কুমিল্লা জগন্নাথ মন্দির

প্রাচীন একটি মন্দির

কুমিল্লা জগন্নাথ মন্দির বা সতেরো রত্ন মন্দির বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত জগন্নাথের প্রতি উৎসর্গিত একটি হিন্দু মন্দির[১] খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এই মন্দিরটি বাংলার টেরাকোটা স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করছে। এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ, বলরামসুভদ্রার মূর্তি প্রকৃতপক্ষে ত্রিপুরার একটি মন্দিরে স্থাপিত ছিল। পরবর্তীকালে মূর্তিগুলি এই মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। কুমিল্লা জেলার প্রাচীনতম মন্দিরগুলির মধ্যে জগন্নাথ মন্দির। এটি কুমিল্লা শহর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব অবস্থিত।[১]টেরাকোটা মন্দিরটির ইটভাটা মন্দিরের স্থাপত্যের সাধারণ শৈলী। এটি একটি সতেরো রত্ন মন্দির। কিন্তু এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় আটটি, তৃতীয় তলায় আটটি আর কেন্দ্রে আরো এক রত্ন নিয়ে সতেরো রত্ন ছিল ।[১][২]

কুমিল্লা জগন্নাথ মন্দির
১৮৪৩ সালে অঙ্কিত কুমিল্লা জগন্নাথ মন্দিরের একটি স্কেচ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাকুমিল্লা জেলা
ঈশ্বরজগন্নাথ, বলরামসুভদ্রা
অবস্থান
অবস্থানকুমিল্লা
দেশবাংলাদেশ

অবস্থান সম্পাদনা

চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কৃষ্ণপুর গ্রামের জগন্নাথবাড়ী নামক স্থানে সতেররত্ন মন্দির অবস্থিত।

নির্মাণ সম্পাদনা

কৈলাস সিংহ (১৮৫১-১৯১৪) মহাশয়ের মতে, ত্রিপুরার মহারাজা ২য় রত্নমাণিক্য (১৬৮৫-১৭১২ খ্রি.) এর নির্মাণ শুরু করেন। পরবর্তীতে মহারাজা মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণ সম্পন্ন করেন। কিন্তু রাজমালায় বর্ণিত হয়েছে যে, ইহা কৃষ্ণমাণিক্য কর্তৃক নির্ম্মিত, তিনিই মন্দিরের মধ্যে জগন্নাথদেবকে স্থাপন করেন।

বলভদ্র জগন্নাথ সুভদ্রা সহিত
সপ্তদশ রত্নে রাজা করিল স্থাপিত।
—পৃঃ ২৬৭।

এই মন্দির সম্বন্ধে কৃষ্ণমালা গ্রন্থে এইরূপ লেখা হয়েছেঃ—

এক মঠে সপ্তদশ মঠের গঠন
সপ্তদশ রত্ন নাম হৈল সে কারণ॥
—৯ম খণ্ড, ২৬৭ পৃঃ।

[৩]

মন্দিরের নকশা ও কারুকাজ সম্পাদনা

অষ্টকোণাকৃতির এই মন্দিরটি সতের রত্ন বিশিষ্ট হলেও বর্তমানে এর অধিকাংশ রত্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মন্দিরের ২য় এবং ৩য় তলায় আটটি করে সর্বমোট সতেরটি রত্ন এতে ছিল। এই মন্দিরের একটি বিশেষত্ব হলো এর চূড়াগুলি আটকোণা বিশিষ্ট ছাতা আকৃতির যা অন্যান্য মন্দিরের চেয়ে আলাদা। মন্দিরটির আনুমানিক ব্যাস প্রায় ৫২.৫০ মিটার। ভিতরের দিকের সিড়ি দিয়ে মন্দিরটির ৪-৫ তলা পর্যন্ত উঠা যায় যদিও বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় এটি ৩ তলা। মন্দিরের প্রবেশ পথগুলাতে খিলান আকৃতির কারুকাজ লক্ষ করা যায়। এর বিভিন্ন তলায় খিলানাকৃতির জানালা রয়েছে। মন্দিরটিকে ফুল, লতা-পাতা, ঘণ্টা ও জ্যামিতিক নকশায় সাজানো হয়েছে।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সতেররত্ন মন্দির - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২৫ 
  2. রতনলাল চক্রবর্তী, বাংলাদেশের মন্দির, বাংলা একাডেমী ঢাকা প্রকাশিত, পৃষ্ঠা: ৩৮
  3. "রাজমালা (ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্তী)/তৃতীয় পরিচ্ছেদ/৯ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"bn.m.wikisource.org 
  4. "সতেররত্ন মন্দির এর বিস্তারিত" 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা