আঞ্জুমান-ই-হিমায়াত-ই-ইসলাম ("ইসলামের সমর্থনের জন্য সংগঠন") বা আঞ্জুমান-ই-হিমায়াত-ই-ইসলাম ( উর্দু: انجمن حمایت اسلام‎‎ </link> ) একটি ইসলামী বুদ্ধিজীবী ও সমাজকল্যাণ সংস্থা যার শাখা ভারতপাকিস্তান উভয় দেশেই রয়েছে।[১] এটি লাহোরে ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৮৪ সালে কাজী হামিদুদ্দিন খলিফা দ্বারা লাহোরের মোচি গেটের ভিতরে মসজিদ বাকান নামে পরিচিত একটি মসজিদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

ইতিহাস এবং পটভূমি

সম্পাদনা

১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলো, সেটি দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনা ছিলো। এটি ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামেও পরিচিত। অনেক রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এবং সর্বশেষ ১৮৫৭ এর এই সংগ্রাম দ্বারা অনেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। যার মধ্যে সৈয়দ আহমদ খান অন্যতম ছিলো, তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে আলীগড় আন্দোলন এবং আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেছিলো।[২]

সংগঠনটি ২২ সেপ্টেম্বর ১৮৮৪ সালে লাহোরে খলিফা কাজী হামিদ-উদ-দীন দ্বারা মোচি গেটের ভিতরে মসজিদ বাকান নামে একটি মসজিদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সংগঠনের প্রথম সভাপতি ছিলেন আবদুল কাদির (১৮৭২ – ১৯৫০), যিনি একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন।[১][৩]

সংগঠনের একটি বড় প্রচেষ্টা ছিল পাঞ্জাবের মুসলিম মেয়েদের জন্য এতিমখানা প্রতিষ্ঠা, কয়েকটি স্কুলের ভিত্তি স্থাপন করা। সেখানকার মেয়েদের উর্দু, কোরআন, গণিত, সূঁচের কাজ, কারুশিল্প প্রভৃতি শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি মুসলিম ছেলে-মেয়েদের স্কুলের জন্য উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পাঠ্য পুস্তক বিলি এবং শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে সাহায্যের সংগঠন হিসাবে আত্নপ্রকাশ করেছিলো। এই পাঠ্যপুস্তকগুলি সমগ্র পাঞ্জাব এবং তার বাইরেও ব্যবহৃত হত। ১৯৩৯ সালে সংগঠনটি লাহোরে ইসলামিয়া কলেজ ফর উইমেন প্রতিষ্ঠা করে। এই অঞ্চলে এটিই একমাত্র কলেজ ছিলো যার পাঠ্যক্রম ছিল আদর্শ ব্যাচেলর অফ আর্টস প্রোগ্রাম, যা ইসলামি শিক্ষায় চেতনায় আবৃত ছিলো। এটি ১৮৯২ সালে ইসলামিয়া কলেজ লাহোর প্রতিষ্ঠা করে।[৪]

আনজুমান-ই-হিমায়াত ইসলাম ছিল মুসলমানদের একটি সংগঠন যা লাহোরের মধ্যবিত্ত মুসলমানদের সাধারণ ভালোর জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করতো। এটা তৎকালীন মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করতো। এছাড়াও আনজুমান ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম প্রদানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।[৩]

আনজুমানের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আংশিকভাবে সমর্থনে পাকিস্তানে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চালু হয়। এই জাতীয় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিদ্যালয় হলো হায়দ্রাবাদের হিমায়াত উল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়, যেটা পরবর্তীতে একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি পাবলিক হাইস্কুলে পরিণত হয়।[৫] স্কুলটির বালক ও বালিকা নামে স্বতন্ত্র দুটি বিভাগ করা রয়েছিলো। স্কুলটি ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত ইংরেজি মাঝারি মানের শিক্ষার প্রসারে ব্যপক অবদান রেখেছিলো।[৩]

সংস্থাটি যারা মুসলিম সমাজের সংস্কার এবং এর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে চায় এমন মুসলিম বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।[১] পাকিস্তানের জাতীয় কবি স্যার মুহাম্মদ ইকবাল এই সংগঠনের সদস্য ছিলো, যিনি আনজুমানের অধিবেশনে তার প্রথম কবিতা আবৃত্তি করেছিলো। সংগঠনের উদ্দেশ্যই ছিলো ভারতীয় মুসলমানদের শিক্ষাগত উন্নতি সাধন করা।[১][৪][৩]

আনজুমান পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অসহায় মুসলমানদের জন্য এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছিল। এসব এতিমখানায় বিধবাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিলো। বিহার ও কোয়েটা ভূমিকম্পের সময় এবং ১৯৪৭ এর হোলোকাস্টের সময়কার বিধবারা, নিঃস্ব শিশুরা এই এতিমখানাগুলিতে আশ্রয় পেয়েছিল।[১]

"আনজুমান প্রকাশনার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল পবিত্র কুরআনের একটি সম্পূর্ণ সঠিক পাঠ্য প্রকাশ করা।[১]

প্রকাশনা

সম্পাদনা
  • রিসালা-ই আনজুমান-ই হিমায়াত-ই ইসলাম (১৮৮৫)[১]

প্রোগ্রাম এবং সেবা

সম্পাদনা

অন্যান্য অসংখ্য দাতব্য সেবার পাশাপাশি, আঞ্জুমান পরিচালনা করে:

সরকারি স্কুল

সম্পাদনা
  • দার-উল-শাফকাত (শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য)
  • দার-উল-শাফকাত (শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য)
  • দার-উল-আমান (শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য)
  • দার-উল-উলূম দ্বীনিয়া (পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য)
  • হামায়াত-ই-ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয় (ছেলেদের জন্য) [৬]
  • হামায়াত-ই-ইসলাম পাশা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
  • হামায়াত-ই-ইসলাম রাজগড় স্কুল
  • হামায়াত-ই-ইসলাম ডিগ্রি কলেজ (শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য)
  • হামায়াত-ই-ইসলাম আইন কলেজ
  • হামায়াত-ই-ইসলাম তিব্বিয়া কলেজ
  • হামায়াত-ই-ইসলাম ইউনানী শাফা খানা
  • হামায়াত-ই-ইসলাম লাইব্রেরি

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Profile of Anjuman-e-Himayat-e-Islam"Story of Pakistan website। ১ জুন ২০০৩। ৫ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "storyofpakistan" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  2. Profile of Sir Syed Ahmad Khan on Encyclopedia Britannica Retrieved 2 September 2021
  3. S. M. Ikram (১৯৯৫)। "Anjuman-i-Himayat-i-Islam in the book Indian Muslims and Partition of India (pages 167, 168, 169, 171, 183, 197, 205, 206, 207, 208, 225, 282, 513"Google Books website। Atlantic Publishers। আইএসবিএন 9788171563746  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "google" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  4. Qureshi, M. Naeem. Pan-Islam in British Indian Politics: A Study of the Khilafat Movement, 1918-1924. Social, economic, and political studies of the Middle East and Asia, v. 66. Leiden: Brill, 1999.
  5. "Government Boys High School HIMAYAT-UL-ISLAM, TILIC INCUNE HYDERABAD, Hyderabad City"www.schoolinglog.com 
  6. Anjuman-e-Himayat-e-Islam Government Boys High School, Hyderabad, Sindh, Pakistan, schoolinglog.com website

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

[[বিষয়শ্রেণী:পাকিস্তান ভিত্তিক ইসলামি সংগঠন]] [[বিষয়শ্রেণী:১৮৮৪-এ ভারতে প্রতিষ্ঠিত]] [[বিষয়শ্রেণী:লাহোর ভিত্তিক সংগঠন]]