জগন্নাথ
জগন্নাথ (অর্থাৎ, "জগতের নাথ" বা "জগতের প্রভু") হলেন একজন হিন্দু দেবতা। ভারতের ওড়িশা, ছত্তিশগড় (বস্তার অঞ্চল), পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, আসাম, মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্যে[২] এবং বাংলাদেশে তার পূজা প্রচলিত। জগন্নাথ হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণু বা তার অবতার কৃষ্ণের একটি বিশেষ রূপ।[৩] তাঁকে তাঁর দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে পূজা করা হয়।
জগন্নাথ जगन्नाथः ଜଗନ୍ନାଥ | |
---|---|
দেবনাগরী | जगन्नाथः |
সংস্কৃত লিপ্যন্তর | Jàgannātha |
ওড়িয়া লিপি | ଜଗନ୍ନାଥ |
অন্তর্ভুক্তি | বিষ্ণু বা কৃষ্ণের বিমূর্ত রূপ |
আবাস | নীলাচল |
মন্ত্র | ওঁ জগন্নাথদেবায় নমঃ[১] |
অস্ত্র | সুদর্শন চক্র, পাঞ্চজন্য |
বাহন | গরুড় |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
সহোদর | বলভদ্র ও সুভদ্রা |
সঙ্গী | মহালক্ষ্মী ও ভূদেবী |
জগন্নাথের মূর্তি সাধারণত কাঠে তৈরি করা হয়। 'নিম্ব বৃক্ষ' বা নিম গাছের কাঠ দ্বারা জগন্নাথদেবের প্রধান বিগ্রহগুলো (জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা) নির্মিত। এই মূর্তির চোখদুটি বড়ো বড়ো ও গোলাকার। হাত অসম্পূর্ণ। মূর্তিতে কোনো পা দেখা যায় না। বিগ্রহে অসম্পূর্ণ হাত ও পায়ের অনুপস্থিতি নিয়ে নানা ধরনের মতবাদ এবং পবিত্র বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। জগন্নাথের পূজাপদ্ধতিও অন্যান্য হিন্দু দেবতাদের পূজাপদ্ধতির চেয়ে আলাদা।[৪] ওড়িশা রাজ্যের পুরী শহরে জগন্নাথের প্রধান মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দির হিন্দুধর্মের চারধামের অন্যতম।[৫]
বেদে জগন্নাথের সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তিনি দশাবতার অথবা বৈদিক হিন্দু দেবমণ্ডলীর সদস্যও নন।[৬] অবশ্য কোনো কোনো ওড়িয়া গ্রন্থে জগন্নাথকে বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে বুদ্ধের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।[৭] বিষ্ণুর রূপভেদ হিসেবে জগন্নাথ এক অসাম্প্রদায়িক দেবতা।[৮][৯][১০] তাকে এককভাবে হিন্দুধর্মের কোনো একটি সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, স্মার্ত সকল শাখার অনুগামীরাই জগন্নাথকে পূজা করেন। এমনকি বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মসম্প্রদায়ের সঙ্গেও জগন্নাথের যোগ দেখানো হয়।[১১]
জগন্নাথের সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসবটি হল রথযাত্রা। এই উৎসবের সময় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি মূল মন্দিরের (বড় দেউল) গর্ভগৃহ থেকে বের করে এনে কাঠের তৈরি তিনটি বিরাট রথে করে প্রায় ৩ কিলোমিটার (১.৯ মা) দূরে গুণ্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভক্তরাই এই রথগুলো টেনে নিয়ে যান। যেখানেই জগন্নাথ মন্দির আছে, সেখানেই এই ধরনের রথযাত্রা আয়োজিত হয়।
ব্যুৎপত্তি
সম্পাদনাতাঁদের মতে, "জগন্নাথ" শব্দটি "লোকনাথ" বা "অবলোকিতেশ্বর" শব্দদুটির মতো একটি বর্গনাম। আসলে যে দেবতাকেই সর্বোচ্চ জ্ঞান করা হয়, তাঁকেই "জগন্নাথ" বলা চলে।
— সুরেন্দ্র মোহান্তি, লর্ড জগন্নাথ: দ্য মাইক্রোকসম অফ ইন্ডিয়ান স্পিরিচুয়াল কালচার[১২]
"জগন্নাথ" শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ "জগত বা ব্রহ্মাণ্ডের প্রভু"।[১৩]
"জগন্নাথ" কথাটি তৎপুরুষ সমাস। এটি "জগৎ" (যার মূল ধাতু "গম্", অর্থাৎ "[যা কিছু] চলে") এবং "নাথ" (অর্থাৎ, প্রভু বা আশ্রয়) শব্দটির সংমিশ্রণে গঠিত। অর্থাৎ, "জগন্নাথ" শব্দের অর্থ "যিনি চলমান জগতের আশ্রয় বা প্রভু"।[১৪][১৫][১৬][১৭] ওড়িয়া ভাষায় "জগন্নাথ" নাম থেকে উৎপন্ন "জগা" বা "জগবন্ধু" শব্দদুটিরও প্রচলন লক্ষ করা হয়। এছাড়া জগন্নাথের মূর্তির গড়ন অনুসারে তার "কাল্য" (অর্থাৎ, "কালো দেবতা" বা "কালের দেবতা"), "দারুব্রহ্ম" (অর্থাৎ, কাষ্ঠরূপী ব্রহ্ম), "দারুদেবতা" (অর্থাৎ, কাঠের দেবতা), "চকাআঁখি", "চকাডোলা বা "চকানয়ন" (অর্থাৎ, যে দেবতার চোখ গোলাকার) নামও প্রচলিত।[১৮][১৯][২০]
কোনো কোনো গবেষকের মতে, "জগন্নাথ" শব্দটি কোনো সংস্কৃতায়িত আদিবাসী শব্দ। এই গবেষকেরা জগন্নাথকে মূলত আদিবাসী দেবতা মনে করেন। ওড়িশার আদিম আদিবাসী শবর ছিল বৃক্ষ-উপাসক। তারা তাদের দেবতাকে বলত "জগনাত"। সম্ভবত, এই শব্দটি থেকে "জগন্নাথ" শব্দটি এসেছে।[২১] যদিও এই সব মতবাদ সর্বজনসম্মত নয়। কিন্তূ ওড়িয়া গ্রন্থ নীলাদ্রি মহোদয় গ্রন্থে এই সম্পর্কে অনেকটা ধারণা পাওয়া যায় । "দৈতাপতি" নামে পরিচিত একটি অব্রাহ্মণ শ্রেণীকে নীলমাধবের পরম ভক্ত বিশ্বাবসুর (শবর উপজাতির রাজা)বংশধর হিসাবে মেনে নেয়া হয় ,যার অনেক প্রমাণ আছে । তারা পুরীর মন্দিরের কয়েকটি প্রধান দায়িত্ব পালন করেন (গুন্ডিচা যাত্রা, নবকলেবর, সপ্তাভরণ, শ্রীঅঙ্গ সেবা ইত্যাদি এবং ঈশ্বরের পরিবার নামে পরিচিত হন। আর বিদ্যাপতির বংশধরেরা পতি মহাপাত্র হিসেবে পরিচিত, রথযাত্রা ও নবকলেবরে ইনাদের ও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।[২২]
তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা
সম্পাদনাহিন্দুদের কোনো কোনো সম্প্রদায় জগন্নাথকে বিষ্ণুর অবতার মনে করে।[২৩] আবার কোনো কোনো সম্প্রদায়ে তাকে সকল অবতারের উৎস বিষ্ণু মনে করা হয়।[২৪][২৫] মনে করা হয়, অবতারেরা সকল জাগতিক সৃষ্টির কারণ জগন্নাথের থেকে উৎসারিত। তাই রাম, কৃষ্ণ প্রমুখ অবতারের মতো জগন্নাথের কোনো জীবনবৃত্তান্ত বা লীলা নেই।
দীপ্তি রায় তার প্রতাপরুদ্র দেব (ওড়িশার শেষ উল্লেখযোগ্য সূর্যবংশীয় রাজা) গ্রন্থে লিখেছেন:
"সরল দাসের মতে, বিষ্ণুর (জগন্নাথ) সকল অবতার তাঁর থেকেই উৎসারিত এবং তাঁদের লীলা অবসানের পর জগন্নাথেই বিলীন হয়ে যান। প্রতাপরুদ্র দেবের আমলে ওড়িয়া কবিরা এই ধারণা গ্রহণ করে তাঁদের বইতেই এই মতবাদ প্রচার করতেন। তাঁদের মতে, জগন্নাথ শূন্য পুরুষ, নিরাকার ও নিরঞ্জন। নীলাচলে লীলার জন্য তিনি সর্বদা উপস্থিত থাকেন;... প্রতাপরুদ্র দেবের আমলে ওড়িশার পাঁচটি বৈষ্ণব শাখা তাঁদের ধর্মগ্রন্থে জগন্নাথকে (পুরুষোত্তম) পূর্ণব্রহ্মরূপে প্রচার করেন। তাঁরাও বলেছেন, জগন্নাথের থেকেই রাম, কৃষ্ণ প্রমুখ অবতারেরা উৎসারিত হয়ে জগতে লীলা করেছেন এবং লীলার অন্তে পূর্ণব্রহ্মে লীন হয়েছেন।[২৬]
জগন্নাথের মধ্যে বিষ্ণুর সকল অবতারের চিহ্ন আছে। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে তাকে বিষ্ণুর এক-একটি অবতারের মূর্তিতে পূজা করা হয়।[২৭] বিভিন্ন প্রথা-রীতিনীতি থেকেও জগন্নাথের সঙ্গে নানা অবতারের যোগ লক্ষিত হয়। যদিও তাকে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত করা হয়ে থাকে।[২৮] পুরাণে আছে, বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার কাঠের স্তম্ভ ভেঙে বেরিয়েছিলেন। তাই জগন্নাথকে দারুব্রহ্ম রূপে নৃসিংহ স্তোত্র পাঠ করে পূজা করা হয়।[২৯] জগন্নাথকে এককভাবে পূজা করার সময় বলা হয় "দধিবামন"।[৩০] প্রতি বছর ভাদ্র মাসে জগন্নাথকে বিষ্ণুর বামন অবতারের বেশে পূজা করা হয়।[৩১] বার্ষিক রথযাত্রার সময়ও জগন্নাথকে বামন রূপে পূজা করা হয়।[২৫] ষোড়শ শতাব্দীতে তুলসীদাস পুরীতে এসে জগন্নাথকে রঘুনাথ (রাম) রূপে পূজা করেছিলেন।[৩২] চৈতন্য মহাপ্রভুর সময় থেকে জগন্নাথকে কৃষ্ণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। আবার বিষ্ণুর নবম অবতার বুদ্ধকেও জগন্নাথ মনে করা হয়।[৩৩] যদিও বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে বুদ্ধের বদলে জগন্নাথকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াসটি বিতর্কিত।[৩৪] প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, জগন্নাথ দায়িত্বশীল পুত্রের মতো তার সকল মানব অবতারের বাবা-মায়ের বাৎসরিক শ্রাদ্ধকার্য করে থাকেন।
জগন্নাথ মন্দিরে ভক্তদের মধ্যে জাতিভেদ প্রথা কখনই ছিল না।[৩৫] হিন্দুধর্মের সকল সম্প্রদায়ে জগন্নাথের পূজা হয়।[২৭] তিনি শুধু বৈষ্ণব দেবতা নন, সকল সম্প্রদায়ের দেবতা।[৩৬][৩৭] জগন্নাথকে তান্ত্রিক ক্রিয়ার সার মনে করা হয়।[৩৩] শৈব ও শাক্তরা জগন্নাথকে দেবী বিমলার ভৈরব অর্থাৎ শিব মনে করেন। [৩৬] এমনকি জগন্নাথ মন্দিরের পূজারিরাও শাক্ত সম্প্রদায়ভুক্ত। যদিও এই মন্দিরে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি।[৩৮] বলরামকেও শিব ও সুভদ্রাকে দুর্গা মনে করা হয়।[৩৯] প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, ভক্তদের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য জগন্নাথ যে কোনো দেবতার রূপ ধরতে পারেন।[৩২] ভাগবত পুরাণে আছে, ঋষি মার্কণ্ডেয় পুরুষোত্তম জগন্নাথ ও শিবের একত্ব প্রমাণ করেন।[৪০] মহারাষ্ট্রের গণপতি ভট্ট হাতিবেশের সময় জগন্নাথকে গণেশ রূপে পূজা করেছিলেন।[৩২]
পৌরাণিক উপাখ্যান
সম্পাদনাজগন্নাথদেবকে কেন্দ্র করে দুটি জনপ্রিয় কাহিনি প্রচলিত আছে। প্রথম কাহিনি অনুসারে, কৃষ্ণ তার ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তার মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তিনির্মাণের জন্য রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন। তখন এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী তার সম্মুখে উপস্থিত হন এবং মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন চেয়ে নেন। সেই কাষ্ঠশিল্পী রাজাকে জানিয়ে দেন মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন তার কাজে বাধা না দেন। বন্ধ দরজার আড়ালে শুরু হয় কাজ। রাজা ও রানি সহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন তারা বন্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং শুনতে পেতেন ভিতর থেকে খোদাইয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে। ৬-৭ দিন বাদে যখন রাজা বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এমন সময় আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। অত্যুৎসাহী রানি কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত। এই রহস্যময় কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। মূর্তির হস্তপদ নির্মিত হয়নি বলে রাজা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কাজে বাধাদানের জন্য অনুতাপ করতে থাকেন। তখন দেবর্ষি নারদ তার সম্মুখে আবির্ভূত হন। নারদ রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ।
দ্বিতীয় কাহিনিটির অবতারণা করা হয়েছিল পূর্বোল্লিখিত উপখ্যানটির ব্যাখ্যা ও সংশয় নিরসনের উদ্দেশ্যে। বৃন্দাবনে গোপীরা একদিন কৃষ্ণের লীলা ও তাদের কৃষ্ণপ্রীতির কথা আলোচনা করছিলেন। কৃষ্ণ গোপনে সেই সকল কথা আড়ি পেতে শুনছিলেন। কৃষ্ণভগিনী সুভদ্রাকে নিয়োগ করা হয়েছিল গোপীরা যখন কৃষ্ণের কথা আলোচনা করেন তখন কৃষ্ণ যেন তাদের নিকটবর্তী না হতে পারে সেদিকে নজর রাখার জন্য। কিন্তু গোপীদের কৃষ্ণপ্রীতি দেখে পরিতুষ্ট সুভদ্রা তাদেরই কথা শুনতে শুনতে বিমোহিত হয়ে গেলেন। দেখতে পেলেন না যে তাদের দুই দাদা কৃষ্ণ ও বলরাম এগিয়ে আসছেন। শুনতে শুনতে দুই ভাইয়ের কেশ খাড়া হয়ে উঠল, হাত গুটিয়ে এল, চোখদুটি বড় বড় হয়ে গেল এবং মুখে আনন্দের উচ্চ হাসির রেখা ফুটে উঠল। এই কারণেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার এইপ্রকার রূপ। বৈষ্ণবরা কৃষ্ণের এই বিমূর্ত রূপটিকে পূজা করেন
জগন্নাথ মন্দির
সম্পাদনাপুরীর জগন্নাথ মন্দির ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ মন্দির। জগন্নাথ-আরাধনার ইতিবৃত্ত এতই প্রাচীন যে এর কোনো ঐতিহাসিক রেকর্ড পাওয়া সম্ভব নয়। জগন্নাথ মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কলিঙ্গ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরটি শ্রীমন্দির নামে সমধিক পরিচিত। গর্ভগৃহের মাথায় রয়েছে একটি সুউচ্চ শিখর বা চূড়া। প্রদীপ উৎসর্গের জন্য রয়েছে ফসিল হয়ে যাওয়া কাঠের একটি স্তম্ভ। মন্দিরের প্রধান দ্বার সিংহদ্বারের রক্ষক দেবতা জয় ও বিজয়। মূল প্রবেশপথের সামনে রয়েছে অরুণস্তম্ভ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। খুরদার রাজা কোনার্কের সূর্যমন্দির থেকে এটি নিয়ে আসেন।
তিন দেবতাকে সাধারণত মন্দিরের অভ্যন্তরেই পূজা করা হয়। তবে প্রতি বছর আষাঢ় মাসে তাদের রাজপথে বের করে রথারূহ করে তিন কিলোমিটার দূরে গুন্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় ভক্তরা দেবতাকে গণদর্শনের সুযোগ পান। এই বিরাট বিরাট রথগুলি প্রতি বছর কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হয়। এই সুদীর্ঘ রথগুলিই ইংরেজি শব্দ 'juggernaut'-উৎস।[৪১] দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের প্রতীকী রূপে পালিত হয়ে থাকে এই রথযাত্রা উৎসব। রথযাত্রার সময় সারা পৃথিবী থেকে এখানে ভক্ত সমাগম হয়। পুরীর রাজা রথে ঝাঁট দিয়ে সেবা করেন যাকে ছেরাপহরা বলা হয়।
-
জগন্নাথ-বলভদ্র-সুভদ্রার একটি ক্ষুদ্রাকার বেদী
-
ভুবনেশ্বরের রথযাত্রা
-
ইসকন আয়োজিত নিউ ইয়র্কের রথযাত্রা
-
জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা ওড়িশার একটি মন্দিরে
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ আর্য্যাচার-পদ্ধতি বা পুরোহিত-দর্পণ, অখণ্ড সংস্করণ, সম্পাদনা: কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতিতীর্থ, সংশোধন ও পরিবর্ধন: রামদেব স্মৃতিতীর্থ ও ত্বিষাম্পতি কাব্যতীর্থ, পি. এম. বাক্চি অ্যান্ড কোং প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৪১৮ বঙ্গাব্দ মুদ্রণ, পৃ. ৫২৫
- ↑ Tripathy, B (জুন ২০১২)। "Jagannath Cult in North-east India" (পিডিএফ)। Orissa Review: 24–27। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৩। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ Jayanti Rath। "Jagannath- The Epitome of Supreme Lord Vishnu" (পিডিএফ)।
- ↑ ""Synthetic Character of Jagannath Culture", Pp. 1–4" (পিডিএফ)। ৮ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ See: Chakravarti 1994, p 140
- ↑ Wilkins, William Joseph (১৯০০)। Hindu Mythology, Vedic and Puranic। London: Elibron Classics। আইএসবিএন 81-7120-226-8।
- ↑ Mukherjee, Prabhat The history of medieval Vaishnavism in Orissa. P.155
- ↑ Pradhan, Atul Chandra (জুন ২০০৪)। "Evolution of Jagannath Cult" (পিডিএফ)। Orissa Review: 74–77। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Patnaik, Bibhuti (জুলাই ৩, ২০১১)। "My friend, philosopher and guide"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Misra, Narayan (২০০৫)। Annals and Antiquities of the Temple of Jagannātha। Jagannathism: Sarup& Sons। পৃষ্ঠা 97।
- ↑ চক্রবর্ত্তী, যোগব্রত (২৮ জুন ২০২৩)। "পুরীধাম ও জগন্নাথদেবের ব্রহ্মরূপ বৃত্তান্ত"। dainikstatesmannews.com। কলকাতা: দৈনিক স্টেটসম্যান (The Statesman Group)। পৃষ্ঠা 4। Archived from the original on ২৮ জুন ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০২৩।
- ↑ Mohanty, Surendra. Lord Jagannatha: the microcosm of Indian spiritual culture.p. 93. Orissa Sahitya Academy (1982)
- ↑ Das, Basanta Kumar (২০০৯)। "Lord Jagannath Symbol of National Integration" (পিডিএফ)। Orissa Review। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১২।
The term Jagannath etymologically means the Lord of the Universe
- ↑ name="books.google.com">Miśra, Mishra, Narayan, Durga Nandan (২০০৭)। Annals and antiquities of the temple of Jagannātha। Sarup & Sons। পৃষ্ঠা 190। আইএসবিএন 978-81-7625-747-3।
- ↑ Eschmann, Anncharlott (১৯৭৮)। The Cult of Jagannath and the regional tradition of Orissa। University of California, California, San Francisco, USA: Manohar। পৃষ্ঠা 537।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;books.google.com
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Eschmann, Anncharlott (১৯৭৮)। The Cult of Jagannath and the regional tradition of Orissa। University of California, California, San Francisco, USA: Manohar। পৃষ্ঠা 537।
- ↑ "::: LordJagannath.Com ::: Lord Jagannath (Names)"। lordjagannath.com। ২০১০। ২৬ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১২।
Different names of Shree Jagannath
- ↑ [১]
- ↑ "64 Names Of Lord Jagannath Around Odisha | PURIWAVES"। puriwaves.nirmalya.in। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১২।
Sri Jagannath is being worshipped throughout Orissa over thirty districts in 64 names.
- ↑ Joshi, Dina Krishna (জুন–জুলাই ২০০৭)। "Lord Jagannath: the tribal deity" (পিডিএফ)। Orissa Review: 80–84। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Abraham, Priya (৩০ জুন ২০০৮)। "125th brother of Jagannath"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Asiatic Journal। Parbury, Allen, and Company। ১৮৪১। পৃষ্ঠা 233–। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Patra, Avinash (২০১১)। "Origin & Antiquity of the Cult of Lord Jagannath"। University of Oxford Weekly Journal। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ ক খ Mishra, Kabi (জুলাই ৩, ২০১১)। "He is the infinite Brahman"। The Telegraph, Kolkata। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Ray, Dipti (২০০৭)। Prataparudradeva, the Last Great Suryavamsi King of Orissa (A.D. 1497 to A.D. 1540)। Northern Book Centre। পৃষ্ঠা 196।"
- ↑ ক খ Asiatic Society of Bengal (১৮২৫)। Asiatic researches or transactions of the Society instituted in Bengal, for inquiring into the history and antiquities, the arts, sciences, and literature, of Asia। পৃষ্ঠা 319–। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Srinivasan (১৫ জুন ২০১১)। Hinduism For Dummies। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 96–। আইএসবিএন 978-1-118-11077-5। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Dash, Durgamadhab (জুন ২০০৭)। "Place of Chakratirtha in the cult of Lord Jagannath" (পিডিএফ)। Orissa Review। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Das, MADHAVANANDA (জুন ৮, ২০০৪)। "The Story Of Gopal Jiu"। Vaishnav News। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Mishra, Bhaskar (জুন ২০১২)। "Beshas of Shree Jagannath Mahaprabhu" (পিডিএফ)। Orissa Review: 16। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ ক খ গ Mohanty, Tarakanta (জুলাই ২০০৫)। "Lord Jagannath in the form of Lord Raghunath and Lord Jadunath" (পিডিএফ)। Orissa Review: 109–110। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ ক খ Jitāmitra Prasāda Siṃhadeba (১ জানুয়ারি ২০০১)। Tāntric Art of Orissa। Gyan Books। পৃষ্ঠা 146–। আইএসবিএন 978-81-7835-041-7। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Pati, Dinanath (২১ জুন ২০১২)। "Who else could be a mascot?"। The Telegraph, Kolkata। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Brad Olsen (১ ফেব্রুয়ারি ২০০৪)। Sacred Places Around the World: 108 Destinations। CCC Publishing। পৃষ্ঠা 91–। আইএসবিএন 978-1-888729-10-8। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ ক খ Jagannath Mohanty (২০০৯)। Encyclopaedia of Education, Culture and Children's Literature: v. 3. Indian culture and education। Deep & Deep Publications। পৃষ্ঠা 19–। আইএসবিএন 978-81-8450-150-6। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ K. K. Kusuman (১৯৯০)। A Panorama of Indian Culture: Professor A. Sreedhara Menon Felicitation Volume। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 162–। আইএসবিএন 978-81-7099-214-1। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ O. M. Starza (১৯৯৩)। The Jagannatha Temple at Puri: Its Architecture, Art, and Cult। BRILL। পৃষ্ঠা 64–। আইএসবিএন 978-90-04-09673-8। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ James G. Lochtefeld (২০০২)। The Illustrated Encyclopedia of Hinduism: Volume Two। The Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা 665–। আইএসবিএন 978-0-8239-3180-4। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ Index of 16 Purans। Markandeya। ২০০৯। পৃষ্ঠা 18, 19।
- ↑ See http://www.m-w.com/cgi-bin/dictionary?va=juggernaut ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে