বেলাবাসিনী গুহ (ইংরেজি: Belabasini Guha) (জন্ম ৪ মার্চ, ১৯০৫ - মৃত্যু: জুলাই, ১৯৬৭) একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ, চিত্রশিল্পী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মহিলা ছিলেন। স্ত্রী শিক্ষার উন্নতিকল্পে ও পুরাণ শাস্ত্র রচনায় বাংলা সাহিত্যে তার বিশেষ অবদান আছে।[১]

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

শ্রীমতি বেলাবাসিনী গুহ বাংলাদেশেফরিদপুর জেলার ঢেউখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল যোগেন্দ্রচন্দ্র। স্ত্রী শিক্ষার প্রসার না থাকায় পিতৃগৃহ বা শ্বশুরালয়ে তার শিক্ষার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তিনি নিজে ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। গ্রামাঞ্চলে তুলির অভাবে বিড়ালের লোম দিয়ে ছবি আঁকার চেষ্টা করতেন। তের বছর বয়েসে সুবোধচন্দ্র গুহর সাথে তার বিবাহ হয়। বিয়ের পরে কলকাতায় এসে কোনো স্কুলে বা অঙ্কন শিক্ষকের কাছে শেখার সুযোগ হয়নি তবু নিজে নিজেই সহজাত প্রতিভায় জল রঙ ও তেল রঙে ছবি আঁকতেন। তার আঁকা ছবি, মাটির কাজ, জয়পুরী মিনারের কাজ বহু শিল্পীর প্রশংসা পায়।

সমাজসেবা সম্পাদনা

তার সময় সরকারী কলা বিদ্যালয়ে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিলোনা। তিনি ভারতবর্ষ ও অন্যান্য পত্রপত্রিকায় মেয়েদের শিল্প শিক্ষার দাবীতে লেখালিখি করতে থাকেন। মহিলা চিত্র বিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠিত সংস্থা। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্যে কলকাতা বন্দর এলাকায় মুসলিম শ্রমিক বস্তিতে গিয়ে কাজ করেছেন। সামাজিক জনকল্যাণকর নানা কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। শান্তি দাস প্রতিষ্ঠিত দীপালী শিক্ষামন্দিরে বিনা পয়সায় অঙ্কন শিক্ষকের কাজ করেছেন।[১]

স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পাদনা

স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি তার সহানুভূতি ছিল। বিপ্লবী ভূপেশ নাগ ছিলেন তার মামা, সেই সূত্রে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯৪২-৪৭ নানা রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের কাছে লাঠিখেলা ও যুযুৎসু শিক্ষা নেন। ফেরারী বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি বাড়িতে রাখার জন্যে পুলিশি হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। তার কন্যা অহনা গুহও রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৫-৪৬ সালে দেশব্যাপী গন আন্দোলনের সময় বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী মহারাজের সাথে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেন ও বক্তৃতা দেন।[১]

সাহিত্য সম্পাদনা

কন্যা অহনার মৃত্যুর পর রাজনৈতিক জগৎ থেকে সরে এসে সাহিত্য চর্চায় মন দেন। সংস্কৃত ভাষা জানতেন। বৈদিক পুরাণ সাহিত্যে তিনি ছিলেন সুপন্ডিত। পুরাণ, বেদ, হিন্দু শাস্ত্র, ফলিত জ্যোতিষ ইত্যাদি নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নিজের চেষ্টায় ইংরেজি শিখে নেন। নক্ষত্রমন্ডলীকে ভালভাবে চিনতেন ও নর্টনের স্টার এটলাসের সাহায্যে সেগুলি অধ্যয়ন করেন। তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি ঋগ্বেদ ও নক্ষত্র নামক গ্রন্থের পান্ডুলিপি রচনা। এটি একটি আকরগ্রন্থ। তার মৃত্যুর পর এই বইটি প্রকাশিত হয়।[২][৩]

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৬৭ সালের জুলাই মাসে মারা যান বেলাবাসিনী গুহ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩৬৬। 
  2. "Ṛgveda o nakshatra"books.google.co.in। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৭ 
  3. Belabasini Guha and Ahona Guha (২০০৬)। Rig Veda o Nakshatra। Kolkata: বেস্ট বুকস।