ণের ধারাবাহিক বর্ধিতরূপ ২১টি স্বরে রূপান্তরিত হয় তা মূল সাংবুঁঃগ্রী ক্রামাসাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে যা নিন্মরূপঃ အ အာ အား အိ အီ အီး အု အူ အူး အေ အေ့ အေး အဲ အဲ့ အဲး အော အော့ အော် အံ အံ့ အံး

এছাড়া ব্যঞ্জনবর্ণের মৌলিক সংক্ষিপ্ত চিহ্ন ৪টি এবং স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত চিহ্ন ১০টি। আরো রয়েছে দুইটি আসেং চিহ্ন এবং ১০টি স্বরধ্বনি বিলুপ্তকারী ব্যঞ্জনবর্ণের চিহ্নাদি।

তাছাড়া সব মিলিয়ে ১১টি যুক্ত ব্যঞ্জনচিহ্ন বিদ্যমান। মারমা-বাংলা অভিধানের বানানের ক্ষেত্রে ১৯৮৬ সালে ম্রাঁইমা ভাষা কমিশন কর্তৃক প্রণীত প্রমিত ম্রাঁইমা বানানপদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এ অভিধানের উচ্চারণ-নির্দেশে বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই প্রথমবারের মতো প্রমিত মারমা-বাংলা উচ্চারণ অনু-বিধি তৈরি করা হয়েছে। নিন্মে প্রচলিত মারমা-বাংলা প্রতিবর্ণীকরণের চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

ইতিহাস সম্পাদনা

মারমা-বাংলা অভিধান একটি দ্বিভাষিক অভিধান। একটি যুগোপযোগী অভিধানের প্রয়োজন অনুভব করে এ-বিষয়ে সংকলনের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। একখণ্ডে সম্পূর্ণ ও বহনযোগ্য অভিধান যা বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের, শিক্ষকদের ও সেই সঙ্গে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ও বিভিন্ন দায়িত্বে রত দেশে-বিদেশের উক্ত দ্বিভাষা ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন মেটাবে। একটি নির্ভরযোগ্য অভিধানের শূন্যতা পূরণের উদ্দ্যেশ্যে সর্বপ্রথম এ উদ্যোগটি গৃহীত হয়। শ্রদ্ধেয় আরাকানি গবেষক ও সুলেখক উ অং হ্লা সেইন কর্তৃক সংকলিত রক্ষইং-ফালৌং অভিধান বর্তমান অভিধান তৈরিতে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি আরাকানি ও ম্রাঁইমা অভিধানের সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে। ম্রাঁইমা ভাষা কমিশন, জন ওকেল এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত তথ্য এতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সর্বোপরি, বাংলাদেশের মারমা সমাজের মৌখিক ভাষা এতে বিশেষভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

মারমা-বাংলা অভিধান বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহোদয়ের কার্যালয়ের লাইব্রেরিতে স্থান অলংকৃত করে। এছাড়াও International Mother Language Institute (IMLI) বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই) গ্রন্থাগারে মারমা-বাংলা অভিধান স্থান অলংকৃত করে ভাষাসংক্রান্ত গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সম্পাদনা ও প্রকাশনা কমিটি সম্পাদনা

মারমা-বাংলা অভিধান সম্পাদনা কমিটিঃ

(ক) উ থোয়েঁয়ান রাখাইন - শিক্ষক, শিল্পী।

(খ) ডা. অংক্যজাই মারমা - লেখক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ।

(গ) উ হ্লাসিংথোয়াই মারমা - লেখক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ।

(ঘ) উ সেইন চ - শিক্ষক, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সমূহ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা।

অভিধান প্রকাশনা কমিটি সম্পাদনা

(ক) সিরী অশোক কুমার বড়ুয়া - প্রধান শিক্ষক (অবঃ), সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। (প্রয়াত)

(খ) উ পুচনু মারমা - সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, কাস্টমস এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা (উত্তর), ঢাকা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

(গ) উ সেইন চ - শিক্ষক, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সমূহ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ, ঢাকা।

মোড়ক উন্মোচন সম্পাদনা

বান্দরবানে ‘প্রথম’ মারমা-বাংলা অভিধান বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বইয়ের লেখক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর জুয়েল বড়ুয়া।[৮][৯] এ অভিধানটির মোট সংখ্যা ৩৭০ পৃষ্ঠা।[১০][১১][১২]

ভৌগোলিক বণ্টন সম্পাদনা

মারমা ভাষা আদিবাসী ভাষা, নৃগোষ্ঠীগত ভাষা ও মাতৃভাষা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ, ত্রিপুরা রাজ্য, ভারত, রাখাইন রাজ্য, মিয়ানমার দেশে স্বীকৃত। বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায়, ভারত ও মিয়ানমারে মারমাদের মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামেই রয়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এসব দেশের মারমা, মগ ও রাখাইন মানুষের ব্যবহারযোগ্য অভিধান বই। বাংলাদেশে তিন পার্বত্য জেলা, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বসবাসরত মারমা জনগোষ্ঠীর সবাই মারমা ভাষা বললেও এলাকা ও অঞ্চলভেদে উচ্চারণ আলাদা।

 
১৯০৬ সালে তোলা বান্দরবানে মারমা (কেন্দ্রে বোমাং রাজা)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "Arakanese–Marma"গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট। 
  2. Hammarström, Harald (২০১৫)। "Ethnologue 16/17/18th editions: A comprehensive review"Language (ইংরেজি ভাষায়)। 91 (3): 723–737। আইএসএসএন 1535-0665ডিওআই:10.1353/lan.2015.0038 
  3. সম্পাদকীয়। "জনজাতির ভাষা সংরক্ষণ জরুরি"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২ 
  4. শোয়েনু, মংক্য (০১ মে, ১৯৯৮।)। "মারমা সমাজ ও সংস্কৃতি : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ'"। সাংগু, উপজাতীয় গবেষণা পত্রিকা। এক (৫ম খন্ড)।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. "Marma"sites.google.com। ২০২০-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০৯ 
  6. "মারমা ভাষার গবেষক শৈফোচিং আর নেই | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৩ 
  7. "Watch"www.facebook.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৯ 
  8. প্রতিনিধি, বান্দরবান। "বান্দরবানে 'প্রথম' মারমা-বাংলা অভিধানের মোড়ক উন্মোচন"bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২ 
  9. প্রতিনিধি। "বান্দরবানে মারমা-বাংলা প্রথম অভিধানের মোড়ক উন্মোচন"www.prothomalo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৯ 
  10. sun, daily। "1st Marma-Bengali dictionary unveiled | Daily Sun"daily sun (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৩ 
  11. "বান্দরবানে মারমা-বাংলা অভিধান মোড়ক উন্মোচন | PaharBarta.com"। ২০২২-০৪-০৮T২০:৪৩:২১+০৬:০০। সংগ্রহের তারিখ 2022-09-03  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  12. Azadi, Dainik (২০২২-০৪-১০)। "মারমা-বাংলা ভাষার অভিধানের মোড়ক উন্মোচন"দৈনিক আজাদী (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০৩ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • Barua, Jewel (08 April, 2022)। "মারমা-বাংলা অভিধান"। রাখাইন - মগ, মারমা ভাষা কিয়ং। পৃষ্ঠা 370। আইএসবিএন ISBN 987-984-35-0699-3 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  • Houghton, Bernard (১৮৯৭)। "The Arakanese Dialect of the Burman Language"। The Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland। Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland: 453–461। জেস্টোর 25207880 
  • Okell, John (১৯৯৫)। "Three Burmese Dialects" (পিডিএফ)Papers in Southeast Asian Linguistics13 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

বিষয়শ্রেণী:অভিধান