বাহামা একটি অত্যধিক খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং সেখানে একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু ইসলামের অনুসারী রয়েছে। দেশটির সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার কারণে সেখানে মুসলমানরা অন্যদের মাঝে ইসলাম প্রচার করতে পারে এবং দেশে উপাসনালয় নির্মাণের স্বাধীনতা রয়েছে। ২০১৮ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, বাহামার মোট জনসংখ্যা ৩৩২,৬৩৪ জন এবং তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১,০০০ জন ইসলাম ধর্মের অনুসারী।[১][২][৩][৪]

ইতিহাস সম্পাদনা

অন্যান্য ইউরোপীয় উপনিবেশের মত বাহামাতেও প্রথম দিকের কিছু মুসলমানকে উত্তর আফ্রিকা থেকে ক্রীতদাস হিসেবে আনা হয়েছিল।[৫] ১৯৬০ এর দশকে বাশান সালাদিন (পূর্বে চার্লস ক্লিয়ার) নামে একজন বাহামীয় ইসলাম গ্রহণ করে দেশে ইসলাম প্রচারের কাজ করেন এবং তার বাড়িকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। ১৯৭৪ সালে বিখ্যাত বাহামীয় চিকিৎসক ড. মুনির আহমদ, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডেন্টাল বিশেষজ্ঞ হিসাবে ফিরে আসেন এবং জনাব মোস্তফা খলিল খলফানি দুজনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রে কাজ শুরু করেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ফয়সাল আবদুর রহমান হেপবার্ন নামে আরেকজন। নাসাউতে একটি মাত্র কেন্দ্রীয় কলেজ আছে এবং কোন বড় বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাই সমস্ত উচ্চ শিক্ষার জন্য বাহামীয়দের অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে হয়। স্বাধীনতার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নের সময় অনেক বাহামীয় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এছাড়াও ভারত, বাংলাদেশপাকিস্তানের পাশাপাশি তুরস্ক এবং গায়ানা থেকে অনেক দক্ষিণ এশীয় মুসলমানরা বাহামাতে এসেছেন। তাদের প্রায় ২০-৩০ জন সেখানে ডাক্তার হিসাবে কাজ করেন।[৩]

কমিউনিটি উন্নয়ন

ভারত, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশের অনেক মুসলিমবাহামায় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিকাশে ব্যাপক সাহায্য করেছেন। ১৯৭৮ সালে বাহামীয় মুসলিমদের নিয়ে জামাত-উল-ইসলাম গঠিত হয় এবং মোস্তফা খলিল খালাফানিকে এর নেতা নির্বাচিত করা হয়। তারপর মুসলমানরা ফয়সাল আবদুর রহমান হেপবার্নের মালিকানাধীন জামাত ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সি লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত নাসাউতে জামাত-উল-ইসলাম মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৬]

মসজিদ সম্পাদনা

দেশটির একটি মাত্র মসজিদ রাজধানী নাসাউতে অবস্থিত। মসজিদটির নাম জামা আহলুস সুন্নাহ বাহামা মসজিদ। মসজিদটি দুই একর জমির উপর অবস্থিত। এতে সাদা রঙের তিনটি গম্বুজ (একটি বড় এবং দুটি ছোট) এবং একটি লম্বা মিনার আছে। এটি একটি নতুন লাগানো বাগান, একটি রঙিন উঠান এবং একটি পার্কিং লট দ্বারা বেষ্টিত। নারীদের জন্য পৃথক জায়গাটি একটি ছিদ্রযুক্ত কাঠের মাধ্যমে বর্ধিত করা হয়েছে। মসজিদটিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা হয়। জুমার খুতবানামাজে ৬০ জনেরও বেশি লোক অংশ নেয়। অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে মুসলিম পুরুষ ও মহিলাদের স্টাডি সার্কেল এবং সেইসাথে বাচ্চাদের সানডে স্কুল।[৭][৫]

সামাজিক বৈষম্য সম্পাদনা

বাহামায় মুসলিমরা অনেকভাবে উপেক্ষিত বা প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। কারণ তারা খুবই ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু (জনসংখ্যার ১% এরও কম)। মিডিয়া ইতিবাচক ইসলামি অনুষ্ঠান প্রচার করতে অস্বীকার করে এবং স্থানীয় সংবাদপত্রগুলি ইসলামমুসলিম সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলি কভার করতে আগ্রহী হয় না।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Bahamas, The"The World Factbook (ইংরেজি ভাষায়)। Central Intelligence Agency। ২০২২-১০-৩১। 
  2. "দেশ অনুযায়ী ইসলাম"উইকিপিডিয়া। ২০২২-০৮-০৫। 
  3. "History of Islam in the Bahamas"Jamaa' Ahlus Sunnah Bahamas (Jamaat-ul-Islaam Bahamas)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০২১ 
  4. "Islam by country"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১১-০৫। 
  5. Ansari, Anis (১০ এপ্রিল ২০০৯)। "Masjid in the Bahamas"Caribbean Muslims। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০২১ 
  6. Association, Bahamas Dental (২০০৯-০৪-১০)। "Dr. Munir Ahmad Rashad"Caribbean Muslims (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৯ 
  7. "Home"Caribbean Muslims (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৯